পুলিশের খাতায় ১৫ মামলার আসামি দুই ভাই by মহিউদ্দীন জুয়েল
চট্টগ্রামে
দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তাদের সন্ত্রাসী জীবনের নানা চাঞ্চল্যকর
তথ্য বেরিয়ে আসছে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত সহোদররা পুলিশের তালিকাভুক্ত
সন্ত্রাসী। আর যাদের হাতে তারা খুন হয়েছে তারাও কুখ্যাত কিলার। মাদক
ব্যবসা, অপহরণ কিংবা চাঁদাবাজি- সব ধরনের অপকর্মেই থানায় নাম রয়েছে আবু
সিদ্দিক ও ফরিদুল আলমের। দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় মোট ১৫টি মামলা
করা হয়েছে। অবৈধভাবে তারা বছরে আয় করতো ২০-২৫ লাখ টাকা। এর বিশাল একটি অংশ
আসতো মাদক থেকে। গতকাল রোববার সকালে ঘটনা তদন্তে চান্দগাঁও থানায় গিয়ে
পাওয়া যায় দু’জনের সন্ত্রাসী জীবনে জড়িত থাকার একাধিক অভিযোগ। তবে এলাকার
একটি সূত্র দাবি করেছে, বেশ কয়েক মাস হলো মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে দুই ভাই
ভালভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করলে রোষানলে পড়ে প্রতিপক্ষের। আর সেই কারণেই
তাদের এমন পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে। পুলিশ জানায়, এক ভাই আবু সিদ্দিকের
বিরুদ্ধে চান্দগাঁও থানায় সর্বমোট ৮টি মামলা দায়ের হয় বিভিন্ন সময়ে। আর তার
আরেক ভাই ফরিদের বিরুদ্ধে রয়েছে আরও ৭টি। বেশির ভাগ মামলাই এলাকায় জোর করে
সম্পত্তি দখল, মাদক ব্যবসা নিয়ে মারামারি, ডাকাতি কিংবা অপহরণের অভিযোগ।
পুলিশের নথি ঘেঁটে দেখা যায়, ২০০৪ সালে তাদের প্রণীত সন্ত্রাসী তালিকায় আবু
ও ফরিদ নামের দুই সহোদরের নাম রয়েছে। কেবল তাই নয়, আবুর বিরুদ্ধে ১৯৯৮
সালের অক্টোবর মাসে একটি খুনসহ ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়। এরপর একে একে দায়ের
করা হয় পুলিশকে হত্যার চেষ্টায় মামলা। ১৯৯৭ সালের নভেম্বর এক ব্যক্তিকে
জোর করে তুলে আনার ঘটনায় থানায় অপহরণ মামলা হয়। আর তার ভাই ফরিদের বিরুদ্ধে
১৯৯৮ সালের এপ্রিলের পর থেকে ৫টি ডাকাতির মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীরা।
সর্বশেষ ২০০৪ সালের আগস্ট মাসে দিন-দুপুরে এক ব্যক্তিকে হত্যার চেষ্টায় তার
বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। গতকাল রোববার সকালে এ বিষয়ে জানতে নিহতদের
বড় ভাই মঈনুদ্দিন খান মহসিনের সঙ্গে কথা বললে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার
করেন। সব অভিযোগকে তিনি সাজানো ও ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেন। বলেন,
প্রতিপক্ষের লোকজন আমার দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় থেকে ষড়যন্ত্র করে
আসছে। তারা এসব মামলা দায়ের করেছে। সর্বশেষ তাদের যেভাবে পিটিয়ে মারা হলো
তা কোন সভ্য মানুষ করতে পারে না। এলাকার কুখ্যাত সন্ত্রাসী আইয়ুব এই ঘটনার
সঙ্গে জড়িত। পুলিশ এখনও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এদিকে ঘটনার পর থেকে
অভিযুক্ত মামলার প্রধান আসামি সন্ত্রাসী আইয়ুব পলাতক রয়েছে। তার খোঁজে
হন্যে হয়ে এখন মাঠে পুলিশ। চান্দগাঁও থানার ওসি সৈয়দ আবদুর রউফ বলেন,
আইয়ুবকে পাওয়া গেলে সব কিছু বেরিয়ে আসবে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সন্ত্রাসী কর্মকা- নিয়ে পূর্বশত্রুতার জের ধরে ঘটনাটি ঘটতে পারে। পরিবার
থেকে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আশা করছি শিগগিরই জোড়া
খুনের রহস্য উন্মোচিত হবে। স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের
বহদ্দারহাটের খাজা রোডে ১০ মিনিটে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। স্থানীয়
একটি কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, খুন হওয়া আবু ও
ফরিদ চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তারা সন্ত্রাসী হিসেবেও এলাকায় পরিচিত। তাদের
আধিপত্য খর্ব করতে প্রতিপক্ষ এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
No comments