শেলার পাড়ে তেলের কবর
নদীতে
ভাসমান তেল কিছুটা কমে আসায় নদীর পাড়ের ঘাস, লতাপাতা ও কচুরিপানা
পরিষ্কারে নেমেছে বনবিভাগ। আর এসব রাখা হচ্ছে শেলা নদীর পাড়ে মাটি চাপা
দিয়ে। প্রতিদিন অন্তত দু’শ’ শ্রমিক এ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। চাঁদপাই ফরেস্ট
ঘাট চরে যেন গড়ে উঠেছে কচুরিপানার গণকবর। গতকাল স্থানীয় লোকজন নদীর ভাসমান
তেল সংগ্রহ করেছেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত সংগৃহীত হয়েছে ৬৮ হাজার ২শ’ লিটার।
অবশিষ্ট প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার লিটার তেল রয়ে গেছে শেলা ও পশুর নদীর পানি,
গাছপালা ও লতাপাতায়। জয়মণি, বাদামতলা ও মৃগামারী এলাকার তেল অপসারণ করে
বনবিভাগের শ্রমিকরা এখন রয়েছেন আন্ধারমানিক এলাকায়। স্বেচ্ছায় তেল
অপসারণকারী লোকজন দূরত্বের কারণে সেখানে যেতে পারছেন না। নদীর চরে তেল
মাখানো কচুরিপানা, ঘাস ও লতাপাতা মাটি চাপা দিয়ে রাখা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
আশঙ্কা রয়েছে, জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যে কোন সময়ে এ দূষিত তেল আবার নদীতে
নামতে পারে। বনবিভাগের লোক দেখানো এ কাজের প্রতিবাদ জানিয়েছেন
পরিবেশবাদীরা। তারা বলছেন, দূষিত তেল সংগ্রহ করে তা পুড়িয়ে ফেলা উচিত। তা
না হলে এ তেল ধুয়ে আবার নদীতে নামবে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবু
নাসের খান বলেন, বনবিভাগের তেল অপসারণ কার্যক্রম নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ।
অদক্ষ শ্রমিক দিয়ে তেল অপসারণ আর তেল মাখানো কচুরিপানা নদীর পাড়েই মাটি
চাপা দিয়ে রাখা- এসবই নাজুক পদ্ধতি। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে দ্রুত তেল
অপসারণ করে সুন্দরবনকে রক্ষার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। পদ্মা
অয়েল কোম্পানির ঠিকাদার মো. রফিকুল ইসলাম বাবুল জানান, রোববার সন্ধ্যা
পর্যন্ত সাড়ে ৫শ’ লিটার তেল কেনা হয়েছে। এ নিয়ে গত ১০ দিনে মোট ৬৮ হাজার
২শ’ লিটার ভাসমান তেল সংগৃহীত হলো। চাঁদপাই ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা আবুল
কালাম আজাদ বলেন, দ্রুত তেল অপসারণের জন্যই নদীর কাছাকাছি তেল মাখানো
কচুরিপানাগুলো মাটি চাপা দিয়ে রাখা হচ্ছে। পরে অন্য কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ওদিকে জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধি দলের দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনের কথা রয়েছে।
তেল সংগ্রহকারী ও শেলা নদীর উপর নির্ভরশীল লোকজনকে সরকারি ভাবে সাহায্য
করার কথা জানিয়েছেন মংলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা
নাহিদুজ্জামান। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই একটি তালিকা তৈরি করা
হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৯ই ডিসেম্বর ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ নামের একটি
ট্যাঙ্কার গোপালগঞ্জের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য খুলনার পদ্মা অয়েল ডিপো
থেকে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে যাচ্ছিল। পথে সুন্দরবনের
শেলা নদীতে টোটাল নামের অপর একটি ট্যাঙ্কারের ধাক্কায় সাউদার্ন স্টারের এক
পাশের খোল ফেটে ডুবে যায়। এতে ট্যাঙ্কারের সব তেল ভেসে যায় নদীর পানিতে।
No comments