হ্যামারশোল্ডের মৃত্যু নিয়ে আবার তদন্ত হবে?
সুইডেনের দাগ হ্যামারশোল্ড ১৯৫৩ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জাম্বিয়ার নদোলায় এক বিমান দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। ৫৬ বছর বয়সী হ্যামারশোল্ড কঙ্গোর বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা মইশে শোম্বের সঙ্গে আলোচনার জন্য যাচ্ছিলেন। ঠিক কীভাবে তাঁর বিমানটি দুর্ঘটনায় পড়ে, তা বরাবরই ধোঁয়াটে ছিল। অনেকের ধারণা, বিমানটিকে গুলি করে ভূপাতিত করার পর হ্যামারশোল্ড ও তাঁর ১৫ জন সহকর্মীকে হত্যা করা হয়। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা কী বা কে এ দুর্ঘটনা অথবা হত্যার জন্য দায়ী, তা কখনো পরিষ্কার হয়নি। গত সপ্তাহে সুইডেন আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের কাছে হ্যামারশোল্ডের মৃত্যুর ঘটনাটি নতুন করে তদন্ত করার অনুরোধ করে। জাতিসংঘে সুইডেনের স্থায়ী প্রতিনিধি পের থরেনসন আবেদনটি করে বলেন, ‘৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এ মৃত্যু আমাদের মনে এক তাজা ক্ষত হয়ে আছে। তার অবসান হওয়া উচিত।’ দাগ হ্যামারশোল্ডের মৃত্যু নিয়ে এ পর্যন্ত তিনটি ভিন্ন ভিন্ন তদন্ত হয়েছে। সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ দক্ষিণ রোডেশিয়া প্রথম তদন্তটি করে। ১৯৬২ সালে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আরেকটি তদন্ত হয়, তাতে বিমান দুর্ঘটনার পেছনে কাতাঙ্গার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাত থাকতে পারে এমন ইঙ্গিত করা হয়। প্রায় ৫০ বছর পর, ২০১৩ সালে ব্যক্তিগত অর্থানুকূল্যে একটি অনুসন্ধানী প্যানেল দাগ হ্যামারশোল্ডের মৃত্যুর বিষয়টি আবার তদন্ত করে।
তদন্ত শেষে যে প্রতিবেদন পেশ করা হয়, তাতেও ইঙ্গিত মেলে যে দুর্ঘটনাটি পরিকল্পিত। অবসরপ্রাপ্ত ব্রিটিশ বিচারক স্টিফেন সেডলির নেতৃত্বে পরিচালিত সে তদন্তে বলা হয়, হ্যামারশোল্ডদের বিমানটির খুব কাছ দিয়েই আরেকটি বিমান উড়ে যাচ্ছিল। একজন বেলজিয়ান বিমানচালকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, হ্যামারশোল্ডের বিমানের গতিপথ পরিবর্তন করে কাতাঙ্গার একটি খনি শহরের দিকে নেওয়ার জন্য তাঁকে গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সে নির্দেশ কে দেয় তা এ প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট নয়। এতে বলা হয়, মার্কিন সরকারের পরিবহন নিরাপত্তা সংস্থা অথবা সিআইএর কাছে এ বিষয়ে তথ্য পাওয়া যেতে পারে। ১৯৬০ সালে কঙ্গো বেলজিয়ামের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর বামপন্থী হিসেবে পরিচিত জাতীয়তাবাদী নেতা প্যাট্রিস লুমুম্বা সে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। বেলজিয়াম ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাঁর নির্বাচনে খুশি হয়নি। এ দুই দেশের সমর্থনে মইশে শোম্বের নেতৃত্বে খনিজসমৃদ্ধ কাতাঙ্গা প্রদেশ কঙ্গো থেকে বিচ্ছিন্ন হতে গৃহযুদ্ধ শুরু করে। হ্যামারশোল্ড সে গৃহযুদ্ধে মধ্যস্থতা করতেই কাতাঙ্গা যাচ্ছিলেন। প্রদেশটির মূল্যবান খনিজ সম্পদ নিয়ন্ত্রণকারী বেলজিয়ামের একটি কোম্পানিই মইশে শোম্বেকে অর্থ ও অস্ত্র জোগায়। লুমুম্বা বিদ্রোহ ঠেকাতে সোভিয়েত সাহায্য চাইলে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষুব্ধ হয়। অনেকের ধারণা, সোভিয়েত প্রভাব ঠেকাতেই সিআইয়ের মদদে লুমুম্বাকে পরের বছর হত্যা করা হয়। ব্রিটিশ সরকারও লুমুম্বার হত্যায় জড়িত ছিল ভাবা হয়। হ্যামারশোল্ডের মৃত্যুর ঘটনা নতুন করে তদন্তের জন্য সুইডেন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যে প্রস্তাব উথাপন করেছে, তাতে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে।
No comments