সংবিধান লঙ্ঘন- চার মন্ত্রীর পরে পরিকল্পনামন্ত্রীও নজরে
মন্ত্রীদের লাভজনক পদে থাকা নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি জোর আইনি লড়াই আসন্ন মনে হচ্ছে। সংবিধানের ১৪৭ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘনের দায়ে আগামী ১৫ই নভেম্বরের মধ্যে চার মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। তবে কেউ এতে সাড়া দেবেন বলে মনে হয় না। তবে এমন অনেক মন্ত্রী আছেন, যারা ড. শাহদীন মালিকের দেয়া আইনি নোটিশ নিয়ে চিন্তিত হতে পারেন। এ পর্যন্ত যারা নোটিশ পেয়েছেন তারা হলেন- পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। নোটিশ দেয়ার ঘটনায় পরিকল্পনা মন্ত্রী এএইচএম মোস্তফা কামালের নামটিও আলোচনায় এসেছে। কারণ তিনি দ্বৈত ভূমিকা পালন করছেন। তিনি একই সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল আইসিসি’র প্রেসিডেন্টের পদে রয়েছেন। সার্বক্ষণিক এই পদে দায়িত্ব পালনের জন্য তার বেতন-ভাতার পরিমাণ জানা যায়নি। তবে আইসিসি’র বর্তমান সিইও’র বার্ষিক বেতন হচ্ছে ১০ লাখ ডলার।
অনেকে অবশ্য যুক্তি দিচ্ছেন যে, তিনি আইসিসি’র সভাপতির পদে অবৈতনিক দায়িত্ব পালন করছেন। তাই তার ওই পদে থাকা লাভজনক বলে গণ্য হবে না। তার বিষয়টি সংবিধানের ১৪৭ অনুচ্ছেদের আওতায় পড়বে না। কিন্তু আইসিসি’র ইতিহাসে অবৈতনিক পদে থেকেও দ্বৈত ভূমিকা পালন করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন বিখ্যাত ভারতীয় ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার। ২০০৮ সালে তিনি আইসিসি’র চেয়ারম্যান ছিলেন। পদটি অনারারি। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিতর্কের মুখে তাকে আইসিসি’র চেয়ারম্যানের পদে ইস্তফা দিতে হয়েছিল। ২০০৮ সালের ৮ই মে তিনি পদত্যাগ করেন। গাভাস্কার সংবাদপত্রে ক্রিকেট বিষয়ে কলাম লিখতেন। ২০০৮ সালের সিডনি টেস্টে গাভাস্কার ম্যাচ রেফারির কঠোর সমালোচনা করে কলাম লিখেছিলেন। আর একে বড় ধরনের স্বার্থের সংঘাত হিসেবে দেখা হলো। সুনীল পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন, পরিকল্পনা মন্ত্রীর পদে থাকা ও আইসিসি প্রেসিডেন্টের পদে থাকার মধ্যে সংঘাত রয়েছে। তবে তা দু’জায়গা থেকে বেতনভাতা গ্রহণ করা বা না করার দিক থেকে বিচার্য নয়।
সংবিধানের ১৪৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘সরকারের কোন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী পদে নিযুক্ত বা কর্মরত ব্যক্তি কোন লাভজনক পদ কিংবা বেতনাদিযুক্ত পদ বা মর্যাদায় বহাল হবেন না কিংবা মুনাফালাভের উদ্দেশ্যযুক্ত কোন কোম্পানি, সমিতি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় বা পরিচালনায় কোনরূপ অংশগ্রহণ করবেন না।’ তাই প্রথম প্রশ্ন আইসিসি’র সভাপতির পদ কি ‘কোন লাভজনক পদ’? এটা কি ‘বেতনাদিযুক্ত পদ’? এর উত্তর স্পষ্ট নয়। আইসিসি’র বিধিতে কি বলা আছে তা পরীক্ষা করে দেখা দরকার। তবে তৃতীয় প্রশ্ন আইসিসি প্রেসিডেন্টের পদে বহাল থাকার ফলে তেমন একটি ‘মর্যাদায়’ (বাস্তবে বেতন পাওয়ার দরকার নেই) পরিকল্পনা মন্ত্রী অধিষ্ঠিত আছেন বলে প্রতীয়মান হয় কিনা? এর উত্তরে কিন্তু সরাসরি না বলা কঠিন। বরং মনে হয় তেমন একটি পদমর্যাদা তিনি ভোগ করতে পারেন। সুতরাং পরিকল্পনা মন্ত্রীকেও একটি ব্যাখ্যা দিতে হবে। আইনি নোটিশ পেয়ে ভূমি প্রতিমন্ত্রী একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলার চেষ্টা করেছেন যে, তার বিষয়টি অযোগ্যতার মধ্যে পড়ে না।
উল্লেখ্য, বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ দাবি করেন যে, ভারতের সংবিধানে বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪৭ অনুচ্ছেদের মতো কোন বিধান নেই। ২০১২ সালে কৃষিমন্ত্রী থাকাকালে শারদ পাওয়ারের আইসিসি’র সভাপতির পদে ছিলেন। কিন্তু সেই দৃষ্টান্ত থেকে পরিকল্পনামন্ত্রী সুবিধা নিতে পারবেন বলে প্রতীয়মান হয় না।
এর আগে বাংলাদেশ সংবিধানের ১৪৭ অনুচ্ছেদ নিয়ে আদালতে কর্মরত বিচারকদের নিয়ে আইনি লড়াই দেখা গেছে। কর্মরত বিচারপতিরা একই সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদে বহাল থাকতে পারেন কিনা তা নিয়ে আদালত ফয়সালা দিয়েছেন। সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন- এটা তারা পারেন না। ওই রায়ের পর নির্বাচন কমিশনে আর সুপ্রিম কোর্টের কর্মরত বিচারকদের নিয়োগ দেয়া হয়নি। তবে ইতিহাসে এই প্রথম ১৪৭ অনুচ্ছেদের আওতায় মন্ত্রীদের লাভজনক বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লো।
বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্নার পক্ষে এ সপ্তাহে চার মন্ত্রীকে নোটিশ দিলেন। ড. শাহদীন বলেন, মন্ত্রী থাকা অবস্থায় লাভজনক পদে থাকা সংবিধানের ১৪৭ অনুচ্ছেদের সরাসরি লঙ্ঘন। এর ফলে তারা মন্ত্রী থাকার অযোগ্য হয়ে পড়েছেন। এ কারণে ১৫ই নভেম্বরের মধ্যে তাদের পদত্যাগ দাবি করে আইনি নোটিশ দেয়া হয়েছে। নোটিশে সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে ১৫ই নভেম্বরের মধ্যে এ চার মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। অন্যথায় হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হবে বলে নোটিশে জানানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার প্রথমে পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে ও পরে অন্য তিনজনকে একই ধরনের আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় লাভজনক কোম্পানির পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত থাকা যায় না। কিন্তু চার মন্ত্রী বিভিন্ন লাভজনক কোম্পানির পরিচালক পদে রয়েছেন। এটা সংবিধানের ১৪৭ অনুচ্ছেদের সরাসরি লঙ্ঘন।
মন্ত্রী ছাড়াও প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, নির্বাচন কমিশনার ও সরকারি কর্মকমিশনের সদস্যের বেলায়ও সংবিধানের এ ধারা প্রযোজ্য।
গণপূর্ত মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন পেনিনসুলা চিটাগাং লিমিটেডের চেয়ারম্যান, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ শাশা ডেনিমস লিমিটেডের পরিচালক, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ আরামিট সিমেন্ট লিমিটেড এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেড ও সানলাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের পরিচালক পদে আছেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোন শেয়ারধারী পরিচালক হলে সেটিকে লাভজনক পদ হিসেবে গণ্য করা হয় না। কিন্তু সাংবিধানিক দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের বেলায় কোম্পানির পরিচালক পদ লাভজনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, পরিচালনা পর্ষদের সভায় অংশ নিলে পরিচালকদের সম্মানী দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, অতীতে অনেকেই মন্ত্রী হওয়ার আগে অন্য লাভজনক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তবে গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন স্বীকার করেন যে, ‘পেনিনসুলা তার পারিবারিক ও ব্যক্তিগত ব্যবসা। বর্তমানে এটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি এবং তিনি সেটির চেযারম্যান। প্রতিষ্ঠানটি সরকারের সঙ্গে কোন ব্যবসা করে না। মন্ত্রী হলে ব্যবসা করা যাবে না, এমন কোন বিধানের কথা তার জানা নেই।’
তবে ভূমি প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর আমি চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দিয়েছি। তবে দুই কোম্পানিতেই আমি পরিচালক হিসেবে আছি।’ তার যুক্তি, পারিবারিকভাবে তিনি অনেক ব্যবসায়িক সম্পদের উত্তরাধিকারী। এগুলো ছেড়ে দেয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর মন্ত্রী থাকতে ফারমার্স ব্যাংক নামে তার মালিকানাধীন একটি ব্যাংকের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে গোড়াতে তাকে চেয়ারম্যান ও পরিচালক রেখে ফারমার্স ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদনের আবেদন জানানো হয়। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক অনানুষ্ঠানিকভাবে আপত্তি তোলে। এরপরই তিনি চেয়ারম্যান ও পরিচালক পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন। পরে মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়ার পর তিনি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন।
অনেকে অবশ্য যুক্তি দিচ্ছেন যে, তিনি আইসিসি’র সভাপতির পদে অবৈতনিক দায়িত্ব পালন করছেন। তাই তার ওই পদে থাকা লাভজনক বলে গণ্য হবে না। তার বিষয়টি সংবিধানের ১৪৭ অনুচ্ছেদের আওতায় পড়বে না। কিন্তু আইসিসি’র ইতিহাসে অবৈতনিক পদে থেকেও দ্বৈত ভূমিকা পালন করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন বিখ্যাত ভারতীয় ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার। ২০০৮ সালে তিনি আইসিসি’র চেয়ারম্যান ছিলেন। পদটি অনারারি। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিতর্কের মুখে তাকে আইসিসি’র চেয়ারম্যানের পদে ইস্তফা দিতে হয়েছিল। ২০০৮ সালের ৮ই মে তিনি পদত্যাগ করেন। গাভাস্কার সংবাদপত্রে ক্রিকেট বিষয়ে কলাম লিখতেন। ২০০৮ সালের সিডনি টেস্টে গাভাস্কার ম্যাচ রেফারির কঠোর সমালোচনা করে কলাম লিখেছিলেন। আর একে বড় ধরনের স্বার্থের সংঘাত হিসেবে দেখা হলো। সুনীল পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন, পরিকল্পনা মন্ত্রীর পদে থাকা ও আইসিসি প্রেসিডেন্টের পদে থাকার মধ্যে সংঘাত রয়েছে। তবে তা দু’জায়গা থেকে বেতনভাতা গ্রহণ করা বা না করার দিক থেকে বিচার্য নয়।
সংবিধানের ১৪৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘সরকারের কোন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী পদে নিযুক্ত বা কর্মরত ব্যক্তি কোন লাভজনক পদ কিংবা বেতনাদিযুক্ত পদ বা মর্যাদায় বহাল হবেন না কিংবা মুনাফালাভের উদ্দেশ্যযুক্ত কোন কোম্পানি, সমিতি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় বা পরিচালনায় কোনরূপ অংশগ্রহণ করবেন না।’ তাই প্রথম প্রশ্ন আইসিসি’র সভাপতির পদ কি ‘কোন লাভজনক পদ’? এটা কি ‘বেতনাদিযুক্ত পদ’? এর উত্তর স্পষ্ট নয়। আইসিসি’র বিধিতে কি বলা আছে তা পরীক্ষা করে দেখা দরকার। তবে তৃতীয় প্রশ্ন আইসিসি প্রেসিডেন্টের পদে বহাল থাকার ফলে তেমন একটি ‘মর্যাদায়’ (বাস্তবে বেতন পাওয়ার দরকার নেই) পরিকল্পনা মন্ত্রী অধিষ্ঠিত আছেন বলে প্রতীয়মান হয় কিনা? এর উত্তরে কিন্তু সরাসরি না বলা কঠিন। বরং মনে হয় তেমন একটি পদমর্যাদা তিনি ভোগ করতে পারেন। সুতরাং পরিকল্পনা মন্ত্রীকেও একটি ব্যাখ্যা দিতে হবে। আইনি নোটিশ পেয়ে ভূমি প্রতিমন্ত্রী একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলার চেষ্টা করেছেন যে, তার বিষয়টি অযোগ্যতার মধ্যে পড়ে না।
উল্লেখ্য, বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ দাবি করেন যে, ভারতের সংবিধানে বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪৭ অনুচ্ছেদের মতো কোন বিধান নেই। ২০১২ সালে কৃষিমন্ত্রী থাকাকালে শারদ পাওয়ারের আইসিসি’র সভাপতির পদে ছিলেন। কিন্তু সেই দৃষ্টান্ত থেকে পরিকল্পনামন্ত্রী সুবিধা নিতে পারবেন বলে প্রতীয়মান হয় না।
এর আগে বাংলাদেশ সংবিধানের ১৪৭ অনুচ্ছেদ নিয়ে আদালতে কর্মরত বিচারকদের নিয়ে আইনি লড়াই দেখা গেছে। কর্মরত বিচারপতিরা একই সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদে বহাল থাকতে পারেন কিনা তা নিয়ে আদালত ফয়সালা দিয়েছেন। সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন- এটা তারা পারেন না। ওই রায়ের পর নির্বাচন কমিশনে আর সুপ্রিম কোর্টের কর্মরত বিচারকদের নিয়োগ দেয়া হয়নি। তবে ইতিহাসে এই প্রথম ১৪৭ অনুচ্ছেদের আওতায় মন্ত্রীদের লাভজনক বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লো।
বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্নার পক্ষে এ সপ্তাহে চার মন্ত্রীকে নোটিশ দিলেন। ড. শাহদীন বলেন, মন্ত্রী থাকা অবস্থায় লাভজনক পদে থাকা সংবিধানের ১৪৭ অনুচ্ছেদের সরাসরি লঙ্ঘন। এর ফলে তারা মন্ত্রী থাকার অযোগ্য হয়ে পড়েছেন। এ কারণে ১৫ই নভেম্বরের মধ্যে তাদের পদত্যাগ দাবি করে আইনি নোটিশ দেয়া হয়েছে। নোটিশে সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে ১৫ই নভেম্বরের মধ্যে এ চার মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। অন্যথায় হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হবে বলে নোটিশে জানানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার প্রথমে পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে ও পরে অন্য তিনজনকে একই ধরনের আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় লাভজনক কোম্পানির পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত থাকা যায় না। কিন্তু চার মন্ত্রী বিভিন্ন লাভজনক কোম্পানির পরিচালক পদে রয়েছেন। এটা সংবিধানের ১৪৭ অনুচ্ছেদের সরাসরি লঙ্ঘন।
মন্ত্রী ছাড়াও প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, নির্বাচন কমিশনার ও সরকারি কর্মকমিশনের সদস্যের বেলায়ও সংবিধানের এ ধারা প্রযোজ্য।
গণপূর্ত মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন পেনিনসুলা চিটাগাং লিমিটেডের চেয়ারম্যান, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ শাশা ডেনিমস লিমিটেডের পরিচালক, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ আরামিট সিমেন্ট লিমিটেড এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেড ও সানলাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের পরিচালক পদে আছেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোন শেয়ারধারী পরিচালক হলে সেটিকে লাভজনক পদ হিসেবে গণ্য করা হয় না। কিন্তু সাংবিধানিক দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের বেলায় কোম্পানির পরিচালক পদ লাভজনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, পরিচালনা পর্ষদের সভায় অংশ নিলে পরিচালকদের সম্মানী দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, অতীতে অনেকেই মন্ত্রী হওয়ার আগে অন্য লাভজনক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তবে গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন স্বীকার করেন যে, ‘পেনিনসুলা তার পারিবারিক ও ব্যক্তিগত ব্যবসা। বর্তমানে এটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি এবং তিনি সেটির চেযারম্যান। প্রতিষ্ঠানটি সরকারের সঙ্গে কোন ব্যবসা করে না। মন্ত্রী হলে ব্যবসা করা যাবে না, এমন কোন বিধানের কথা তার জানা নেই।’
তবে ভূমি প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর আমি চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দিয়েছি। তবে দুই কোম্পানিতেই আমি পরিচালক হিসেবে আছি।’ তার যুক্তি, পারিবারিকভাবে তিনি অনেক ব্যবসায়িক সম্পদের উত্তরাধিকারী। এগুলো ছেড়ে দেয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর মন্ত্রী থাকতে ফারমার্স ব্যাংক নামে তার মালিকানাধীন একটি ব্যাংকের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে গোড়াতে তাকে চেয়ারম্যান ও পরিচালক রেখে ফারমার্স ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদনের আবেদন জানানো হয়। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক অনানুষ্ঠানিকভাবে আপত্তি তোলে। এরপরই তিনি চেয়ারম্যান ও পরিচালক পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন। পরে মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়ার পর তিনি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন।
No comments