হ্যান্ডকাফ নিয়ে রহস্য by নুরুজ্জামান লাবু
রাজধানীর বনশ্রীতে চালককে খুন করে ছিনতাই হওয়া সেই প্রাইভেট কারটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়। এদিকে পুলিশ পরিচয়ে আটকের পর হ্যান্ডকাফ পরিয়ে চালক ফারুক খানকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সেই হ্যান্ডকাফ নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিহতের হাতে থাকা হ্যান্ডকাফটিতে ‘পুলিশ’ লেখা ছিল। এছাড়া পুলিশের নিজস্ব হ্যান্ডকাফের সঙ্গে নিহতের হাতে থাকা হ্যান্ডকাফের হুবহু মিল রয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে পুলিশের কেউ জড়িত রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ছিনতাই হওয়া প্রাইভেট কারটি উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু প্রাইভেট কারের কাউকে আটক করা যায়নি। খুনিদের আটকের জন্য পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।
সূত্র জানায়, সোমবার রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের নাজিরাবাদ হাউজিং এলাকায় পুলিশের একটি চেকপোস্ট ছিল। ওই সড়ক দিয়ে প্রাইভেট কারটি অতিক্রম করার সময় পুলিশ থামানোর সিগন্যাল দেয়। কিন্তু পুলিশের সিগন্যাল অমান্য করে প্রাইভেট কারটি দ্রুত চলে যেতে থাকলে পুলিশের সন্দেহ হয়। পরে পুলিশও প্রাইভেট কারটিকে ধাওয়া করে। ধাওয়া খেয়ে কিছু দূর গিয়ে প্রাইভেট কার আরোহীরা গাড়ি রেখে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে গাড়িটি জব্দ করে। বিষয়টি রামপুরা থানা পুলিশকে জানানো হলে রামপুরা থানা পুলিশ ছিনতাই হওয়া গাড়ির মালিক ও কাগজপত্র নিয়ে তা শনাক্ত করে। রামপুরা থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর ভূঁইয়া বলেন, গাড়িটি উদ্ধার হলেও গাড়িতে থাকা ছিনতাইকারীদের কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, নিহত ফারুক খানের হাতে পড়ানো অবস্থায় উদ্ধারকৃত হ্যান্ডকাফটি নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ফারুক খানের প্রাইভেট কারটি প্রথমে সিগন্যাল দিয়ে থামানো হয়। যারা থামিয়েছিলেন তাদের প্রত্যেকেরই পড়নে পুলিশের পোশাক ছিল। তারা প্রাইভেট কার চালক ফারুক খানকে গাড়ি থেকে নামিয়ে প্রথমে হ্যান্ডকাফ পরায়। পড়ে গাড়িটি নিয়ে যাওয়ার সময় ফারুক বাধা দিলে তার চোয়াল লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। পুলিশের পোশাক দেখে আশপাশের নিরাপত্তারক্ষীরা কেউ এগিয়ে যাওয়ার সাহস পায়নি। গাড়িটি নিয়ে পুলিশ পরিচয়ধারী ছিনতাইকারীরা চলে গেলে স্থানীয়রা এগিয়ে যান। খবর পেয়ে থানা পুলিশ এসে তার লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। নিহতের হাতে পরানো হ্যান্ডকাফটির সঙ্গে আসল হ্যান্ডকাফের হুবহু মিল রয়েছে। নকল হ্যান্ডকাফ বানানো হলে কিছু তারতম্য থাকার কথা। এ কারণে এ হ্যান্ডকাফ নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করতে পারলে হ্যান্ডকাফের উৎস জানা যাবে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, পুলিশের অন্য পোশাক খোলাবাজারে পাওয়া গেলেও হ্যান্ডকাফ সরবরাহ করা হয় পুলিশের সংশ্লিষ্ট শাখার সাপ্লাই বিভাগ থেকে। যে কোন থানা বা ইউনিটের চাহিদা অনুযায়ী হ্যান্ডকাফ সরবরাহ করার নিয়ম রয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ সব হ্যান্ডকাফ টেন্ডারের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়।
খোলাবাজারে পুলিশের সরঞ্জাম: এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে রাজধানীর পলওয়েল সুপারমার্কেট, রাজারবাগ পুলিশ লাইনের তিন নম্বর গেটের বিপরীতে জেডআর টাওয়ার, লালবাগ, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও, মোহাম্মদপুর, জুরাইন ও কচুক্ষেতের একটি শপিং মলে পুলিশের বিভিন্ন সরঞ্জাম বিক্রি হয়। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ সদর দপ্তরের অনুমোদনের বাইরে কিছু অবৈধ ব্যবসায়ী এসব সরঞ্জাম সন্ত্রাসীদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করে থাকে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব বেচাকেনা চললেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এদিকে কোন নজরদারি নেই। ফলে সন্ত্রাসীরা পুলিশের পোশাক ও সরঞ্জাম ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে অপরাধ করছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে পুলিশের পোশাক ও সরাঞ্জাম বিক্রির ১০৩টি অনুমোদিত দোকান রয়েছে। সাধারণত পুলিশের সরঞ্জাম বিক্রির সময় ক্রেতা প্রকৃতই পুলিশ সদস্য কিনা তা নিশ্চিত হয়ে বিক্রি করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু যে কেউ চাইলেই দোকান থেকে এসব জিনিস কিনতে পারছেন। কিছু দিন আগে এসব দোকান থেকে হ্যান্ডকাফ, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হেলমেট ও স্প্রিং ছড়ি বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কিন্তু তারপর গোপনে গোপনে এসব বিক্রি চলছেই।
No comments