সিদ্ধিরগঞ্জ পুলিশের তালিকায় ৭৩ মাদক ব্যবসায়ী by বিল্লাল হোসেন রবিন
সিদ্ধিরগঞ্জের মাদকের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে ২ শতাধিক ছোট-বড় মাদক ব্যবসায়ী। তবে পুলিশের খাতায় নাম রয়েছে মাত্র ৭৩ জনের। এসব মাদক ব্যবসায়ী কেউ ইয়াবা, কেউ হেরোইন, কেউ ফেনসিডিল, কেউ গাঁজা ও মদ বিক্রি করছে। এমনিতে পুলিশ তাদের কিছু বলে না, তবে মাসোহারায় হেরফের হলেই মাঝেমধ্যে লোকদেখানো অভিযান চালায়। এ অভিযোগ খোদ মাদক বিক্রেতাদের। একাধিক মাদক ব্যবসায়ী জানায়, সাংবাদিকরা লেখলে কি হবে, বিক্রি তো আর বন্ধ হবে না। পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের মাসোহারার ‘রেট’ বরং বৃদ্ধি পাবে। তবে আশঙ্কাজনক তথ্য হলো, মাদকের আস্তানায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এক দারোগার তৎপরতা মাদক ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করে তুলেছে। ওই দারোগা মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে প্রিয় লোক হিসেবে ইতিমধ্যে জায়গা করে নিলেও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। সূত্র মতে, নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সেভেন মার্ডারের পর সিদ্ধিরগঞ্জের মাদকের স্বর্গরাজ্য শিমরাইল ট্রাক টার্মিনাল এলাকা থেকে নুর হোসেনের মাদকের আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। ওই আস্তানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নতুন করে সক্রিয় হয়ে ওঠে সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার মাদক ব্যবসায়ীরা। এদিকে মাদকের ভয়াবহতায় নিজেদের সন্তানদের নিয়ে উদ্বিগ্ন একাধিক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১০টি ওয়ার্ড সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায়। ১০ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে সংরক্ষিত ৩ জন নারী কাউন্সিলরও রয়েছেন। কিন্তু মাদকের থাবায় এলাকার যুব সমাজ আক্রান্ত হলেও এই ১৩ জন জনপ্রতিনিধির যেন কিছুই করার নেই।
পুলিশের তালিকায় ৭৩ জন যারা-
সূত্রমতে, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীর ৭৩ জন। তাদের মধ্যে সেভেন মার্ডারের প্রধান আসামি নুর হোসেন ও তার ভাই নুরু মিয়া পালিয়ে যায়। বাকিরা হচ্ছে- তাসলিমা, সলিমা, শমসেরের ছেলে আলী নূর, আলী আহম্মদ, আলমগীর, আফানুর, তকলিক, মজিবুর, কাজল ভা-ারী, শাফি, কামাল, জাকির হোসেন, সারেং, জুলহাস, মতিন, সালমা, জয়নব, রাজীব, জলিল, ডাকাত সরল, বাক্কু, আমির হোসেন মেঙ্গা, রিয়াজ ভূঁইয়া, ইসলাম, নজরুল, আনু, খোকন, আলী, আয়েশা, সাধু, সাজু, জায়েদুল, মজিবুর, শরীফ, ফারুক, জহুরা আক্তার কালী, শাহাবুদ্দিন, সাহাবুদ্দিন, আলমগীর, মিজান, বাশার, হাবিব, আলম, নাজমা আক্তার নাজু, রোস্তম আলী, সাবেদ আলী, জেসমিন, মর্জিনা, আবদুর রহমান, দিলি, সালাউদ্দিন, সেলিম, আরিফ, শিপন, লিটন, নূর শিপন (গ্রেপ্তার), বানেছা, ইসমাইল, সোহেল, সৈয়দ মিয়া, মোস্তফা, আলমগীর, স্ত্রী, শাহীন মোল্লা (গ্রেপ্তার), সামসিন মোল্লা, আলীম, কিলার জসিম, আলমগীর, নাসু, হাজুরী, রুবেল, পারভেজ, রূপচান, রুবেল, আব্বাস, লাকী আক্তার, রাজিব, আলাউদ্দিন প্রমুখ। তালিকাভুক্ত এসব মাদক ব্যবসায়ী ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবা ট্যাবলেট, গাঁজা, মদ, বিয়ারসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের ব্যবসা চালাচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, থানা এলাকার অসংখ্য মাদক সম্রাট ও পরিচিত মাদক বিক্রেতাদের নাম পুলিশের তালিকাভুক্ত হয়নি। বড় বড় মাদক সম্রাটের নাম তালিকায় স্থান না পাওয়া রহস্যজনক বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
যে সব মাদক সম্রাট ও ব্যবসায়ীদের নাম পুলিশের তালিকায় ওঠেনি স্থানীয়দের সূত্রমতে তারা হলো- কালা নাসির, মখলেছ, বাবুল, সাইদুল, ইমু, হেলেনা, সালমা, সাহিদা, নুরুন্নাহার, নুরজাহান, বক্কা, মোস্তফা, জাহাঙ্গীর, ল্যাংড়া মোক্তার, কামাল, খলিল, রূপা, চান মিয়া, সুমী, নাজমা, নাসিমা, সুমন, রুবেল, সেলিম, মহিন, বাবু, ছোটন, রিয়াজ, হাসনাত, তরিকুল, আবুল, মুন্না, শাহ আলম, মোস্তফা, মিলন, ফয়সাল, আসলাম, মঞ্জু, কবির, মোক্তার, নুরা, গিয়াস উদ্দিন, টুন্ডা রুস্তম, পরশ, খুনি মোস্তফা, ডাকাত সামছু, ফারুক, মাসুদ রানা, কাঁচপুর সেতু এলাকার রুবেল, নুরু মোল্লা, আনোয়ার, হিরা, মজনু, মনির, আলামিন, কুট্টি, কুদ্দুছ, কানা শাহিন, বদরউদ্দিন, মাজেদা, সোহেল, ফিরোজ, শরীফ, সক্কু, চুইল্লা সেলিম, মনু, রহমান, কাদির, ডলার, কনক, বাবু, আব্দুল মান্নান, শামীম, শাজাহান, জিল্লুর রহমান, কাইল্লা লুৎফর, শহিদুল্লাহ, আবুল হোসেন, মাসুদ, জাহাঙ্গীর হোসেন, টুন্ডা সেলিম, আমির হোসেন, তমু মুন্সীর হানিফ, মোটা আলমগীর, শিউলি, মনজু মিয়া, দীপালি, সহযোগী শাহানাজ, ইতি আক্তার, আসলাম, কুট্টি, শাহিদা, শাহাদাত, খোকনী, শহীদুল্লাহ, নবী, খোকন মোল্লা, কালা মানিক, কেটু সুমন, আরিফ, দেলোয়ার হোসেন দেলু, মাসুম, রাজন, হাজেরা, টেগরা মতি, ভোলি, কালো, ডলি, আসগর, দুখিনী, বাবু, জোসনা, মুন্না, আরমান, রাবেয়া, রহমত, আজগর, আবুল কাশেম, আরিফ, মোহাম্মদ আলী, শুভ, আল আমিন, রাজু, আবদুল জব্বার, দেলু, জালাল, আল আমিন প্রমুখ। অভিযোগ রয়েছে, সিদ্ধিরগঞ্জের সাইলো রোড ও বাগানবাড়ি এলাকার মাদক স্পটসহ বেশ কয়েকটি বড় বড় মাদক স্পটে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওই দারগার। তার সঙ্গে আরও কয়েক জন অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা বিভিন্ন মাদক স্পটে যাতায়াত করে। ফলে ওই সব স্পটের মাদক ব্যবসায়ীরা দম্ভের সহিত বলে বেড়ায় পুলিশকে মাসোহারা দিয়েই ব্যবসা করছি। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে রোববার বিকালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এস আই মনসুর আলী আরিফের মোবাইলে ফোন করলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়।
No comments