সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য by ড. একেএম শাহনাওয়াজ
প্রাচীনকাল থেকেই সাধারণ হিন্দু ও বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী উত্তর ও দক্ষিণ-পূর্ববঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে আসছিল। বর্ণ হিন্দুদের মূল আস্তানা ছিল পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু সেন রাজত্বকালে উত্তর ও দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় রক্ষণশীল ব্রাহ্মণদের দাপটে সাধারণ বাঙালির মধ্যে নৈরাজ্য দেখা দেয়। বাংলার এই দুই অঞ্চলে তাই মুসলিম ধর্ম প্রচারকদের প্রাথমিক সাফল্য ছিল উল্লেখযোগ্য। সংশিষ্ট অঞ্চলের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা পর্যালোচনা করলে এ সত্যটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
সেন শাসন যুগে ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজ ও রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রকরা সাধারণ মানুষকে যেভাবে অধিকারচ্যুত করে রেখেছিলেন, তাতে মানুষের বিপন্নবোধ করার যথেষ্ট কারণ ছিল। রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের কোনোরকম আশ্বাস দিতে পারেনি, দিয়েছে ঘৃণা আর অবজ্ঞা। অর্থনৈতিক বিপর্যয় তাদের জীবনকে ওষ্ঠাগত করে তুলেছিল। ফলে বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই তারা এক ধরনের পরিবর্তন চাচ্ছিল। তাই সেন শাসনে নির্যাতিত বাঙালি ভাগ্য পরিবর্তনকারী শক্তির পরিচয় খুঁজতে যায়নি। সেই বিচারশক্তি তখন তাদের থাকার কথা নয়। শুধু এই প্রেক্ষাপটে বখতিয়ার খলজির আগমন মুক্তির বাণী হিসেবেই তাদের কাছে মনে হয়েছে। ফলে বখতিয়ার স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে কোনো বাধা পাননি। কখনও কখনও পেয়েছেন নীরব সমর্থন। এই প্রেক্ষাপটের পথ ধরেই ভবিষ্যতে বাংলায় স্বাধীন সুলতানি শাসন প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হয়।
রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, মধ্যযুগে বাংলার ইতিহাস মুসলিম শাসনের ইতিহাস। বাংলায় মুসলমানদের আগমন এবং দীর্ঘদিন তাদের হাতে রাজদণ্ড থাকায় এদেশের সংস্কৃতি ও সভ্যতায় একটি বড় রকমের আলোড়ন আসে। মুসলমান সাধক ও শাসকশ্রেণীর মধ্যে রক্ষণশীলতার মনোভঙ্গি তেমন ছিল না। তাই মধ্যযুগের কালপর্বের সূচনাতেই গ্রহণ-বর্জনের ঔদার্যে এদেশের সনাতন সাংস্কৃতিক চেতনা মুসলিম ধ্যান-ধারণায় জায়গা করে নেয়। উভয় ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যে এক ধরনের সমঝোতা গড়ে ওঠে। মধ্যযুগের বাংলার জনসংখ্যার পরিসংখ্যান জানার কোনো উপায় নেই। বিভিন্ন ধর্মের জনগোষ্ঠীর আনুপাতিক হার তাই বৈজ্ঞানিকভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। তবে মুসলমান সমাজ বিকাশের ধারা লক্ষ্য করে একটি সাধারণ অনুমান করা চলে। এই অনুমানকে বাস্তবতার নিরিখে মিলিয়ে নেয়ার সুযোগ আসে ব্রিটিশ শাসন যুগে ১৮৭২ সালের আদমশুমারি থেকে। এতে দেখা যায়, বাংলায় মুসলমান জনগোষ্ঠী মোট জনসংখ্যার বড় অংশ ছিল। উনিশ শতকের শেষে এসে দেখা যায় বাংলায় মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ। এর দুই-তৃতীয়াংশ বাংলার পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বে এবং তিন-পঞ্চমাংশ উত্তর বাংলায় বসবাস করছে। আদমশুমারি যে ধারণা দেয় তার সঙ্গে মধ্যযুগে মুসলিম সমাজ বিকাশের ধারাটি সম্পর্কযুক্ত। আদমশুমারি-পূর্ব (১৮০০-১৮৫০খ্রি.) সময়কালের জনসংখ্যা সম্পর্কে এডওয়ার্ড থরনটনের ‘গেজেটিয়ার’ গ্রন্থ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, চৌদ্দ ও পনের শতকে এবং সতের শতকে মুসলিম জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছিল। এ তথ্য থেকে ধারণা করা যায়, একটি অন্তর্নিহিত শক্তি মুসলমানদের এদেশে আগমন এবং তার অনুষঙ্গী হয়ে সমাজ ও সংস্কৃতির ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। এ দেশে মুসলমানদের আগমনের ধারা অনুসন্ধানের মাধ্যমে সেই শক্তির অন্বেষণ করা যেতে পারে।
সেন শাসন যুগে ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজ ও রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রকরা সাধারণ মানুষকে যেভাবে অধিকারচ্যুত করে রেখেছিলেন, তাতে মানুষের বিপন্নবোধ করার যথেষ্ট কারণ ছিল। রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের কোনোরকম আশ্বাস দিতে পারেনি, দিয়েছে ঘৃণা আর অবজ্ঞা। অর্থনৈতিক বিপর্যয় তাদের জীবনকে ওষ্ঠাগত করে তুলেছিল। ফলে বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই তারা এক ধরনের পরিবর্তন চাচ্ছিল। তাই সেন শাসনে নির্যাতিত বাঙালি ভাগ্য পরিবর্তনকারী শক্তির পরিচয় খুঁজতে যায়নি। সেই বিচারশক্তি তখন তাদের থাকার কথা নয়। শুধু এই প্রেক্ষাপটে বখতিয়ার খলজির আগমন মুক্তির বাণী হিসেবেই তাদের কাছে মনে হয়েছে। ফলে বখতিয়ার স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে কোনো বাধা পাননি। কখনও কখনও পেয়েছেন নীরব সমর্থন। এই প্রেক্ষাপটের পথ ধরেই ভবিষ্যতে বাংলায় স্বাধীন সুলতানি শাসন প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হয়।
রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, মধ্যযুগে বাংলার ইতিহাস মুসলিম শাসনের ইতিহাস। বাংলায় মুসলমানদের আগমন এবং দীর্ঘদিন তাদের হাতে রাজদণ্ড থাকায় এদেশের সংস্কৃতি ও সভ্যতায় একটি বড় রকমের আলোড়ন আসে। মুসলমান সাধক ও শাসকশ্রেণীর মধ্যে রক্ষণশীলতার মনোভঙ্গি তেমন ছিল না। তাই মধ্যযুগের কালপর্বের সূচনাতেই গ্রহণ-বর্জনের ঔদার্যে এদেশের সনাতন সাংস্কৃতিক চেতনা মুসলিম ধ্যান-ধারণায় জায়গা করে নেয়। উভয় ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যে এক ধরনের সমঝোতা গড়ে ওঠে। মধ্যযুগের বাংলার জনসংখ্যার পরিসংখ্যান জানার কোনো উপায় নেই। বিভিন্ন ধর্মের জনগোষ্ঠীর আনুপাতিক হার তাই বৈজ্ঞানিকভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। তবে মুসলমান সমাজ বিকাশের ধারা লক্ষ্য করে একটি সাধারণ অনুমান করা চলে। এই অনুমানকে বাস্তবতার নিরিখে মিলিয়ে নেয়ার সুযোগ আসে ব্রিটিশ শাসন যুগে ১৮৭২ সালের আদমশুমারি থেকে। এতে দেখা যায়, বাংলায় মুসলমান জনগোষ্ঠী মোট জনসংখ্যার বড় অংশ ছিল। উনিশ শতকের শেষে এসে দেখা যায় বাংলায় মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ। এর দুই-তৃতীয়াংশ বাংলার পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বে এবং তিন-পঞ্চমাংশ উত্তর বাংলায় বসবাস করছে। আদমশুমারি যে ধারণা দেয় তার সঙ্গে মধ্যযুগে মুসলিম সমাজ বিকাশের ধারাটি সম্পর্কযুক্ত। আদমশুমারি-পূর্ব (১৮০০-১৮৫০খ্রি.) সময়কালের জনসংখ্যা সম্পর্কে এডওয়ার্ড থরনটনের ‘গেজেটিয়ার’ গ্রন্থ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, চৌদ্দ ও পনের শতকে এবং সতের শতকে মুসলিম জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছিল। এ তথ্য থেকে ধারণা করা যায়, একটি অন্তর্নিহিত শক্তি মুসলমানদের এদেশে আগমন এবং তার অনুষঙ্গী হয়ে সমাজ ও সংস্কৃতির ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। এ দেশে মুসলমানদের আগমনের ধারা অনুসন্ধানের মাধ্যমে সেই শক্তির অন্বেষণ করা যেতে পারে।
No comments