বিশুদ্ধ রাজাকারের মামলায় গ্রেফতারের অপেক্ষায় আছি : কাদের সিদ্দিকী
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বলেছেন, এখন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রং তামাশা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবকে ভূলণ্ঠিত করা হচ্ছে। একজন রাজাকারের করা মানহানির মামলায় মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা মুক্তিযুদ্ধের জন্য চরম অপমান। একজন মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করেছেন। আমার মতো একজন স্বাধীনতা সংগ্রামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের মহিমাকে ভুলুণ্ঠিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে মহিউদ্দিন খান আলমগীরের মতো একজন বিশুদ্ধ রাজাকারের মামলায় আমি গ্রেফতার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। প্রয়োজনে আমি সারাজীবন জেলে থাকতে প্রস্তুত আছি, তবু রাজাকারকে রাজাকারই বলবো।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে মহিউদ্দিন খান আলমগীরের মতো একজন বিশুদ্ধ রাজাকারের মামলায় আমি গ্রেফতার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। প্রয়োজনে আমি সারাজীবন জেলে থাকতে প্রস্তুত আছি, তবু রাজাকারকে রাজাকারই বলবো।
ঢাকা সিএমএম আদালতের গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির প্রতিক্রিয়ায় বুধবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নিজ বাসভবনে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় দলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতিক, বঙ্গবীরের সহধর্মিনী সাবেক এমপি নাসরীন সিদ্দিকী, যুগ্ম-সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুর রহমান, ফরিদ আহমেদ, ছাত্রনেতা রিফাতুল ইসলাম দীপ, কাউসার আলম খান, সাইফুল ইসলাম শিমুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, একজন পাকিস্তানী অনুগত কর্মচারী, যার অপরাধ সাধারণ রাজাকারদের চেয়ে অনেক বেশি সেরকম একজন পাকিস্তানী সেবাদাসের মানহানির অভিযোগে একজন স্বাধীনতা সংগ্রামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা মানে সকল মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা। ‘৭১-এ আমরা ছিলাম বাংলাদেশ এবং মহিউদ্দিন খান আলমগীররা ছিল পাকিস্তানের অনুগত। দেড়’শ টাকার রাজাকারদের যারা লালন-পালন করেছেন আমি সাহস করে এমন একজন রাজাকারের পরিচয় প্রকাশ করে ভেবেছিলাম, বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার আমাকে পুরষ্কৃত করবে। অথচ আমার মতো একজন স্বাধীনতা সংগ্রামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের মহিমাকে ভুলুণ্ঠিত করা হয়েছে।
পাকিস্তানের পক্ষে যারা ডিসি, এসপি, ওসি দায়িত্ব পালন করেছে- তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবী জানিয়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, দেশের অবস্থা একেবারেই ভাল নয়। যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রশ্নে এ সরকার দলীয় সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠতে পারেনি। পারলে বাহবা পাবে। তিনি বলেন, যে মামলায় বাদী অনুপস্থিত থাকলে এমনিতেই মামলা খারিজ হয়ে যাওয়ার কথা। সেখানে বিচারক বাদীকে নোটিশ এবং আমার নামে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছে। এই মামলার সমন পেয়ে আমি আদালতে গিয়ে বলেছিলাম যে, আমি জামিন চাইতে আসিনি, আমাকে আদালতের হেফাজতে রাখা হোক। আদালত আমাকে আমার স্ত্রীর হেফাজতে থাকার সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দলের বার্ষিক সম্মেলনে তৎকালীন স্বরাষ্টমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীরকে রাজাকার বলায় আমার বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মহিউদ্দিন খান আলমগীর পাকিস্তানের দোসর, সহযোগী এবং বিশুদ্ধ রাজাকার ছিলেন। তিনি তখন পাকিস্তান সরকারের এডিসি ছিলেন। তার পরিচয় তুলে ধরায় সরকার ক্ষিপ্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এভাবে লাঞ্ছিত করায় আমি বিস্মিত।
বঙ্গবীর বলেন, ৫শ ধারায় দায়ের করা এই মামলার বাদী রুহুল আমিন মজুমদার নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বলেন। বর্তমানে তার বয়স ৫৭ বছর, মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলো ১৩ বা ১৪ বছর। তাকে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দিয়েছেন একজন প্রতিমন্ত্রী ও সচিব। ওটা ভূয়া। কোনো প্রতিমন্ত্রী বা সচিবের সার্টিফিকেটে মুক্তিযোদ্ধা হওয়া যায়না।
ওই সময় পাকিস্তান সরকারের সহযোগী কর্মকর্তা আর কারা কারা ছিলেন জানতে চাইলে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ১৯৭৬/৭৭ সালের বাংলা সিভিল লিস্ট দেখে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে বলেন, এসএম শফিউদ্দিন আজম, এসএম সানাউল হক, মফিজুর রহমান, তৎকালীন ডিসি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিন আহমদ, আবুল ফজল চৌধুরী, শায়েখ লতিফ, শামসুল হুদা, আশিকুর রহমান, মোফাজ্জেল করিমসহ আরো অনেকে।
তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ডিসি, এসপি, পুলিশসহ পাকিস্তান সরকারের উচ্চ পদস্ত বঙ্গালি কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাঁড় করানোর দাবি জানান।
নাসরীন কাদের সিদ্দিকী বলেন, বঙ্গবীর একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন রাজনীতিবিদ। তার বিরুদ্ধে অন্যায় করা হচ্ছে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তাকে গ্রেফতার করা নিয়ে আমি বা আমার পরিবারের কেউ ভীত নই।
No comments