মামলা নেয় না, ঘুষও ছাড়ে না
দোহার উপজেলার ধীৎপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ বোরহান উদ্দিন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা ষাট বছরের এই বৃদ্ধের চার হাত-পা ও মাথায় ব্যান্ডেজ। এক্স-রে রিপোর্টে দেখা গেল তার চারটি হাত-পা-ই ভাঙা। মাথার জখমও গুরুতর। সন্ত্রাসী হামলায় টেঁটা ও লাঠির নির্মম আঘাতে গুরুতর আহত শেখ বোরহানের মুখে কথা নেই ১২ দিন। কিন্তু এ ঘটনায় আজও মামলা করতে পারেনি ভুক্তভোগী পরিবারটি। বড় ছেলে মো. জালাল মামলা দায়েরের জন্য দোহার থানায় এজাহার নিয়ে গেলেও মামলা নেয়া হয়নি। মামলা রেকর্ড করার জন্য ওসি মাহমুদুল হক তাৎক্ষণিক ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। এ সময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হালিমের মাধ্যমে ওসিকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দেয়া হয়। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। ঘুষের পরিমাণ বাড়িয়ে এখন আরও দুই লাখ টাকা দাবি করা হচ্ছে।
এই হল রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী উপজেলা দোহারের ওসি মাহমুদুল হকের ঘুষ বাণিজ্যের ভয়াবহ চিত্র। আর এ রকম ঘটনা শুধু এই একটি নয়, প্রতিদিন অহরহ ঘটছে। তার থানায় ঘুষ ছাড়া কিছুই হয় না। আবার রিমান্ডের নামে মারধর বন্ধ করতে তাকে মোটা অংকের ঘুষ দিতে হয়। ভুক্তভোগীরাসহ এলাকার অনেকে জানিয়েছেন, এই ওসি এখানকার অঘোষিত সরকার। বলা যায়, তার নির্দেশের বাইরে কিছুই হয় না। তিনি কাউকে পাত্তা দেন না। কথায় কথায় নিজেকে সরকারের উপর মহলের খাস লোক বলে পরিচয় দেন। অথচ তার নানামুখী ঘুষ আদায়ের ফাঁদ আর অত্যাচারে এলাকার সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। যেখানে মাদক নিয়ন্ত্রণসহ সন্ত্রাস দমনে পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা রাখার কথা, সেখানে দোহারের ওসির অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন।
মোটা অংকের ঘুষ আদায়ের জন্য তিনি এলাকাজুড়ে বিরাট এক মাদক ও সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট লালন-পালন করেন। জনমনে এসব অভিযোগ ক্রমেই চাউর হচ্ছে। কিন্তু এই ওসি নাকি অধরা, যে কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা নিতে পারে না। এতে করে এলাকার সাধারণ মানুষের অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি। ওসির ভয়ে অধিকাংশ ভুক্তভোগী মুখ খুলতে চান না। দোহার থানা এলাকায় সরেজমিন অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
কেস স্টাডি ১ : শেখ বোরহানের ছেলে মো. জালালের প্রস্তুতকৃত এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ৩১ অক্টোবর উত্তর মৌড়া গ্রামের আলাউদ্দিন মাঝি, কালু মোড়ল ও মরিচপট্টি গ্রামের কফু মাঝিসহ বেশ কয়েকজন তার বাবাকে হত্যার উদ্দেশ্যে লাঠি, টেঁটা, হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে জখম করে। মুমূর্ষু অবস্থায় শেখ বোরহানকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে, অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পরে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। চিকিৎসরা জানান, বোরহান শেখের মাথায় গুরুতর জখম হওয়ায় তিনি কথা বলতে পারছেন না। আশংকা করা হচ্ছে, তার স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে। এছাড়া তার দুই হাত ও দুই পা ভাঙা, যা সেরে উঠতে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন। এমনকি প্রাণহানির আশংকাও রয়েছে এই বৃদ্ধের।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বৃদ্ধ বোরহানের ছেলে মো. জালাল যুগান্তরকে জানান, ঘটনার দিনই তার বাবাকে তিনি নিয়ে থানায় যান। পুলিশ তার বাবাকে দেখে ছবি তুলে রাখে। পরে হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়। কিন্তু মামলা নিতে চায়নি। এরপর সেখান থেকে বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। ১ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী আবদুল হালিমকে সঙ্গে নিয়ে থানায় মামলা করতে যান। কিন্তু চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ঘুষ দিয়েও ১১ দিনে তারা মামলা করতে পারেনি। এখন মোটা অংকের টাকা চাওয়া হচ্ছে। সবশেষে মামলা না করার জন্য হুমকি দিচ্ছে। তাদের ধারণা, বড় অংকের ঘুষ পেয়ে পুলিশ এখন আসামি পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
মামলার জন্য দোহার থানার ওসিকে ঘুষ দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ৬নং মুকসুদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল হালিম যুগান্তরকে বলেন, তিনি ২০০৩ সাল থেকে চেয়ারম্যান। তার জীবদ্দশায় বহু ওসি দেখেছেন। কিন্তু মাহমুদুল হকের মতো এত খারাপ পুলিশ অফিসার কখনও দেখেননি। তিনি বলেন, ‘আমি নিজ হাতে গুনে গুনে ওসিকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছি। অনুরোধ করেছি শেখ বোরহানের ওপর হামলার বিষয়ে মামলা নেয়ার জন্য। কিন্তু ওসি মামলা নেননি। উল্টো বলেছেন, কেস করার ইচ্ছা থাকলে আরও ২ লাখ টাকা নিয়ে আসেন। এক লাখ আমার (ওসির) এক লাখ সেকেন্ড অফিসারের।’ চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আমি ওসিকে বলেছি স্যার আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব করেছি। মামলাটা নেন। কিন্তু তিনি মামলা নিচ্ছেন না।’ আবদুল হালিম বলেন, মামলা না নেয়ায় বিষয়টি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুর রহমানকে জানিয়েছেন। তিনিও মামলাটি নেয়ার জন্য ওসির সঙ্গে কথা বলেছেন। পরে ওসি জানিয়েছেন কাগজ ও টাকা পাঠান।’ আবদুল হালিম চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘ওসি ঘুষের টাকা হাতে নিয়েই নামাজ পড়তে যান। নিরীহ লোকদের হয়রানি করেন। মাদকের গডফাদারদের ছেড়ে দেন। তার বাণিজ্যের কোনো শেষ নেই।’
কেস স্টাডি ২ : দোহারঘাটা গ্রামের ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর জানান, ২ নভেম্বর তার ছেলে কুয়েত প্রবাসী আরিফ মাহমুদকে সন্ত্রাসীরা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। তার ব্রেসলেট ও দামি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় জাহাঙ্গীর মামলা করতে গেলে ওসি টাকা দাবি করেন। এ সময় তিনি ওসিকে চার হাজার টাকা ঘুষ দেন। কিন্তু ৮ দিনেও মামলা নেয়নি। এই ভুক্তভোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে যুগান্তরকে বলেন, একবারের জন্যও ওসি এলাকায় পুলিশও পাঠায়নি। এতে পুরো পরিবার নিয়ে তিনি আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, এমনও হতে পারে, ওসির বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে আমাকে ইয়াবা অথবা গাঁজা দিয়ে উল্টো মামলায় ফাঁসিয়ে দিতে পারে। কিন্তু আর না, এলাকার সবার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।’
কেস স্টাডি ৩ : মালিকান্দা বাজারের ফল ব্যবসায়ী আরব আলীর ওপর ২০ সেপ্টেম্বর হামলা করে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। আরব আলী মামলা করতে গেলে পুলিশ তার মামলাও নেয়নি। পরে মামলা নেয়ার কথা বলে ওসি ৪০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। এরপর কৌশলে ওসি স্থানীয় লোকজন দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে মীমাংসার কথা বলে বিবাদীর কাছ থেকেও মোটা অংকের অর্থ আদায় করেন। কিন্তু দেড় মাসে মামলা আর রুজু হয়নি। আরব আলীর টাকাও ফেরত দেননি ওসি।
এদিকে বিলাসপুর গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভুক্তভোগী জানান, বিলাসপুরের বহুল আলোচিত ট্রিপল মার্ডারের বাদীর কাছ থেকে চার্জশিট দেয়ার কথা বলে ৬০ হাজার টাকা নেন ওসি। এখন পর্যন্ত ওই মামলার চার্জশিট দেননি।
স্থানীয় লোকজন যুগান্তরের প্রতিবেদককে জানান, শুধু মামলা দায়ের নয়, কেউ থানায় জিডি করতে গেলেও টাকা চাওয়া হয়। আবার জিডি নেয়ার আগে ওসি প্রতিপক্ষকে থানায় ডেকে আনেন। তার কাছ থেকেও আদায় করেন মোট অংকের টাকা। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে পেন্ডিং ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক বা চুরির মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, চলতি বছরের এপ্রিলে দোহার থানায় সাব-ইন্সপেক্টর (তদন্ত) হিসেবে যোগ দেন মাহমুদুল হক। ঊর্ধ্বতন একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ১৬ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে ৩০ জুন ওসি হিসেবে এখানে পদোন্নতি পান। আর যোগ দিয়েই তিনি নেমে পড়েন বাধাহীন ঘুষ বাণিজ্যে। তার এই ঘুষ বাণিজ্যের দৌড়ে থানার অধীনস্ত এসআই, এএসআই, ফাঁড়ির পুলিশ ও সোর্সরাও অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। যে এসআই বেশি টাকা দেন তাকেই পছন্দ ওসির। গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত ওই এসআইকে দেয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থানার একজন এসআই যুগান্তরকে বলেন, ‘ওসি সাহেবের চাহিদা মেটানো অসম্ভব। প্রতিদিনই তাকে টাকা দিতে হয়। ফলে এসআইরা বাধ্য হয়ে সাধারণ মানুষকে ধরে এনে টাকা আদায় করেন।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে ওসি মাহমুদুল হকের কাছে জানতে চাওয়া হলে মঙ্গলবার তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘যাদের মামলা নেয়া হয়নি তাদের আমার কাছে পাঠিয়ে দিন আমি মামলা নিয়ে নেব।’
এই হল রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী উপজেলা দোহারের ওসি মাহমুদুল হকের ঘুষ বাণিজ্যের ভয়াবহ চিত্র। আর এ রকম ঘটনা শুধু এই একটি নয়, প্রতিদিন অহরহ ঘটছে। তার থানায় ঘুষ ছাড়া কিছুই হয় না। আবার রিমান্ডের নামে মারধর বন্ধ করতে তাকে মোটা অংকের ঘুষ দিতে হয়। ভুক্তভোগীরাসহ এলাকার অনেকে জানিয়েছেন, এই ওসি এখানকার অঘোষিত সরকার। বলা যায়, তার নির্দেশের বাইরে কিছুই হয় না। তিনি কাউকে পাত্তা দেন না। কথায় কথায় নিজেকে সরকারের উপর মহলের খাস লোক বলে পরিচয় দেন। অথচ তার নানামুখী ঘুষ আদায়ের ফাঁদ আর অত্যাচারে এলাকার সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। যেখানে মাদক নিয়ন্ত্রণসহ সন্ত্রাস দমনে পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা রাখার কথা, সেখানে দোহারের ওসির অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন।
মোটা অংকের ঘুষ আদায়ের জন্য তিনি এলাকাজুড়ে বিরাট এক মাদক ও সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট লালন-পালন করেন। জনমনে এসব অভিযোগ ক্রমেই চাউর হচ্ছে। কিন্তু এই ওসি নাকি অধরা, যে কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা নিতে পারে না। এতে করে এলাকার সাধারণ মানুষের অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি। ওসির ভয়ে অধিকাংশ ভুক্তভোগী মুখ খুলতে চান না। দোহার থানা এলাকায় সরেজমিন অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
কেস স্টাডি ১ : শেখ বোরহানের ছেলে মো. জালালের প্রস্তুতকৃত এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ৩১ অক্টোবর উত্তর মৌড়া গ্রামের আলাউদ্দিন মাঝি, কালু মোড়ল ও মরিচপট্টি গ্রামের কফু মাঝিসহ বেশ কয়েকজন তার বাবাকে হত্যার উদ্দেশ্যে লাঠি, টেঁটা, হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে জখম করে। মুমূর্ষু অবস্থায় শেখ বোরহানকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে, অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পরে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। চিকিৎসরা জানান, বোরহান শেখের মাথায় গুরুতর জখম হওয়ায় তিনি কথা বলতে পারছেন না। আশংকা করা হচ্ছে, তার স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে। এছাড়া তার দুই হাত ও দুই পা ভাঙা, যা সেরে উঠতে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন। এমনকি প্রাণহানির আশংকাও রয়েছে এই বৃদ্ধের।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বৃদ্ধ বোরহানের ছেলে মো. জালাল যুগান্তরকে জানান, ঘটনার দিনই তার বাবাকে তিনি নিয়ে থানায় যান। পুলিশ তার বাবাকে দেখে ছবি তুলে রাখে। পরে হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়। কিন্তু মামলা নিতে চায়নি। এরপর সেখান থেকে বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। ১ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী আবদুল হালিমকে সঙ্গে নিয়ে থানায় মামলা করতে যান। কিন্তু চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ঘুষ দিয়েও ১১ দিনে তারা মামলা করতে পারেনি। এখন মোটা অংকের টাকা চাওয়া হচ্ছে। সবশেষে মামলা না করার জন্য হুমকি দিচ্ছে। তাদের ধারণা, বড় অংকের ঘুষ পেয়ে পুলিশ এখন আসামি পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
মামলার জন্য দোহার থানার ওসিকে ঘুষ দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ৬নং মুকসুদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল হালিম যুগান্তরকে বলেন, তিনি ২০০৩ সাল থেকে চেয়ারম্যান। তার জীবদ্দশায় বহু ওসি দেখেছেন। কিন্তু মাহমুদুল হকের মতো এত খারাপ পুলিশ অফিসার কখনও দেখেননি। তিনি বলেন, ‘আমি নিজ হাতে গুনে গুনে ওসিকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছি। অনুরোধ করেছি শেখ বোরহানের ওপর হামলার বিষয়ে মামলা নেয়ার জন্য। কিন্তু ওসি মামলা নেননি। উল্টো বলেছেন, কেস করার ইচ্ছা থাকলে আরও ২ লাখ টাকা নিয়ে আসেন। এক লাখ আমার (ওসির) এক লাখ সেকেন্ড অফিসারের।’ চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আমি ওসিকে বলেছি স্যার আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব করেছি। মামলাটা নেন। কিন্তু তিনি মামলা নিচ্ছেন না।’ আবদুল হালিম বলেন, মামলা না নেয়ায় বিষয়টি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুর রহমানকে জানিয়েছেন। তিনিও মামলাটি নেয়ার জন্য ওসির সঙ্গে কথা বলেছেন। পরে ওসি জানিয়েছেন কাগজ ও টাকা পাঠান।’ আবদুল হালিম চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘ওসি ঘুষের টাকা হাতে নিয়েই নামাজ পড়তে যান। নিরীহ লোকদের হয়রানি করেন। মাদকের গডফাদারদের ছেড়ে দেন। তার বাণিজ্যের কোনো শেষ নেই।’
কেস স্টাডি ২ : দোহারঘাটা গ্রামের ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর জানান, ২ নভেম্বর তার ছেলে কুয়েত প্রবাসী আরিফ মাহমুদকে সন্ত্রাসীরা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। তার ব্রেসলেট ও দামি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় জাহাঙ্গীর মামলা করতে গেলে ওসি টাকা দাবি করেন। এ সময় তিনি ওসিকে চার হাজার টাকা ঘুষ দেন। কিন্তু ৮ দিনেও মামলা নেয়নি। এই ভুক্তভোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে যুগান্তরকে বলেন, একবারের জন্যও ওসি এলাকায় পুলিশও পাঠায়নি। এতে পুরো পরিবার নিয়ে তিনি আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, এমনও হতে পারে, ওসির বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে আমাকে ইয়াবা অথবা গাঁজা দিয়ে উল্টো মামলায় ফাঁসিয়ে দিতে পারে। কিন্তু আর না, এলাকার সবার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।’
কেস স্টাডি ৩ : মালিকান্দা বাজারের ফল ব্যবসায়ী আরব আলীর ওপর ২০ সেপ্টেম্বর হামলা করে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। আরব আলী মামলা করতে গেলে পুলিশ তার মামলাও নেয়নি। পরে মামলা নেয়ার কথা বলে ওসি ৪০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। এরপর কৌশলে ওসি স্থানীয় লোকজন দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে মীমাংসার কথা বলে বিবাদীর কাছ থেকেও মোটা অংকের অর্থ আদায় করেন। কিন্তু দেড় মাসে মামলা আর রুজু হয়নি। আরব আলীর টাকাও ফেরত দেননি ওসি।
এদিকে বিলাসপুর গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভুক্তভোগী জানান, বিলাসপুরের বহুল আলোচিত ট্রিপল মার্ডারের বাদীর কাছ থেকে চার্জশিট দেয়ার কথা বলে ৬০ হাজার টাকা নেন ওসি। এখন পর্যন্ত ওই মামলার চার্জশিট দেননি।
স্থানীয় লোকজন যুগান্তরের প্রতিবেদককে জানান, শুধু মামলা দায়ের নয়, কেউ থানায় জিডি করতে গেলেও টাকা চাওয়া হয়। আবার জিডি নেয়ার আগে ওসি প্রতিপক্ষকে থানায় ডেকে আনেন। তার কাছ থেকেও আদায় করেন মোট অংকের টাকা। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে পেন্ডিং ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক বা চুরির মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, চলতি বছরের এপ্রিলে দোহার থানায় সাব-ইন্সপেক্টর (তদন্ত) হিসেবে যোগ দেন মাহমুদুল হক। ঊর্ধ্বতন একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ১৬ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে ৩০ জুন ওসি হিসেবে এখানে পদোন্নতি পান। আর যোগ দিয়েই তিনি নেমে পড়েন বাধাহীন ঘুষ বাণিজ্যে। তার এই ঘুষ বাণিজ্যের দৌড়ে থানার অধীনস্ত এসআই, এএসআই, ফাঁড়ির পুলিশ ও সোর্সরাও অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। যে এসআই বেশি টাকা দেন তাকেই পছন্দ ওসির। গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত ওই এসআইকে দেয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থানার একজন এসআই যুগান্তরকে বলেন, ‘ওসি সাহেবের চাহিদা মেটানো অসম্ভব। প্রতিদিনই তাকে টাকা দিতে হয়। ফলে এসআইরা বাধ্য হয়ে সাধারণ মানুষকে ধরে এনে টাকা আদায় করেন।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে ওসি মাহমুদুল হকের কাছে জানতে চাওয়া হলে মঙ্গলবার তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘যাদের মামলা নেয়া হয়নি তাদের আমার কাছে পাঠিয়ে দিন আমি মামলা নিয়ে নেব।’
No comments