কখনও ভাবিনি ফেরা হবে by রোকনুজ্জামান পিয়াস ও উৎপল রায়
একটি রুটি আর এক লিটার পানি। এ খেয়েই দিন
পার। কখনও কখনও তা-ও জুটতো না। তার ওপর চলতো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন,
করানো হতো অমানুষিক পরিশ্রম। মুক্তিপণের দাবিতে নিত্য দিন ছিল মেরে ফেলার
হুমকি। সোমালিয়ায় জলদস্যুদের হাতে আটক হওয়া বাংলাদেশী ৭ নাবিকের এভাবেই
কেটেছে ১৩০০ দিন। তাদের ভাষ্যমতে, ওই সময়ে পুরোটাই ছিল মৃত্যু আতঙ্কের। ঘুম
থেকে উঠেই দেখতেন মুখের সামনে অস্ত্র তাক করা। কখনও স্বাভাবিক জীবন-যাপন
করতে পারবেন কল্পনাও করেননি তারা। চোখের সামনেই গুলি করে হত্যা করা হয় একই
সঙ্গে অপহৃত হওয়া ভারতীয় নাগরিককে। তখন থেকেই ধরে নেন মৃত্যুই অপেক্ষা করছে
তাদের জন্য। বন্দিদশা মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে এভাবেই বর্ণনা দেন তাদের ওপর
দস্যুদের চালানো বর্বর নির্যাতনের। কেনিয়ার নাইরোবি থেকে দুবাই হয়ে এমিরেটস
এয়ারলাইন্সের (ইকে-৫৮২) ফ্লাইটে দেশে ফেরেন অপহৃত নাবিকরা। গতকাল সকাল ৮টা
৪০ মিনিটে হযরত শাহ জালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে বিমানটি। ফিরে আসা
নাবিকরা হলেন চাঁদপুরের জাকির হোসেন, সাতক্ষীরার হাবিবুর রহমান, আবুল
কাশেম, নুরুল হক, লিমন সরকার, ও গোলাম মোস্তফা এবং কুমিল্লার আমিনুল ইসলাম।
দেশে ফিরে আসার আনন্দে এদের অনেকেই বিমানবন্দরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। এ
সময় তাদের ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান,
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন
কর্মকর্তারা। এ সময় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেন, সোমালীয়
জলদস্যুদের কবল থেকে বাংলাদেশের সাত নাবিককে এভাবে এত দীর্ঘ সময় পর জীবিত ও
অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করাটা বাংলাদেশের জন্য গৌরবের। তিনি বলেন, এ ধরনের
ঘটনারোধে কোস্টগার্ডের টহল বাড়ানো দরকার। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে
আলোচনা করে ব্যবস্থা করা হবে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন,
আমরা কোন রকম মুক্তিপণ ছাড়াই অপহৃতদের দেশে ফিরিয়ে এনেছি। ঘটনার পর থেকেই
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। এর সঙ্গে
সংশ্লিষ্ট সবাই সহযোগিতা করেছে। এজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ দেন তিনি। ২০১০
সালের ২৬শে নভেম্বর সোমালিয়ার উপকূল থেকে প্রায় ৯০০ মাইল দূরে অপহরণ করা
হয় মালয়েশিয়ার পণ্যবাহী জাহাজ এমভি আলবেডো। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে কেনিয়া
যাওয়ার পথে অপহৃত জাহাজটিতে বাংলাদেশের ৭ জন, ভারতের ১ জন, পাকিস্তানের ৭
জন, শ্রীলঙ্কার ৬ জন ও ইরানের ১ জনসহ ২৩ জন নাবিক ছিলেন। এর মধ্যে ৪ জন
পানিতে ডুবে মারা যান। অপহরণের ৬ মাস পর ভারতীয় ১ নাবিককে গুলি করে হত্যা
করে জলদস্যুরা। এদিকে উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশীরা দেশে ফিরলেও গতকাল
বিমানবন্দরে তাদের স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেয়া হয়নি। বিমানবন্দর থেকে
তাদের উত্তরার একটি হোটেলে নেয়া হয়। সেখানেই অপেক্ষারত স্বজনদের সঙ্গে
সাক্ষাৎ করেন তারা। আজ ওই হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদেরকে
আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। একই সঙ্গে তারা অপহৃত
হওয়ার পর তাদের দুঃসহ জীবনের যন্ত্রণার কথা তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছেন মুক্ত
করে আনার কাজে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে
উদ্ধারকারী সংস্থা মেরিটাইম পাইরেসি অ্যান্ড হিউমেনিটারিয়ান রেসপন্স
প্রোগ্রাম (এমপিএইচআরপি)-এর রিজিওনাল ডিরেক্টর চিরাগ বাহরি বলেন, প্রায়
১৩০০ দিন পর তাদের মুক্ত করা হয়েছে। এ দীর্ঘ দিনের প্রায় দিনই তারা অভুক্ত
থেকেছেন। শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। এখন তারা কিছুটা সুস্থ্য
হলেও মানসিক চাপ রয়ে গেছে। এজন্য কিছুটা কাউন্সিলিং ও চিকিৎসা প্রয়োজন।
তাদের পরিবারের সদস্যরাও সাক্ষাতের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছেন।
আগামীকাল (আজ) হোটেল মেরিনোতে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে সব কিছু অবগত করা
হবে। তিনি বলেন, নাবিকরা সুস্থ হলে তারা পুনরায় শিপিং লাইনে ফিরে যাবেন না
কি অন্য পেশায় নিযুক্ত হবেন, সেটি পরবর্তীকালে নির্ধারণ করা হবে। ফিরে আসা
কুমিল্লার মো. আমিনুল ইসলাম বিমানবন্দরে বলেন, সেসব দিনের কাহিনী অল্প সময়ে
বলা সম্ভব নয়। একটানা সাড়ে তিন বছর ধরে নির্যাতন সয়েছি। প্রতিদিন, প্রতি
মুহূর্তের সে কাহিনী। প্রতিটি দিন মনে হতো, মারা যাচ্ছি। আজই মনে হয় শেষ
দিন। কিন্তু আল্লাহর রহমত ও সংশ্লিষ্টদের চেষ্টায় দেশে পরিবারের কাছে আসতে
পেরেছি। তার জন্য সবার কাছে কৃতজ্ঞ। আমিনুল বলেন, প্রতিদিন আমাদের ওপর
নির্যাতন চালাতো সোমালীয় জলদস্যুরা। তাদের হাতে থাকতো অত্যাধুুনিক অস্ত্র।
মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে রাতের অন্ধকারে বনের ভেতরে নিয়ে হাত-পা বেঁধে বেদম
প্রহার করতো। এছাড়া তাদের বাঙ্কারের কন্টেইনার বহনের কাজে আমাদের ব্যবহার
করতো। এ সময় চাল ও গমসহ অন্যান্য দ্রব্যের বস্তা মাথায় ও পিঠে করে
কন্টেইনার থেকে বাঙ্কারে নিয়ে যেতে হতো। যদি একটু এদিক সেদিক হলেই মারধর
করতো। তাছাড়া প্রতিনিয়ত বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে পরিবারকে ফোন করে মুক্তিপণের
টাকা চাইতে চাপ দিতো জলদস্যুরা। তখন মনে হতো, এক্ষুণি হয়তো হত্যা করা হবে
আমাদের। কারণ, মুক্তিপণ দিতে অস্বীকার করায় আমাদের সামনেই একজন ভারতীয়
নাগরিককে গুলি করে মেরে ফেলেছে। পরে তার লাশ প্রায় দেড় বছর সোমালিয়া
জলদস্যুদের আস্তানায় সংরক্ষিত ডিপ ফ্রিজে রেখে দেয়। মুক্তিপণের আশায় তারা এ
কাজটি করে বলে জানান আমিনুল। ফিরে আসা আরেক নাবিক সাতক্ষীরার লিমন সরকার
বলেন, মৃত্যুর দরজা থেকে ফিরে এসেছি। ঘটনার দিন (২০১০ সালের ১০ই নভেম্বর)
ওরা (সোমালিয়া জলদস্যুরা) ছিল ১১ জনের মতো। তাদের প্রত্যেকের হাতে ছিল
একে-৪৭ রাইফেল ও ছোট নৌকায় ছিল রকেট লাঞ্চার। ছোট একটি শিপিং বোট নিয়ে
আমাদের জাহাজে আক্রমণ করে তারা। জাহাজে উঠেই ক্যাপ্টেন ও ক্রুসহ সবাইকে
বেঁধে ফেলে। ২০১৩ সালের জুলাই মাসে আমাদের বহনকারী জাহাজ ডুবে গিয়েছিল। এ
সময় ৪ জন শ্রীলঙ্কান নাবিক মারা যান। ভয়ঙ্কর এসব দৃশ্য দেখে আমরা ভড়কে যায়।
প্রতিনিয়ত ভাবতাম আর বোধহয় দেশে এসে প্রিয়জনদের মুখ দেখা হবে না। লিমন
বলেন, জাহাজডুবির পর দস্যুরা আরেকটি জাহাজে করে হাত, পা ও চোখ বেঁধে আমাদের
অজানা স্থানে নিয়ে যায়। এরপর প্রায়ই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে আমাদের আনা
নেয়া করা হয়েছে। ভয়াবহ অভিজ্ঞতার আরেক দুর্বিষহ চিত্র তুলে ধরেন নাবিক
জাকির হোসেন? এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন? জাকির হোসেন বলেন, ‘ভারতীয়
একজন নাবিককে আমাদের চোখের সামনেই নির্যাতন করতে করতে মেরে ফেলে জলদস্যুরা?
তখন ওরা বলছিল মুক্তিপণ না দিলে একে একে সবাইকেই ওই (ভারতীয়) নাবিকের মতো
ভাগ্য বরণ করতে হবে? বন্দি প্রত্যেককেই পালাক্রমে নির্যাতন করা হতো? পেটাতে
পেটাতে অচেতন করে ফেলত? জ্ঞান ফিরলেও পানি বা খাবার দেয়া হতো না। নাবিকরা
আরও জানান, শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি মানসিক নির্যাতনও করতো জলদস্যুরা।
এমনও হয়েছে ঘুমের মধ্যে থাকলে ঘুম থেকে ডেকে তুলে এনে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে
কাজে লাগাতো। কোনদিন ২৪ বা ৪৮ ঘণ্টা পার হলেও খাওয়া জুটতো না। সাতক্ষীরার
ধুলিহার ইউনিয়নের ভালুকা চাঁদপুর গ্রামের নুরল হক বলেন, সাড়ে তিন বছর প্রচ-
মানসিক ও যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হয়েছি এখন
ভাল আছি। শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেকটাই সুস্থবোধ করছি। পরিবারের সঙ্গে দেখা
করার জন্য অপেক্ষা করছি। দেশে ফিরে আসতে পারায় সরকারের পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
বাবা তুমি কেমন আছো? ভাল আছি। তুমি কেমন আছো? আমাকে চিনতে পেরেছো। পেরেছি বাবা। প্রায় সাড়ে তিন বছর পর প্রথম সাক্ষাতে এভাবেই কথপোকথন বাবা-ছেলের সঙ্গে। এরপর কিছুক্ষণ নিস্তব্ধতা। বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলেন ছেলেকে। ছেলে বাবাকে আর বাবা ছেলেকে পেয়ে কাঁদলেন। ভাসলেন আনন্দ অশ্রুতে। উপস্থিত সকলকেও কাঁদালেন। এমনই এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয় গতকাল উত্তরার হোটেল মেরিনোতে। সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে গতকাল ছেলে নাইমুলের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে সাতক্ষীরার বাসিন্দা নাবিক আবুল কাশেমের। কাশেম যখন আটক হন তখন নাইমুলের বয়স ছিল ৫ বছর। আটক থাকাকালেও ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে বেশ কয়েকবার। নাইমুল জানায়, এখন সে ৫ম শ্রেণীতে পড়ে। বাবার সঙ্গে যখনই কথা হতো তখনই তিনি কাঁদতেন। গতকাল মা হাসি ও দাদাকে সঙ্গে করে বাবাকে নিতে এসেছে সে। কাশেমের মতো আরও ৬ জনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটে। হোটেল মেরিনোতে আসে ওই ৭ পরিবারের ১৮ জন সদস্য। প্রিয় মানুষের কাছে পাওয়ার আনন্দে আবেগাপ্লুত পরিবারের স্বজনদের চোখে তখন পানি।
বাবা তুমি কেমন আছো? ভাল আছি। তুমি কেমন আছো? আমাকে চিনতে পেরেছো। পেরেছি বাবা। প্রায় সাড়ে তিন বছর পর প্রথম সাক্ষাতে এভাবেই কথপোকথন বাবা-ছেলের সঙ্গে। এরপর কিছুক্ষণ নিস্তব্ধতা। বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলেন ছেলেকে। ছেলে বাবাকে আর বাবা ছেলেকে পেয়ে কাঁদলেন। ভাসলেন আনন্দ অশ্রুতে। উপস্থিত সকলকেও কাঁদালেন। এমনই এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয় গতকাল উত্তরার হোটেল মেরিনোতে। সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে গতকাল ছেলে নাইমুলের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে সাতক্ষীরার বাসিন্দা নাবিক আবুল কাশেমের। কাশেম যখন আটক হন তখন নাইমুলের বয়স ছিল ৫ বছর। আটক থাকাকালেও ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে বেশ কয়েকবার। নাইমুল জানায়, এখন সে ৫ম শ্রেণীতে পড়ে। বাবার সঙ্গে যখনই কথা হতো তখনই তিনি কাঁদতেন। গতকাল মা হাসি ও দাদাকে সঙ্গে করে বাবাকে নিতে এসেছে সে। কাশেমের মতো আরও ৬ জনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটে। হোটেল মেরিনোতে আসে ওই ৭ পরিবারের ১৮ জন সদস্য। প্রিয় মানুষের কাছে পাওয়ার আনন্দে আবেগাপ্লুত পরিবারের স্বজনদের চোখে তখন পানি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারত, পাকিস্তান ও ইরানের নাবিকদের সঙ্গে বাংলাদেশের ওই সাত নাবিক অপহরণের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের উদ্ধারে কাজ শুরু করে। নাবিকদের উদ্ধারে প্রাথমিকভাবে মেরিটাইম পাইরেসি ও মানবিক রেসপন্স কর্মসূচি (এমপিএইপআরপি)-র মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাত বাংলাদেশী ক্রু জীবিত আছেন বলে সরকারকে নিশ্চিত করে। এরপর যোগাযোগ করা হয় জাহাজের মালিকের সঙ্গে। মালয়েশিয়ান হওয়ায় প্রথমে তার কাছ থেকে মুক্তিপণের অর্থ আদায়ের জন্য কূটনৈতিক লবিং চালায় সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু জাহাজের দামের চেয়ে মুক্তিপণের অর্থ বেশি মনে করে এমভি আলবেডো’র মালিক ক্ষতিপূরণ দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে পালিয়ে যান। এছাড়া নাবিকদের পরিবারের পক্ষ থেকে সোমালিয়ার মুসলমানদের কাছে মানবিক আবেদনও করা হয়। কিন্তু জলদস্যুরা সাফ জানিয়ে দেয় মুক্তিপণ ছাড়া জলদস্যুদের হাত থেকে কারও মুক্তি মেলে না। বিকল্প উপায় না থাকায় তিন বছরের মাথায় মুক্তিপণের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয় সরকার। জলদস্যুদের দাবি করা ৬ লাখ ডলার বা প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ রাষ্ট্রের তিনটি তহবিল থেকে যোগান দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাতে অনুমোদন দিয়েছিলেন। তবে নীতিগত ও আন্তর্জাতিকভাবে জলদস্যুদের মুক্তিপণের টাকা সরকারের পক্ষ থেকে দেয়াটা স্বীকৃত না হওয়ায় ভিন্ন পন্থায় এর ব্যবস্থার কথা বলেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিকভাবে সহায়তা করে জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক অফিস ইউএনওডিসি ও লন্ডন ভিত্তিক মেরিটাইম পাইরেসি অ্যান্ড হিউমেনিটারিয়ান রেসপন্স প্রোগ্রাম (এমপিএইচআরপি)। এস কে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর চেয়ারম্যান এম এ মান্নান বলেন, আমার নিকত্মায়ীয় লিমন সরকার আটক থাকায় আমার সঙ্গে নিয়মিত তার ফোনে যোগাযোগ হতো। পরে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে তাদের ছাড়িয়ে আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হয়। তিনি এক্ষেত্রে কিছু সোমালিয়ান মানুষ সহযোগিতা করেছেন বলেও জানান। এছাড়া শিপিং ম্যানিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জানান, নৌ-মন্ত্রণালয়ের ডিজি জাকিউল ইসলাম ভুঁইয়া এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। সার্বিক তত্ত্বাবধান করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রিয়ার এডমিরাল খোরশেদ আলম। এছাড়া শিপিং ম্যানিং এজেন্ট এসোসিয়েশন, শিপিং ওনার্স এসাসিয়েশন, নাবিক ওয়েলফেয়ার ফান্ড আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছে। এরপর জাতিসংঘের ‘পলিটিক্যাল অফিস ফর সোমালিয়া’র সহায়তায় গত ৬ই জুন মুক্তি পান সাত নাবিক। পরদিন ৭ই জুন জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের (ইউএনওডিসি) একটি উড়োজাহাজযোগে তাদেরকে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে নেয়া হয়। সেখানে ইউএনওডিসি কর্তৃপক্ষ ও নাইরোবিতে বাংলাদেশী দূতাবাস কর্মকর্তারা তাদের গ্রহণ করেন। নাইরোবিতে আগা খান হাসপাতালে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসা করা হয়। সেখানে থেকে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে ফেরেন তারা।
@ রোকনুজ্জামান পিয়াস ও উৎপল রায়
No comments