তেল-গ্যাস অনুসন্ধান- বাপেক্সের দোষ খুঁজছেন যাঁরা by মুহাম্মদ জামালুদ্দীন ও মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম
বাংলাদেশে বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি (আইওসি) শেভরন ও তাল্লো চারটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উৎপাদন করছে। শেভরন তিনটি গ্যাসক্ষেত্র—বিবিয়ানা, জালালাবাদ ও মৌলভীবাজার থেকে এবং তাল্লো বাঙ্গুরা গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন করছে। দেশের দৈনিক উৎপাদনের ৫৪ শতাংশ আইওসি দুটির চারটি গ্যাসক্ষেত্র জোগান দিচ্ছে। অবশিষ্ট ৪৬ শতাংশ গ্যাস উৎপাদন করছে তিনটি দেশীয় গ্যাস কোম্পানি—বিজিএফসিএল, এসজিএফএল এবং বাপেক্সের মোট ১৫টি গ্যাসক্ষেত্র থেকে। (সূত্র: পেট্রোবাংলার ডেইলি গ্যাস প্রোডাকশন রিপোর্ট, ২১, ২২ মে, ২০১৪)।
আইওসি দুটির সব কটি গ্যাসক্ষেত্র থেকেই উৎপাদনক্ষমতার তুলনায় বেশি গ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে। এতে গ্যাসসংবলিত স্তরের কাঠামোবিন্যাসে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। বলা হয়ে থাকে, সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্রের অকালমৃত্যু এবং বাখরাবাদ গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন হ্রাসের অন্যতম কারণ উৎপাদনক্ষমতার চেয়ে অধিক গ্যাস উত্তোলন। সরকার স্বয়ং এ বিষয়ে সচেতন। সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ কর্তৃক প্রণীত ‘পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি সেক্টর রোডম্যাপ এন আপডেট ২০১১’–এ জ্বালানি খাতের উন্নয়নের জন্য আশু করণীয় যে কয়টি কাজের উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে উৎপাদন-বণ্টন চুক্তির (পিএসসি) আওতায় আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলো তাদের বিনিয়োগ দ্রুত নগদায়নের লক্ষ্যে অধিক হারে গ্যাস উত্তোলনের আগ্রহে অনতিবিলম্বে লাগাম টেনে ধরা৷ কিন্তু আশু করণীয় কাজটির পরিবর্তে দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাস-চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে শেভরনকে তাদের গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে আরও কূপ খনন করে অধিক হারে গ্যাস উৎপাদনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্বাধীনতার পরে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের সমুদ্রাঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ছয়টি আইওসির সঙ্গে পিএসসি স্বাক্ষরিত হয়। আইওসিগুলো তাদের জন্য বরাদ্দকৃত এলাকায় ৩১ হাজার লাইন কিলোমিটার িসসমিক জরিপ করেছে। সব কটি আইওসির কার্যক্রম প্রধানত দেশের অগভীর সমুদ্রাঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল। বিভিন্ন কোম্পানি ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৮ সালের মধ্যে মোট আটটি কূপ খনন করে।
স্বাধীনতার পর পেট্রোবাংলার অনুসন্ধান পরিদপ্তর দেশের স্থলভাগে অনুসন্ধানকাজ পরিচালনা করত। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে পেট্রোবাংলার অব্যাহত অনুসন্ধান কার্যক্রমের ফলে বেগমগঞ্জ, ফেনী, বিয়ানীবাজার, কামতা, ফেঞ্চুগঞ্জ, মেঘনা এবং নরসিংদী গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়। পেট্রোবাংলা পুনর্গঠন-প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১ জুলাই ১৯৮৯ তারিখে অনুসন্ধান পরিদপ্তরকে পেট্রোবাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন কোম্পানি (বাপেক্স) নামে পেট্রোবাংলার অধীনে একটি কোম্পানি গঠন করা হয়। কিন্তু নবগঠিত কোম্পানির কোনো আয়ের উৎস বা তহবিল ছিল না। সীমিত আকারের এডিপি অর্থায়ন ও সৌিদ উন্নয়ন তহবিলের ঋণ ব্যবহার করে বাপেক্স উল্লেখযোগ্য পরিমাণ িসসমিক জরিপ এবং পাথারিয়া ও শাহবাজপুরে দুটি কূপ খনন করে পরেরটিতে গ্যাস আবিষ্কার করে।
ইতিমধ্যে সারা দেশকে ২৩টি অনুসন্ধান ব্লকে বিভক্ত করে ১৯৯৩ সালে পিএসসি করার জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কোম্পানির কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। উল্লেখ্য, এ সময় বাপেক্সের জন্য নির্দিষ্ট ব্লক বরাদ্দ রাখা হয়নি। বাপেক্সের কর্মপরিসর ক্রমান্বয়ে সংকুচিত করে দেশে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা বা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম কোনো প্রতিষ্ঠান যেন না থাকে, সে লক্ষ্যে সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত শুরু হয়। ফলে বাপেক্স ১৯৯৬ সালে তদানীন্তন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টার শরণাপন্ন হয়ে একটি ব্লক এবং শ্রীকাইলসহ কয়েকটি ভূগঠন বাপেক্সের নামে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানায়। উপদেষ্টার ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপে পেট্রোবাংলা তখন কেবল ৯ নম্বর ব্লকের শ্রীকাইল ভূগঠনের নির্দিষ্ট কিছু এলাকা বাপেক্সকে বরাদ্দ দেয়। ইতিপূর্বে বাপেক্স পরিচালিত জরিপে স্পষ্ট হয়েছিল, লালমাই ভূগঠনটি উত্তর-দক্ষিণে শ্রীকাইল পর্যন্ত বিস্তৃত এবং লালমাইয়ের অভ্যন্তরে বাঙ্গুরা ও শ্রীকাইল এলাকায় আরও দুটি ভূগঠন আছে। তখনকার জরিপে বাঙ্গুরার চেয়ে শ্রীকাইল অধিকতর সম্ভাবনাময় প্রতীয়মান হয়েছিল বলে বিশেষভাবে শ্রীকাইল ভূগঠনটি বাপেক্সের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল।
১৯৯৩ সালের ব্লকবিডিং-এ বৃহত্তর সিলেট জেলার অন্তর্গত ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর ব্লক বরাদ্দ দেওয়া হয় অক্সিডেন্টালকে (অক্সি)। শেল ও কেয়ার্ন যৌথভাবে নোয়াখালী জেলার অংশবিশেষ এবং সমুদ্রাঞ্চল পরিবেষ্টিত ১৫ ও ১৬ নম্বর ব্লক এবং ওকল্যান্ড ও তাল্লো যৌথভাবে ১৭ ও ১৮ নম্বর সামুদ্রিক ব্লক বরাদ্দ পায়। বাড়তি হিসেবে অক্সিকে তিনটি ব্লকের সঙ্গে ইতিপূর্বে আবিষ্কৃত জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্র প্রদান করা হয়। তা ছাড়া তিনটি ব্লকে ইতিপূর্বে পরিচালিত সব িসসমিক ও গ্রেভিটি উপাত্ত তারা লাভ করে, যেখানে মৌলভীবাজার ও বিবিয়ানার ভূগঠনের চিত্র ছিল। অক্সিডেন্টাল ১৯৯৮ সালে ১২ নম্বর ব্লকে
অনুসন্ধান কূপ খনন করে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র নিশ্চিত করে। ১৯৯৭ সালের ব্লক বিডিংয়ে ইউনিকল ৭, শেভরন-তাল্লো জোট ৯ ও শেল-কেয়ার্ন জোট ৫ ও ১০ নম্বর ব্লকের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়৷
অক্সিডেন্টাল ১৯৯৮ সালে ১২ নম্বর ব্লকে অনুসন্ধান করে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র নিশ্চিত করে৷ মৌলভীবাজার ভূগঠনে অনুসন্ধানকালে ১৯৯৭ সালে ব্লোআউট হয় এবং পরে ১৯৯৯ সালে আবার সেখানে অনুসন্ধান করে বাণিজ্যিক গ্যাস পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চত করে৷ শেল-কেয়ার্ন ১৯৯৬ সালে ১৬ নম্বর অগভীর সামুদ্রিক ব্লকে সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে। তাল্লো ২০০৪ সালে রসুলপুর, লালমাই ও বাঙ্গুরায় অনুসন্ধান কূপ খনন করে এবং বাঙ্গুরায় গ্যাস আবিষ্কার করে। ৭ নম্বর ব্লকে শেভরন বিস্তারিত িসসমিক জরিপ পরিচালনা করে চর কাজল ভূগঠন আবিষ্কার করে। কিন্তু কূপ খনন করে গ্যাস না পাওয়ায় ২০১১ সালে তারা ব্লকটি পেট্রোবাংলার কাছে প্রত্যর্পণ করে। অনুরূপভাবে কেয়ার্ন ১০ নম্বর ব্লকে চর জব্বার ভূগঠন আবিষ্কার করে, কিন্তু সম্ভাবনাময় বিবেচিত না হওয়ায় তারাও ব্লক প্রত্যর্পণ করে। সুন্দরবন পরিবেষ্টিত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৫ নম্বর ব্লকে সম্ভাবনাময় কোনো ভূগঠন পাওয়া না যাওয়ায় এটিও কেয়ার্ন প্রত্যর্পণ করে। বর্তমানে দুটি আইসির পরিচালনাধীন চারটি গ্যাসক্ষেত্র সন্নিহিত এলাকা ব্যতীত সব কটি ব্লকই পেট্রোবাংলার কাছে প্রত্যর্পণ করা হয়েছে।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন আইওসির তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ওপরে তুলে ধরা হলো। উদ্ধৃত যেসব ব্লকে বিভিন্ন কোম্পানি অনুসন্ধান কার্যক্রম
পরিচালনা করেছে, বাংলাদেশের মানচিত্রে সেগুলোর অবস্থান পর্যালোচনা করলে একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় পরিলক্ষিত হবে। বাংলাদেশের মানচিত্রে রাজধানী ঢাকার অবস্থানের ওপর যদি উত্তর-দক্ষিণে ৯০ দশমিক ৩৭ ডিিগ্র দ্রাঘিমাংশ বরাবর একটি কাল্পনিক সরলরেখা টানা হয়, তাহলে দেখা যাবে ৫ ও ৭ নম্বর ব্লক ছাড়া বাকি ১০টি ব্লক ওই সরলরেখার পূর্ব পাশে অবস্থিত। এমনকি ২০০৩ সালে বাপেক্সকে প্রদত্ত ১১ নম্বর ব্লকও কাল্পনিক সরলরেখার পূর্ব পাশে অবস্থিত।
আবিষ্কৃত গ্যাস মজুতের পাশাপাশি আরও কী পরিমাণ গ্যাস ভবিষ্যতে আবিষ্কারের সম্ভাবনা আছে (গ্যাস রিসোর্স), তা নিরূপণের জন্য আমেরিকার সরকাির প্রতিষ্ঠান ইউএসজিএস পেট্রোবাংলার সঙ্গে ২০০১ সালে একটি যৌথ সমীক্ষা চালায়। ওই সমীক্ষায় বলা হয়, বাংলাদেশে আরও ৩২ টিসিএফ গ্যাস আবিষ্কারের ৫০ শতাংশ সম্ভাবনা বিদ্যমান। সম্ভাব্য ৩২ টিসিএফ গ্যাসের ২৯ টিসিএফই উল্লিখিত কাল্পনিক সরলরেখার পূর্ব দিকে অবস্থিত৷ পার্বত্য জেলাগুলো সম্ভাবনাহীন বিবেচিত হয়৷ একই বছর নরওয়ের সরকাির প্রতিষ্ঠান এনপিডি বাংলাদেশের হাইড্রোকার্বন ইউনিটের সঙ্গে যৌথভাবে গ্যাস রিসোর্স স্টাডি পরিচালনা করে। তাদের সমীক্ষা অনুযায়ী ৩২ নয়, বরং আরও ৪২ টিসিএফ গ্যাস আবিষ্কারের ৫০ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে। তারা পার্বত্য অঞ্চলকে সম্ভাবনাময় এবং সমুদ্রে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলে জানায়। সব মিলিয়ে তারা উত্তর-দক্ষিণ কাল্পনিক সরলরেখার পূর্ব দিকে ৩৬ টিসিএফ এবং পশ্চিমে অবশিষ্ট ৬ টিসিএফ গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানায়৷
লক্ষণীয়, সমীক্ষা দুটি পরিচালিত হয় ২০০১ সালে, আর আইওসিগুলোকে দুই দফায় বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৯৯৩ ও ১৯৯৭ সালে৷ আইওসিগুলোর নিজস্ব সমীক্ষায় যেসব ব্লক সম্ভাবনাময় বলে বিবেচনা করেছিল, সেগুলোর জন্যই পিএসসি স্বাক্ষরে আগ্রহী হয়েছিল। ২০০১ সালে এসে দেখা গেল, সেই ব্লকগুলোই সবচেয়ে সম্ভাবনাময়৷ বাংলাদেশের গ্যাস রপ্তানির পক্ষে একটি যুক্তি তুলে ধরতেই এই প্রচারণা চালানো হয়৷ এই সমীক্ষা দুটি আগে যেমন আইওসিগুলো পশ্চিমাঞ্চলে অনুসন্ধানে আগ্রহী হয়নি, ভবিষ্যতেও দেখাবে বলে মনে হয় না৷ অনুসন্ধান-ব্যয় এত বেশি যে, কোনো কোম্পািনই ব্যর্থতার ঝুঁকি নিতে চাইবে না।
দুটি সমীক্ষার তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের সর্বাধিক সম্ভাবনাময় ১২টি ব্লকে বিভিন্ন আইওসি অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করে সমুদ্রাঞ্চলে সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে। এ ক্ষেত্রটিতে ১ টিসিএফ গ্যাস মজুত আছে—এমন ধারণা দেওয়া হলেও ২০১৩-এর অক্টোবরে অর্ধ টিসিএফের কম গ্যাস উৎপাদন শেষে গ্যাসক্ষেত্রটি পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়। স্থলভাগে শেভরনের বিবিয়ানা, জালালাবাদ ও মৌলভীবাজার এবং তাল্লোর (বর্তমানে ক্রিস এনার্জি) বাঙ্গুরা গ্যাসক্ষেত্র থেকে বর্তমানে গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। এগুলো ছাড়া উল্লিখিত দুটি সমীক্ষার পর কেবল বাঙ্গুরা গ্যাসক্ষেত্রই আইওসি কর্তৃক আবিষ্কৃত হয়েছে। আগেই বলা হয়েছে, জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্র শেভরনের পূর্বসূির অক্সিকে উপঢৌকন দেওয়া হয়েছিল। আর মৌলভীবাজার ভূগঠন ছিল একেবারে খননের জন্য প্রস্তুত সুচিহ্নিত ভূগঠন। এমনকি বিবিয়ানা ভূগঠনও গ্রেভিটি চিত্রে সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত ছিল। সুতরাং স্থলভাগের একটি গ্যাসক্ষেত্রও কোনো আইওসির নিজস্ব আবিষ্কার নয়। বরং এগুলো আবিষ্কারের কৃতিত্বের একমাত্র দািবদার হতে পারে বাপেক্স। আইওসিগুলোর কাছে বিক্রীত তথ্য-উপাত্তে ভূগঠনগুলোর সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল বলেই তারা তখন ওই ব্লকগুলোর জন্য পিএসসি স্বাক্ষরে আগ্রহী হয়েছিল।
স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত যেসব বিদেশি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ করেছে তাদের ‘কৃতিত্বের’ মধ্যে আছে সমুদ্রবক্ষে সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার, মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্রে ব্লোআউটের মাধ্যমে গ্যাসসম্পদের বিপুল অপচয় এবং উৎপাদনক্ষমতার অতিরিক্ত গ্যাস উৎপাদনের মাধ্যমে নীরবে গ্যাসক্ষেত্রের ধ্বংসসাধন (পিএসসির পরিবর্তে পেছনের দরজা দিয়ে আসা আর এক আইওসি নাইকো কর্তৃক ছাতক গ্যাসক্ষেত্রে ২০০৫ সালে পর পর দুবার ব্লোআউটের বিষয়টি আলোচনায় আনা হলো না)।
পক্ষান্তরে বাপেক্স এবং এর পূর্বসূরি পেট্রোবাংলার অনুসন্ধান পরিদপ্তর অনুসন্ধান কার্যক্রমের মাধ্যমে সেমুতাং, বেগমগঞ্জ, ফেনী, বিয়ানীবাজার, কামতা, ফেঞ্চুগঞ্জ, মেঘনা, নরসিংদী, শাহবাজপুর, সালদা নদী, সুন্দলপুর এবং শ্রীকাইল গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে (সবগুলো গ্যাসক্ষেত্রই কাল্পনিক সরলরেখার পূর্ব পাশে অবস্থিত)। অনুসন্ধানকাজে নিয়োজিত বাপেক্স ও এর পূর্বসূির প্রতিষ্ঠান এযাবৎ ১২টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের কৃতিত্বের দাবিদার। কিন্তু কোনো বোধগম্য কারণ ছাড়াই বাপেক্স কেন এককভাবে দেশের স্থলভাগে অনুসন্ধানকাজ করবে, সে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। আমরা দেখছি, নানাভাবে বাপেক্সের অক্ষমতা চিহ্নিত করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, বাপেক্স আজ পর্যন্ত ব্লোআউটের মাধ্যমে কোনো গ্যাসক্ষেত্র ধ্বংস করতে পারেনি। দুর্যোগের সময় সেফটি ফার্স্ট নীতি অনুসরণ করে আইওসির ঠিকাদার কোম্পািনর ড্রিলাররা রিগ ফেলে যখন পালিয়ে যায়, তখন বাপেক্সের প্রকৌশলীরা ১০ নম্বর বিপৎসংকেতের ঝড়ঝঞ্ঝা মাথায় নিয়ে বুক পেতে রিগ আগলে দাঁড়িয়ে থাকেন।
মুহাম্মদ জামালুদ্দীন: সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাপেক্স৷ মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম: সাবেক অধ্যাপক, বুয়েট।
No comments