জাগ্রত, উদ্যত, নির্ভয় হওয়ার পণে মঙ্গল শোভাযাত্রা by ইসমাইল হোসেন ও মেহেদী হাসান পিয়াস
‘জাগ্রত, উদ্যত ও নির্ভয়’ হওয়ার শপথে
মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিলেন নানা বয়স ও শ্রেণী-পেশার হাজারো বাঙালি।
সোমবার সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে এ
শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্য আ আ ম স অারেফিন সিদ্দিক। শোভাযাত্রাটি রূপসী বাংলা মোড়
প্রদক্ষিণ করে ফের ঢাবির ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) এসে শেষ হয়।
বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্যের দিনটিতে রঙ-বেরঙের মুখোশ, শোলার পাখি, পেঁচা, প্রজাপতি, খরগোশ ও টেপা পুতুল, ঢাল-ঢোল-বাঁশি, লাঠি-বর্শা, তীর-ধনুক নিয়ে অংশ নেন মঙ্গলের যাত্রীরা।
এর আগে, শোভাযাত্রায় অংশ নিতে নানা বয়স ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সম্মিলন ঘটে চারুকলা প্রাঙ্গণে। পুরুষরা নানা বর্ণের পাঞ্জাবী আর নারীদের সাদা পেড়ে লাল শাড়ি, শিশু-কিশোরদের রঙ-বেরঙের পাঞ্জাবীতে বর্ণিল হয়ে ওঠে শাহবাগ, টিএসসিসহ আশেপাশের এলাকা। দেশীয় বিভিন্ন বাদ্যযত্রের পাশাপাশি ভুভুজেলার সুরে গর্জে ওঠে শাহবাগ।
অশুভ শক্তিকে তাড়িয়ে বাংলাদেশ যে এখন সমৃদ্ধ আর বর্ণিল, লোকজ সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যে ভরা বাংলাদেশের এ রূপ এবার ফুটে উঠেছে মঙ্গল শোভাযাত্রায়।
পহেলা বৈশাখে কেন্দ্রীয়ভাবে যে আয়োজন, মঙ্গল শোভাযাত্রার সঙ্গে নতুন লক্ষ্য নিয়ে নতুন দিনের পথে এগোবে বাংলাদেশ।
বাংলা বছরের শুরুর দিনটি নববর্ষ হিসেবে পালন করার জন্য আগে থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয় চারুকলা। ঢাবির চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের আয়োজনেই এ মঙ্গল শোভাযাত্রা যাত্রা শুরু হয়।
গেল কয়েক বছর রাজনৈতিক অস্থিরতা আর যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে উত্তপ্ত রাজপথে এবার কিছুটা স্বস্তি। এখন স্থিতিশীল বাংলাদেশ, এগিয়ে যাচ্ছে সমৃদ্ধির পথে।
গত বছর ২৫তম মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের স্লোগান ছিল- ‘রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ/মুক্তিযুদ্ধ অনিঃশেষ’।
প্রতি বছরই একটি কাঠামোতে শোভাযাত্রার আয়োজন থাকে। গত বছর ফোক মোটিভ ছিল একটি দানবীয় সরীসৃপ, যাকে অশুভ শক্তি তাড়ানোর প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগের আন্দোলনের সময়ই সরিসৃপটি তৈরি হয়েছিল।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের জন্ম শতবছর উদযান উপলক্ষে এবার একটু ভিন্ন আঙ্গিকে এ শোভাযাত্রা।
এবারের ফোক মোটিভ বিশালাকৃতির হাঁস। যা হারানো ঐহিত্যের প্রতীক। এছাড়া, স্ট্রাকচারে ১১টি মোটিভ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। শোভাযাত্রায় ছিল একটি বিশালাকৃতির হাঁস, সঙে মাছের ঝাঁক, মা ও শিশু, লক্ষ্মীপেঁচা- এগুলোকে সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।
বরাবরের মত লোকজ ঐতিহ্যের চিহ্ন ছিল এবারের শোভাযাত্রায়। বিড়ালের মুখে চিংড়ি, দুটি বিশালাকৃতির বাঘের মুখোশ আর শখের হাড়ি- লোকজ ঐতিহ্যেরই প্রতীক।
সমৃদ্ধ বাংলাদেশর নতুন লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে যেন পথ হারিয়ে না ফেলে সেজন্য দুঃসময়ের কাণ্ডারি হিসেবে ছিল গাজী ও বাঘ।
বাংলাদেশের প্রতিটি ধূলিকণাও পবিত্র, আর পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে ছিল শিশু হরিণ।
অপার সৌন্দর্যের এই বাংলাদেশ, আর বাংলাদেশের সৌন্দর্যকে শোভাযাত্রায় ফুটিয়ে তুলতে প্রতীক হিসেবে ছিল ময়ূর।
উন্নত শান্তি, সমৃদ্ধি এমন সব কিছুতেই যেন এক নম্বরে থাকে বাংলাদেশ, আর সেজন্য গাণিতিক ‘১’র প্রতীক একটি তুহিন পাখি ছিল নববর্ষের শোভাযাত্রার সঙ্গী।
১৩তম, ১৪তম এবং ১৫তম ব্যাচ মূল দায়িত্বে থাকলেও এসব স্ট্রাকচার তৈরিতে দিনরাত কাজ করেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। গত ২১ এপ্রিল থেকেই এসব কাজ শুরু করেন তারা।
চারুকলার ডিন আবুল বারাক আলভী, শিক্ষক শিশির ভট্টাচার্য, নেসার হোসেনসহ অন্যরা দেখভাল করেন প্রতিনিয়নত। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন উপাচার্য আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিক।
চারুকলার শিক্ষার্থীরা জানান, বাংলাদেশ সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নতুন দিনের লক্ষ্যে সামনের দিকে এগিয়ে যাবার প্রত্যয় নিয়েই এবারের মোটিভ।
বাইরের কারও আর্থিক সহযোগিতায় নয়, নিজেরাই অর্থ যুগিয়ে তৈরি করেন মঙ্গল শোভাযাত্রার উপকরণ।
No comments