মোক্ষম অস্ত্র পেয়ে গেল বিজেপি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে নিয়ে সঞ্জয় বারুর লেখা বইকে ‘সস্তা গল্প’ বলে অভিহিত করেছে কংগ্রেস। তবে বারু বলেছেন, এটি সস্তা গল্প নয়। এতে নতুন কিছু নেই। আগে থেকে সবই মানুষ জানে। এরই মধ্যে মনমোহনকে আরও অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছেন সাবেক কয়লাসচিব পিসি পারাখ। তিনিও তাঁর নতুন বইয়ে লিখেছেন, সরকারে মনমোহনের প্রভাব খুবই কম ছিল। এদিকে যশোদাবেন ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপি কিছুটা বেকায়দায় পড়লেও বারুর বই নির্বাচনের মাঝপথে তাদের সামনে মোক্ষম এক অস্ত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিজেপি বলছে, বারুর বইয়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো, মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী হলেও সরকারে সোনিয়ার কথাই ছিল শেষ এবং চূড়ান্ত কথা। মনমোহন সিংয়ের গণমাধ্যমবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা সঞ্জয় বারু দি অ্যাকসিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার নামের একটি বই লিখেছেন। সেখানে তিনি বলেন, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ‘ক্ষমতাহীন রাজনৈতিক পুতুল’। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আছেন ঠিকই, কিন্তু কর্তৃত্ব কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর হাতে। এই বই প্রকাশের পর ক্ষমতাসীন কংগ্রেস নেতারা সঞ্জয় বারুকে ‘বেকার, হতাশাগ্রস্ত ও দলছুট’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, তিনি (বারু) লোকসভা নির্বাচনের মাঝখানে বিজেপির রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদ্বীপ সূর্যওয়ালা বলেন, ‘বারুর চাকরি-বাকরি নেই। তিনি দলছুট, হতাশাগ্রস্ত।
সস্তা প্রচার পেতে ও বইটির বিক্রিবাট্টার উদ্দেশ্যে তিনি মিথ্যা ছড়াচ্ছেন...ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস চূড়ান্তভাবে এই সস্তা কল্পকাহিনি প্রত্যাখ্যান করছে।’ সঞ্জয় বারুকে একজন ‘সুবিধাবাদী’ উল্লেখ করে রণদ্বীপ বলেন, ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে তিনি দায়িত্ব ছেড়ে চলে যান। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট ফের সরকার গঠন করলে তিনি আবারও ওই পদ চান। কিন্তু তাঁকে ওই পদে ‘অযোগ্য’ মনে করে ‘প্রত্যাখ্যান’ করা হয়। তিনি এখন হারানো সবকিছু ফিরে পেতে উদ্ভট সস্তা গল্প লিখে যাচ্ছেন। তবে এনডিটিভির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সঞ্জয় বারু কংগ্রেস নেতাদের জবাব দিয়ে বলেছেন, তাঁর বই কল্পকাহিনি নয়। তিনি মনমোহন সিং ও সোনিয়া গান্ধী সম্পর্কে নতুন কিছু বলেননি। যা লিখেছেন, তা সবারই জানা। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করার সুবাদে কাছ থেকে যা দেখেছেন, তা-ই বইয়ে তুলে ধরেছেন। বইটির তথ্য সত্য হোক বা লেখকের বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হোক, বিজেপি ঠিকই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে বইটি ব্যবহার করা শুরু করেছে। বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতা অরুণ জেটলি বলেন, তিনি দুই দিন ধরে বইটি পড়ছেন। সেখানে সঞ্জয় বারু একজন প্রত্যক্ষদর্শীর মতো সব বর্ণনা করেছেন। আরেক বিজেপি নেতা এল কে আদভানি প্রধানমন্ত্রী মনমোহনকে আক্রমণ করে বলেছেন, এটা নতুন কিছু নয়।
ইতিমধ্যে সবাই যা জেনে গেছে, তা-ই একজন সত্য প্রমাণিত করেছেন, যাঁকে প্রধানমন্ত্রী নিজেই তাঁর গণমাধ্যমবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে পছন্দ করেছিলেন। বিজেপির মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মা-ছেলে (সোনিয়া ও রাহুল) মিলে প্রধানমন্ত্রী পদের মর্যাদাকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিতর্কিত করেছেন। তাঁরা কোনো জবাবদিহি ছাড়াই দেশ শাসন করতে এই ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি বলেন, বিজেপি কোনো ক্ষমতাহীন প্রধানমন্ত্রী চায় না। মনমোহনের অস্বস্তি আরও বাড়ালেন সাবেক কয়লাসচিব: সঞ্জয় বারুর বই নিয়ে তোলপাড় চলার মধ্যেই সাবেক কয়লাসচিব পি সি পারাখ প্রধানমন্ত্রী মনমোহনকে নিয়ে একটি বই লিখেছেন। এতে আরও অস্বস্তিতে পড়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। পারাখ বইটিতে লিখেছেন, সরকারের ওপর খুবই সামান্য প্রভাব ছিল মনমোহনের। ক্রসেডার অর কন্সপিরেটর: কোলগেট অ্যান্ড আদার ট্রুথস নামের এই বইয়ে আরও বলা হয়েছে, টুজি স্পেকট্রাম ও কয়লাখনি কেলেঙ্কারির ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পিটিআই ও এনডিটিভি।
No comments