যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউক্রেন
ক্রিমিয়ার পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে গতকাল সশস্ত্র ব্যক্তিরা অবস্থান নেয়। রয়টার্স |
রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী গত শনিবার ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপের দখল নিয়েছে। ইউক্রেনে সামরিক হস্তক্ষেপ চালাতে রুশ পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্টকে কর্তৃত্ব দেওয়ায় সেখানে সেনা মোতায়েন বাড়াচ্ছে মস্কো। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী। তলব করা হয়েছে দেশটির রিজার্ভ সেনাসদস্যদের। এদিকে ইউক্রেনের নবনিযুক্ত নৌবাহিনীর প্রধান ডেনিস বেরেজভস্কি সপক্ষ ত্যাগ করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা রাশিয়ার সিদ্ধান্তকে ‘ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন’ বলে মন্তব্য করেছেন। রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী আরসেনিয়ে ইয়াৎসেনিউক। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সহায়তা চাওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে জরুরি বৈঠক ডেকেছে ন্যাটো। ন্যাটোর মহাসচিব অ্যান্ডেস ফগ রাসমুসেন বলেছেন, ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার তৎপরতা ইউরোপের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এর আগে গত শনিবার ক্রিমিয়ার রুশপন্থী প্রধানমন্ত্রী সের্গেই আকসাইনভ রাশিয়ার সহায়তা চেয়ে পুতিনের কাছে আবেদন করেন। এরপরই রুশ পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ইউক্রেনের ক্রিমিয়ার পাশাপাশি অন্যান্য অঞ্চলে থাকা রুশ নাগরিক ও সেনাসদস্যদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমতি দেয়। এ অনুমোদনের আওতায় পুতিন ইউক্রেনে রুশ বাহিনী পাঠাতে পারবেন। ‘দেশটিতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত’ পুতিন এ ক্ষমতার প্রয়োগ করতে পারবেন। নৌবাহিনী প্রধানের সপক্ষ ত্যাগ: ইউক্রেনের নবনিযুক্ত নৌবাহিনী প্রধান ডেনিস বেরেজভস্কি সপক্ষ ত্যাগ করেছেন। তিনি গতকাল ক্রিমিয়ার রুশপন্থী কর্তৃপক্ষের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে শপথ গ্রহণ করেন। বেরেজভস্কি গতকাল এক টেলিভিশন বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি স্বায়ত্তশাসিত ক্রিমিয়া প্রজাতন্ত্রের বাহিনী প্রধানের নির্দেশ পালনে শপথ নিচ্ছি।’ এর মাত্র এক দিন আগে ইউক্রেনের অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট বেরেজভস্কিকে দেশটির নৌবাহিনী প্রধান পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ক্রিমিয়ার পরিস্থিতি: ক্রিমিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে শনিবার রুশ সেনাদের অবস্থান ছিল লক্ষণীয়। তারা স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পাশাপাশি প্রধান বিমানবন্দর বন্ধ করে দিয়েছে। অবশ্য এসব সেনার পরিচয়সূচক চিহ্ন এবং সাঁজোয়া যান নেই।
ক্রিমিয়ার রাজধানী সিমফারপুলে শনিবার ভারী অস্ত্রসজ্জিত অসংখ্য সেনাসদস্যকে দেখা গেছে, যাঁরা সবুজ রঙের ক্যামোফ্লেজ উর্দি পরে ছিলেন। তাঁরা রুশ ভাষায় কথা বলছিলেন। তবে বালাকভা এলাকায় সীমান্তচৌকি অভিমুখী রাস্তায় বিশাল সেনাবহরের গাড়িগুলোতে রাশিয়ার নম্বরপ্লেট ছিল। মস্কোর পদক্ষেপ যুদ্ধের শুরু: ক্রিমিয়ায় রুশ সেনাবাহিনীর উপস্থিতিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আখ্যা দিয়ে ইউক্রেনের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ইয়াৎসেনিউক বলেন, রাশিয়ার পদক্ষেপ ‘উসকানিমূলক’। তিনি অবিলম্বে সব রুশ সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে সতর্ক করে বলেন, মস্কোর এ সামরিক পদক্ষেপ ‘যুদ্ধের শুরু এবং সম্পর্কের শেষ’। রিজার্ভ সেনাদের তলব: ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের প্রধান আন্দ্রে পারুবি গতকাল বলেন, দেশটির রিজার্ভ সেনাদের তলব করা হচ্ছে। পাশাপাশি দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে ‘যুদ্ধের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত’ অবস্থায় রাখা হয়েছে। ওবামা-পুতিন ফোনালাপ: ইউক্রেন-সংকট নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা ও রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন গত শনিবার টেলিফোনে কথা বলেন। ৯০ মিনিটের আলাপকালে ওবামা বলেন, ইউক্রেনে সেনাদল পাঠিয়ে রাশিয়া আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। ক্রিমিয়া থেকে রুশ সেনাদের ঘাঁটিতে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। জবাবে পুতিন বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার স্বার্থ এবং রুশভাষীদের রক্ষা করার অধিকার মস্কোর রয়েছে। ন্যাটোর বৈঠক: ন্যাটোর ২৮ জন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে গতকাল বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে জরুরি বৈঠকে বসেন সংস্থাটির প্রধান অ্যান্ডারস ফগ রামুসেন। বৈঠক শুরুর আগে তিনি মন্তব্য করেন, মস্কোর তৎপরতায় ‘ইউরোপের শান্তি ও নিরাপত্তা’ হুমকির মুখে পড়ছে। রাশিয়াকে অবশ্যই তার সামরিক কর্মকাণ্ড ও হুমকি দেওয়া বন্ধ করতে হবে। রাশিয়ার চাপে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচ গত নভেম্বরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরে অস্বীকৃতি জানালে কিয়েভে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে তা ইয়ানুকোভিচবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। গণবিক্ষোভের মুখে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি কিয়েভ ছেড়ে রাশিয়ায় পালান। এএফপি, বিবিসি ও নিউইয়র্ক টাইমস।
No comments