অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়- কর্তৃত্ব ফিরে পেলেন আনোয়ারা বেগম by সোলায়মান তুষার
অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা ও কর্তৃত্ব নিয়ে চলা দ্বন্দ্বের মধ্যে ইসরাফিল
আলম এমপিকে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। সভাপতি
করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ও ভিসি অধ্যাপক আনোয়ারা বেগমকে।
অধ্যাপক
আনোয়ারা গত চার বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছিলেন না।
এদিকে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অবৈধ
ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বদ্যিালয় মঞ্জুরি
কমিশন (ইউজিসি)। ২রা মার্চ এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সরকার
দলীয় এমপি ইসরাফিল আলম ও তার সহযোগীরা বিশ্ববিদ্যালয়টি দখল করে দীর্ঘদিন
ধরে সার্টিফিকেট বাণিজ্য করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা ইউজিসির অনুমোদন
ছাড়াই রাজধানীর বনানী, মিরপুর, পান্থপথ, উত্তরা ও পুরানা পল্টনে অবৈধ
ক্যাম্পাস খুলে বাণিজ্য করছেন। একাধিকবার নোটিশ দিলেও তারা অবৈধ বাণিজ্য
বন্ধ করেননি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব অবৈধ ক্যাম্পাসে পরবর্তী সেমিস্টার থেকে
(মে ২০১৪) শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকবে। শুধু পল্টনে অবস্থিত ক্যাম্পাস
বন্ধের বিষয়ে পরবর্তীকালে আলোচনাসাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সরকারি
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে
বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থানান্তরপূর্বক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
অবিলম্বে নতুন বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি
ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের প্যানেল প্রস্তাব করে প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠাতে
হবে। উল্লেখ্য, প্রয়াত সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহমেদের
স্ত্রী অধ্যাপক আনোয়ারা বেগমের প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি দখল করে
নিয়েছিলেন সরকার দলীয় এমপি ইসরাফিল আলম ও ছাত্রলীগের কয়েকজন সাবেক নেতা।
সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কয়েকজন শিক্ষকও এই অবৈধ দখলের সঙ্গে জড়িত।
ইউজিসি একাধিকবার সতর্ক করলেও কোন লাভ হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়টি দখলে নিতে
নতুন করে দলিলপত্র পর্যন্ত করা হয়েছিল। ইউজিসির শক্ত অবস্থানের কারণে তারা
পেরে ওঠেনি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদ্যমান দু’টি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ বিলুপ্ত
ঘোষণা করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে নতুন ট্রাস্টি বোর্ড। নতুন ট্রাস্টি
বোর্ডের সভাপতি করা হয়েছে অধ্যাপক আনোয়ারা বেগমকে। ইসরাফিল আলম হয়েছেন
ভাইস-চেয়ারম্যান। নতুন ট্রাস্টি বোর্ডের বর্তমান সদস্য ২১ জন। ইউজিসির
সঙ্গে বৈঠকে অধ্যাপক আনোয়ারা বেগম বলেন, প্রয়াত অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন
আহমেদের স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা। আমি বিশ্ববিদ্যালয়টি
প্রতিষ্ঠা ভিসি ও চেয়ারম্যান হিসেবে দীর্ঘদিন বিনা পারিশ্রমিকে দায়িত্ব
পালন করেছি। কিন্তু দীর্ঘ চার বছর ধরে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারছি না।
তিনি বলেন, আমার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে বিভিন্ন জটিলতার কারণে
তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। অন্যদিকে সুর পালটেছেন ইসরাফিল আলম এমপি। বলেন,
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ভিসি ও চেয়ারম্যান মান্যবর অধ্যাপক ড.
আনোয়ারা বেগমের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়টি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করে এর হৃত
গৌরব ফিরিয়ে আনতে পারবো। ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক একে আজাদ চৌধুরী বলেন,
প্রতিষ্ঠানটির সব অবৈধ ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেয়া হবে। নতুন করে কোন
শিক্ষার্থী ভর্তি করতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বোর্ড অব
ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আনোয়ারা বেগম। বিশ্ববিদ্যালয়টির
দখলদারিত্ব পাকাপোক্ত করতে জালিয়াতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও
পরিবর্তন করা হয়। গঠন করা হয় আরেকটি ট্রাস্টি বোর্ড। ট্রাস্টি বোর্ডের
চেয়ারম্যান অধ্যাপক আনোয়ারা বেগমকে বিতাড়িত করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
ইসরাফিল আলম এমপি হন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান। এছাড়া বোর্ড অব
ট্রাস্টিজের অন্য সদস্যরাও সরকার সমর্থক। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দায়িত্ব
পালন করছেন আবুল হোসেন শিকদার। জাল ও ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে তিনি চাকরি
করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১১ সালের ১৮ই মে ইসরাফিল আলম এমপিকে বোর্ড অব
ট্রাস্টির সদস্য হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দেন চেয়ারম্যান অধ্যাপক
আনোয়ারা বেগম। ওই বছরের ২৫শে মে ইসরাফিল আলম এমপি আমন্ত্রণ গ্রহণ করে
বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হন। ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান
অধ্যাপক আনোয়ারা বেগমকে এ সম্পর্কিত একটি চিঠিও দেন ইসরাফিল আলম। সদস্য
হওয়ার পর থেকে তিনি কৌশলের আশ্রয় নেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক
ইয়াজউদ্দিন আহমেদ নানা সময় অসুস্থ থাকায় অধ্যাপক আনোয়ারা বেগমকে বিভিন্ন
সময় দেশের বাইরে থাকতে হয়। সে সুযোগটি নেন ইসরাফিল আলম ও বর্তমান
ভারপ্রাপ্ত ভিসি অধ্যাপক আবুল হোসেন শিকদার। ২০১১ সালের ২৪শে জুলাই বোর্ড
অব ট্রাস্টির একটি বিশেষ সভা হয়। তাতে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত ভিসি
অধ্যাপক আবুল হোসেন শিকদার। ওই বৈঠকেই ইসরাফিল আলম এমপিকে বোর্ড অব
ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। অথচ ওই বৈঠক সম্পর্কে কিছুই
জানতেন না বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আনোয়ারা বেগম। তাকে
অন্ধকারে রেখেই বৈঠকটি করা হয়। এরপর থেকে ইসরাফিল আলম বিশ্ববিদ্যালয় দখলের
পাঁয়তারা শুরু করেন। ২০১২ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ থেকে
একই নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন করেন।
No comments