গোড়ার গলদ দূর করতেই হবে
দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক
নিয়োগে অনিয়মের যে বিবর্ণ চিত্র শুক্রবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে
এসেছে, তা এখন 'ওপেন সিক্রেট'। প্রত্যন্ত গ্রামের রেজিস্টার্ড প্রাথমিক
বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠেও আলো ছড়ানোর
মানুষ নির্বাচনে কী ধরনের অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়, কমবেশি
সবাই এখন জানেন। মাত্র দুই দশক আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ে উজ্জ্বলতম
শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষকতার দ্বার অবারিত ছিল। এখন সেখানে দলবাজি,
স্বজনপ্রীতি, আঞ্চলিকতা এমনকি আর্থিক লেনদেনেরও অভিযোগ পাওয়া যায়। বেসরকারি
স্কুল-কলেজ পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগে দেড়-দুই দশক আগেও পরীক্ষা ও সাক্ষাৎকারে
উত্তীর্ণ শিক্ষক-প্রার্থীর কাছে 'ডোনেশন' হিসেবে কিছু অর্থ নেওয়া হতো। এর
একটি অংশ প্রতিষ্ঠানের তহবিলেও জমা হতো। কিন্তু এখন শিক্ষক নিয়োগ মানেই
কর্তাব্যক্তিদের লাখ লাখ টাকার নগ্ন বাণিজ্য। এভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতির
মাধ্যমে যেসব 'মানুষ গড়ার কারিগর' আমরা পাচ্ছি, তারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কী
ধরনের শিক্ষা দেবেন_ বলাই বাহুল্য। শিক্ষক যেখানে শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা ও
প্রজ্ঞা শিক্ষা দেন, সেখানে এসব 'শিক্ষক' না ধারণ করেন নৈতিকতা, না আছে
প্রজ্ঞা। এটা ঠিক যে, এখনও কিছু মেধাবী শিক্ষকতা পেশায় আসছেন। 'যুগের ধর্ম'
মেনে অর্থের অনর্থ ও অনিয়ম মেনেই আসছেন। এই কারণে তো বটেই, চারপাশে যখন
অমেধাবী সহকর্মীর ছড়াছড়ি দেখেও তাদের মনোবল অটুট থাকার কথা নয়। এই আত্মঘাতী
তৎপরতা আমাদের বন্ধ করতেই হবে। আমরা যদি সৎ ও মেধাবী জাতি গঠন করতে চাই,
তাহলে গোড়ার এই গলদ যে কোনো মূল্যে দূর করতেই হবে। সমকালের প্রতিবেদনসূত্রে
জানা যাচ্ছে, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের শত শত লিখিত অভিযোগ প্রতি মাসে আসছে
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এগুলোর তদন্ত দিয়ে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজটির সূচনা
হতে পারে। এসব অভিযোগ যদি প্রতিকার পায়, তাহলে ভবিষ্যতে শিক্ষক নিয়োগে
অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে আসবে। ধারণা করা যায়, এমন আরও অনিয়মের অভিযোগ ও ক্ষোভ
হয়তো মন্ত্রণালয় পর্যন্ত পেঁৗছে না। ফলে সময়সাপেক্ষে সব শিক্ষক নিয়োগ
প্রক্রিয়া নিয়েই সার্বিক পর্যালোচনা প্রক্রিয়া শুরু করা যেতে পারে। মনে
রাখা জরুরি, আমরা যদি শিক্ষক বাছাইয়ে স্বচ্ছ ও নৈতিক মানদণ্ড বজায় রাখতে না
পারি, তাহলে শিক্ষার প্রসারে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ নিছক কাগুজে সাফল্যই
জন্ম দিতে থাকবে।
No comments