শান্তিপূর্ণ আন্দোলনই কাম্য
বিএনপি অবরোধের বিকল্প কর্মসূচির কথা
ভাবছে_ এমন একটি প্রতিবেদন শুক্রবার সমকালে প্রকাশিত হয়েছে। এটা সবারই জানা
যে, দিনের পর দিন হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত। বিএনপি
এবং তার ১৮ দলীয় জোটের মিত্ররা ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন বন্ধের দাবি
করেছিল। কিন্তু যত কম ভোটই পড়ূক এবং এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যত প্রশ্নই
থাকুক, নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে এবং নতুন জাতীয় সংসদ গঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছেন এবং আগামীকাল রোববার শেখ হাসিনার
নেতৃত্বে একটি নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হবে। নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপি টানা
কয়েক দিন যুগপৎ হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। রোববার থেকে ফের টানা
অবরোধ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক দিনের
কর্মসূচির অভিজ্ঞতা থেকে বলা চলে যে, এ কর্মসূচি নিছকই নিয়ম রক্ষার ব্যাপার
হবে। বিএনপি কিংবা তার জোটের কর্মী-সমর্থকরা গত কয়েক দিনে কার্যত রাজপথে
নামেনি। আন্দোলন সফল করে তোলার ক্ষেত্রে মূলত নির্ভর করা হয়েছে জামায়াতে
ইসলামীর সহিংস কর্মপন্থার ওপর। এর দ্বারা সরকারকে যতটা না বেগ দেওয়া গেছে,
তার চেয়ে ঢের বেশি ক্ষতি হয়েছে সাধারণ মানুষের। শত শত মানুষের প্রাণ গেছে।
অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বেঁচে থাকা ও উপার্জনের
অধিকার দারুণভাবে বিপন্ন হয়েছে। এটা ঠিক যে, সরকারের তরফে ঢালাও গ্রেফতারসহ
দমন-পীড়নের কৌশল অনুসরণ করায় বিরোধী দলের কর্মীরা অনেক ক্ষেত্রেই পথে
নামতে পারেনি। একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে যে, এ ধরনের আন্দোলন কর্মসূচির
প্রতি জনসমর্থনও আগের মতো মিলছে না। কোথাও তাদের কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষ
স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেমে এসেছে_ এমন নজির মিলছে না। অথচ আমরা জানি, বিএনপি
এবং বিশেষ করে তার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে।
স্থানীয় সংস্থাগুলোর নির্বাচনেও মিলেছে এর প্রমাণ। কিন্তু দিনের পর দিন
আন্দোলন পরিচালনা করেও তারা কেন কাঙ্ক্ষিত সফলতা পেল না? বিএনপি প্রতিষ্ঠার
পর সাড়ে দিন দশক অতিক্রান্ত হয়েছে। দলে এখন অভিজ্ঞ অনেক নেতা রয়েছেন। তারা
বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে জনগণের সমর্থন আদায়ে কার্যকর পথ খুঁজে পাবেন_ এটাই
আমরা আশা করব। সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া চলমান অবরোধ
স্থগিত করে রোডমার্চ ও জেলাগুলোতে সমাবেশের ঘোষণা দেবেন এবং দেশের বিভিন্ন
স্থানে এ ধরনের কর্মসূচিতে তিনি নিজেও অংশ নেবেন। জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী
হরতাল-অবরোধ ও সহিংস বিভিন্ন কর্মসূচির পরিবর্তে শান্তিপূর্ণ রোডমার্চ ও
সমাবেশের কর্মসূচি গ্রহণ করা হলে জনগণ তাকে স্বাগত জানাবে বলেই আমাদের
ধারণা। এ ধরনের কর্মসূচিতে যেন বাধাবিঘ্ন না আসে সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব
সরকারের। অন্যদিকে বিরোধীদেরও মনে রাখতে হবে_ হিংসার পথে সরকারের পতন
ঘটানো যায় না। কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ রাখতে তাদের সচেষ্ট থাকতে হবে। দশম
সংসদে নতুন বিরোধী দল কীভাবে দায়িত্ব পালন করবে, সেটা একেবারেই স্পষ্ট নয়।
সরকারকে এটাও মনে রাখতে হবে যে, কার্যকর বিরোধী শক্তি রয়ে গেছে সংসদের
বাইরে। অতএব, তাদের কথা সরকারকে শুনতে হবে এবং একই সঙ্গে তাদের সঙ্গে
সংলাপেও বসতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে ঐকমত্যের কথা বলা শুরু হয়েছে। বিএনপির
মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দলকে বাইরে রেখে এ লক্ষ্য অর্জিত হতে পারে না।
No comments