দগ্ধ শিক্ষকের খোঁজ নেয়নি শিক্ষা বিভাগের কেউ by ইন্দ্রজিৎ সরকার
ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন সাইদুল ইসলাম |
(অবরোধের আগুন)
'আমাকে দেখতে হাসপাতালে পুলিশের আইজি (মহাপরিদর্শক), নির্বাচন কমিশনের
কর্মকর্তাসহ অনেকেই এসেছিলেন। আমাকে সান্বস্ননা দিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন।
অথচ আমার নিজের, মানে শিক্ষা বিভাগের কেউ কোনো খোঁজ নেননি। আমার খুব কষ্ট
লেগেছে।' ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বিছানায় শুয়ে এসব
বলছিলেন পেট্রোল বোমায় দগ্ধ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ মহিলা কলেজের রসায়ন
বিভাগের প্রভাষক সাইদুল ইসলাম। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি ভোটকেন্দ্রে
প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে ফেরার পথে তিনি আক্রান্ত
হন। একই ঘটনায় দগ্ধ হন পুলিশ কনস্টেবল আবুল কালাম আজাদ। স্থানীয় হাসপাতালে
চিকিৎসার পর তাদের দু'জনকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে
স্থানান্তর করা হয়। এদিকে অবরোধ-হরতালে নাশকতার আগুনে দগ্ধ মোট ৩০ জন এখন
বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে
(আইসিইউ) থাকা তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। বার্ন
ইউনিটের ষষ্ঠ তলায় রয়েছেন ৪৫ বছর বয়সী শিক্ষক সাইদুল ইসলাম। তিনি গতকাল
সমকালকে বলেন, ৫ জানুয়ারি গোবিন্দগঞ্জের পুনতাইড় ভোটকেন্দ্রে প্রিসাইডিং
কর্মকর্তা ছিলাম। ভোট গ্রহণ শেষে দুটি কেন্দ্রের কর্মকর্তা, ব্যালট বাক্স
নিয়ে পুলিশসহ টেম্পোতে করে থানা সদরের দিকে যাচ্ছিলাম। পথে বাদ্যামুন্সির
হাট নামক স্থানে দুর্বৃত্তরা আমাদের টেম্পো লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে
শুরু করে। রাস্তায় সামনে ছিল ব্যারিকেড। টেম্পো থামতেই ভেতরে একটি পেট্রোল
বোমা এসে পড়ে। রসায়নের শিক্ষক হওয়ায় পেট্রোল বোমার ভয়াবহতা আমার অজানা নয়।
আমি সর্বোচ্চ দুই সেকেন্ডের মধ্যে টেম্পো থেকে লাফ দিই। ওইটুকু সময়ের
মধ্যেই আমার মুখমণ্ডল, দুই হাত-পা পুড়ে যায়। দগ্ধ অবস্থায় পাশের গ্রামে
ঢুকে একজনের পা ধরে বলেছি, ভাই, আমাকে বাঁচান। কিন্তু দুর্বৃত্তদের হামলার
ভয়ে লোকজন আমাকে আশ্রয় দিতে চাইছিল না। এর মধ্যে পরিচিত একজন আমাকে চিনতে
পেরে বলেন, 'কোনো ভয় নেই স্যার। আপনি আমার সঙ্গে আসেন।'
সাইদুল ইসলামের স্ত্রী মাহফুজা বেগম জানান, ওই ঘটনায় মোট চারজন দগ্ধ হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে সাইদুলকে প্রথমে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শরীরের ১২ ভাগ পুড়ে গেছে। বিশেষ করে শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ায় তিনি শঙ্কামুক্ত নন। একই ঘটনায় দগ্ধ গোবিন্দগঞ্জ থানার পুলিশ কনস্টেবল আবুল কালাম আজাদ বার্ন ইউনিটের দোতলায় হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) রয়েছেন। তার শরীরের ১৪ ভাগ পুড়ে গেছে। তার শ্যালক মশিউর রহমান জানান, আবুল কালাম আজাদের শরীরের ক্ষতস্থানে এখনও প্রচণ্ড যন্ত্রণা। তবে চিকিৎসকরা বলেছেন, তিনি দ্রুত সেরে উঠবেন।
এদিকে দেড় মাসের বেশি সময় বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন কুমিল্লার সিএনজি অটেরিকশা চালক রুবেল কয়েক দিন ধরে বাড়ি ফেরার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছেন। এখানে তার ভালো লাগছে না। তার অভিযোগ_ যথাযথ চিকিৎসা হচ্ছে না। গতকাল এইচডিইউতে তার স্ত্রী নাসিমা বেগম জানান, রুবেল বাড়ি যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করছেন। তাই অসুস্থ অবস্থায়ই তাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরতে চান। সেখানে নিয়ে চিকিৎসা করাবেন। আইসিইউতে তিনজন :নির্বাচনের আগের দিন সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন কনস্টেবল ইমাম উদ্দিন। জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা তার ওপর হামলা করে গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৩০ ভাগ পুড়ে যায়। তাকে নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন স্ত্রী আয়শা খাতুন। চিকিৎসকরাও তাকে ভরসা দিতে পারছেন না।
একই দিনে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় দগ্ধ হন গাড়িচালক শরিফুল ইসলাম। তার শরীরের ৩২ ভাগ পুড়ে গেছে। ভাই রবিউল ইসলাম জানালেন, ভালোভাবে কথাও বলতে পারছেন না শরিফুল। শ্বাস নিতে প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। সিএনজি অটোরিকশায় চাঁদপুর থেকে মতলবে যাওয়ার পথে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হন দিনমজুর বাচ্চু প্রধান। তার শরীরের ৪৯ ভাগ পুড়ে গেছে। তার বিছানার পাশে বসে কাঁদছিলেন মেয়ে আসমা। তিনি জানালেন, তারা চার বোন। সংসারে বাবাই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। চিকিৎসকরা বলছেন, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শংকর পাল জানান, ২৬ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত অবরোধ-হরতালে দগ্ধ ১৫৩ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৫৫ জন বহির্বিভাগে এবং ৯৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় এখানে মারা গেছেন ২২ জন। এ ছাড়া বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নেওয়ার পর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান ব্যাংক কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার।
সাইদুল ইসলামের স্ত্রী মাহফুজা বেগম জানান, ওই ঘটনায় মোট চারজন দগ্ধ হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে সাইদুলকে প্রথমে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শরীরের ১২ ভাগ পুড়ে গেছে। বিশেষ করে শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ায় তিনি শঙ্কামুক্ত নন। একই ঘটনায় দগ্ধ গোবিন্দগঞ্জ থানার পুলিশ কনস্টেবল আবুল কালাম আজাদ বার্ন ইউনিটের দোতলায় হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) রয়েছেন। তার শরীরের ১৪ ভাগ পুড়ে গেছে। তার শ্যালক মশিউর রহমান জানান, আবুল কালাম আজাদের শরীরের ক্ষতস্থানে এখনও প্রচণ্ড যন্ত্রণা। তবে চিকিৎসকরা বলেছেন, তিনি দ্রুত সেরে উঠবেন।
এদিকে দেড় মাসের বেশি সময় বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন কুমিল্লার সিএনজি অটেরিকশা চালক রুবেল কয়েক দিন ধরে বাড়ি ফেরার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছেন। এখানে তার ভালো লাগছে না। তার অভিযোগ_ যথাযথ চিকিৎসা হচ্ছে না। গতকাল এইচডিইউতে তার স্ত্রী নাসিমা বেগম জানান, রুবেল বাড়ি যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করছেন। তাই অসুস্থ অবস্থায়ই তাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরতে চান। সেখানে নিয়ে চিকিৎসা করাবেন। আইসিইউতে তিনজন :নির্বাচনের আগের দিন সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন কনস্টেবল ইমাম উদ্দিন। জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা তার ওপর হামলা করে গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৩০ ভাগ পুড়ে যায়। তাকে নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন স্ত্রী আয়শা খাতুন। চিকিৎসকরাও তাকে ভরসা দিতে পারছেন না।
একই দিনে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় দগ্ধ হন গাড়িচালক শরিফুল ইসলাম। তার শরীরের ৩২ ভাগ পুড়ে গেছে। ভাই রবিউল ইসলাম জানালেন, ভালোভাবে কথাও বলতে পারছেন না শরিফুল। শ্বাস নিতে প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। সিএনজি অটোরিকশায় চাঁদপুর থেকে মতলবে যাওয়ার পথে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হন দিনমজুর বাচ্চু প্রধান। তার শরীরের ৪৯ ভাগ পুড়ে গেছে। তার বিছানার পাশে বসে কাঁদছিলেন মেয়ে আসমা। তিনি জানালেন, তারা চার বোন। সংসারে বাবাই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। চিকিৎসকরা বলছেন, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শংকর পাল জানান, ২৬ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত অবরোধ-হরতালে দগ্ধ ১৫৩ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৫৫ জন বহির্বিভাগে এবং ৯৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় এখানে মারা গেছেন ২২ জন। এ ছাড়া বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নেওয়ার পর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান ব্যাংক কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার।
No comments