কুড়িয়ে পাওয়া সংলাপ-সংসারের সর্বপরিতৃপ্ত শ্রমিক by রণজিৎ বিশ্বাস
: শ্রমজীবনে আপনার উত্তরণ অনুবর্তী যাদের
পরে হয়েছে, তাদের ধারেকাছেও আপনি পৌঁছুতে পারতেন না। তেমন কোনো
ক্ষমতাক্ষেমতা আর যোগ্যতাই আপনার নেই।
: এ রকম ধারণা আপনার কেন হলো?
: আপনার বর্তমান শ্রমজীবনের একজন কন্ট্রোলিং অফিসারের সঙ্গে কথা বলার পর আমার এ ধারণা জন্মেছে। আপনার বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনে তিনি লিখেছিলেন- 'পদোন্নতির যোগ্য মনে করি না। আমি তার কাজে কোনো প্রকার সক্ষমতা দেখিনি।' আপনি তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কাজ করতেন। চিনতে পারছেন তিনি কে?
: পারব না কেন?! তাঁকে যদি আমি ভুলে যাই, মনে আমি রাখব কাকে? সংসারে সবার জীবনেই কিছু কিছু মানুষ পড়ে যান, কিছুতেই যাঁদের স্মৃতিছুট করা যায় না। তাঁরা স্বপ্নে আসেন, দুঃস্বপ্নে আসেন। তাঁদের সবাই একই রকম অনুভূতিতে বেঁচে থাকেন না। কেউ কেউ বেঁচে থাকেন ভালোবাসায়, শ্রদ্ধায়, আর কেউ কেউ ঘৃণায় বিবমিষায়। আপনি যাঁর কথা তুললেন, তিনি বেঁচে আছেন এবং বেঁচে থাকবেন পরের দুটি অনুভূতিতে। বেঁচে তিনি থাকবেন প্রবলভাবে। হয়তো তাঁর দেহ রাখার পরেও। যদি আমার দেহ রাখা তাঁর পরে হয়।
: সেটি কি ঠিক হবে?
: যখন তিনি দেহ রাখবেন, তখন ঠিক করব।
: আপনি তাঁকে কিভাবে চেনেন? কিভাবে তাঁকে মূল্যায়ন করেন?
: খুব সিম্পল একটা মূল্যায়ন করি আমি তাঁর। কোনো স্ট্যান্ডার্ড হিউম্যান বিইং আমি ভদ্রলোককে ভাবি না।
: আপনি কী মনে করেন তিনি সাব স্ট্যান্ডার্ড!
: তেমন বলার কিছু কি আর বাকি আছে!
: তাঁর সঙ্গে আপনার দেখা-সাক্ষাৎ হয় না?
: হয়। মনে মনে প্রার্থনা করি যেন না হয়, তার পরও হয়ে যায়। দেখা হলেই আমার পণভঙ্গ হয়। তাঁকে সালাম না দেওয়ার পণেপ্রতিজ্ঞায় আমি থাকতে পারি না। ভাবি, ওর মতো যদি হতে পারতাম!
: সেটি কী রকম?
: উনি সালামের জবাব খুব কমই দিতেন। যাঁদের তিনি পছন্দ করতেন না, যেমন আমি একজন, তাঁদের সালাম তিনি নিতেনই না। তখন আমার সৌজন্য ও বিনয়বোধের অপচয় হতো এবং সে অপচয়ের জন্য আমার আফসোস হতো।
: আপনি নিজে কী করেন?
: আমি, যত অক্ষম-অদক্ষ আর খারাপ লোকই হই, অন্যজন আমাকে সালাম দেওয়ার আগে আমি তাঁকে সালাম দেওয়ার চেষ্টা করি। কখনো কখনো পারি না, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সফল হই। এমন কেন করেন আপনি?- আমাকে কেউ কেউ প্রশ্ন করেন। আমি বলি- সংসারে খুব বেশি লোক খুব বেশি লোককে আদাব-সালাম প্রণাম, নমস্কার দেয় না। তাই এই জিনিসটি বড় কৃতজ্ঞতায় গ্রহণ করা উচিত। যারা এটি পায়, আপন আপন ভাগ্যের প্রতি তাদের প্রীত ও সন্তুষ্ট থাকা উচিত।
: যদি আপনাকে বলা হয়, এই ব্যক্তির উদ্দেশে আপনার হৃদয়ের সাড়া কেমন? আপনার অন্তরের বোধ কেমন? তখন আপনি কী বলবেন? আপনার জবাব কী হবে?
তখন আমার জবাব হবে খুব সিম্পল। আমি বলব, কিছু শেখার জন্য আমি যাদের কাছে কৃতজ্ঞ, যাদের কথা আমি এখন ভুলতে পারিনি, এই মানুষটিকে- তিনি সাব স্ট্যান্ডার্ড হিউম্যান বিইং হোন আর যাই হোন, আমি ভুলব না। আমি তাঁকে 'মরতে দমতক' মনে রাখব।
মানুষ সফল মানুষকে দেখে সফলতার শিক্ষা যতটা নিতে পারে, তার চেয়ে বেশি নিতে পারে ব্যর্থ মানুষকে দেখে; মানুষ বেশি সাবধান হয় বিপদত্রস্তকে দেখে। মানুষ আদপ শেখে আদপহীন লোকের কাছে।
এই সূত্র মেনে আমি তাঁর কাছে শিখেছি সহকর্মীদের সঙ্গে কিভাবে ব্যবহার করতে হয়, বিশেষ করে অনুবর্তী সহকর্মী ও ভদ্রসন্তানদের সঙ্গে, কিভাবে মানুষের কাজের স্বীকৃতি দিতে হয়, কিভাবে মানুষকে যথাপ্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে হয়, কিভাবে নিজের অবস্থানের কথা স্মরণ রেখে মানুষকে মনুষ্যপদবাচ্য করতে হয়। কিভাবে লুব্ধতার থকথকে ভাবটা পরিহার করে মানুষের প্রতি পক্ষপাতরহিত আচরণ করতে হয় এবং কিভাবে সহকর্মীদের বিমর্ষ ও তটস্থ না রেখে কাজ আদায় করে নিতে হয়।
: যা তাঁর কাছে শিখেছেন, সবই কী নির্ভুল?
: সবই নির্ভুল। তাঁকে যা যা করতে দেখেছি ও যেভাবে করতে দেখেছি, আমার শ্রমজীবনে আমি ঠিক তার উল্টোটি করেছি। আমি দেখেছি, এতে আমার কোনো অসুবিধে হয়নি। আমার সহকর্মীদের কাছ থেকে আমি কাজও আদায় করতে পেরেছি বড় চমৎকার আনুগত্যে ও শ্রদ্ধামিশ্রিত ভালোবাসায়। তারা যেমন আমাকে মনে রেখেছে, আমিও তাদের ভুলিনি। ঘাটে ঘাটে তাদের ছেড়ে আসার সময় আমার জন্য তারা কেঁদেছে, তাদের জন্যও আমি না কেঁদে পারিনি। তাদের জন্য বড় আনন্দে আমি চোখের জল টপটপিয়েছি।
: আপনার সিস্টেমটা কী রকম?
: একেবারেই অজটিল। আমার এই অতি বিস্মরণীয় অগ্রবর্তী সহকর্মীসহ যাঁরা বিশ্বাস করেন, 'পাওয়ার ইজ বেস্ট এক্সারসাইজড হোয়েন ইট ইজ ফিয়ারসামলি অর সিভিয়ারলি এক্সারসাইজড, আমি তাঁদের দলে নই'; আমার স্কুলের শিক্ষা হচ্ছে- 'পাওয়ার ইজ বেস্ট এক্সারসাইজড হোয়েন ইট ইজ নট এক্সারসাইজড।' এই স্কুল আমাকে নিরাশ করেনি।
দ্বিতীয়, আমরা ওই ভদ্রলোকের ডাক পেলে আতঙ্কিত হতাম। তাঁর কক্ষে আমরা ঢুকতাম উদ্বেগ নিয়ে, বেরিয়ে আসতাম ধ্বস্তবিধ্বস্ত হয়ে, তাঁর ও তাঁর পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে বিরূপ প্রকৃতির আশিস-আশীর্বাদ বর্ষাতে বর্ষাতে। আমি তাঁর উল্টোটা প্র্যাকটিস করি। লোকটার সঙ্গে দেখা হলে কোনো দিন এতটা হয়তো আমি প্র্যাকটিস করতাম না। আমার ফর্মুলা হলো, অনুবর্তী সহকর্মীরা আমার কক্ষে উদ্বেগহীন ঢুকবে ও পরিতৃপ্তি নিয়ে বেরিয়ে আসবে।
তৃতীয়, আমি আমার শ্রমের জায়গায় একটি পারিবারিকপ্রায় বাতাবরণ তৈরি করে কাজ করি, ও করাতে চাই। আমার সহকর্মীদের মধ্যে আমি ভাইবোন ও পুত্রকন্যা খুঁজে নিই। তাদের কাছে তা আমি প্রকাশ করি না, কিন্তু সেভাবেই আমি তাদের ওপর অধিকার খাটাই। তারাও দেখি, সাড়া দেয়।
: আপনার জীবন তো বড় কষ্টের জীবন।
: আমি মোটেই তা মনে করি না। আমার বিবেচনায়, সফল হই, ব্যর্থ হই, আমি পৃথিবীর সবচেয়ে পরিতৃপ্ত ও সুখী লোক। ক্লান্তির পর আমি শান্তিতে ঘুমাই, খিদের সময় উদরে যা ঢোকাই, তার সবই নিঃশেষে হজম হয়ে যায়, আমার কোনো ধার নেই, কর্জ নেই, মানুষ যা আমার কাছ থেকে নেয় সময়মতো তা শোধপরিশোধ না করলেও তাগাদা না দিয়ে ও অস্থির না হয়ে আমি চলতে পারি এবং মনে মনে কৌতুকও বোধ করতে পারি। জীবনের নন্দ যাপনে আমার ফর্মুলা হলো- যতই থাকুক টানাপড়েন ভালো থাকাটাই সব/জীবন মানে আর কিছু নয়, জীবন তো উৎসব।
লেখক : শ্রমজীবী কথাসাহিত্যিক
: আপনার বর্তমান শ্রমজীবনের একজন কন্ট্রোলিং অফিসারের সঙ্গে কথা বলার পর আমার এ ধারণা জন্মেছে। আপনার বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনে তিনি লিখেছিলেন- 'পদোন্নতির যোগ্য মনে করি না। আমি তার কাজে কোনো প্রকার সক্ষমতা দেখিনি।' আপনি তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কাজ করতেন। চিনতে পারছেন তিনি কে?
: পারব না কেন?! তাঁকে যদি আমি ভুলে যাই, মনে আমি রাখব কাকে? সংসারে সবার জীবনেই কিছু কিছু মানুষ পড়ে যান, কিছুতেই যাঁদের স্মৃতিছুট করা যায় না। তাঁরা স্বপ্নে আসেন, দুঃস্বপ্নে আসেন। তাঁদের সবাই একই রকম অনুভূতিতে বেঁচে থাকেন না। কেউ কেউ বেঁচে থাকেন ভালোবাসায়, শ্রদ্ধায়, আর কেউ কেউ ঘৃণায় বিবমিষায়। আপনি যাঁর কথা তুললেন, তিনি বেঁচে আছেন এবং বেঁচে থাকবেন পরের দুটি অনুভূতিতে। বেঁচে তিনি থাকবেন প্রবলভাবে। হয়তো তাঁর দেহ রাখার পরেও। যদি আমার দেহ রাখা তাঁর পরে হয়।
: সেটি কি ঠিক হবে?
: যখন তিনি দেহ রাখবেন, তখন ঠিক করব।
: আপনি তাঁকে কিভাবে চেনেন? কিভাবে তাঁকে মূল্যায়ন করেন?
: খুব সিম্পল একটা মূল্যায়ন করি আমি তাঁর। কোনো স্ট্যান্ডার্ড হিউম্যান বিইং আমি ভদ্রলোককে ভাবি না।
: আপনি কী মনে করেন তিনি সাব স্ট্যান্ডার্ড!
: তেমন বলার কিছু কি আর বাকি আছে!
: তাঁর সঙ্গে আপনার দেখা-সাক্ষাৎ হয় না?
: হয়। মনে মনে প্রার্থনা করি যেন না হয়, তার পরও হয়ে যায়। দেখা হলেই আমার পণভঙ্গ হয়। তাঁকে সালাম না দেওয়ার পণেপ্রতিজ্ঞায় আমি থাকতে পারি না। ভাবি, ওর মতো যদি হতে পারতাম!
: সেটি কী রকম?
: উনি সালামের জবাব খুব কমই দিতেন। যাঁদের তিনি পছন্দ করতেন না, যেমন আমি একজন, তাঁদের সালাম তিনি নিতেনই না। তখন আমার সৌজন্য ও বিনয়বোধের অপচয় হতো এবং সে অপচয়ের জন্য আমার আফসোস হতো।
: আপনি নিজে কী করেন?
: আমি, যত অক্ষম-অদক্ষ আর খারাপ লোকই হই, অন্যজন আমাকে সালাম দেওয়ার আগে আমি তাঁকে সালাম দেওয়ার চেষ্টা করি। কখনো কখনো পারি না, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সফল হই। এমন কেন করেন আপনি?- আমাকে কেউ কেউ প্রশ্ন করেন। আমি বলি- সংসারে খুব বেশি লোক খুব বেশি লোককে আদাব-সালাম প্রণাম, নমস্কার দেয় না। তাই এই জিনিসটি বড় কৃতজ্ঞতায় গ্রহণ করা উচিত। যারা এটি পায়, আপন আপন ভাগ্যের প্রতি তাদের প্রীত ও সন্তুষ্ট থাকা উচিত।
: যদি আপনাকে বলা হয়, এই ব্যক্তির উদ্দেশে আপনার হৃদয়ের সাড়া কেমন? আপনার অন্তরের বোধ কেমন? তখন আপনি কী বলবেন? আপনার জবাব কী হবে?
তখন আমার জবাব হবে খুব সিম্পল। আমি বলব, কিছু শেখার জন্য আমি যাদের কাছে কৃতজ্ঞ, যাদের কথা আমি এখন ভুলতে পারিনি, এই মানুষটিকে- তিনি সাব স্ট্যান্ডার্ড হিউম্যান বিইং হোন আর যাই হোন, আমি ভুলব না। আমি তাঁকে 'মরতে দমতক' মনে রাখব।
মানুষ সফল মানুষকে দেখে সফলতার শিক্ষা যতটা নিতে পারে, তার চেয়ে বেশি নিতে পারে ব্যর্থ মানুষকে দেখে; মানুষ বেশি সাবধান হয় বিপদত্রস্তকে দেখে। মানুষ আদপ শেখে আদপহীন লোকের কাছে।
এই সূত্র মেনে আমি তাঁর কাছে শিখেছি সহকর্মীদের সঙ্গে কিভাবে ব্যবহার করতে হয়, বিশেষ করে অনুবর্তী সহকর্মী ও ভদ্রসন্তানদের সঙ্গে, কিভাবে মানুষের কাজের স্বীকৃতি দিতে হয়, কিভাবে মানুষকে যথাপ্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে হয়, কিভাবে নিজের অবস্থানের কথা স্মরণ রেখে মানুষকে মনুষ্যপদবাচ্য করতে হয়। কিভাবে লুব্ধতার থকথকে ভাবটা পরিহার করে মানুষের প্রতি পক্ষপাতরহিত আচরণ করতে হয় এবং কিভাবে সহকর্মীদের বিমর্ষ ও তটস্থ না রেখে কাজ আদায় করে নিতে হয়।
: যা তাঁর কাছে শিখেছেন, সবই কী নির্ভুল?
: সবই নির্ভুল। তাঁকে যা যা করতে দেখেছি ও যেভাবে করতে দেখেছি, আমার শ্রমজীবনে আমি ঠিক তার উল্টোটি করেছি। আমি দেখেছি, এতে আমার কোনো অসুবিধে হয়নি। আমার সহকর্মীদের কাছ থেকে আমি কাজও আদায় করতে পেরেছি বড় চমৎকার আনুগত্যে ও শ্রদ্ধামিশ্রিত ভালোবাসায়। তারা যেমন আমাকে মনে রেখেছে, আমিও তাদের ভুলিনি। ঘাটে ঘাটে তাদের ছেড়ে আসার সময় আমার জন্য তারা কেঁদেছে, তাদের জন্যও আমি না কেঁদে পারিনি। তাদের জন্য বড় আনন্দে আমি চোখের জল টপটপিয়েছি।
: আপনার সিস্টেমটা কী রকম?
: একেবারেই অজটিল। আমার এই অতি বিস্মরণীয় অগ্রবর্তী সহকর্মীসহ যাঁরা বিশ্বাস করেন, 'পাওয়ার ইজ বেস্ট এক্সারসাইজড হোয়েন ইট ইজ ফিয়ারসামলি অর সিভিয়ারলি এক্সারসাইজড, আমি তাঁদের দলে নই'; আমার স্কুলের শিক্ষা হচ্ছে- 'পাওয়ার ইজ বেস্ট এক্সারসাইজড হোয়েন ইট ইজ নট এক্সারসাইজড।' এই স্কুল আমাকে নিরাশ করেনি।
দ্বিতীয়, আমরা ওই ভদ্রলোকের ডাক পেলে আতঙ্কিত হতাম। তাঁর কক্ষে আমরা ঢুকতাম উদ্বেগ নিয়ে, বেরিয়ে আসতাম ধ্বস্তবিধ্বস্ত হয়ে, তাঁর ও তাঁর পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে বিরূপ প্রকৃতির আশিস-আশীর্বাদ বর্ষাতে বর্ষাতে। আমি তাঁর উল্টোটা প্র্যাকটিস করি। লোকটার সঙ্গে দেখা হলে কোনো দিন এতটা হয়তো আমি প্র্যাকটিস করতাম না। আমার ফর্মুলা হলো, অনুবর্তী সহকর্মীরা আমার কক্ষে উদ্বেগহীন ঢুকবে ও পরিতৃপ্তি নিয়ে বেরিয়ে আসবে।
তৃতীয়, আমি আমার শ্রমের জায়গায় একটি পারিবারিকপ্রায় বাতাবরণ তৈরি করে কাজ করি, ও করাতে চাই। আমার সহকর্মীদের মধ্যে আমি ভাইবোন ও পুত্রকন্যা খুঁজে নিই। তাদের কাছে তা আমি প্রকাশ করি না, কিন্তু সেভাবেই আমি তাদের ওপর অধিকার খাটাই। তারাও দেখি, সাড়া দেয়।
: আপনার জীবন তো বড় কষ্টের জীবন।
: আমি মোটেই তা মনে করি না। আমার বিবেচনায়, সফল হই, ব্যর্থ হই, আমি পৃথিবীর সবচেয়ে পরিতৃপ্ত ও সুখী লোক। ক্লান্তির পর আমি শান্তিতে ঘুমাই, খিদের সময় উদরে যা ঢোকাই, তার সবই নিঃশেষে হজম হয়ে যায়, আমার কোনো ধার নেই, কর্জ নেই, মানুষ যা আমার কাছ থেকে নেয় সময়মতো তা শোধপরিশোধ না করলেও তাগাদা না দিয়ে ও অস্থির না হয়ে আমি চলতে পারি এবং মনে মনে কৌতুকও বোধ করতে পারি। জীবনের নন্দ যাপনে আমার ফর্মুলা হলো- যতই থাকুক টানাপড়েন ভালো থাকাটাই সব/জীবন মানে আর কিছু নয়, জীবন তো উৎসব।
লেখক : শ্রমজীবী কথাসাহিত্যিক
No comments