অর্থনীতি বাজারদর নিয়ন্ত্রণে অযৌক্তিক পদক্ষেপ by মোহাম্মদ হেলাল
পবিত্র রমজান সামনে রেখে ৮ জুলাই বাণিজ্য
মন্ত্রণালয় খেজুর, ছোলা ও মসুর ডালের খুচরা ও পাইকারি মূল্য নির্ধারণ করে
দিয়েছে। এর আগে গত ৩০ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একইভাবে চিনি ও ভোজ্যতেলের
দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে।
মিলগেট, পাইকারি ও খুচরা দর
নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, বাজার অর্থনীতিতে এ
ধরনের সর্বোচ্চ দর বেঁধে দেওয়ার যৌক্তিকতা কতটা? এভাবে দর বেঁধে দেওয়ার
কোনো সুফল ভোক্তারা পাবে কি না।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পর্যাপ্ত মজুত ও সরবরাহ থাকায় রমজান মাসে পণ্যের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। বাণিজ্যসচিবও বলছেন একই কথা। রমজান মাসে বাজারের পরিস্থিতি নিয়ে যতগুলো বৈঠক-সভা হয়েছে, তার থেকে একটা চিত্রই পাওয়া যায় যে পণ্যের ঘাটতি নেই, তাই পণ্যমূল্য বাড়ারও কোনো কারণ নেই (প্রথম আলো, ৩ জুলাই, ২০১৩)। সেটাই যদি বাস্তবতা হয়, তাহলে সরকার কেন সর্বোচ্চ মূল্য বাঁধতে যাবে, তা ব্যাখ্যার দাবি রাখে। রমজান মাসে অতিরিক্ত চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার কারণে উদ্বৃত্ত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাহলে তো দাম বরং কমার কথা। সেখানে সর্বোচ্চ দাম বেঁধে দেওয়ার পেছনে যৌক্তিকতা কী?
একটি উত্তর হতে পারে, সরকার ও ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন পর্যাপ্ত মজুত থাকার যে দাবি করছে, তা সঠিক নয়। তাই কম মজুতের কারণে দাম বাড়ার সম্ভাবনা থেকেই দাম বেঁধে দেওয়া। অথবা পর্যাপ্ত মজুত আছে কিন্তু এই মজুত থেকে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ না-ও আসতে পারে—এই চিন্তাও কাজ করতে পারে। এর মানে হলো, কোনো ধরনের কারসাজির কথা চিন্তা করে এই পদক্ষেপ নেওয়া। দাম বেঁধে দিয়ে ব্যবসায়ীদের সরবরাহের আধিক্যজনিত কারণে দরপতনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করাও একটি কারণ হতে পারে। সরকারের গৃহীত ব্যবস্থার যৌক্তিকতা তাই নির্ভর করবে এসব প্রশ্নের জবাবের ওপর।
এখন ব্যবসায়ীরা আশ্বাস দিচ্ছেন যে রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না (প্রথম আলো, ৩ জুলাই, ২০১৩)। পর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে দাম না বাড়তেই পারে। কিন্তু তেমনটি হলে কোনো কোনো পণ্যের ক্ষেত্রে সরকারকে দামের নিম্নমুখী সমন্বয় করতে হতো না। তার মানে, তাঁরা চাইলে দাম কমিয়ে রাখতে পারেন। তাহলে তাঁরা চাইলে বাড়িয়েও রাখতে পারেন। সে ক্ষেত্রে প্রতিবছর তাঁরা যখন দেখবেন যে সরকার দাম কমিয়ে বেঁধে দেবে, তাহলে আগে থেকে তাঁরা তা বাড়িয়ে রাখতে পারেন। এ বছর দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের বাজারদর ১৩২ টাকা থেকে পাঁচ টাকা কমিয়ে ১২৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকার যদি দাম এভাবে চার-পাঁচ টাকা কমিয়ে দেয়, তাহলে ব্যবসায়ীরা ফি বছর আগে থেকে অনুমান করে বাজারে দাম যা হওয়া উচিত, তা থেকে চার-পাঁচ টাকা বাড়িয়ে রাখতে পারেন। ফলে বাস্তবে ব্যবসায়ীরা যে দাম চাইবেন, তা-ই থাকবে বাজারে। কিন্তু ভোক্তারা মনে করবেন যে ব্যবসায়ীরা আসলে দামটা উঁচুতে ধরে রেখেছিলেন, যা সরকার কমিয়ে এনেছে, ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে খারাপ ধারণা হবে। আসলে এগুলো মাথায় রেখেই সরকারের যেকোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
রমজান মাস উপলক্ষে পর্যাপ্ত আমদানি হয়েছে, তাই বাজারে সরবরাহ অনেক বেশি থাকবে। অতএব, দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। এ ধরনের যুক্তি আমরা ব্যবসায়ী ও সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পাচ্ছি। অথচ প্রায় সময় আমরা দেখতে পাই, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ট্যারিফ কমিশন থেকে বলা হয় যে বিশ্ববাজারে যে আমদানিমূল্য, তা থেকে অনেক বেশি দামে তেল কিংবা চিনি বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম কত হওয়া উচিত, সে ব্যাপারে যে নির্দেশক দাম ঠিক করা হয়, তা জোগান ও চাহিদার উদ্বৃত্ত-ঘাটতির ভিত্তিতে ঠিক হবে, নাকি বিশ্ববাজার থেকে কোন দামে কিনে আনা হচ্ছে, তার ভিত্তিতে ঠিক হবে? বাজার অর্থনীতির নিয়মে একজন আমদানিকারক কত দামে বিশ্ববাজার থেকে কিনে নিয়ে আসছেন, স্বল্পমেয়াদে সেটা অভ্যন্তরীণ দামের নির্ণায়ক নয়। নির্ণায়ক হলো বাজারে উদ্বৃত্ত, নাকি ঘাটতি আছে। আমরা দেখেছি, ২০১১ সালের রমজান মাসে চিনির দাম বেশি ছিল। তারপর চিনির দাম পড়তে থাকল এবং উদ্বৃত্ত সরবরাহের কারণে চিনির দাম অনেক দিন ধরে পড়ছিল। বিশ্ববাজারেও দাম পড়ছিল। এতে ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আবার ঘাটতির সময় তাঁরা এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। অভ্যন্তরীণ দামের সঙ্গে সম্পর্ক হলো বাজারের উদ্বৃত্ত বা ঘাটতির, সেটা মাথায় রাখতে হবে।
মুক্তবাজার অর্থনীতিতেও সরকার যদি মনে করে যে বাজারে কোনো কারসাজি আছে, বাজারে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ নেই, সে ক্ষেত্রে বাজারে হস্তক্ষেপ করতেই পারে। তবে সেই হস্তক্ষেপ দাম নির্ধারণ করে দিয়ে নয়; যখন সরবরাহ কম থাকবে, তখন সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়ে আর যখন চাহিদা বেশি থাকবে, সম্ভব হলে তা নিয়ন্ত্রণ করে। যেমনটি সরকার করে থাকে ধান-চালের ক্ষেত্রে। জ্যৈষ্ঠ মাসে যখন ধান ওঠে, সরকার তখন ধান-চালের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য নিজে কৃষক কিংবা চালকলমালিকদের কাছ থেকে ধান-চাল কিনে চাহিদা বাড়িয়ে দেয়।
আবার যখন ফাল্গুন-চৈত্র মাসে চালের দাম বেশি থাকে সরবরাহ কম থাকার কারণে, সরকার তখন গুদাম থেকে চাল বিক্রি করে চালের দাম কমিয়ে রাখার চেষ্টা করে। অর্থাৎ চাহিদা ও সরবরাহের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সরকার চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
সরকার যদি সারা বছর বাজারে কী হচ্ছে, সেদিকে খেয়াল না রাখে, তবে শুধু রমজান মাস সামনে রেখে যেকোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা সফল হবে না। সফল হতে হলে সরকারকে সারা বছর নিয়মিত বাজার মনিটর করতে হবে। তেলের দাম পাঁচ টাকা কমানোর ফলে কোনো একটা স্বাভাবিক আকারের নিম্ন আয়ের পরিবার, যার হয়তো রমজান মাসে বড়জোর তিন লিটার তেল লাগে, তার ১৫ টাকা সাশ্রয় হতে পারে। এভাবে চিনির দামের ক্ষেত্রে আরও ১৫ টাকা হয়তো সাশ্রয় হতে পারে। এই যে ৩০ টাকা বেড়ে যাওয়া বা ৩০ টাকা কমিয়ে রাখা, এটা তাদের জন্য বড় কোনো বিষয় হতো না, যদি অন্যান্য পণ্যের দাম নাগালের মধ্যে থাকত। তেল ও চিনি কিনতে নিম্ন আয়ের পরিবারের ব্যয় হয় মোট খরচের সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ। বাকি ৯৭ শতাংশ ব্যয় হয় যেসব খাতে, তা সহনীয় পর্যায়ে থাকলে রমজান মাসের এক-আধটু মূল্যবৃদ্ধি মানুষ খুব বেশি আমলে নিত না। বরং সারা বছর মূল্যস্তর অনেক উঁচু বলে, সারা বছর মানুষের জীবন নির্বাহ কঠিন হচ্ছে বলেই রমজান মাসে যখন দাম আরেকটু বেড়ে যায়, সেটা মানুষের গায়ে লাগে। তাই সারা বছর আমাদের মূল্যস্তরের যে স্ফীতি, সেটা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
মোহাম্মদ হেলাল: অর্থনীতির শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পর্যাপ্ত মজুত ও সরবরাহ থাকায় রমজান মাসে পণ্যের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। বাণিজ্যসচিবও বলছেন একই কথা। রমজান মাসে বাজারের পরিস্থিতি নিয়ে যতগুলো বৈঠক-সভা হয়েছে, তার থেকে একটা চিত্রই পাওয়া যায় যে পণ্যের ঘাটতি নেই, তাই পণ্যমূল্য বাড়ারও কোনো কারণ নেই (প্রথম আলো, ৩ জুলাই, ২০১৩)। সেটাই যদি বাস্তবতা হয়, তাহলে সরকার কেন সর্বোচ্চ মূল্য বাঁধতে যাবে, তা ব্যাখ্যার দাবি রাখে। রমজান মাসে অতিরিক্ত চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার কারণে উদ্বৃত্ত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাহলে তো দাম বরং কমার কথা। সেখানে সর্বোচ্চ দাম বেঁধে দেওয়ার পেছনে যৌক্তিকতা কী?
একটি উত্তর হতে পারে, সরকার ও ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন পর্যাপ্ত মজুত থাকার যে দাবি করছে, তা সঠিক নয়। তাই কম মজুতের কারণে দাম বাড়ার সম্ভাবনা থেকেই দাম বেঁধে দেওয়া। অথবা পর্যাপ্ত মজুত আছে কিন্তু এই মজুত থেকে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ না-ও আসতে পারে—এই চিন্তাও কাজ করতে পারে। এর মানে হলো, কোনো ধরনের কারসাজির কথা চিন্তা করে এই পদক্ষেপ নেওয়া। দাম বেঁধে দিয়ে ব্যবসায়ীদের সরবরাহের আধিক্যজনিত কারণে দরপতনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করাও একটি কারণ হতে পারে। সরকারের গৃহীত ব্যবস্থার যৌক্তিকতা তাই নির্ভর করবে এসব প্রশ্নের জবাবের ওপর।
এখন ব্যবসায়ীরা আশ্বাস দিচ্ছেন যে রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না (প্রথম আলো, ৩ জুলাই, ২০১৩)। পর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে দাম না বাড়তেই পারে। কিন্তু তেমনটি হলে কোনো কোনো পণ্যের ক্ষেত্রে সরকারকে দামের নিম্নমুখী সমন্বয় করতে হতো না। তার মানে, তাঁরা চাইলে দাম কমিয়ে রাখতে পারেন। তাহলে তাঁরা চাইলে বাড়িয়েও রাখতে পারেন। সে ক্ষেত্রে প্রতিবছর তাঁরা যখন দেখবেন যে সরকার দাম কমিয়ে বেঁধে দেবে, তাহলে আগে থেকে তাঁরা তা বাড়িয়ে রাখতে পারেন। এ বছর দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের বাজারদর ১৩২ টাকা থেকে পাঁচ টাকা কমিয়ে ১২৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকার যদি দাম এভাবে চার-পাঁচ টাকা কমিয়ে দেয়, তাহলে ব্যবসায়ীরা ফি বছর আগে থেকে অনুমান করে বাজারে দাম যা হওয়া উচিত, তা থেকে চার-পাঁচ টাকা বাড়িয়ে রাখতে পারেন। ফলে বাস্তবে ব্যবসায়ীরা যে দাম চাইবেন, তা-ই থাকবে বাজারে। কিন্তু ভোক্তারা মনে করবেন যে ব্যবসায়ীরা আসলে দামটা উঁচুতে ধরে রেখেছিলেন, যা সরকার কমিয়ে এনেছে, ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে খারাপ ধারণা হবে। আসলে এগুলো মাথায় রেখেই সরকারের যেকোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
রমজান মাস উপলক্ষে পর্যাপ্ত আমদানি হয়েছে, তাই বাজারে সরবরাহ অনেক বেশি থাকবে। অতএব, দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। এ ধরনের যুক্তি আমরা ব্যবসায়ী ও সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পাচ্ছি। অথচ প্রায় সময় আমরা দেখতে পাই, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ট্যারিফ কমিশন থেকে বলা হয় যে বিশ্ববাজারে যে আমদানিমূল্য, তা থেকে অনেক বেশি দামে তেল কিংবা চিনি বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম কত হওয়া উচিত, সে ব্যাপারে যে নির্দেশক দাম ঠিক করা হয়, তা জোগান ও চাহিদার উদ্বৃত্ত-ঘাটতির ভিত্তিতে ঠিক হবে, নাকি বিশ্ববাজার থেকে কোন দামে কিনে আনা হচ্ছে, তার ভিত্তিতে ঠিক হবে? বাজার অর্থনীতির নিয়মে একজন আমদানিকারক কত দামে বিশ্ববাজার থেকে কিনে নিয়ে আসছেন, স্বল্পমেয়াদে সেটা অভ্যন্তরীণ দামের নির্ণায়ক নয়। নির্ণায়ক হলো বাজারে উদ্বৃত্ত, নাকি ঘাটতি আছে। আমরা দেখেছি, ২০১১ সালের রমজান মাসে চিনির দাম বেশি ছিল। তারপর চিনির দাম পড়তে থাকল এবং উদ্বৃত্ত সরবরাহের কারণে চিনির দাম অনেক দিন ধরে পড়ছিল। বিশ্ববাজারেও দাম পড়ছিল। এতে ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আবার ঘাটতির সময় তাঁরা এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। অভ্যন্তরীণ দামের সঙ্গে সম্পর্ক হলো বাজারের উদ্বৃত্ত বা ঘাটতির, সেটা মাথায় রাখতে হবে।
মুক্তবাজার অর্থনীতিতেও সরকার যদি মনে করে যে বাজারে কোনো কারসাজি আছে, বাজারে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ নেই, সে ক্ষেত্রে বাজারে হস্তক্ষেপ করতেই পারে। তবে সেই হস্তক্ষেপ দাম নির্ধারণ করে দিয়ে নয়; যখন সরবরাহ কম থাকবে, তখন সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়ে আর যখন চাহিদা বেশি থাকবে, সম্ভব হলে তা নিয়ন্ত্রণ করে। যেমনটি সরকার করে থাকে ধান-চালের ক্ষেত্রে। জ্যৈষ্ঠ মাসে যখন ধান ওঠে, সরকার তখন ধান-চালের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য নিজে কৃষক কিংবা চালকলমালিকদের কাছ থেকে ধান-চাল কিনে চাহিদা বাড়িয়ে দেয়।
আবার যখন ফাল্গুন-চৈত্র মাসে চালের দাম বেশি থাকে সরবরাহ কম থাকার কারণে, সরকার তখন গুদাম থেকে চাল বিক্রি করে চালের দাম কমিয়ে রাখার চেষ্টা করে। অর্থাৎ চাহিদা ও সরবরাহের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সরকার চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
সরকার যদি সারা বছর বাজারে কী হচ্ছে, সেদিকে খেয়াল না রাখে, তবে শুধু রমজান মাস সামনে রেখে যেকোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা সফল হবে না। সফল হতে হলে সরকারকে সারা বছর নিয়মিত বাজার মনিটর করতে হবে। তেলের দাম পাঁচ টাকা কমানোর ফলে কোনো একটা স্বাভাবিক আকারের নিম্ন আয়ের পরিবার, যার হয়তো রমজান মাসে বড়জোর তিন লিটার তেল লাগে, তার ১৫ টাকা সাশ্রয় হতে পারে। এভাবে চিনির দামের ক্ষেত্রে আরও ১৫ টাকা হয়তো সাশ্রয় হতে পারে। এই যে ৩০ টাকা বেড়ে যাওয়া বা ৩০ টাকা কমিয়ে রাখা, এটা তাদের জন্য বড় কোনো বিষয় হতো না, যদি অন্যান্য পণ্যের দাম নাগালের মধ্যে থাকত। তেল ও চিনি কিনতে নিম্ন আয়ের পরিবারের ব্যয় হয় মোট খরচের সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ। বাকি ৯৭ শতাংশ ব্যয় হয় যেসব খাতে, তা সহনীয় পর্যায়ে থাকলে রমজান মাসের এক-আধটু মূল্যবৃদ্ধি মানুষ খুব বেশি আমলে নিত না। বরং সারা বছর মূল্যস্তর অনেক উঁচু বলে, সারা বছর মানুষের জীবন নির্বাহ কঠিন হচ্ছে বলেই রমজান মাসে যখন দাম আরেকটু বেড়ে যায়, সেটা মানুষের গায়ে লাগে। তাই সারা বছর আমাদের মূল্যস্তরের যে স্ফীতি, সেটা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
মোহাম্মদ হেলাল: অর্থনীতির শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments