সরকারি কর্মকমিশন কোটা-বিতর্ক ও পিএসসির স্বায়ত্তশাসন by আলী রীয়াজ
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাম্প্রতিক বিসিএস
পরীক্ষার প্রাথমিক ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসনে ‘কোটা’র ভিত্তিতে
নিয়োগের প্রশ্নে বিতর্কের সূচনা হয়েছে। চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভের
পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) আগের ফল বাতিল করে গতকাল নতুন করে
ফল ঘোষণা করেছে।
কোটা নিয়ে এই বিতর্ক এবং সৃষ্ট
অনাকাঙ্ক্ষিত সহিংস পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে চারটি বিষয়ের প্রতি মনোযোগ
আকর্ষণের জন্য এই লেখার অবতারণা। প্রথমত কোটার সাংবিধানিক দিক; দ্বিতীয়ত
কোটাবিরোধীদের আন্দোলনের কৌশল; তৃতীয়ত সরকারের প্রতিক্রিয়া এবং চতুর্থত
সৃষ্ট অবস্থার বৃহত্তর প্রেক্ষাপট। বর্তমান পরিস্থিতিকে অনেকেই ‘মেধা’ বনাম
‘কোটা’ বলে বর্ণনা করেছেন, যার যথার্থতা প্রশ্নসাপেক্ষ। কেননা, আমার
ধারণা, পিএসসির পরীক্ষাপদ্ধতি ঠিক মেধা বিচারের পরীক্ষা নয়। তবে তাদের মূল
মর্মবাণীটি আমরা বুঝতে পারি, চাকরিপ্রার্থীরা সবাই এক মানদণ্ডে বিচার্য
হচ্ছেন না।
এই বিষয়ে আমার মতামতের ক্ষেত্রে দুটো বিষয় প্রেক্ষাপট হিসেবে কাজ করেছে। প্রথমত, গত আট বছরে পাঁচটি বিসিএসের ফলাফল বিশ্লেষণ করে প্রকাশিত সংবাদে দেখা গেছে, কোটার ভিত্তিতেই বেশি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সর্বশেষ চারটি বিসিএসে তিন হাজার ১৬২টি পদ খালি রাখতে হয়েছে পিএসসিকে। এ ছাড়া শুধু কোটার জন্য ৩২তম বিশেষ বিসিএসের ব্যবস্থা করে পিএসসি। প্রার্থী না পাওয়ায় ওই বিসিএসে কোটার এক হাজার ১২৫টি পদও শূন্য রাখতে হয় (শরিফুল হাসান, ‘মেধা নয়, কোটার প্রাধান্য’, প্রথম আলো, ১৩ জুলাই ২০১৩)।
তার মানে দাঁড়াচ্ছে, একদিকে জনপ্রশাসনে পদ শূন্য থাকছে, অন্যদিকে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা চাকরিবঞ্চিত হচ্ছেন। এসবই ঘটছে যখন দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। এই তথ্য নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক যে দেশের প্রশাসনের ৫৫ শতাংশই আসেন বিশেষ বিবেচনার দ্বারা। এটা দেশের জনপ্রশাসনের জন্য ইতিবাচক হতে পারে না। দ্বিতীয় প্রেক্ষাপট হলো, গত কয়েক দিনের আলোচনায় কমবেশি সবাই স্বীকার করে নিয়েছেন, এখন যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা ত্রুটিপূর্ণ এবং তার সংস্কার করা জরুরি।
১. কোটার সাংবিধানিক দিক
সংবিধানের ২৯(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ লাভের জন্য সব নাগরিকের সমান সুযোগের কথা বলা হয়েছে। আবার অন্যদিকে ২৮(৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।’ যার আওতায় সরকারি কর্মকমিশন সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা চালু করেছে এবং অব্যাহত রেখেছে। অনেকে যেভাবে এ দুটোকে সাংঘর্ষিক বলছেন, সেটা যেমন সঠিক নয়, তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারকে অনগ্রসর অংশ বলে বিবেচনা করার সঠিকতাও প্রশ্নসাপেক্ষ। (মনে রাখা দরকার, আমরা মোটেই মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বলছি না এবং এই আলোচনা হচ্ছে স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে)। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এখানে, এই কোটাপ্রথা-বিষয়ক আলোচনায়, দুটো বিষয় গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। একটা হলো ‘অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশন’ এবং অন্যটা হলো ‘কোটা’। সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদে যা বলা হয়েছে, তাতে আসলে অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশন। কোনো সমাজে, যেখানে সমাজের বিভিন্ন জনগোষ্ঠী সমান সুযোগবঞ্চিত, সেখানেই এটা থেকে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে এটাকে বলে অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশন, ব্রিটেনে বলে পজিটিভ ডিসক্রিমিনেশন, কানাডায় বলা হয় এমপ্লয়মেন্ট একুয়িটি। এটা আইনগতভাবেই এসব দেশে রয়েছে। বাংলাদেশে এই অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশনের দিকটা কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, সেটা বিচার করা দরকার। যদিও আমরা দেখি কোটা বলে একটা ব্যবস্থা আছে, যেখানে বলা হয়েছে, নারী কোটা ১০ শতাংশ, উপজাতি কোটা ৫ শতাংশ—এগুলো আসলে কোটা নয়, এগুলো অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আসলেই কি তা যথাযথভাবে অনুসৃত হয়েছে? সরকারি প্রশাসনের দিকে তাকালে তা মনে হয় না। কিন্তু এ বিষয়ে নিয়মিতভাবে সরকারের পক্ষ থেকে বা কর্মকমিশনের পক্ষ থেকে কোনো রকম তথ্য দেওয়া হয়নি। ফলে, সংবিধানের আক্ষরিক ও মর্মবস্তু দুই বিবেচনায়ই অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশনের ক্ষেত্রে সাফল্য আশানুরূপ নয়।
বাকি আরেকটি দিক হলো জেলাভিত্তিক কোটা, ১০ শতাংশ। তার সাংবিধানিক ভিত্তিও খুব দুর্বল। কেননা, ‘নাগরিক’ আর ‘অঞ্চল’ এক বিষয় নয়। কিন্তু আমরা এটা বলতে পারি যে দেশে অনগ্রসর এলাকা রয়েছে। এই কোটাব্যবস্থা যখন চালু করা হয়, তখন তার প্রয়োজন ছিল বলে আমরা যদি ধরে নিই, এখনো তার বাস্তবতা কতটুকু এবং কিসের ভিত্তিতে কোন জেলাকে ‘অনগ্রসর’ বিবেচনা করা হচ্ছে এবং সেই অনগ্রসরতা মোচনে সরকারের পদক্ষেপগুলো কী, তা কি আমাদের জানা রয়েছে? বছরের পর বছর কোনো জেলা অনগ্রসর থাকবে এবং সরকার সে বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেবে না, তা কেন গ্রহণযোগ্য হবে? ফলে, আমার বক্তব্য হচ্ছে, কর্মকমিশনের কাজ হলো অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশনের বিবেচনায় যতটুকু তাদের করা দরকার, তা প্রথমে সুস্পষ্টভাবে বলা এবং তার ভিত্তিতে কয়েক বছরের একটা পরিকল্পনা হাজির করা। প্রতিটি পরীক্ষার আগে ও পরে তাদের বাধ্যতা থাকা দরকার যে এ বিষয়ে জনগণকে জানানো। এই ২৫ শতাংশের ব্যাপারে বাস্তবোচিত পদক্ষেপ নেওয়া খুবই জরুরি। এতে করে আমার ধারণা অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশনের জন্য বরাদ্দ কমে আসবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার’ এই অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশনের আওতায় আসতে পারেন কি না। আমাদের সবার সম্মিলিত ব্যর্থতা, রাজনৈতিক পরিবেশ সব মিলে মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট-পরিবারের মা-বাবা (যারা তাঁদের একমাত্র সন্তানকে হারিয়েছেন), স্ত্রী-স্বামী, সন্তান—অনেকেই দুর্ভোগময় জীবন যাপন করছেন। সারা বছরই আমরা এ ধরনের খবর দেখি; দুঃখজনকভাবে মার্চ ও ডিসেম্বরে আরও বেশি দেখি। তাঁদের বিষয়ে দেশের, সরকারের ও জাতির অবশ্যই দায়িত্ব রয়েছে। তাঁদের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় রয়েছে, তাকে শক্তিশালী করা দরকার। কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা ভাবা ও বাস্তবায়ন জরুরি। কিন্তু তাঁরা অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশনের আওতায় আসতে পারেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অসংগত নয়। নিকটাত্মীয়দের বাইরে যাঁরা আছেন, তাঁদের সাহায্য করা বা না-করার সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করা বা না-করার কোনো যোগাযোগ আছে বলে মনে হয় না। তার পরও মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরিদের অনেকেই বিরূপ পরিস্থিতি সত্ত্বেও সরকারি চাকরির নিম্নতম প্রয়োজনীয় যোগ্যতার অনেকটাই অর্জন করেছেন। কিন্তু তাঁদের সংখ্যা কত হতে পারে? সে বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার এবং সে জন্য আলাদাভাবে আইন করে সামান্য কোটা রাখার কথা সরকার ভাবতে পারে। কিন্তু তা হতে হবে বাস্তবসম্মত। এখন যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য কোটা রাখার পক্ষে, তাঁরাও কিন্তু এর সংস্কারের পক্ষে, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সদস্যরাও তা-ই বলেছেন।
২. কোটাবিরোধী আন্দোলনের কৌশল
বিসিএস পরীক্ষায় প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার জন্য যাঁরা দাবি তুলেছেন, তাঁদের দাবির যৌক্তিকতা যেমন প্রশ্নাতীত, ঠিক তেমনি তাঁদের আন্দোলনের কৌশল প্রশ্নসাপেক্ষ। এই দাবিতে তাঁদের সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে যে অবমাননাসূচক স্লোগান দেওয়া হয়েছে, তা ঘৃণার্হ, নিন্দনীয়। কোনো অবস্থাতেই দেশের কোনো জনগোষ্ঠী, তাদের দাবি যতই যুক্তিযুক্ত হোক না কেন, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করার অধিকার রাখে না। তাদের মনে রাখা দরকার, মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কারণেই আজ তারা এই দাবি তুলতে পারছে যে তারা যেন সরকারি চাকরিতে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে আমরা কেউই এই অবস্থানে আসতে পারতাম না, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। একই সঙ্গে এই সমাবেশ থেকে যেসব প্রতিকৃতিতে হামলা চালানো হয়েছে, মঙ্গলশোভাযাত্রার স্মারকগুলোয় যেভাবে আগুন লাগানো হয়েছে, তা থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে এই আন্দোলনের উদ্যোক্তারা চান অথবা না চান, তার সুযোগ গ্রহণ করেছে একটি রাজনৈতিক শক্তি। ফলে, এই আন্দোলনের নেতৃত্বের দায়িত্ব ছিল সুস্পষ্ট ভাষায় সেগুলোর নিন্দা করা। সে ক্ষেত্রে তাঁদের ব্যর্থতা তাঁদের জন্যই কেবল ক্ষতিকারক হয়েছে তা নয়, দেশের জন্যও ক্ষতিকারক হয়েছে। অতীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে তাঁদের এই আচরণের মিল থেকে এ কথা বলা অসংগত নয় যে তাঁদের আন্দোলনের সুযোগ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছে এই দল। এই দাবির সমর্থকেরা, কর্মীরা যদি ভবিষ্যতে কোনো কর্মসূচির আগেই এই বিষয়ে তাঁদের অবস্থান পরিষ্কার করতে সক্ষম না হন, তবে তা তাঁদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিরা যে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে পারবেন না, সেটা তাঁদের বোঝা দরকার। আন্দোলনের ভেতরে যাঁরা অন্য উদ্দেশ্য নিয়ে সমবেত হয়েছেন, তাঁদের বের করে দিতে না পারলে এই দাবি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সহিংসতা বলেই চিহ্নিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব সহিংসতা চালানো হয়েছে, তার সঙ্গে সরকারের কাছে দাবি জানানোর সম্পর্ক কোথায়?
৩. সরকার ও কোটা-সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া
আন্দোলনকারীদের মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া নিবর্তনমূলক ব্যবস্থাগুলো সরকারের জন্যই বিপদ ডেকে আনছে, সেটা সরকারের কর্তাব্যক্তিরা মোটেই উপলব্ধি করছেন না। যে দাবি বিবেচনা করার কথা বলা হয়েছে, সেই দাবির উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা করার পথে কী বাধা ছিল? সরকারি দলের কর্মীরা এবং তাঁদের সমর্থকেরা যেভাবে এই দাবির বিপক্ষে পাল্টা সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছেন, সেটাতে তাঁদের অযৌক্তিক অবস্থানই প্রমাণিত হয়। এই দাবির বিরোধিতা করার অধিকার অবশ্যই যে কারও আছে। তাঁরা বলতেই পারেন যে তাঁরা মনে করেন, কথিত কোটা থাকা দরকার। তাঁদের যুক্তি শোনার জন্য অনেকেই অপেক্ষা করছেন। এই লক্ষ্যে তাঁরা জনমত গঠনের জন্য শান্তিপূর্ণ অনেক ধরনের কর্মসূচি নিতে পারতেন, এখনো পারেন। মতভিন্নতার অর্থ এই নয় যে অন্যদের ওপরে চড়াও হতে হবে। শক্তি প্রয়োগ করে তাঁরা জনমত তাঁদের পক্ষে নেওয়ার বদলে তাঁদের বিপক্ষেই ঠেলে দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননার কারণে তাঁরা ক্ষুব্ধ বলে তাঁরা যদি বলেন, তাহলেও বলব, এভাবে তা মোকাবিলা করার মধ্য দিয়ে তাঁরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানালেন কি না, ভেবে দেখতে পারেন।
৪. কর্মকমিশন বিষয়ে বৃহত্তর প্রশ্ন
এখনকার এই অবস্থাকে যাঁরা মনে করছেন ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারি ফলাফল নিয়ে বিক্ষোভ মাত্র, তাঁদের সঙ্গে আমি ভিন্নমত পোষণ করি। এক দিনে এই অবস্থার তৈরি হয়নি; অনেক দিন ধরেই এই নিয়ে একধরনের চাপা ক্ষোভ ছিল, যার প্রকাশ ঘটেছে গত কয়েক দিনে। এই অবস্থার পেছনে আছে সরকারি চাকরি প্রদানে কয়েক দশকের বেশি সময় ধরে চলা দলীয়করণ ও দুর্নীতি। বাংলাদেশে সরকারি চাকরি, সর্বস্তরেই, যে অর্থের বিনিময়ে জোগাড় করতে হয়, সে বিষয়ে প্রায়ই সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়। প্রকৃতপক্ষে কেবল মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা কমে আসছে। দেশের প্রতিরক্ষা খাত ছাড়া সর্বত্র একই অবস্থা। কোটার নামে এই দুর্নীতি আরও বেশি বিস্তার লাভ করেছে বলেই অভিযোগ, এই বিক্ষোভের পেছনে সেটাও একটা কারণ। আরেকটা বিষয় হলো, সরকারি কর্মকমিশনের স্বায়ত্তশাসনের অভাব। সরকারের, আরও স্পষ্ট করে বললে সরকারি দলের, অঙ্গুলি হেলনে কর্মকমিশন পরিচালিত হয়, এটা সবার জানা। এই অবস্থার অবসান না ঘটালে সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকর্ষণ করা যাবে কি না, সে বিষয়ে আমি সন্দিহান। আন্দোলনকারীরা না বললেও এই বিতর্কের মধ্য দিয়ে সরকারি কর্মকমিশনের স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি সামনে এসেছে এবং এ বিষয়ে সবারই মনোযোগী হওয়া দরকার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশের প্রধান দলগুলো তা মানতে রাজি নয়। তার প্রমাণ হলো, বিবিসি আয়োজিত সংলাপে সরকার ও প্রধান বিরোধী দলের দুই প্রতিনিধি কোটা ‘পুনর্বিন্যাসের’ পক্ষেই মত দিয়েছেন, কিন্তু কর্মকমিশনকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার বিষয় নিয়ে আলোচনাই করেননি।
আলী রীয়াজ: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক।
এই বিষয়ে আমার মতামতের ক্ষেত্রে দুটো বিষয় প্রেক্ষাপট হিসেবে কাজ করেছে। প্রথমত, গত আট বছরে পাঁচটি বিসিএসের ফলাফল বিশ্লেষণ করে প্রকাশিত সংবাদে দেখা গেছে, কোটার ভিত্তিতেই বেশি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সর্বশেষ চারটি বিসিএসে তিন হাজার ১৬২টি পদ খালি রাখতে হয়েছে পিএসসিকে। এ ছাড়া শুধু কোটার জন্য ৩২তম বিশেষ বিসিএসের ব্যবস্থা করে পিএসসি। প্রার্থী না পাওয়ায় ওই বিসিএসে কোটার এক হাজার ১২৫টি পদও শূন্য রাখতে হয় (শরিফুল হাসান, ‘মেধা নয়, কোটার প্রাধান্য’, প্রথম আলো, ১৩ জুলাই ২০১৩)।
তার মানে দাঁড়াচ্ছে, একদিকে জনপ্রশাসনে পদ শূন্য থাকছে, অন্যদিকে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা চাকরিবঞ্চিত হচ্ছেন। এসবই ঘটছে যখন দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। এই তথ্য নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক যে দেশের প্রশাসনের ৫৫ শতাংশই আসেন বিশেষ বিবেচনার দ্বারা। এটা দেশের জনপ্রশাসনের জন্য ইতিবাচক হতে পারে না। দ্বিতীয় প্রেক্ষাপট হলো, গত কয়েক দিনের আলোচনায় কমবেশি সবাই স্বীকার করে নিয়েছেন, এখন যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা ত্রুটিপূর্ণ এবং তার সংস্কার করা জরুরি।
১. কোটার সাংবিধানিক দিক
সংবিধানের ২৯(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ লাভের জন্য সব নাগরিকের সমান সুযোগের কথা বলা হয়েছে। আবার অন্যদিকে ২৮(৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।’ যার আওতায় সরকারি কর্মকমিশন সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা চালু করেছে এবং অব্যাহত রেখেছে। অনেকে যেভাবে এ দুটোকে সাংঘর্ষিক বলছেন, সেটা যেমন সঠিক নয়, তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারকে অনগ্রসর অংশ বলে বিবেচনা করার সঠিকতাও প্রশ্নসাপেক্ষ। (মনে রাখা দরকার, আমরা মোটেই মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বলছি না এবং এই আলোচনা হচ্ছে স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে)। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এখানে, এই কোটাপ্রথা-বিষয়ক আলোচনায়, দুটো বিষয় গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। একটা হলো ‘অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশন’ এবং অন্যটা হলো ‘কোটা’। সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদে যা বলা হয়েছে, তাতে আসলে অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশন। কোনো সমাজে, যেখানে সমাজের বিভিন্ন জনগোষ্ঠী সমান সুযোগবঞ্চিত, সেখানেই এটা থেকে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে এটাকে বলে অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশন, ব্রিটেনে বলে পজিটিভ ডিসক্রিমিনেশন, কানাডায় বলা হয় এমপ্লয়মেন্ট একুয়িটি। এটা আইনগতভাবেই এসব দেশে রয়েছে। বাংলাদেশে এই অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশনের দিকটা কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, সেটা বিচার করা দরকার। যদিও আমরা দেখি কোটা বলে একটা ব্যবস্থা আছে, যেখানে বলা হয়েছে, নারী কোটা ১০ শতাংশ, উপজাতি কোটা ৫ শতাংশ—এগুলো আসলে কোটা নয়, এগুলো অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আসলেই কি তা যথাযথভাবে অনুসৃত হয়েছে? সরকারি প্রশাসনের দিকে তাকালে তা মনে হয় না। কিন্তু এ বিষয়ে নিয়মিতভাবে সরকারের পক্ষ থেকে বা কর্মকমিশনের পক্ষ থেকে কোনো রকম তথ্য দেওয়া হয়নি। ফলে, সংবিধানের আক্ষরিক ও মর্মবস্তু দুই বিবেচনায়ই অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশনের ক্ষেত্রে সাফল্য আশানুরূপ নয়।
বাকি আরেকটি দিক হলো জেলাভিত্তিক কোটা, ১০ শতাংশ। তার সাংবিধানিক ভিত্তিও খুব দুর্বল। কেননা, ‘নাগরিক’ আর ‘অঞ্চল’ এক বিষয় নয়। কিন্তু আমরা এটা বলতে পারি যে দেশে অনগ্রসর এলাকা রয়েছে। এই কোটাব্যবস্থা যখন চালু করা হয়, তখন তার প্রয়োজন ছিল বলে আমরা যদি ধরে নিই, এখনো তার বাস্তবতা কতটুকু এবং কিসের ভিত্তিতে কোন জেলাকে ‘অনগ্রসর’ বিবেচনা করা হচ্ছে এবং সেই অনগ্রসরতা মোচনে সরকারের পদক্ষেপগুলো কী, তা কি আমাদের জানা রয়েছে? বছরের পর বছর কোনো জেলা অনগ্রসর থাকবে এবং সরকার সে বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেবে না, তা কেন গ্রহণযোগ্য হবে? ফলে, আমার বক্তব্য হচ্ছে, কর্মকমিশনের কাজ হলো অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশনের বিবেচনায় যতটুকু তাদের করা দরকার, তা প্রথমে সুস্পষ্টভাবে বলা এবং তার ভিত্তিতে কয়েক বছরের একটা পরিকল্পনা হাজির করা। প্রতিটি পরীক্ষার আগে ও পরে তাদের বাধ্যতা থাকা দরকার যে এ বিষয়ে জনগণকে জানানো। এই ২৫ শতাংশের ব্যাপারে বাস্তবোচিত পদক্ষেপ নেওয়া খুবই জরুরি। এতে করে আমার ধারণা অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশনের জন্য বরাদ্দ কমে আসবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার’ এই অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশনের আওতায় আসতে পারেন কি না। আমাদের সবার সম্মিলিত ব্যর্থতা, রাজনৈতিক পরিবেশ সব মিলে মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট-পরিবারের মা-বাবা (যারা তাঁদের একমাত্র সন্তানকে হারিয়েছেন), স্ত্রী-স্বামী, সন্তান—অনেকেই দুর্ভোগময় জীবন যাপন করছেন। সারা বছরই আমরা এ ধরনের খবর দেখি; দুঃখজনকভাবে মার্চ ও ডিসেম্বরে আরও বেশি দেখি। তাঁদের বিষয়ে দেশের, সরকারের ও জাতির অবশ্যই দায়িত্ব রয়েছে। তাঁদের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় রয়েছে, তাকে শক্তিশালী করা দরকার। কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা ভাবা ও বাস্তবায়ন জরুরি। কিন্তু তাঁরা অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশনের আওতায় আসতে পারেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অসংগত নয়। নিকটাত্মীয়দের বাইরে যাঁরা আছেন, তাঁদের সাহায্য করা বা না-করার সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করা বা না-করার কোনো যোগাযোগ আছে বলে মনে হয় না। তার পরও মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরিদের অনেকেই বিরূপ পরিস্থিতি সত্ত্বেও সরকারি চাকরির নিম্নতম প্রয়োজনীয় যোগ্যতার অনেকটাই অর্জন করেছেন। কিন্তু তাঁদের সংখ্যা কত হতে পারে? সে বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার এবং সে জন্য আলাদাভাবে আইন করে সামান্য কোটা রাখার কথা সরকার ভাবতে পারে। কিন্তু তা হতে হবে বাস্তবসম্মত। এখন যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য কোটা রাখার পক্ষে, তাঁরাও কিন্তু এর সংস্কারের পক্ষে, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সদস্যরাও তা-ই বলেছেন।
২. কোটাবিরোধী আন্দোলনের কৌশল
বিসিএস পরীক্ষায় প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার জন্য যাঁরা দাবি তুলেছেন, তাঁদের দাবির যৌক্তিকতা যেমন প্রশ্নাতীত, ঠিক তেমনি তাঁদের আন্দোলনের কৌশল প্রশ্নসাপেক্ষ। এই দাবিতে তাঁদের সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে যে অবমাননাসূচক স্লোগান দেওয়া হয়েছে, তা ঘৃণার্হ, নিন্দনীয়। কোনো অবস্থাতেই দেশের কোনো জনগোষ্ঠী, তাদের দাবি যতই যুক্তিযুক্ত হোক না কেন, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করার অধিকার রাখে না। তাদের মনে রাখা দরকার, মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কারণেই আজ তারা এই দাবি তুলতে পারছে যে তারা যেন সরকারি চাকরিতে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে আমরা কেউই এই অবস্থানে আসতে পারতাম না, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। একই সঙ্গে এই সমাবেশ থেকে যেসব প্রতিকৃতিতে হামলা চালানো হয়েছে, মঙ্গলশোভাযাত্রার স্মারকগুলোয় যেভাবে আগুন লাগানো হয়েছে, তা থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে এই আন্দোলনের উদ্যোক্তারা চান অথবা না চান, তার সুযোগ গ্রহণ করেছে একটি রাজনৈতিক শক্তি। ফলে, এই আন্দোলনের নেতৃত্বের দায়িত্ব ছিল সুস্পষ্ট ভাষায় সেগুলোর নিন্দা করা। সে ক্ষেত্রে তাঁদের ব্যর্থতা তাঁদের জন্যই কেবল ক্ষতিকারক হয়েছে তা নয়, দেশের জন্যও ক্ষতিকারক হয়েছে। অতীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে তাঁদের এই আচরণের মিল থেকে এ কথা বলা অসংগত নয় যে তাঁদের আন্দোলনের সুযোগ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছে এই দল। এই দাবির সমর্থকেরা, কর্মীরা যদি ভবিষ্যতে কোনো কর্মসূচির আগেই এই বিষয়ে তাঁদের অবস্থান পরিষ্কার করতে সক্ষম না হন, তবে তা তাঁদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিরা যে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে পারবেন না, সেটা তাঁদের বোঝা দরকার। আন্দোলনের ভেতরে যাঁরা অন্য উদ্দেশ্য নিয়ে সমবেত হয়েছেন, তাঁদের বের করে দিতে না পারলে এই দাবি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সহিংসতা বলেই চিহ্নিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব সহিংসতা চালানো হয়েছে, তার সঙ্গে সরকারের কাছে দাবি জানানোর সম্পর্ক কোথায়?
৩. সরকার ও কোটা-সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া
আন্দোলনকারীদের মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া নিবর্তনমূলক ব্যবস্থাগুলো সরকারের জন্যই বিপদ ডেকে আনছে, সেটা সরকারের কর্তাব্যক্তিরা মোটেই উপলব্ধি করছেন না। যে দাবি বিবেচনা করার কথা বলা হয়েছে, সেই দাবির উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা করার পথে কী বাধা ছিল? সরকারি দলের কর্মীরা এবং তাঁদের সমর্থকেরা যেভাবে এই দাবির বিপক্ষে পাল্টা সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছেন, সেটাতে তাঁদের অযৌক্তিক অবস্থানই প্রমাণিত হয়। এই দাবির বিরোধিতা করার অধিকার অবশ্যই যে কারও আছে। তাঁরা বলতেই পারেন যে তাঁরা মনে করেন, কথিত কোটা থাকা দরকার। তাঁদের যুক্তি শোনার জন্য অনেকেই অপেক্ষা করছেন। এই লক্ষ্যে তাঁরা জনমত গঠনের জন্য শান্তিপূর্ণ অনেক ধরনের কর্মসূচি নিতে পারতেন, এখনো পারেন। মতভিন্নতার অর্থ এই নয় যে অন্যদের ওপরে চড়াও হতে হবে। শক্তি প্রয়োগ করে তাঁরা জনমত তাঁদের পক্ষে নেওয়ার বদলে তাঁদের বিপক্ষেই ঠেলে দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননার কারণে তাঁরা ক্ষুব্ধ বলে তাঁরা যদি বলেন, তাহলেও বলব, এভাবে তা মোকাবিলা করার মধ্য দিয়ে তাঁরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানালেন কি না, ভেবে দেখতে পারেন।
৪. কর্মকমিশন বিষয়ে বৃহত্তর প্রশ্ন
এখনকার এই অবস্থাকে যাঁরা মনে করছেন ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারি ফলাফল নিয়ে বিক্ষোভ মাত্র, তাঁদের সঙ্গে আমি ভিন্নমত পোষণ করি। এক দিনে এই অবস্থার তৈরি হয়নি; অনেক দিন ধরেই এই নিয়ে একধরনের চাপা ক্ষোভ ছিল, যার প্রকাশ ঘটেছে গত কয়েক দিনে। এই অবস্থার পেছনে আছে সরকারি চাকরি প্রদানে কয়েক দশকের বেশি সময় ধরে চলা দলীয়করণ ও দুর্নীতি। বাংলাদেশে সরকারি চাকরি, সর্বস্তরেই, যে অর্থের বিনিময়ে জোগাড় করতে হয়, সে বিষয়ে প্রায়ই সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়। প্রকৃতপক্ষে কেবল মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা কমে আসছে। দেশের প্রতিরক্ষা খাত ছাড়া সর্বত্র একই অবস্থা। কোটার নামে এই দুর্নীতি আরও বেশি বিস্তার লাভ করেছে বলেই অভিযোগ, এই বিক্ষোভের পেছনে সেটাও একটা কারণ। আরেকটা বিষয় হলো, সরকারি কর্মকমিশনের স্বায়ত্তশাসনের অভাব। সরকারের, আরও স্পষ্ট করে বললে সরকারি দলের, অঙ্গুলি হেলনে কর্মকমিশন পরিচালিত হয়, এটা সবার জানা। এই অবস্থার অবসান না ঘটালে সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকর্ষণ করা যাবে কি না, সে বিষয়ে আমি সন্দিহান। আন্দোলনকারীরা না বললেও এই বিতর্কের মধ্য দিয়ে সরকারি কর্মকমিশনের স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি সামনে এসেছে এবং এ বিষয়ে সবারই মনোযোগী হওয়া দরকার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশের প্রধান দলগুলো তা মানতে রাজি নয়। তার প্রমাণ হলো, বিবিসি আয়োজিত সংলাপে সরকার ও প্রধান বিরোধী দলের দুই প্রতিনিধি কোটা ‘পুনর্বিন্যাসের’ পক্ষেই মত দিয়েছেন, কিন্তু কর্মকমিশনকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার বিষয় নিয়ে আলোচনাই করেননি।
আলী রীয়াজ: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক।
No comments