মিসরকে লড়াইয়ের মাঠ বানিয়েছে সৌদি-কাতার!
পারস্য উপসাগরীয় দুই ধনী রাজতন্ত্র- সৌদি
আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) মিসরকে ৮০০ কোটি ডলারের নগদ সাহায্য ও ঋণ
দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
তাদের সহযোগিতার এই হাত বাড়ানোর
উদ্দেশ্য কেবল মিসরের নড়বড়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে চাঙ্গা করা নয়; সরকারের
ইসলামপন্থী প্রতিপক্ষকে দুর্বল করাও। একই সঙ্গে নতুন করে অস্থিরতার মধ্যে
ঘুরপাক খাওয়া মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের মিত্রদের হাত শক্তিশালী করা। এই
সহযোগিতার প্যাকেজ আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার নিয়ে কাতার ও সৌদি আরবের
প্রতিযোগিতার দিকটিও উন্মোচিত করে।
সৌদি ও ইউএই সরকার বিপুল অঙ্কের এই আর্থিক সহযোগিতার প্যাকেজ ঘোষণা করে গত ৯ জুলাই। এর আগের দিন মিসরের সদস্য ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির সমর্থকদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘাতে প্রাণ হারায় ৫৩ জন। ৩ জুলাই সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মুখে মুরসিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী।
তুরস্কের ঘনিষ্ঠ মিত্র কাতারের শক্ত আর্থিক ও কূটনীতিক সমর্থন ছিল মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতি। একই সঙ্গে তারা সিরিয়ার রণাঙ্গনে যোগ দেওয়া ইসলামপন্থী গোষ্ঠীদের প্রতিও নমনীয়। লিবিয়ার ক্ষেত্রেও ছিল তাদের অভিন্ন অবস্থান। সৌদি ও ইউএই তুলনামূলকভাবে পুরনো সেই কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা পুনর্বহালে আগ্রহী। তাদের আশঙ্কা, ইসলামপন্থী আন্দোলন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তাদের নিজেদের দেশের অভ্যন্তর অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সৌদি ও ইউএইর এই আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ মিসরকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যের সীমিতরূপকেও চকিতে সামনে নিয়ে আসে। প্রতিবছর কায়রোকে ১৫০ কোটি ডলার সাহায্য দেয় ওয়াশিংটন, যা সৌদি ও ইউএইর প্রস্তাবের ভগ্নাংশ। একই সঙ্গে মুরসিকে সরিয়ে দেওয়ার পেছনে সামরিক বাহিনীর ভূমিকার ব্যাপারে ওয়াশিংটনের 'দ্বিধান্বিত' অবস্থানটিকেও সামনে নিয়ে আসে। মিসরকে দেওয়া বার্ষিক সাহায্য অব্যাহত রাখা না-রাখার প্রশ্নে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে চায় ওয়াশিংটন। সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপকে 'অভ্যুত্থান' বলা হবে কি না, তা নিয়ে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের মধ্যেও রয়েছে মতভেদ। তবে মুরসিকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেওয়ার পেছনে সেনাবাহিনীর ভূমিকায় প্রায় পুরোপুরিই সন্তুষ্ট সৌদি ও ইউএই। এই দুই দেশই ব্রাদারহুডের ইসলামপন্থী কাম গণতান্ত্রিক এজেন্ডায় গভীর নাখোশ ছিল। তারা ব্রাদারহুডের কর্মকাণ্ডকে নিজেদের রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার বৈধতা ও আঞ্চলিক স্থিতাবস্থার প্রতি হুমকির হিসেবেই দেখত। বিপরীতে, মুরসির এক বছরের শাসনামলে মিসরকে ৮০০ কোটি ডলার সাহায্য দেয় কাতার। ২০০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব দেয় তুরস্ক। অথচ সৌদি সরকার তখন মিসরের দিক থেকে মুখে ফিরিয়ে নেয়। সাহায্যের পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেয় তারা। যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধ সত্ত্বেও মিসরের অর্থনীতি চাঙ্গায় কোনো ভূমিকা রাখতে তারা অপারগতা জানায়।
২০১১ সালে শুরু হওয়া আবর বসন্তেরও আগে থেকে কাতার ও সৌদির মধ্যে উত্তেজনা বিদ্যমান। সৌদি আরব নীরবেই তাদের কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাওয়ায় বিশ্বাসী। নিজেদের তারা আঞ্চলিক মুরবি্ব হিসেবেই দেখতে অভ্যস্ত। তবে কাতার বেশ কিছু বছর ধরে তাদের বিদেশ নীতির পরিধি বাড়িয়েছে। নিজেদের সম্পদ ও গুরুত্বপূর্ণ টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আল-জাজিরা কাজে লাগিয়ে তারা আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নীতিনির্ধারণীর ভূমিকা পালনে প্রয়াসী। তাদের উদ্যোগে কখনো কখনো সৌদির স্বার্থহানিরও কারণ হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি কাতারে। তিউনিসিয়া, লিবিয়া, সিরিয়া ও মিসরে ইসলামপন্থীদের অর্থায়নেও আগ্রহী তারা। যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শ উপেক্ষা করে কাতারের সিরীয় ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের সহায়তা করায় ক্ষুব্ধ সৌদি। তবে কাতারের নতুন আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি ইতিমধ্যে সৌদির সঙ্গে উত্তেজনা কমাতে উদ্যোগী হয়েছেন। গত মাসে বাবা শেখ হামাদ বিন খলিফা আল থানির কাছ থেকে দায়িত্ব পাওয়া শেখ তামিম দুই দেশের মধ্যে ২০০৭ সালে গঠিত একটি যৌথ কমিটির সভায় যোগ দিয়েছেন। ফলে বিদেশ নীতিতে তিনি বাবার চেয়ে উদারপন্থী হবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস।
সৌদি ও ইউএই সরকার বিপুল অঙ্কের এই আর্থিক সহযোগিতার প্যাকেজ ঘোষণা করে গত ৯ জুলাই। এর আগের দিন মিসরের সদস্য ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির সমর্থকদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘাতে প্রাণ হারায় ৫৩ জন। ৩ জুলাই সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মুখে মুরসিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী।
তুরস্কের ঘনিষ্ঠ মিত্র কাতারের শক্ত আর্থিক ও কূটনীতিক সমর্থন ছিল মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতি। একই সঙ্গে তারা সিরিয়ার রণাঙ্গনে যোগ দেওয়া ইসলামপন্থী গোষ্ঠীদের প্রতিও নমনীয়। লিবিয়ার ক্ষেত্রেও ছিল তাদের অভিন্ন অবস্থান। সৌদি ও ইউএই তুলনামূলকভাবে পুরনো সেই কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা পুনর্বহালে আগ্রহী। তাদের আশঙ্কা, ইসলামপন্থী আন্দোলন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তাদের নিজেদের দেশের অভ্যন্তর অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সৌদি ও ইউএইর এই আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ মিসরকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যের সীমিতরূপকেও চকিতে সামনে নিয়ে আসে। প্রতিবছর কায়রোকে ১৫০ কোটি ডলার সাহায্য দেয় ওয়াশিংটন, যা সৌদি ও ইউএইর প্রস্তাবের ভগ্নাংশ। একই সঙ্গে মুরসিকে সরিয়ে দেওয়ার পেছনে সামরিক বাহিনীর ভূমিকার ব্যাপারে ওয়াশিংটনের 'দ্বিধান্বিত' অবস্থানটিকেও সামনে নিয়ে আসে। মিসরকে দেওয়া বার্ষিক সাহায্য অব্যাহত রাখা না-রাখার প্রশ্নে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে চায় ওয়াশিংটন। সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপকে 'অভ্যুত্থান' বলা হবে কি না, তা নিয়ে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের মধ্যেও রয়েছে মতভেদ। তবে মুরসিকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেওয়ার পেছনে সেনাবাহিনীর ভূমিকায় প্রায় পুরোপুরিই সন্তুষ্ট সৌদি ও ইউএই। এই দুই দেশই ব্রাদারহুডের ইসলামপন্থী কাম গণতান্ত্রিক এজেন্ডায় গভীর নাখোশ ছিল। তারা ব্রাদারহুডের কর্মকাণ্ডকে নিজেদের রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার বৈধতা ও আঞ্চলিক স্থিতাবস্থার প্রতি হুমকির হিসেবেই দেখত। বিপরীতে, মুরসির এক বছরের শাসনামলে মিসরকে ৮০০ কোটি ডলার সাহায্য দেয় কাতার। ২০০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব দেয় তুরস্ক। অথচ সৌদি সরকার তখন মিসরের দিক থেকে মুখে ফিরিয়ে নেয়। সাহায্যের পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেয় তারা। যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধ সত্ত্বেও মিসরের অর্থনীতি চাঙ্গায় কোনো ভূমিকা রাখতে তারা অপারগতা জানায়।
২০১১ সালে শুরু হওয়া আবর বসন্তেরও আগে থেকে কাতার ও সৌদির মধ্যে উত্তেজনা বিদ্যমান। সৌদি আরব নীরবেই তাদের কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাওয়ায় বিশ্বাসী। নিজেদের তারা আঞ্চলিক মুরবি্ব হিসেবেই দেখতে অভ্যস্ত। তবে কাতার বেশ কিছু বছর ধরে তাদের বিদেশ নীতির পরিধি বাড়িয়েছে। নিজেদের সম্পদ ও গুরুত্বপূর্ণ টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আল-জাজিরা কাজে লাগিয়ে তারা আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নীতিনির্ধারণীর ভূমিকা পালনে প্রয়াসী। তাদের উদ্যোগে কখনো কখনো সৌদির স্বার্থহানিরও কারণ হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি কাতারে। তিউনিসিয়া, লিবিয়া, সিরিয়া ও মিসরে ইসলামপন্থীদের অর্থায়নেও আগ্রহী তারা। যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শ উপেক্ষা করে কাতারের সিরীয় ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের সহায়তা করায় ক্ষুব্ধ সৌদি। তবে কাতারের নতুন আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি ইতিমধ্যে সৌদির সঙ্গে উত্তেজনা কমাতে উদ্যোগী হয়েছেন। গত মাসে বাবা শেখ হামাদ বিন খলিফা আল থানির কাছ থেকে দায়িত্ব পাওয়া শেখ তামিম দুই দেশের মধ্যে ২০০৭ সালে গঠিত একটি যৌথ কমিটির সভায় যোগ দিয়েছেন। ফলে বিদেশ নীতিতে তিনি বাবার চেয়ে উদারপন্থী হবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস।
No comments