মৌসুমি ফল by খন রঞ্জন রায়
রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়ার কারণে এ সময় আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, তরমুজ, লেবু, পেঁপে, আনারস, পেয়ারা, জামরুল, বেল, কতবেল ও ডেউয়া আমাদের জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে সম্পৃক্ত হয়। ইতিমধ্যে রাস্তাঘাট, হাটবাজার ও ফুটপাত গরমের তৃষ্ণা নিবারণী বৈচিত্র্যময় ফলের সমাহারে লোভাতুর আবেশ তৈরি করেছে। সংক্ষিপ্ত সময়ের ফল লিচু। অনন্য বৈশিষ্ট্য ও বিচিত্র স্বাদের কালীপুরের লিচু দু-তিন দিনেই উধাও। আগমন ঘটেছে উত্তরাঞ্চলের রসে টসটস লালচে মাংসল লিচুর। হয়তো পাওয়া যাবে সপ্তাহ খানেক। এর মধ্যেই অসাধারণ লিচুর নিবেদিতপ্রাণ গৌরবময় স্বাদ আস্বাদন করে নিতে হবে।
চার হাজার বছরের ইতিহাসসমৃদ্ধ ‘আম’ বর্তমানে ৩৫ রকম স্বাদ, গন্ধ, রস ও জাতের পাওয়া যায়। গোপালভোগ, মালভোগ, ল্যাংড়া, সুন্দরী, ভবানী, চম্পা, দাউনিয়া, সুরম্পা, বৈশাখী, পাঞ্চাছন্দ, সরঙ্গম, সিঁদুরকোটা, বউভোলানি, হিমসাগর, কাজলী, কলাবতী, বিবিপছন্দ ইত্যাদি নামের আম রয়েছে।
অপরিসীম গুরুত্ব, অর্থনৈতিক বিকাশ ও বিনিয়োগ-বাণিজ্যের সম্ভাবনা বিবেচনায় দেশব্যাপী আমগাছের সার্থক জনপ্রিয়তার কারণে এই গাছকে সরকার জাতীয় বৃক্ষের স্বীকৃতি দিয়েছে। আমের স্বাদ, গন্ধ, রং ও আকার বিবেচনায় মনোলোভা আমাদের এই ফল চাষ শুরু করেছে চীন, থাইল্যান্ড, মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিলসহ অনেক দেশ। বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে চাষাবাদ করে বিশ্বব্যাপী আমের প্রধান রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ভারত। আমরা ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে ধারণ করে উত্তরবঙ্গের রাজশাহী, নাটোর আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিখ্যাত আমকে লালন করছি।
মৌসুমি ফলের বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থাপনার অভাবে হাতছাড়া করছি। বঞ্চিত হচ্ছি এর স্বাদ আস্বাদন ও পুষ্টিমান রক্ষার দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম গ্রহণ করা থেকে। দু-তিন মাস পরই আর দেখা মিলছে না বাজার সয়লাব হওয়া ভিন্ন মাত্রায় দেশীয় ফলমূলের। বাজার তখন দাপটের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করে আমদানি করা ফরমালিন, কার্বাইড, মিপসিন, মার্শাল, কার্বোফুরান, ইথরিল ও ডাই-এলড্রিনযুক্ত স্বাদ-গন্ধ-বর্ণহীন বিজাতীয় ফল।
ভাবতে অবাক লাগে, অপার সম্ভাবনার এই ফলমূলকে সংরক্ষণ করার কোনো কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়নি। দু-চার দিন সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থাও নেই। এ কারণে নষ্ট হয় আমাদের জাতীয় ঐতিহাসিক ফলমূল। এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা কয়েক দিন না পচার ব্যবস্থা করতে মানবস্বাস্থ্যের অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রোফাইল গেনেট, বিএইচএ, হেপটাইল পারাবেন, বিএইচটি, সোডিয়াম নাইট্রেট, সোডিয়াম বেনজায়েট, সালফাইড ইত্যাদি মিশ্রণ স্প্রে করছেন; তা প্রকাশ্যে ও অবলীলায়। তরিতরকারি আর সবজি সংরক্ষণে দেশে কোল্ডস্টোরেজ রয়েছে মাত্র ২৮০টি; তা-ও ঢাকাকেন্দ্রিক। দুর্ভাগ্যের বিষয়, এসব কোল্ডস্টোরেজও পরিচালিত হয় ম্যানুয়ালি অ্যানালগ পদ্ধতিতে।
দেশের বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক নানা জাত ও স্বাদের মৌসুমি ফল উৎপাদিত হয়। সেসব এলাকা চিহ্নিত করে আম, জাম, আনারস, লিচু, কাঁঠাল, তরমুজ, বাঙ্গি, পেঁপে ইত্যাদির বিষয়ভিত্তিক প্রক্রিয়াকরণ টেকনোলজি শিক্ষা চালু করে দক্ষ লোকবল তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। উপকরণ আমদানি করে বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে নষ্ট হওয়া রোধ করতে হবে এবং স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণে মনোযোগী হতে হবে।
আমাদের ঐতিহ্যের এসব ফল সংক্ষিপ্ত সময়ের না হয়ে বছরব্যাপী উপভোগ করব রবীন্দ্রনাথের ‘আমসত্ত্ব’ কবিতার আদলে। সংরক্ষিত ফল মধ্যপ্রাচ্যের গুটি কয়েক দেশ ছাড়াও দূরপ্রাচ্যের দেশে চাহিদা অনুযায়ী তরতাজাভাবে রপ্তানি করতে সক্ষম হব। বর্তমানে ফল রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৪০০ কোটি টাকা না হয়ে চার হাজার কোটি টাকায় উপনীত হবে—বিষয়টি আশ্চর্যের নয়, বাস্তবের।
খন রঞ্জন রায়
চকবাজার, চট্টগ্রাম।
চার হাজার বছরের ইতিহাসসমৃদ্ধ ‘আম’ বর্তমানে ৩৫ রকম স্বাদ, গন্ধ, রস ও জাতের পাওয়া যায়। গোপালভোগ, মালভোগ, ল্যাংড়া, সুন্দরী, ভবানী, চম্পা, দাউনিয়া, সুরম্পা, বৈশাখী, পাঞ্চাছন্দ, সরঙ্গম, সিঁদুরকোটা, বউভোলানি, হিমসাগর, কাজলী, কলাবতী, বিবিপছন্দ ইত্যাদি নামের আম রয়েছে।
অপরিসীম গুরুত্ব, অর্থনৈতিক বিকাশ ও বিনিয়োগ-বাণিজ্যের সম্ভাবনা বিবেচনায় দেশব্যাপী আমগাছের সার্থক জনপ্রিয়তার কারণে এই গাছকে সরকার জাতীয় বৃক্ষের স্বীকৃতি দিয়েছে। আমের স্বাদ, গন্ধ, রং ও আকার বিবেচনায় মনোলোভা আমাদের এই ফল চাষ শুরু করেছে চীন, থাইল্যান্ড, মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিলসহ অনেক দেশ। বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে চাষাবাদ করে বিশ্বব্যাপী আমের প্রধান রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ভারত। আমরা ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে ধারণ করে উত্তরবঙ্গের রাজশাহী, নাটোর আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিখ্যাত আমকে লালন করছি।
মৌসুমি ফলের বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থাপনার অভাবে হাতছাড়া করছি। বঞ্চিত হচ্ছি এর স্বাদ আস্বাদন ও পুষ্টিমান রক্ষার দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম গ্রহণ করা থেকে। দু-তিন মাস পরই আর দেখা মিলছে না বাজার সয়লাব হওয়া ভিন্ন মাত্রায় দেশীয় ফলমূলের। বাজার তখন দাপটের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করে আমদানি করা ফরমালিন, কার্বাইড, মিপসিন, মার্শাল, কার্বোফুরান, ইথরিল ও ডাই-এলড্রিনযুক্ত স্বাদ-গন্ধ-বর্ণহীন বিজাতীয় ফল।
ভাবতে অবাক লাগে, অপার সম্ভাবনার এই ফলমূলকে সংরক্ষণ করার কোনো কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়নি। দু-চার দিন সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থাও নেই। এ কারণে নষ্ট হয় আমাদের জাতীয় ঐতিহাসিক ফলমূল। এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা কয়েক দিন না পচার ব্যবস্থা করতে মানবস্বাস্থ্যের অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রোফাইল গেনেট, বিএইচএ, হেপটাইল পারাবেন, বিএইচটি, সোডিয়াম নাইট্রেট, সোডিয়াম বেনজায়েট, সালফাইড ইত্যাদি মিশ্রণ স্প্রে করছেন; তা প্রকাশ্যে ও অবলীলায়। তরিতরকারি আর সবজি সংরক্ষণে দেশে কোল্ডস্টোরেজ রয়েছে মাত্র ২৮০টি; তা-ও ঢাকাকেন্দ্রিক। দুর্ভাগ্যের বিষয়, এসব কোল্ডস্টোরেজও পরিচালিত হয় ম্যানুয়ালি অ্যানালগ পদ্ধতিতে।
দেশের বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক নানা জাত ও স্বাদের মৌসুমি ফল উৎপাদিত হয়। সেসব এলাকা চিহ্নিত করে আম, জাম, আনারস, লিচু, কাঁঠাল, তরমুজ, বাঙ্গি, পেঁপে ইত্যাদির বিষয়ভিত্তিক প্রক্রিয়াকরণ টেকনোলজি শিক্ষা চালু করে দক্ষ লোকবল তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। উপকরণ আমদানি করে বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে নষ্ট হওয়া রোধ করতে হবে এবং স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণে মনোযোগী হতে হবে।
আমাদের ঐতিহ্যের এসব ফল সংক্ষিপ্ত সময়ের না হয়ে বছরব্যাপী উপভোগ করব রবীন্দ্রনাথের ‘আমসত্ত্ব’ কবিতার আদলে। সংরক্ষিত ফল মধ্যপ্রাচ্যের গুটি কয়েক দেশ ছাড়াও দূরপ্রাচ্যের দেশে চাহিদা অনুযায়ী তরতাজাভাবে রপ্তানি করতে সক্ষম হব। বর্তমানে ফল রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৪০০ কোটি টাকা না হয়ে চার হাজার কোটি টাকায় উপনীত হবে—বিষয়টি আশ্চর্যের নয়, বাস্তবের।
খন রঞ্জন রায়
চকবাজার, চট্টগ্রাম।
No comments