আ-মরি বাংলা ভাষাঃ বাঙালি চেতনার মহাআত্মপ্রকাশ একুশ
কালো পতাকায়/প্রাচীর পত্রে/অশ্রু-তরল রক্তরঙের লিপি/ক্রোধের/ঘৃণার ভয়াল
বিস্ফোরণ/একুশে ফেব্রুয়ারি...। বাঙালির মূল চেতনার মহাআত্মপ্রকাশ একুশ।
১৯৫২
সালের এ দিনটি নবউচ্চতায় আসীন করেছে বাঙালিকে। বাংলা ভাষাকে এবং অতি
অবশ্যই আজকের বাংলাদেশকে। ফেব্রুয়ারি এলে তাই গর্বে বুক ভরে ওঠে। ১৯৫২
সালের এই মাসটিজুড়ে ছিল আন্দোলন। বঞ্চনা ও ক্ষোভের আগুনে উত্তাল হচ্ছিল
ঢাকা। ভাষার অধিকারের পক্ষে লেখালেখি চলছিল পত্রপত্রিকায়। এ সময় বাঙালির
দাবির পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেয় ঢাকার ইংরেজি দৈনিক পাকিস্তান অবজারভার।
উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল
পত্রিকাটি। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের আজকের দিনে (১২ ফেব্রুয়ারি)
প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে তীব্র সমালোচনা করা হয় খাজা নাজিমুদ্দিনের। এতে বলা
হয় ইসলামের তৃতীয় খলিফা অত্যন্ত ধার্মিক ও সৎ ছিলেন। কিন্তু তিনি নির্লজ্জ
আত্মীয় তোষণের অপরাধে অপরাধী ছিলেন। তার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব যাদের
দাবি আদৌ বিবেচনার যোগ্য ছিল না, তিনি তাদেরই নানা রূপ ক্ষমতার অধিকারী
করেছিলেন। খাজা নাজিমুদ্দিন ধার্মিক মুসলমান এ কথা কেউই অস্বীকার করবেন না।
কিন্তু তিনি যেন নিজেকে দ্বিতীয় ওসমান-বিন-আফফান প্রমাণিত না করেন আমরা এ
আশা ও প্রার্থনাই করি। এমন মন্তব্যে বেজায় নাখোশ হয় সরকার। এতে হজরত ওসমান
(রা.) সম্পর্কে অবমাননাকর বক্তব্য দেয়া হয়েছে অভিযোগ এনে পত্রিকাটির
প্রকাশনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। এর সম্পাদক আবদুস সালাম ও প্রকাশক
হামিদুল হক চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়। এভাবে ক্রমশ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছিল
পাকিস্তানি প্রশাসন। তবে এতে বাঙালির আন্দোলন সংগ্রাম থেমে থাকেনি। বরং
জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় ছিল।
No comments