সেদিন কারফিউ ভাঙার দ্বিতীয় দলটি ছিল মেয়েদেরঃ ভাষাসৈনিক হালিমা খাতুন by অমিত হালদার
ভাষাসৈনিক ড. হালিমা খাতুন বলেছেন, আমরা চেয়েছিলাম আমা-দের এইদেশ সোনার
বাংলায় পরিণত হবে। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের এত বছর পরে দেখছি আমাদের বাংলায়
অনেক গলদ রয়েছে।
তিনি
বলেন, রাজনীতির মধ্যে ঘোলাপানি ঢুকে গেছে। রাজনীতির অনিয়ম, অনাচার,
মানবতাবিরোধী কার্যকলাপ, অদূরদর্শিতা, অর্থনৈতিক অমাবস্যা ঘিরে ধরেছে
আমাদের জীবন। আজকে যেমন শাহবাগে জেগে উঠেছে এভাবে প্রতি ঘরে-ঘরে
সত্য-সুন্দর-স্বাধীনতা, শিক্ষা মানবতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হতে পারলে আমাদের
দেশ আবার সোনার বাংলায় পরিণত হবে। গতকাল সংবাদকে তিনি একথা বলেন।
ভাষাসৈনিক ড. হালিমা খাতুনের জন্ম ১৯৩৩ সালের ২৫ আগস্ট বাগেরহাটে। তার স্বাস্থ্য ভালো যাচ্ছে না। অসুস্থতার মধ্যেও তিনি লেখালেখি আর পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। লিখছেন ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি। আত্মজীবনীর অংশ হিসেবেই তিনি এই স্মৃতিচারণা লিখছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর বিভাগের অধ্যাপনা থেকে ১৯৯৭ সালে অবসর নেন। বেশিরভাগ সময়ই লাইব্রেরিতে বইয়ের ভুবনে ডুবে থাকেন তিনি। হালিমা খাতুন একজন শিশু সাহিত্যিক। এরই মধ্যে বেরিয়েছে তার ৪০টির মতো শিশুতোষ গ্রন্থ। তিনি ১৯৬৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ নর্দান কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষার ওপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। জাতিসংঘের উপদেষ্টা হিসেবে নেপালে ছিলেন দুই বছর।
১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী হিসেবেই জড়িয়ে পড়েন ভাষা আন্দোলনে। আন্দোলনের মাঠে তখন পেয়েছিলেন মোহাম্মদ সুলতান, আবদুল মতিন, গাজীউল হক, আবদুস সামাদ আজাদ, সাদেক খান প্রমুখকে। হালিমা খাতুন জানান, ভাষা আন্দোলনের কর্মী হিসেবে স্কুলে স্কুলে গিয়ে ছাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করাসহ কর্মসূচিতে নিয়ে আসার কাজ করতেন তিনি। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাবাজার স্কুল ও মুসলিম স্কুল থেকে বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী নিয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় অবস্থান নেন। তিনি বলেন, সেদিন কারফিউ ভেঙে মিছিল বের করার সিদ্ধান্ত হলে সঙ্গে থাকা স্কুলের মেয়েদের জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা কি ১৪৪ ধারা ভাঙতে রাজি? এতে কিন্তু জীবনের ঝুঁকি আছে। তারা দৃপ্তকণ্ঠে বলে ওঠে, ১০০ বার রাজি। তিনি জানান, তখন সিদ্ধান্ত হয় ছেলেরা ১০ জন করে আর মেয়েরা চারজন করে রাস্তায় নামবেন। প্রথম দলটি ছিল ছেলেদের, এর পরের দলটি মেয়েদের। মেয়েদের দলে নেতৃত্ব্ব দেন তিনিই। এরপর ছোট ছোট দলে শিক্ষার্থীরা বেরোতে থাকেন। তারা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশি বাধা দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জ্বলে ওঠেন। বিকেল ৩টার দিকে সবাই রাস্তায় বেরিয়ে আসতে শুরু করেন। আর তখনই প্রথম শুরু হয় পুলিশের টিয়ার শেল নিক্ষেপ, এরপর গুলিবর্ষণ। সবার চোখের সামনে রফিকের মাথার খুলি উড়ে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ে রাস্তায়। শহীদ হন বরকতসহ অনেকে। হালিমা খাতুনের ভাষায়, আহতদের দেখে নিজের ক্ষুধা-যন্ত্রণা সব ভুলে গিয়েছিলাম। রাস্তায় কী হচ্ছে, কে মারা গেছে, কিছুই বুঝতে পারিনি। সন্ধ্যার দিকে গোলাগুলি থামলে হোস্টেলে ফিরছিলাম, পথে দেখি একটি ছেলের লাশ পড়ে আছে। ওর বই-খাতা রাস্তার ওপর ছড়ানো। আজ যেখানে শহীদ মিনার, সেখানে রক্ত আর রক্ত। ওখানে দেখেছিলাম একজন শহীদের চূর্ণ হয়ে যাওয়া মাথার খুলি ও বকুল ফুলের স্তূপের মতো মগজ পড়ে আছে।
ভাষাসৈনিক হালিমা খাতুন বলেন, ভাষা আন্দোলন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। কেউ ভাবতে পারেনি এমন আক্রমণ আসতে পারে। পাকিস্তানিদের নির্মম অত্যাচারের কারণেই আন্দোলন সফল পরিণতির দিকে গিয়েছিল। তার প্রত্যাশা এই দেশ আবার সোনার বাংলায় পরিণত হবে।
ভাষাসৈনিক ড. হালিমা খাতুনের জন্ম ১৯৩৩ সালের ২৫ আগস্ট বাগেরহাটে। তার স্বাস্থ্য ভালো যাচ্ছে না। অসুস্থতার মধ্যেও তিনি লেখালেখি আর পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। লিখছেন ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি। আত্মজীবনীর অংশ হিসেবেই তিনি এই স্মৃতিচারণা লিখছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর বিভাগের অধ্যাপনা থেকে ১৯৯৭ সালে অবসর নেন। বেশিরভাগ সময়ই লাইব্রেরিতে বইয়ের ভুবনে ডুবে থাকেন তিনি। হালিমা খাতুন একজন শিশু সাহিত্যিক। এরই মধ্যে বেরিয়েছে তার ৪০টির মতো শিশুতোষ গ্রন্থ। তিনি ১৯৬৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ নর্দান কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষার ওপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। জাতিসংঘের উপদেষ্টা হিসেবে নেপালে ছিলেন দুই বছর।
১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী হিসেবেই জড়িয়ে পড়েন ভাষা আন্দোলনে। আন্দোলনের মাঠে তখন পেয়েছিলেন মোহাম্মদ সুলতান, আবদুল মতিন, গাজীউল হক, আবদুস সামাদ আজাদ, সাদেক খান প্রমুখকে। হালিমা খাতুন জানান, ভাষা আন্দোলনের কর্মী হিসেবে স্কুলে স্কুলে গিয়ে ছাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করাসহ কর্মসূচিতে নিয়ে আসার কাজ করতেন তিনি। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাবাজার স্কুল ও মুসলিম স্কুল থেকে বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী নিয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় অবস্থান নেন। তিনি বলেন, সেদিন কারফিউ ভেঙে মিছিল বের করার সিদ্ধান্ত হলে সঙ্গে থাকা স্কুলের মেয়েদের জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা কি ১৪৪ ধারা ভাঙতে রাজি? এতে কিন্তু জীবনের ঝুঁকি আছে। তারা দৃপ্তকণ্ঠে বলে ওঠে, ১০০ বার রাজি। তিনি জানান, তখন সিদ্ধান্ত হয় ছেলেরা ১০ জন করে আর মেয়েরা চারজন করে রাস্তায় নামবেন। প্রথম দলটি ছিল ছেলেদের, এর পরের দলটি মেয়েদের। মেয়েদের দলে নেতৃত্ব্ব দেন তিনিই। এরপর ছোট ছোট দলে শিক্ষার্থীরা বেরোতে থাকেন। তারা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশি বাধা দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জ্বলে ওঠেন। বিকেল ৩টার দিকে সবাই রাস্তায় বেরিয়ে আসতে শুরু করেন। আর তখনই প্রথম শুরু হয় পুলিশের টিয়ার শেল নিক্ষেপ, এরপর গুলিবর্ষণ। সবার চোখের সামনে রফিকের মাথার খুলি উড়ে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ে রাস্তায়। শহীদ হন বরকতসহ অনেকে। হালিমা খাতুনের ভাষায়, আহতদের দেখে নিজের ক্ষুধা-যন্ত্রণা সব ভুলে গিয়েছিলাম। রাস্তায় কী হচ্ছে, কে মারা গেছে, কিছুই বুঝতে পারিনি। সন্ধ্যার দিকে গোলাগুলি থামলে হোস্টেলে ফিরছিলাম, পথে দেখি একটি ছেলের লাশ পড়ে আছে। ওর বই-খাতা রাস্তার ওপর ছড়ানো। আজ যেখানে শহীদ মিনার, সেখানে রক্ত আর রক্ত। ওখানে দেখেছিলাম একজন শহীদের চূর্ণ হয়ে যাওয়া মাথার খুলি ও বকুল ফুলের স্তূপের মতো মগজ পড়ে আছে।
ভাষাসৈনিক হালিমা খাতুন বলেন, ভাষা আন্দোলন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। কেউ ভাবতে পারেনি এমন আক্রমণ আসতে পারে। পাকিস্তানিদের নির্মম অত্যাচারের কারণেই আন্দোলন সফল পরিণতির দিকে গিয়েছিল। তার প্রত্যাশা এই দেশ আবার সোনার বাংলায় পরিণত হবে।
No comments