বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না

৮৪ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। আবদুল মালেক, বীর প্রতীক প্রতিরোধ যুদ্ধের সাহসী এক যোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক ২০০৫ সালে মারা গেছেন। তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা হলো ছেলে ফজলুল হকের সঙ্গে। তিনি জানালেন, তাঁর বাবা আবদুল মালেক চাকরি করতেন ইপিআরে (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, পরে বিডিআর, এখন বিজিবি)। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন যশোর ইপিআর সেক্টরে।


তখন তাঁর পদবি ছিল নায়েব সুবেদার। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাঁর বাবা আবদুল মালেক যুদ্ধে যোগ দেন। যশোরে প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে আশ্রয় নেন। পরে যুদ্ধ করেন ৮ নম্বর সেক্টরে। যশোর জেলায় সংঘটিত বিভিন্ন যুদ্ধে তাঁর বাবা অংশ নেন। বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। কিন্তু কোন কোন যুদ্ধে তাঁর বাবা অংশ নিয়েছেন, সে তথ্য তিনি জানেন না। আবদুল মালেকের পরিবারের কেউই এ সম্পর্কে আর কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
সুকুমার বিশ্বাসের মুক্তিযুদ্ধে রাইফেলস ও অন্যান্য বাহিনী বইয়ে ১৯৭১ সালের মার্চ-এপ্রিলে প্রতিরোধযুদ্ধকালে যশোর এলাকার বিবরণে আবদুল মালেকের নাম পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেন: ‘যশোর সেক্টরের ইপিআররা মূলত দুটি ভাগে ভাগ হয়ে প্রতিরক্ষা ব্যূহ রচনা করল। হাবিলদার তফাজ্জল আলীর নেতৃত্বে ৩২ জনের একটি দল যশোরের সন্ন্যাসদীঘিতে এবং নায়েব সুবেদার মালেক (আবদুল মালেক) ৬০ জন ইপিআর নিয়ে সেক্টর প্রতিরক্ষায় রইলেন।
১ এপ্রিল তারিখেই নায়েব সুবেদার আবদুল মালেক, হাবিলদার আবদুল আউয়াল এবং সিপাই মজিবুল্লাহ পাঠান ভারত থেকে সাহায্যের প্রত্যাশায় বেনাপোল হয়ে ভারতে যান। কিন্তু ভারত থেকে আশানুরূপ সাহায্য না পাওয়ায় তাঁরা ফিরে আসেন।...
৩ এপ্রিল থেকে পাকিস্তান বাহিনী যশোরে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন অবস্থানে ব্যাপকভাবে কামানের গোলা নিক্ষেপ করতে থাকে।...পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যাপক আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা পিছে হটতে বাধ্য হন। মুক্তিযোদ্ধাদের সমগ্র দল একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। একটি দল হাসান উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে নড়াইলের দিকে, অপর দল ঝিকরগাছার দিকে হটতে থাকে। ৬ এপ্রিল যশোরের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে চলে যায়।’
ঝিকরগাছায় হটে আসা মুক্তিযোদ্ধা দলের সার্বিক নেতৃত্বে ছিলেন আবদুল মালেক। ১২ এপ্রিল যশোর-বেনাপোল সড়কের লাউজানিতে এবং ২৪ এপ্রিল কাগজপুকুরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে আবদুল মালেক প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য আবদুল মালেককে স্বাধীনতার পর বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ১৭৬।
আবদুল মালেকের পৈতৃক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার গুকর্ণ মহল্লায়। শৈশবে তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে একই পৌরসভার অন্তর্গত পৈরতলা মহল্লায় তাঁর মা বসবাস করতেন। ১৯৭৪ সালে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি পৈরতলাতেই বসবাস করেন। তাঁর বাবার নাম করম উদ্দিন। মা পংখিরাজ বেগম। তাঁর দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী ফাতেমা বেগম মারা যাওয়ার পর আংগুরা বেগমকে বিয়ে করেন। তাঁদের সাত ছেলে চার মেয়ে। দ্বিতীয় স্ত্রী পেনশন ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান। এলাকাবাসী আবদুল মালেককে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চেনেন।
সূত্র: প্রথম আলোর সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি বদর উদ্দিন।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrahed@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.