খাদ্য ও আশ্রয়ের সঙ্কটে মানবিক বিপর্যয়
খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের পাশে প্লাবিত জমি থেকে কলমি শাক, শামুক ও শাপলার ভেট সংগ্রহ করছিলেন শাফিয়া ও তার জা শাহানা। দু’জনেরই বাড়ি তালা উপজেলার বাগড়াপুর বয়রানগর গ্রামে। তারা জানালেন, আগে চিংড়ি ঘেরে কাজ করতেন। এখন ঘের ভেসে গেছে। মাটির ঘরগুলো ধসে পড়েছে। আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তায়। কোনো কাজ নেই। তাই বেঁচে থাকার জন্য বিকল্প উপায় হিসাবে শামুক কুড়ান। ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শামুক কুড়িয়ে প্রত্যেকে ৫-৬ কেজির মতো শামুক পেয়েছেন। প্রতিকেজি শামুক বিক্রি করেন ৫ টাকা দরে। এগুলো বিক্রি করে যে টাকা পাবেন তাই দিয়ে কিনবেন চাল। আর যে কলমি শাক ও শালুক তুলেছেন, সেগুলো রান্না করেই চলবে ১০ জনের খাবার।
সাতক্ষীরা জেলায় সরকারিভাবে পানিবন্দি মানুষের জন্য মাথাপিছু চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এক কেজি ৮০০ গ্রাম, অর্থ বরাদ্দ হয়েছে ২ টাকা করে। বিধ্বস্ত বাড়িঘর মেরামতের জন্য বাড়িপ্রতি বরাদ্দ ১ টাকা ৪২ পয়সা, আর মাথাপিছুর হিসাবে তা ১০ পয়সা। শাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রতি এক হাজার ৩৫৫ জনের জন্য একটি করে। লুঙ্গি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রতি এক হাজার ৭০৮ জনের জন্য একটি করে। এর বাইরে রয়েছে বিভিন্ন এনজিওর সামান্য অনুদান। এই হিসাবই বলে দেয়, দু’মাস পানিবন্দি অসহায় মানুষগুলোর মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে দু’মাস পানিবন্দি থাকা মানুষের জন্য এই পরিমাণ বরাদ্দ যে কতটুকু নগণ্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না।তালা উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল আউয়াল। কিছু কৃষিজমি আছে তার। সেগুলোতে ও কিছু বর্গাজমিতে সবজি এবং ধান চাষ করতেন। তার চাষ করা পোটল, ঝিঙ্গে, ওলকচুর ক্ষেত জলাবদ্ধতায় ধ্বংস হয়ে গেছে। বসতভিটা, পুকুর, বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা—সবকিছু কয়েক ফুট পানির নিচে। রান্না, খাওয়া বা দৈনন্দিন কাজ করার জন্য একতিল মাটিও জেগে নেই, বাধ্য হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তায়। সেখানে পাটখড়ি আর পলিথিন দিয়ে একটি একচালা তৈরি করেছেন। প্রতিদিন ১৫ কিলোমিটার পথ ভটভটিতে করে সাতক্ষীরা শহরে যান কাজের সন্ধানে। যে হাতে তার ছিল কাস্তে-কোদাল, এখন সেই হাতে ধরেছেন ভ্যানগাড়ির হ্যান্ডেল। অভ্যাস না থাকায় রিকশাভ্যান চালাতে খুব অসুবিধা হয়। তিনি জানালেন, জলাবদ্ধতার কারণে তার মাটির তৈরি বসতঘর ও মাটির তৈরি রান্নাঘরটি ধসে পড়েছে ১৫ রোজার দিকে। পানি ভেঙে পড়া বাড়িতে গিয়ে ঘরের অবস্থা দেখে হাউমাউ করে কেঁদেছেন। কিন্তু কান্না দিয়ে তো আর জীবন চলে না। তাই গৃহস্থ কৃষক এখন ভ্যানচালক। ভাড়ায় নেয়া ভ্যানগাড়ি চালিয়ে যা উপার্জন করেন তাই দিয়েই চলে আউয়ালের সংসার। আউয়াল জানালেন, এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে সামান্য আয় দিয়ে ৮ জনের সংসার চালানো বড়ই কষ্টকর। ফলে আধপেটা খেয়ে বা না খেয়েই কাটাতে হয় তাদের জীবন।
এভাবেই কাটছে তালা, সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া, আশাশুনি, দেবহাটা, কালীগঞ্জ, সাতক্ষীরা পৌরসভা, খুলনার পাইকগাছা, যশোরের কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলার প্রায় ১০ লাখ মানুষের জীবন। গেরস্ত পরিবার এখন হয়ে গেছে মিসকিন কিংবা ফকির। কৃষক হয়েছে ভ্যানচালক বা দিনমজুর। ব্যবসায়ী হয়ে পড়েছে নিঃস্ব। দু’মাস ধরে পানিবন্দি সাতক্ষীরা জেলার ৭৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬৬টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার মানুষের বসতঘরে পানি, রান্নাঘরে পানি, উঠানে পানি, চাষের জমিতে পানি, রাস্তাঘাটে পানি, হাটবাজারে পানি—চারদিকে শুধু পানি আর পানি। খাদ্য, পানীয় ও আশ্রয়ের অভাবে জলাবদ্ধ এলাকায় তৈরি হয়েছে এক মানবিক বিপর্যয়। গরু, ছাগল, হাঁসমুরগি, সাপ-ব্যাঙ প্রভৃতি প্রাণীর সঙ্গে মানুষ এক জায়গায় বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। মানুষের মলমূত্র, মরা জীবজন্তুর দেহাবশেষ, বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ, ঘাস-কুটো পচে একাকার হয়ে বিষিয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। দীর্ঘদিন পানিতে ডুবে থাকায় মরে যাচ্ছে গাছ ও ফলের বাগান।
জলাবদ্ধতার শিকার ৯ উপজেলায় ফসলের ক্ষেত, সবজির বাগান, চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘের—সবকিছু গ্রাস করেছে পানি। মানুষের বসবাস, যাতায়াত, প্রস্রাব-পায়খানা, গোছলসহ দৈনন্দিন কাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। নিঃস্ব ও আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে কৃষক পরিবারগুলো। ভেঙে পড়েছে খাদ্য উত্পাদন ব্যবস্থা। বেঁচে থাকার জন্য চাল-ডাল, শাকসবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সংগ্রহ করা প্রত্যেক মানুষের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলাকায় চাষাবাদ ও ব্যবসার সুযোগ না থাকায় পানিবন্দি এলাকার প্রায় সব মানুষ কর্মহীন বেকার। কাজ না থাকায় দিন মজুরের চাহিদা ও মজুরিও কমে গেছে। বেঁচে থাকার জন্য কাজের আশায় মানুষ ধাবিত হচ্ছে শহরের দিকে।
বন্যাকবলিত তালা উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, ইউনিয়নের ১৭টি গ্রামের ১৫টি গ্রাম সম্পূর্ণ ও ২টি গ্রাম আংশিক প্লাবিত। ইউনিয়নে ৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে ২৭শ’ পরিবার। এদের মধ্যে প্রায় ৯শ’ পরিবারের বাড়িঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। ফলে ইউনিয়নজুড়ে খাদ্য ও আশ্রয়ের সঙ্কটে তৈরি হয়েছে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। তিনি আরও জানান, তার ইউনিয়নে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলো হচ্ছে মাহমুদপুর, গৌরিপুর, মির্জাপুর, মনোহরপুর, আছিমতলা, কুমিরা, রাড়ীপাড়া, নোয়াপাড়া ও দাতপুর। পুরো ইউনিয়নে এখন একটিও কাঁচা ঘরবাড়ি অবশিষ্ট নেই। সবগুলো ধসে পড়েছে। আধাপাকা বাড়িগুলোও পড়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো জায়গায় পানি নামতে শুরু করলেও ঘরদুয়ার না থাকায় মানুষ বাড়িতে ফিরতে পারছে না। এলাকায় সরকারি-বেসরকারিভাবে যে ত্রাণ পাওয়া যাচ্ছে, তা খুবই অপ্রতুল। এ দিয়ে মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। পানি নামার পর মানুষ বাড়িঘরে ফিরবে, কিন্তু ঘর তো এরই মধ্যে ধসে গেছে। গৃহনির্মাণের জন্য তারা তাই সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। চেয়ারম্যান বলেন, তার নিজের বাড়িতে শোয়ার কক্ষটি পর্যন্ত দুই থেকে আড়াই ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। তিনিও এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। সেখানেই আছেন দেড় মাস ধরে।
তালা, সদর ও কলারোয়ার আশ্রয়কেন্দ্র ও সড়কের ওপর আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে, শুধু লবণ দিয়ে ভাত মাখিয়ে খাচ্ছে মানুষ। কারও কারও ঘরে সবজি বা তরকারি বলতে কিছু নেই। সাতক্ষীরা সদরের বাসিন্দা আলতাফ হোসেন ও জিল্লুর রহমান জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা হলে মানুষ কচুঘেচু খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু সাতক্ষীরার পানিবন্দি এলাকাগুলোর অবস্থা এতই করুণ যে, সেখানে শাকসবজি তরিতরকারি দূরে থাক, কেচুঘেচু পর্যন্ত নেই। তাদের কথার সত্যতা পাওয়া গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সাতক্ষীরা-খুলনা সড়কের পাশে ভাত খাচ্ছিলেন প্রৌঢ় এক ব্যক্তি। তিনি জানান, ঘরে কোনো তরকারি নেই। তাই লবণ মেখে ভাত খাচ্ছেন। লাবসা ইউনিয়ন পরিষদের আশ্রয়কেন্দ্রের মহিলারা জানান, তরকারিবিহীন শুধু ভাত খেতে হয় তাদের। চালের বাড়তি দামের কারণে ভাতও পাওয়া যায় না। অনেকটা অখাদ্য-কুখাদ্য খেতে হচ্ছে নিজেদের, তা তুলে দিতে হচ্ছে শিশুদের মুখে।
সাতক্ষীরা সদরের লাবসা ইউনিয়নের রাজনগর বেড়িবাঁধে আশ্রয় নেয়া শাহানারা, শহীদা, আয়শা, সখিনা, দুলমণিসহ অনেকেই জানান, বাড়িঘর ছেড়ে এখন তারা রাস্তায়। পরিবার প্রতি সপ্তাহে ৩ কেজি করে চাল পাচ্ছে, যা দিয়ে কোনোমতে এক বা দু’দিনের রান্না চালানো সম্ভব। ফলে তাদের না খেয়েই দিন কাটাতে হয়। একই বক্তব্য জানালেন, তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামের বাসিন্দারা। বললেন, আশ্রয় ও খাদ্য সঙ্কটের কথা।
খাবারের পাশাপাশি এলাকায় বিশুদ্ধ পানির ভয়াবহ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। চাপকলগুলো ডুবে যাওয়ায় পানিবন্দি মানুষকে পান করার পানির জন্য এক থেকে দেড় কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয়। বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে এলাকায় বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। বেসরকারি সংস্থা উত্তরণের হিসাবে পানিবন্দি ৯ উপজেলায় ২ হাজার ৭৪৮টি টিউবওয়েল পানিতে ডুবে আছে, যার ফলে তৈরি হয়েছে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট। সরকারি হিসাবে শুধু সাতক্ষীরা জেলায় ৩১০টি গভীর, ৬০০টি অগভীর ও ১৭৬টি হস্তচালিত নলকূপ পানিতে ডুবে আছে। ভেসে গেছে ১২ হাজার ৩৯০টি পুকুর-জলাশয়। এতেও পান করার পানির সঙ্কট তৈরি হয়েছে। কারণ আর্সেনিকের ভয়াবহতা ও লবণাক্ততার কারণে জেলার বহু মানুষ পুকুরের পানি পান করেন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য থেকেই সাতক্ষীরা জেলার মানুষের আশ্রয়হীন হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই তথ্যমতে, জেলার ৬টি উপজেলা ও ২টি পৌরসভার ২৭ হাজার ২১৩টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে তালা উপজেলায় সর্বাধিক ১৯ হাজার ৩২৮টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৪ হাজার ১০০টি, কলারোয়ায় ২৮টি, দেবহাটায় ৫৫২টি, আশাশুনিতে ৮৫৬টি, কালীগঞ্জে ৭৮০টি, সাতক্ষীরা পৌরসভায় ১ হাজার ৫৬০টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির সংখ্যা ৪৩ হাজার ৯০টি। এর মধ্যে রয়েছে তালা উপজেলায় ১২ হাজার ৫০০, সদর উপজেলায় ১৪ হাজার ৭০০, কলারোয়ায় ১ হাজার ৫৪০, দেবহাটায় ৩ হাজার ২০০, আশাশুনিতে ২৯ হাজার ৭৫, কালীগঞ্জে ৫৭ হাজার, সাতক্ষীরা পৌরসভায় ২৪ হাজার ৭৫। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাকিউর রহমি সাহেদ বলেন, এই হিসাব ৫ সেপ্টেম্বরের আগের। এর পরও আরও বেশকিছু কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, যার হিসাব এখনও করা হয়নি। ফলে বিপুলসংখ্যক ঘরবাড়ির বাসিন্দাদের এখন আশ্রয়ের কোনো জায়গা নেই। তারা খোলা আকাশের নিচে, সড়কের পাশে, স্কুলের মাঠে একচালা খুপরি করে কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। পানি নেমে গেলেও ঘর তৈরি করতে না পারলে এসব মানুষ বাড়ি ফিরতে পারবে না।
দু’মাসের বেশি সময় ধরে সাতক্ষীরা জেলার ৯ লাখ ৩৯ হাজার ৫১৪ জন পানিবন্দি। জেলা প্রশাসনের হিসাবে সাতক্ষীরায় পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য সরকারিভাবে ত্রাণ বরাদ্দ পাওয়া গেছে জিআর চাল ১৭শ’ মেট্রিক টন। অর্থাত্ মাথাপিছু এক কেজি ৮০০ গ্রাম। জিআর ক্যাশ ১৯ লাখ টাকা, অর্থাত্ মাথাপিছু ২ টাকা দশমিক শুন্য ২২ পয়সা। গৃহনির্মাণ বাবদ বরাদ্দ পাওয়া গেছে ১ লাখ টাকা, আর জেলার সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও আংশিক বিধ্বস্ত বাড়িঘরের সংখ্যা ৭০ হাজার ৩০৩টি। অর্থাত্ বিধ্বস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িপ্রতি সরকারি বরাদ্দ পাওয়া গেছে ১ টাকা ৪২ পয়সা, যার মাথাপিছু হিসাব জনপ্রতি ১০ পয়সা করে। শাড়ি পাওয়া গেছে ৬৯৩টি, অর্থাত্ প্রতি ১ হাজার ৩৫৫ জনের জন্য একটি করে। লুঙ্গি পাওয়া গেছে ৫৫০টি, অর্থাত্ প্রতি ১ হাজার ৭০৮ জনের জন্য একটি করে। তাঁবু পাওয়া গেছে ১৫টি, ত্রিপল ৭৮টি ও প্লাস্টিক শিট ২৫০টি। ভিজিএফ কার্ড দেয়া হয়েছে ৪১ হাজার। রমজানে ভিজিএফ কার্ড দেয়া হয়েছে ৯২ হাজার ২০০টি।
বেসরকারিভাবে প্রায় অর্ধশত এনজিও এলাকায় নামেমাত্র ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এনজিওর ত্রাণ বিতরণের যে ফিরিস্তি পাওয়া গেছে, তা খুবই হতাশাজনক। জেলার বন্যাকবলিত ৫টি উপজেলায় ৬৪ হাজার ৬৪৫টি পরিবারকে নামমাত্র ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। দাতা সংস্থাদের সহায়তায় যেসব এনজিও কাজ করছে তার মধ্যে রয়েছে বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি, অক্সফাম, খ্রিস্টিয়ান এইডের স্থানীয় সংস্থা শুশীলন, ইসলামী রিলিফের স্থানীয় মুক্তি ফাউন্ডেশন ও পল্লী চেতনা, উত্তরণ, সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা সাস, নবজীবন পলাশপোল, অগ্রগতি সংস্থা কাটিয়া সাতক্ষীরা, আহসানিয়া মিশন, নিজেরা শিখি, ওয়ার্ল্ড ভিশন সাতক্ষীরা, পরিত্রাণ তালা, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন, ব্র্যাক ও ব্র্যাক ইন্টারশ্যানাল, ভূমিজ ফাউন্ডেশন, অ্যাকশন এইড, দাতা সংস্থা ইউনিসেফের স্থানীয় সংস্থা অগ্রগতি সাতক্ষীরা, বরসা পলাশপোল সাতক্ষীরা, উত্তরণ, পরিত্রাণ, প্রতীক ট্রাস্ট, আইডিয়াল, বাংলাদেশ ভিশন ও স্বজন নামের ৮টি এনজিও। এসব এনজিওর ত্রাণ বিতরণের তালিকায় একটি প্লাস্টিক বালতি, ২টি প্লেট, ২টি মগ, একটি লুঙ্গি, ২টি কাপড়, একটি গামছা, একটি বিছানার চাদর, একটি কাপড় টাঙানোর দড়ি, ৪টি সাবান ও একটি প্লাস্টিক শিট রয়েছে।
পানিবন্দি মানুষগুলোর খাদ্য ও আশ্রয়ের অভাবে মানবিক বিপর্যয় প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মো. আবদুস সামাদ বলেন, সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া ১৭শ’ মেট্রিক টন চাল ও প্রায় ১৯ লাখ টাকা অর্থসহায়তা দেয়া হয়েছে। বিধ্বস্ত বাড়িঘরগুলো মেরামত, মানুষের পুনর্বাসন ও ঘর নির্মাণের জন্য নগদ সহায়তা চেয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অর্থ পাওয়া গেলেও গৃহনির্মাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে।
No comments