কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি বামফ্রন্ট by অমর সাহা
এমনটা বোধ হয় ভাবেনি পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন বামফ্রন্ট। বামফ্রন্টের একাংশ নেতার ধারণা ছিল, শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের সঙ্গে মমতার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী জোট না-ও হতে পারে। কিন্তু হয়েই গেল সোমবার। কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর হস্তক্ষেপে অবশেষে কংগ্রেস তৃণমূলের সঙ্গে জোট গড়তে বাধ্য হয়েছে। এক কথায় বলা চলে, অনড় মমতা যেভাবে আসন ছেড়েছেন, তাই-ই মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের কোনো দাবি কার্যত মেনে নেননি মমতা।
গত শুক্রবার মমতার ২২৮টি আসনে তাঁর দলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর কংগ্রেস-তৃণমূল জোটে আসন সমঝোতা নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। তখন সোনিয়া বিদেশে। রোববার দিল্লিতে ফিরে তিনি সোমবারই নিরসন করেন এ জটিলতার। ঘোষণা করেন একসঙ্গে লড়ার।
কংগ্রেস মনে করেছে, যেভাবে পশ্চিমবঙ্গজুড়ে মমতা-হাওয়া শুরু হয়েছে, সেখানে তাঁরা আলাদাভাবে লড়লেও কেবল মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও উত্তর দিনাজপুর জেলায় কিছুটা ফল ভালো করতে পারলেও গোটা রাজ্যে কংগ্রেস বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। ভুল বার্তা পৌঁছে যাবে কংগ্রেসের কাছে। এসব ভেবেই কংগ্রেসের কিছু আসন নিশ্চিত করা এবং কংগ্রেসের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখার জন্যই কলকাতা পৌর করপোরেশনসহ বিভিন্ন পৌরসভার নির্বাচনের ফলাফল দেখে সোনিয়া শেষ পর্যন্ত মেনে নেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রস্তাব।
পাশাপাশি মমতাও এটা বুঝেছেন, রাজ্যব্যাপী তাঁর দলের অবস্থান শক্তিশালী থাকলেও মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও উত্তর দিনাজপুরে তাঁরা দুর্বল। সেখানে তাঁদের কয়েকটি আসনের জয় নিশ্চিত করতেই মেনে নিয়েছেন কংগ্রেসের সঙ্গে জোট। মমতার আরও উপলব্ধি ছিল, কংগ্রেস আলাদাভাবে সব আসনে লড়লেও প্রতিটি আসনেই কিছু না কিছু ভোট কংগ্রেস পাবেই। এই ভোট কাটাকাটিতে আখেরে বামফ্রন্টই লাভবান হবে। এসব চিন্তা করেই মমতাও হাত বাড়িয়ে দেন কংগ্রেসের দিকে। ফলে জোট হয় এ দুই দলের।
এদিকে এই জোট হওয়ার পর বাম শিবিরে কিছুটা হলেও হতাশা নেমে এসেছে। বামফ্রন্ট কংগ্রেস-তৃণমূল জোট না হলে যে সুবিধা পেত, সেই সুবিধা থেকে এবার যে বঞ্চিত হতে চলেছে—সেটা শীর্ষ নেতারা এখন উপলব্ধি করতে পেরেছেন। সত্যিই এবার বামফ্রন্ট এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে পড়েছে। জয়ের ব্যাপারেও তাঁরা এখন আর নিশ্চিত হতে পারছেন না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। যদিও বামফ্রন্ট এখনো সদর্পে বলে বেড়াচ্ছে, পরবর্তী সরকার তারাই গড়ছে।
কিন্তু কী হবে এবারের নির্বাচনী ফলাফল, তা নিয়ে এখনো জল্পনা-কল্পনা চলছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে বামফ্রন্ট। বামফ্রন্ট যেমন এখনো নিশ্চিত নয় ক্ষমতায় ফিরে আসার ব্যাপারে, ঠিক তেমনি তৃণমূলও যে একতরফা ১৪৮টি আসন পেয়ে যাবে, এমনটাও নিশ্চিত করতে পারছেন না রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা মনে করছেন, তৃণমূল একা সরকার গড়তে না পারলেও কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের সরকার গড়ার সম্ভাবনা রয়েছে প্রবল।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তৃণমূল যতটা মনে করছে, ততটা আসন না-ও পেতে পারে। তৃণমূল নেত্রী মমতা ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁরা দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হবে। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের নিজস্ব সমীক্ষায় বলা হয়েছে, তাদের জোট ২৫০ আসনে জিততে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় রয়েছে ২৯৪টি আসন।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সিঙ্গুরে টাটাকে ন্যানো কারখানা গড়তে রাজ্য সরকারের দেওয়া ৯৯৭ একর জমির বিরুদ্ধে মমতার আন্দোলন, নন্দীগ্রামে রসায়ন শিল্পাঞ্চল গড়ার বিরুদ্ধে মমতার আন্দোলন এবং সর্বোপরি তরুণ গ্রাফিক ডিজাইনার রেজওয়ানুর রহমানের রহস্যজনক মৃত্যুর প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে মমতার আন্দোলন তৈরি করে বামফ্রন্টবিরোধী একটি ইমেজ। সেই ইমেজকে সম্বল করে এখন এগিয়ে গেছে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট।
ফলে বামফ্রন্টবিরোধী মমতার এই আন্দোলনে রাজ্যজুড়ে শুরু হয় এক পরিবর্তনের হাওয়া। সেই হাওয়াকে কাজে লাগিয়ে এবার পশ্চিমবঙ্গের শাসনক্ষমতায় আসতে চাইছেন মমতা। অন্যদিকে কলকাতার একদল বুদ্ধিজীবী ‘পরিবর্তন চাই’ স্লোগান তুলে কার্যত মমতার পাশে এসে দাঁড়ান। আর এসব ঘটনার মধ্যে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চায়েত নির্বাচন, ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচন, ২০১০ সালে কলকাতা পৌর করপোরেশনসহ রাজ্যের পৌরসভা নির্বাচন। সব নির্বাচনেই মমতা বিপুল জয় পান। আর সেই জয়কে মূলধন করে এবার মমতা অবতীর্ণ হয়েছেন বিধানসভা নির্বাচনে। চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বামফ্রন্টকে।
ঘোষণা দিয়েছেন, এবার এই রাজ্যের বামদলের দুঃশাসন থেকে মুক্তি পাবে রাজ্যবাসী। ভবিষ্যতে সরকার গঠন করবে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। মুখ্যমন্ত্রী হবেন মমতা। আর এসব ঘোষণার মধ্য দিয়ে মমতা বামফ্রন্টের দিকে ছুড়ে দিয়েছেন এক চ্যালেঞ্জ।
সেই চ্যালেঞ্জ কি মোকাবিলা করতে পারবে বামফ্রন্ট? তা নিয়েই এখন রাজনৈতিক মহলে চলছে রাজনৈতিক যোগ-বিয়োগ ও বিশ্লেষণ।
অমর সাহা: প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি।
গত শুক্রবার মমতার ২২৮টি আসনে তাঁর দলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর কংগ্রেস-তৃণমূল জোটে আসন সমঝোতা নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। তখন সোনিয়া বিদেশে। রোববার দিল্লিতে ফিরে তিনি সোমবারই নিরসন করেন এ জটিলতার। ঘোষণা করেন একসঙ্গে লড়ার।
কংগ্রেস মনে করেছে, যেভাবে পশ্চিমবঙ্গজুড়ে মমতা-হাওয়া শুরু হয়েছে, সেখানে তাঁরা আলাদাভাবে লড়লেও কেবল মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও উত্তর দিনাজপুর জেলায় কিছুটা ফল ভালো করতে পারলেও গোটা রাজ্যে কংগ্রেস বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। ভুল বার্তা পৌঁছে যাবে কংগ্রেসের কাছে। এসব ভেবেই কংগ্রেসের কিছু আসন নিশ্চিত করা এবং কংগ্রেসের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখার জন্যই কলকাতা পৌর করপোরেশনসহ বিভিন্ন পৌরসভার নির্বাচনের ফলাফল দেখে সোনিয়া শেষ পর্যন্ত মেনে নেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রস্তাব।
পাশাপাশি মমতাও এটা বুঝেছেন, রাজ্যব্যাপী তাঁর দলের অবস্থান শক্তিশালী থাকলেও মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও উত্তর দিনাজপুরে তাঁরা দুর্বল। সেখানে তাঁদের কয়েকটি আসনের জয় নিশ্চিত করতেই মেনে নিয়েছেন কংগ্রেসের সঙ্গে জোট। মমতার আরও উপলব্ধি ছিল, কংগ্রেস আলাদাভাবে সব আসনে লড়লেও প্রতিটি আসনেই কিছু না কিছু ভোট কংগ্রেস পাবেই। এই ভোট কাটাকাটিতে আখেরে বামফ্রন্টই লাভবান হবে। এসব চিন্তা করেই মমতাও হাত বাড়িয়ে দেন কংগ্রেসের দিকে। ফলে জোট হয় এ দুই দলের।
এদিকে এই জোট হওয়ার পর বাম শিবিরে কিছুটা হলেও হতাশা নেমে এসেছে। বামফ্রন্ট কংগ্রেস-তৃণমূল জোট না হলে যে সুবিধা পেত, সেই সুবিধা থেকে এবার যে বঞ্চিত হতে চলেছে—সেটা শীর্ষ নেতারা এখন উপলব্ধি করতে পেরেছেন। সত্যিই এবার বামফ্রন্ট এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে পড়েছে। জয়ের ব্যাপারেও তাঁরা এখন আর নিশ্চিত হতে পারছেন না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। যদিও বামফ্রন্ট এখনো সদর্পে বলে বেড়াচ্ছে, পরবর্তী সরকার তারাই গড়ছে।
কিন্তু কী হবে এবারের নির্বাচনী ফলাফল, তা নিয়ে এখনো জল্পনা-কল্পনা চলছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে বামফ্রন্ট। বামফ্রন্ট যেমন এখনো নিশ্চিত নয় ক্ষমতায় ফিরে আসার ব্যাপারে, ঠিক তেমনি তৃণমূলও যে একতরফা ১৪৮টি আসন পেয়ে যাবে, এমনটাও নিশ্চিত করতে পারছেন না রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা মনে করছেন, তৃণমূল একা সরকার গড়তে না পারলেও কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের সরকার গড়ার সম্ভাবনা রয়েছে প্রবল।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তৃণমূল যতটা মনে করছে, ততটা আসন না-ও পেতে পারে। তৃণমূল নেত্রী মমতা ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁরা দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হবে। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের নিজস্ব সমীক্ষায় বলা হয়েছে, তাদের জোট ২৫০ আসনে জিততে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় রয়েছে ২৯৪টি আসন।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সিঙ্গুরে টাটাকে ন্যানো কারখানা গড়তে রাজ্য সরকারের দেওয়া ৯৯৭ একর জমির বিরুদ্ধে মমতার আন্দোলন, নন্দীগ্রামে রসায়ন শিল্পাঞ্চল গড়ার বিরুদ্ধে মমতার আন্দোলন এবং সর্বোপরি তরুণ গ্রাফিক ডিজাইনার রেজওয়ানুর রহমানের রহস্যজনক মৃত্যুর প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে মমতার আন্দোলন তৈরি করে বামফ্রন্টবিরোধী একটি ইমেজ। সেই ইমেজকে সম্বল করে এখন এগিয়ে গেছে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট।
ফলে বামফ্রন্টবিরোধী মমতার এই আন্দোলনে রাজ্যজুড়ে শুরু হয় এক পরিবর্তনের হাওয়া। সেই হাওয়াকে কাজে লাগিয়ে এবার পশ্চিমবঙ্গের শাসনক্ষমতায় আসতে চাইছেন মমতা। অন্যদিকে কলকাতার একদল বুদ্ধিজীবী ‘পরিবর্তন চাই’ স্লোগান তুলে কার্যত মমতার পাশে এসে দাঁড়ান। আর এসব ঘটনার মধ্যে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চায়েত নির্বাচন, ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচন, ২০১০ সালে কলকাতা পৌর করপোরেশনসহ রাজ্যের পৌরসভা নির্বাচন। সব নির্বাচনেই মমতা বিপুল জয় পান। আর সেই জয়কে মূলধন করে এবার মমতা অবতীর্ণ হয়েছেন বিধানসভা নির্বাচনে। চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বামফ্রন্টকে।
ঘোষণা দিয়েছেন, এবার এই রাজ্যের বামদলের দুঃশাসন থেকে মুক্তি পাবে রাজ্যবাসী। ভবিষ্যতে সরকার গঠন করবে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। মুখ্যমন্ত্রী হবেন মমতা। আর এসব ঘোষণার মধ্য দিয়ে মমতা বামফ্রন্টের দিকে ছুড়ে দিয়েছেন এক চ্যালেঞ্জ।
সেই চ্যালেঞ্জ কি মোকাবিলা করতে পারবে বামফ্রন্ট? তা নিয়েই এখন রাজনৈতিক মহলে চলছে রাজনৈতিক যোগ-বিয়োগ ও বিশ্লেষণ।
অমর সাহা: প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি।
No comments