ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে সেমিতে শ্রীলঙ্কা
তিলকরত্নে দিলশান একেকটা ডিফেন্স করছেন, আর উল্লাসে ফেটে পড়ছে প্রেমাদাসার গ্যালারি। ইংল্যান্ডকে নিয়ে শ্রীলঙ্কা কীভাবে ছেলেখেলা করল, তার একটা প্রতীকী দৃশ্য হয়ে থাকল ওই কয়েকটা বল। নিয়মমতো ২২৯ টপকানোর পরই জিতেছে শ্রীলঙ্কা, কিন্তু ইংল্যান্ড তো আসলে হেরে গেছে অনেক আগেই!
শ্রীলঙ্কার উদ্বোধনী জুটিতে শতরান হওয়ার পর থেকে ইংলিশদের শরীরী ভাষাই বলছিল, একদম না পারতেই মাঠে আছে তারা; খেলার মাঝে রণে ভঙ্গ দেওয়ার নিয়ম থাকলে অনেক আগেই মাঠ ছেড়ে যেত! সেই অক্টোবরের শেষ দিকে বাড়ি ছেড়েছিল অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে, চার মাসের অ্যাশেজ শেষে মাঝে দুটো দিন দেশে থেকেই আবার ছুটে আসতে হয়েছে বিশ্বকাপে। এবার দেশে ফিরলেই যেন বাঁচা যায়! শেষ দিকে লড়াইটা হলো শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনারের, কে আগে তিন অঙ্ক ছোঁবে! আপাত ঠান্ডামাথার উপুল থারাঙ্গা পাল্লা দিয়ে রান করেছেন তিলকরত্নে দিলশানের সঙ্গে। তবে সেঞ্চুরিটা আগে হয়েছে দিলশানেরই। এরপর আরেক লড়াই। জয়ের জন্য ৩ রান, থারাঙ্গার সেঞ্চুরির জন্য ২। সতীর্থকে আনন্দে ভাসাতেই দিলশানের অমন ডিফেন্স, যাতে আনন্দে ভাসল পুরো প্রেমাদাসা। পুরো শ্রীলঙ্কাও কি নয়?
বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে এমন ইনিংস, দিলশানের উদ্যাপনটা হলো দেখার মতো। থারাঙ্গার উদ্যাপন তাঁর চরিত্রের মতোই স্থিতধী। দুজনে মিলে গড়েছেন এই বিশ্বকাপে দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি জুটি। জয়ের পর উইকেটে শুয়ে পড়লেন দিলশান। হয়তো পাহাড়সমান চাপটাকে এত সহজে জয় করতে পারার স্বস্তিতে। হয়তো দেশের মাটিতে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলতে পারার আনন্দে, স্বপ্নপূরণের আরও এক ধাপ কাছে যাওয়ার রোমাঞ্চে!
ইংলিশদের সুযোগ ছিল প্রতিশোধ নেওয়ার। কিংবা তার চেয়েও বেশি কিছু। ‘বিশ্বকাপ’ শব্দটা ওয়ানডের জনকদের জন্য দুঃস্বপ্ন হতে শুরু করেছিল তো এই শ্রীলঙ্কার কাছেই। প্রথম ৫ বিশ্বকাপের প্রতিটিতেই সেমিফাইনাল খেলা ইংল্যান্ড ১৯৯৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে বসে শ্রীলঙ্কার কাছে। এরপর সেমিফাইনালের মুখ দেখা হয়নি আর কখনো। এবার আবারও কোয়ার্টার ফাইনাল, আবার প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা, সেটাও শ্রীলঙ্কার মাটিতে। প্রেমাদাসার ৩৫ হাজার দর্শক আর টিভি পর্দার সামনে গোটা জাতিকে স্তব্ধ করে দিতে পারলে সে তো প্রতিশোধের চেয়ে বেশি কিছুই হতো!
প্রতিশোধ তো বহুদূর, বরং উল্টো তারাই উড়ে গেছে। প্রেমাদাসার শততম ম্যাচে ফিরে এসেছে ১৯৯৬-এর ইকবাল স্টেডিয়াম। সেবার ইংলিশদের দুমড়েমুচড়ে দিয়েছিলেন সনাৎ জয়াসুরিয়া, এবার তিলকরত্নে দিলশান ও উপুল থারাঙ্গা। জয়াসুরিয়াকে একটা সময় থামানো গিয়েছিল, দিলশান-থারাঙ্গাকে যায়নি। ১৫ বছর আগের চেয়েও বরং লজ্জাজনকভাবে হেরেছে ইংল্যান্ড। জয়াসুরিয়ার টর্নেডোর পরও (৪৪ বলে ৮২) ২৩৫ টপকাতে সেবার ৫ উইকেট পড়েছিল শ্রীলঙ্কার। এবার তার চেয়ে ৬ রান কম করে (২২৯) হারল ১০ উইকেটে! গ্রুপ পর্বে একের পর এক রোমাঞ্চকর ম্যাচের পর অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস বলেছিলেন, আর রোমাঞ্চ চান না তাঁরা। পূরণ হয়েছে তাঁর চাওয়া, তবে যেভাবে হলো এমনটা নিশ্চয়ই চাননি ইংল্যান্ড অধিনায়ক!
ইংল্যান্ড ইনিংসের পর কিন্তু মনে হয়েছিল জয়টা সহজ হবে না শ্রীলঙ্কার। ২৩০ ওয়ানডেতে নস্যি অনেক দিনই, কিন্তু শ্রীলঙ্কার ওপর গোটা জাতির প্রত্যাশার ভার আর প্রেমাদাসার ইতিহাসও যে ছিল! পরিসংখ্যান বলছে, প্রেমাদাসায় রান তাড়া করে জয়ের মতো কঠিন কাজ ক্রিকেটে খুব কমই আছে। এর আগে এই মাঠে ৭৭টি দিবারাত্রির ম্যাচের ৪৬টিতে জিতেছে প্রথমে ব্যাটিং করা দল, সর্বশেষ ১৭ ম্যাচের ১৫টি। কিন্তু সত্যি হলো মাহেলা জয়াবর্ধনের কথাই। বিশ্বকাপ উপলক্ষে নতুন ফ্লাডলাইট আর উইকেট নতুন করে বসানোর পর প্রেমাদাসায় রাতে রান করায় কোনো সমস্যা নেই, ম্যাচের দুই দিন আগে বলেছিলেন সাবেক অধিনায়ক।
তবে ইংল্যান্ডের রান আরেকটু বেশি হলে জয়াবর্ধনের কথা ফলত কি না, কে জানে। বিশেষ করে, কাল শ্রীলঙ্কা যেভাবে নিজেদের স্বভাববিরুদ্ধ বাজে ফিল্ডিং করেছে। এক এউইন মরগানেরই তিন-তিনটি সহজ ক্যাচ পড়েছে, একবার বল তাঁর পায়ে লাগার পর বোলার মালিঙ্গা ছাড়া কেউই আবেদন করেননি। অথচ টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে, রিভিউ নিলেই নিশ্চিত এলবিডব্লু হতেন মরগান। টপ-অর্ডারের শম্বুক-সূচনার পর ইংল্যান্ডের ইনিংসটা গতি পেয়েছিল এই মরগানের সঙ্গে ট্রটের জুটিটার সময়ই। দুজনের ৯১ রানের জুটির সময় মনে হচ্ছিল, আড়াই শও হয়ে যেতে পারে ইংল্যান্ডের। কিন্তু ব্যাটিং পাওয়ার প্লের প্রথম ওভারে মরগান আউট হওয়ার পর আবারও বেরিয়ে পড়ে ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ের অস্থিমজ্জা। ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে তাই রান মাত্র ২৩, শেষ ১০ ওভারে ৫৬! ফিফটি নিয়ে খেলতে থাকা ট্রট পর্যন্ত একটা চার মারতে পারেননি ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে। এই বিশ্বকাপে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে কাল ৪০০ পেরিয়েছেন ট্রট, কিন্তু ২ বাউন্ডারিতে ৮৬ রান তাঁর ব্যাটিং নিয়ে ওঠা প্রশ্নগুলোকে আরেকবার জাগিয়ে তুলবে নিশ্চিতভাবেই।
টিভি-রেডিওর কমেন্ট্রি দিতে আসা সাবেক পাঁচ ইংল্যান্ড অধিনায়ক—টনি গ্রেগ, ইয়ান বোথাম, মাইক আথারটন, নাসের হুসেইন, মাইকেল ভন দেখলেন তাঁদের উত্তরসূরিদের জন্যও ব্যর্থতার আরেক নাম হয়ে থাকল ‘বিশ্বকাপ’। আর শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক ও প্রধান নির্বাচক অরবিন্দ ডি সিলভা ভিআইপি বক্সে বসে দেখলেন টানা তৃতীয় সেমিফাইনালে উঠে গেল তাঁর উত্তরসূরিরা। আরেক ধাপ এগিয়ে গেল স্বপ্নপূরণের দিকেও!
শ্রীলঙ্কার উদ্বোধনী জুটিতে শতরান হওয়ার পর থেকে ইংলিশদের শরীরী ভাষাই বলছিল, একদম না পারতেই মাঠে আছে তারা; খেলার মাঝে রণে ভঙ্গ দেওয়ার নিয়ম থাকলে অনেক আগেই মাঠ ছেড়ে যেত! সেই অক্টোবরের শেষ দিকে বাড়ি ছেড়েছিল অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে, চার মাসের অ্যাশেজ শেষে মাঝে দুটো দিন দেশে থেকেই আবার ছুটে আসতে হয়েছে বিশ্বকাপে। এবার দেশে ফিরলেই যেন বাঁচা যায়! শেষ দিকে লড়াইটা হলো শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনারের, কে আগে তিন অঙ্ক ছোঁবে! আপাত ঠান্ডামাথার উপুল থারাঙ্গা পাল্লা দিয়ে রান করেছেন তিলকরত্নে দিলশানের সঙ্গে। তবে সেঞ্চুরিটা আগে হয়েছে দিলশানেরই। এরপর আরেক লড়াই। জয়ের জন্য ৩ রান, থারাঙ্গার সেঞ্চুরির জন্য ২। সতীর্থকে আনন্দে ভাসাতেই দিলশানের অমন ডিফেন্স, যাতে আনন্দে ভাসল পুরো প্রেমাদাসা। পুরো শ্রীলঙ্কাও কি নয়?
বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে এমন ইনিংস, দিলশানের উদ্যাপনটা হলো দেখার মতো। থারাঙ্গার উদ্যাপন তাঁর চরিত্রের মতোই স্থিতধী। দুজনে মিলে গড়েছেন এই বিশ্বকাপে দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি জুটি। জয়ের পর উইকেটে শুয়ে পড়লেন দিলশান। হয়তো পাহাড়সমান চাপটাকে এত সহজে জয় করতে পারার স্বস্তিতে। হয়তো দেশের মাটিতে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলতে পারার আনন্দে, স্বপ্নপূরণের আরও এক ধাপ কাছে যাওয়ার রোমাঞ্চে!
ইংলিশদের সুযোগ ছিল প্রতিশোধ নেওয়ার। কিংবা তার চেয়েও বেশি কিছু। ‘বিশ্বকাপ’ শব্দটা ওয়ানডের জনকদের জন্য দুঃস্বপ্ন হতে শুরু করেছিল তো এই শ্রীলঙ্কার কাছেই। প্রথম ৫ বিশ্বকাপের প্রতিটিতেই সেমিফাইনাল খেলা ইংল্যান্ড ১৯৯৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে বসে শ্রীলঙ্কার কাছে। এরপর সেমিফাইনালের মুখ দেখা হয়নি আর কখনো। এবার আবারও কোয়ার্টার ফাইনাল, আবার প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা, সেটাও শ্রীলঙ্কার মাটিতে। প্রেমাদাসার ৩৫ হাজার দর্শক আর টিভি পর্দার সামনে গোটা জাতিকে স্তব্ধ করে দিতে পারলে সে তো প্রতিশোধের চেয়ে বেশি কিছুই হতো!
প্রতিশোধ তো বহুদূর, বরং উল্টো তারাই উড়ে গেছে। প্রেমাদাসার শততম ম্যাচে ফিরে এসেছে ১৯৯৬-এর ইকবাল স্টেডিয়াম। সেবার ইংলিশদের দুমড়েমুচড়ে দিয়েছিলেন সনাৎ জয়াসুরিয়া, এবার তিলকরত্নে দিলশান ও উপুল থারাঙ্গা। জয়াসুরিয়াকে একটা সময় থামানো গিয়েছিল, দিলশান-থারাঙ্গাকে যায়নি। ১৫ বছর আগের চেয়েও বরং লজ্জাজনকভাবে হেরেছে ইংল্যান্ড। জয়াসুরিয়ার টর্নেডোর পরও (৪৪ বলে ৮২) ২৩৫ টপকাতে সেবার ৫ উইকেট পড়েছিল শ্রীলঙ্কার। এবার তার চেয়ে ৬ রান কম করে (২২৯) হারল ১০ উইকেটে! গ্রুপ পর্বে একের পর এক রোমাঞ্চকর ম্যাচের পর অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস বলেছিলেন, আর রোমাঞ্চ চান না তাঁরা। পূরণ হয়েছে তাঁর চাওয়া, তবে যেভাবে হলো এমনটা নিশ্চয়ই চাননি ইংল্যান্ড অধিনায়ক!
ইংল্যান্ড ইনিংসের পর কিন্তু মনে হয়েছিল জয়টা সহজ হবে না শ্রীলঙ্কার। ২৩০ ওয়ানডেতে নস্যি অনেক দিনই, কিন্তু শ্রীলঙ্কার ওপর গোটা জাতির প্রত্যাশার ভার আর প্রেমাদাসার ইতিহাসও যে ছিল! পরিসংখ্যান বলছে, প্রেমাদাসায় রান তাড়া করে জয়ের মতো কঠিন কাজ ক্রিকেটে খুব কমই আছে। এর আগে এই মাঠে ৭৭টি দিবারাত্রির ম্যাচের ৪৬টিতে জিতেছে প্রথমে ব্যাটিং করা দল, সর্বশেষ ১৭ ম্যাচের ১৫টি। কিন্তু সত্যি হলো মাহেলা জয়াবর্ধনের কথাই। বিশ্বকাপ উপলক্ষে নতুন ফ্লাডলাইট আর উইকেট নতুন করে বসানোর পর প্রেমাদাসায় রাতে রান করায় কোনো সমস্যা নেই, ম্যাচের দুই দিন আগে বলেছিলেন সাবেক অধিনায়ক।
তবে ইংল্যান্ডের রান আরেকটু বেশি হলে জয়াবর্ধনের কথা ফলত কি না, কে জানে। বিশেষ করে, কাল শ্রীলঙ্কা যেভাবে নিজেদের স্বভাববিরুদ্ধ বাজে ফিল্ডিং করেছে। এক এউইন মরগানেরই তিন-তিনটি সহজ ক্যাচ পড়েছে, একবার বল তাঁর পায়ে লাগার পর বোলার মালিঙ্গা ছাড়া কেউই আবেদন করেননি। অথচ টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে, রিভিউ নিলেই নিশ্চিত এলবিডব্লু হতেন মরগান। টপ-অর্ডারের শম্বুক-সূচনার পর ইংল্যান্ডের ইনিংসটা গতি পেয়েছিল এই মরগানের সঙ্গে ট্রটের জুটিটার সময়ই। দুজনের ৯১ রানের জুটির সময় মনে হচ্ছিল, আড়াই শও হয়ে যেতে পারে ইংল্যান্ডের। কিন্তু ব্যাটিং পাওয়ার প্লের প্রথম ওভারে মরগান আউট হওয়ার পর আবারও বেরিয়ে পড়ে ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ের অস্থিমজ্জা। ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে তাই রান মাত্র ২৩, শেষ ১০ ওভারে ৫৬! ফিফটি নিয়ে খেলতে থাকা ট্রট পর্যন্ত একটা চার মারতে পারেননি ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে। এই বিশ্বকাপে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে কাল ৪০০ পেরিয়েছেন ট্রট, কিন্তু ২ বাউন্ডারিতে ৮৬ রান তাঁর ব্যাটিং নিয়ে ওঠা প্রশ্নগুলোকে আরেকবার জাগিয়ে তুলবে নিশ্চিতভাবেই।
টিভি-রেডিওর কমেন্ট্রি দিতে আসা সাবেক পাঁচ ইংল্যান্ড অধিনায়ক—টনি গ্রেগ, ইয়ান বোথাম, মাইক আথারটন, নাসের হুসেইন, মাইকেল ভন দেখলেন তাঁদের উত্তরসূরিদের জন্যও ব্যর্থতার আরেক নাম হয়ে থাকল ‘বিশ্বকাপ’। আর শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক ও প্রধান নির্বাচক অরবিন্দ ডি সিলভা ভিআইপি বক্সে বসে দেখলেন টানা তৃতীয় সেমিফাইনালে উঠে গেল তাঁর উত্তরসূরিরা। আরেক ধাপ এগিয়ে গেল স্বপ্নপূরণের দিকেও!
No comments