অতিচাহিদার কারণে মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে
দেশের শেয়ারবাজারের সার্বিক অবস্থা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন আহমেদ খান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাসান ইমাম
প্রথম আলো: সদ্য সমাপ্ত বছরে পুঁজিবাজার সম্পর্কে আপনার সামগ্রিক মূল্যায়ন কী?
সালাহউদ্দিন: ২০১০ সালে আমাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ও লেনদেনের পরিমাণে নতুন মাইলফলক অর্জন হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা সামগ্রিকভাবে অনেক মুনাফা করেছেন। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের ব্যাপকহারে বাজারে আগমন খুব বেশি ইতিবাচকভাবে নেওয়া যাবে না। কারণ, এই নতুন বিনিয়োগকারীদের একটা বড় অংশ বিকল্প বিনিয়োগ-সম্ভাবনার সংকোচনের ফলে পুঁজিবাজারমুখী হয়েছেন। সামগ্রিক বিনিয়োগ-পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা মূল বিনিয়োগ ক্ষেত্রে আবার ফেরত যাবেন। তাই নতুন বিনিয়োগকারীর ব্যাপক আগমনের কারণে সৃষ্ট অতিরিক্ত চাহিদার বিপরীতে কিছু কিছু ভুল নীতি, সামগ্রিক বিনিয়োগে স্থবিরতা ইত্যাদি কারণে প্রাথমিক বাজারে নতুন শেয়ারের সরবরাহ ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ফলে অতিচাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতি বা মূল্যবৃদ্ধি ঘটে দেশের পুঁজিবাজার একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
প্রথম আলো: এ সময় বাজারের ইতিবাচক দিকগুলো কী ছিল?
সালাহউদ্দিন: আমাদের পুঁজিবাজারের সার্বিকভাবে বিস্তৃতি ঘটেছে। প্রচলিত বিনিয়োগ (ব্যাংকে আমানত ও সঞ্চয়পত্র) ছেড়ে এই প্রকার বিনিয়োগে অংশ নেওয়া আমাদের দেশের জনগণের চিন্তা-চেতনার মৌলিক পরিবর্তনের ইঙ্গিতবাহী। এ ছাড়া মিউচুয়াল ফান্ডের প্রবাহ এবং কনভার্টেবল বন্ড ইস্যু বাজারের বিনিয়োগ-বৈচিত্র্য বাড়িয়েছে।
প্রথম আলো: বাজারের কোনো অস্বাভাবিকতা আপনার চোখে পড়েছে কি?
সালাহউদ্দিন: পুঁজিবাজারে ব্যাপক ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে চাহিদার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির সুযোগে অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন প্রকার গুজব ছড়িয়ে শেয়ারের মূল্য বাড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জগুলো এ ক্ষেত্রে তাদের বাজার তদারকি কার্যক্রম সঠিকভাবে চালিয়েছে কি না, সে ব্যাপারেও প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও আসার ক্ষেত্রেও শেয়ারের বেশি মূল্য নির্ধারণ বাজারকে কিছুটা হলেও অস্থির করেছে। প্লেসমেন্টের বিষয়টি বেশ কিছু বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
প্রথম আলো: অনেকে মনে করেন সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে ফাটকাবাজি ও জুয়াবাজি বেড়ে গেছে। এ ব্যাপারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী?
সালাহউদ্দিন: যেকোনো পুঁজিবাজারেই ফাটকা কারবারি বা স্পেকুলেটর থাকবে। যেহেতু আমাদের দেশে এখনো ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারী বেশি, তাই এটা স্বাভাবিক। আমাদের দেশে যেহেতু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সংখ্যা এখনো খুব বেশি নেই, তাই এখানে ফাটকা বিনিয়োগ অনেক বেশি হচ্ছে। ধীরে ধীরে মিউচুয়াল ফান্ড-জাতীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়তে থাকলে ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারীর তুলনামূলক প্রভাব কমে আসবে।
প্রথম আলো: নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসির ভূমিকা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
সালাহউদ্দিন: আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে সংস্থাটির আরও বেশি সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া বাজারসংক্রান্ত নীতিমালায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কে পর্যালোচনার অভাব প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে।
প্রথম আলো: সরকার দুই বছর পার করলেও বাজার সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা গ্রহণ করেনি। আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
সালাহউদ্দিন: বিগত দুই বছরে বাজারের যে ব্যাপক অগ্রগতি তা মূলত এসেছে জনগণের সম্পৃক্ততায়। সরকারি ভূমিকা এ ক্ষেত্রে খুব একটা লক্ষ করা যায়নি। অধিকন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে অযাচিতভাবে বাজার নীতিমালায় হস্তক্ষেপের ফলে বাজারে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে আইপিও আনার ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা বাধার সৃষ্টি করেছে। তবে বছর শেষে এই নীতি কিছুটা সংশোধন করায় ভবিষ্যতে এই সমস্যা কমবে বলে আশা করা যায়। এ ছাড়া কিছু সরকারি কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার কথা ঘোষণা করে তা বাস্তবায়ন না করায় সরকারি নীতি সম্পর্কে বাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রথম আলো: সব মিলিয়ে আগামী দিনের পুঁজিবাজার নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?
সালাহউদ্দিন: আগামী দিনে আমরা আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব বলে বিশ্বাস করি। কারণ সাম্প্রতিককালে আইপিও-সংক্রান্ত নীতির আংশিক সংশোধনী, নতুন আইপিও আনার ক্ষেত্রে সৃষ্ট অনেক বাধা দূর করতে সমর্থ হবে। ফলে বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে অতি মূল্যে কেনা শেয়ারগুলো ছেড়ে ধীরে ধীরে নতুন শেয়ারগুলোতে বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন। এতে বাজারে বিদ্যমান অতি মূল্যায়িত অবস্থা ক্রমান্বয়ে সংশোধনের পথে যেতে পারবে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ায় ব্যাংকিং খাতে মেয়াদি ঋণও কমবে এবং খেলাপি ঋণের কুপ্রভাব থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ হবে। তবে সরকারকে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী ও কার্যক্ষম করে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রথম আলো: সদ্য সমাপ্ত বছরে পুঁজিবাজার সম্পর্কে আপনার সামগ্রিক মূল্যায়ন কী?
সালাহউদ্দিন: ২০১০ সালে আমাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ও লেনদেনের পরিমাণে নতুন মাইলফলক অর্জন হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা সামগ্রিকভাবে অনেক মুনাফা করেছেন। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের ব্যাপকহারে বাজারে আগমন খুব বেশি ইতিবাচকভাবে নেওয়া যাবে না। কারণ, এই নতুন বিনিয়োগকারীদের একটা বড় অংশ বিকল্প বিনিয়োগ-সম্ভাবনার সংকোচনের ফলে পুঁজিবাজারমুখী হয়েছেন। সামগ্রিক বিনিয়োগ-পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা মূল বিনিয়োগ ক্ষেত্রে আবার ফেরত যাবেন। তাই নতুন বিনিয়োগকারীর ব্যাপক আগমনের কারণে সৃষ্ট অতিরিক্ত চাহিদার বিপরীতে কিছু কিছু ভুল নীতি, সামগ্রিক বিনিয়োগে স্থবিরতা ইত্যাদি কারণে প্রাথমিক বাজারে নতুন শেয়ারের সরবরাহ ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ফলে অতিচাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতি বা মূল্যবৃদ্ধি ঘটে দেশের পুঁজিবাজার একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
প্রথম আলো: এ সময় বাজারের ইতিবাচক দিকগুলো কী ছিল?
সালাহউদ্দিন: আমাদের পুঁজিবাজারের সার্বিকভাবে বিস্তৃতি ঘটেছে। প্রচলিত বিনিয়োগ (ব্যাংকে আমানত ও সঞ্চয়পত্র) ছেড়ে এই প্রকার বিনিয়োগে অংশ নেওয়া আমাদের দেশের জনগণের চিন্তা-চেতনার মৌলিক পরিবর্তনের ইঙ্গিতবাহী। এ ছাড়া মিউচুয়াল ফান্ডের প্রবাহ এবং কনভার্টেবল বন্ড ইস্যু বাজারের বিনিয়োগ-বৈচিত্র্য বাড়িয়েছে।
প্রথম আলো: বাজারের কোনো অস্বাভাবিকতা আপনার চোখে পড়েছে কি?
সালাহউদ্দিন: পুঁজিবাজারে ব্যাপক ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে চাহিদার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির সুযোগে অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন প্রকার গুজব ছড়িয়ে শেয়ারের মূল্য বাড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জগুলো এ ক্ষেত্রে তাদের বাজার তদারকি কার্যক্রম সঠিকভাবে চালিয়েছে কি না, সে ব্যাপারেও প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও আসার ক্ষেত্রেও শেয়ারের বেশি মূল্য নির্ধারণ বাজারকে কিছুটা হলেও অস্থির করেছে। প্লেসমেন্টের বিষয়টি বেশ কিছু বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
প্রথম আলো: অনেকে মনে করেন সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে ফাটকাবাজি ও জুয়াবাজি বেড়ে গেছে। এ ব্যাপারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী?
সালাহউদ্দিন: যেকোনো পুঁজিবাজারেই ফাটকা কারবারি বা স্পেকুলেটর থাকবে। যেহেতু আমাদের দেশে এখনো ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারী বেশি, তাই এটা স্বাভাবিক। আমাদের দেশে যেহেতু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সংখ্যা এখনো খুব বেশি নেই, তাই এখানে ফাটকা বিনিয়োগ অনেক বেশি হচ্ছে। ধীরে ধীরে মিউচুয়াল ফান্ড-জাতীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়তে থাকলে ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারীর তুলনামূলক প্রভাব কমে আসবে।
প্রথম আলো: নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসির ভূমিকা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
সালাহউদ্দিন: আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে সংস্থাটির আরও বেশি সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া বাজারসংক্রান্ত নীতিমালায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কে পর্যালোচনার অভাব প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে।
প্রথম আলো: সরকার দুই বছর পার করলেও বাজার সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা গ্রহণ করেনি। আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
সালাহউদ্দিন: বিগত দুই বছরে বাজারের যে ব্যাপক অগ্রগতি তা মূলত এসেছে জনগণের সম্পৃক্ততায়। সরকারি ভূমিকা এ ক্ষেত্রে খুব একটা লক্ষ করা যায়নি। অধিকন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে অযাচিতভাবে বাজার নীতিমালায় হস্তক্ষেপের ফলে বাজারে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে আইপিও আনার ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা বাধার সৃষ্টি করেছে। তবে বছর শেষে এই নীতি কিছুটা সংশোধন করায় ভবিষ্যতে এই সমস্যা কমবে বলে আশা করা যায়। এ ছাড়া কিছু সরকারি কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার কথা ঘোষণা করে তা বাস্তবায়ন না করায় সরকারি নীতি সম্পর্কে বাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রথম আলো: সব মিলিয়ে আগামী দিনের পুঁজিবাজার নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?
সালাহউদ্দিন: আগামী দিনে আমরা আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব বলে বিশ্বাস করি। কারণ সাম্প্রতিককালে আইপিও-সংক্রান্ত নীতির আংশিক সংশোধনী, নতুন আইপিও আনার ক্ষেত্রে সৃষ্ট অনেক বাধা দূর করতে সমর্থ হবে। ফলে বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে অতি মূল্যে কেনা শেয়ারগুলো ছেড়ে ধীরে ধীরে নতুন শেয়ারগুলোতে বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন। এতে বাজারে বিদ্যমান অতি মূল্যায়িত অবস্থা ক্রমান্বয়ে সংশোধনের পথে যেতে পারবে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ায় ব্যাংকিং খাতে মেয়াদি ঋণও কমবে এবং খেলাপি ঋণের কুপ্রভাব থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ হবে। তবে সরকারকে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী ও কার্যক্ষম করে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
No comments