জলবায়ু সম্মেলনে আমরা কী পেলাম? by আহসান উদ্দিন আহমেদ ও শরমিন্দ নীলোর্মি
কানকুনে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আন্তসরকারি আলোচনা ও দর-কষাকষি শেষ হয়েছে। সমস্যা সমাধানের অগ্রগতি হয়েছে নিঃসন্দেহে, তবে আরও এগোনোর সুযোগ ছিল, তা হয়নি। আলোচনার ধরনটাই এমন যে নিজেদের সুবিধামতো সব ফলাফল হয়ে যাবে, তা হওয়ার নয়। এককথায় মন্দের ভালো একটা অগ্রগতির স্মারক দিয়ে শেষ হয়েছে কানকুন বৈঠক।
ঘুমবিহীন দুই রাতের টানা দর-কষাকষির পর প্রায় মতৈক্যের একটা সনদ গৃহীত হয়েছে। এটি মূলত গেল বছরের কোপেনহেগেন সমঝোতার সুরে পুনরায় বেজেছে, তবে বেশি নির্গমনকারী দেশগুলোর দায় স্বীকারের চেষ্টা হিসেবে অর্থ ছাড়ের কথা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। বহু আকাঙ্ক্ষিত বিষয় ‘নির্গমন হ্রাসের’ ব্যাপারে যা বলা হয়েছে, তা চুলচেরা বিচারে বিশ্বের দুর্গত মানুষের বাঁচার জন্য যথেষ্ট উৎসাহ-উদ্দীপক নয়।
সম্মেলনের শুরুটা খারাপই ছিল। প্রথম সকালেই উদ্বোধনীতে জি ৭৭+নয়া চীনের পক্ষে আশাবাদ ব্যক্ত করা হলো যে, ‘কানকুনে এমন আলোচনা হবে, যাতে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে গিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য ও বাধ্যবাধকতার চুক্তিতে পৌঁছানো যায়।’ অর্থাৎ কানকুনে কেবল পথ রচনা করাই হবে মূল লক্ষ্য। শেষে যে বিষয়টির বাইরে কিছু হয়েছে তা নয়, মোটা দাগে তা-ই থেকেছে, তবে অর্থায়নে সামান্য অগ্রগতি হয়েছে বৈকি। যেহেতু বড় কোনো নির্গমন হ্রাসের চুক্তিপত্র করতে হয়নি, জলবায়ু সনদের আওতায় বেশি নির্গমনকারী দেশগুলো (যা সংযুক্তি-১ভুক্ত) তা-ই কিছুটা খুশিমনে বাড়ি ফিরেছে। বলা হয়েছে, ‘...তাপমাত্রা বৃদ্ধি যেন দুই ডিগ্রির বেশি না হয়’ এবং এর জন্য বেশি নির্গমনকারী দেশগুলো ১৯৯০ সালের তুলনায় তাদের নির্গমনের হার ২০২০ সালের মধ্যে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ কমাবে। নির্গমন বেশি হ্রাসের ঘোষণা থাকলেও এ লক্ষ্যমাত্রা তেমন আহামরি নয়। নির্গমন বেশি হ্রাস করতে হলে ন্যূনতম ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ করতে হবে। কম হ্রাস করার সুযোগ থাকাতে সংযুক্তি-১ভুক্ত দেশগুলো খুশি হবেই, জানা কথা। অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী তাই বলেছেন, ‘...এটি এগিয়ে যাওয়ার ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।’
তবে সবাই খুশি হয়নি। বলিভিয়া একেবারে বিরোধিতাই করেছে। যেখানে তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রির নিচে রাখার দাবি ছিল (বাংলাদেশের মন্ত্রী তাঁর পূর্ণাঙ্গ বক্তব্যে কী সুন্দর করেই না ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের দাবি পেশ করেছিলেন), সেখানে অর্জন ন্যূনতম দুই ডিগ্রি? এটা সার্বিকভাবে হতাশার বৈকি। পেদ্রো সলন সাধেই বলেননি, ‘(এই দলিল) বহু মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার দলিল।’ মানবতাবাদী এনজিওগুলো তেমনটাই মনে করছে।
এর বিপরীতে যা পাওয়া গেছে, তা যেন মন্দের ভালো। জলবায়ু তহবিলে (যে সবুজ অর্থায়নের কথা কোপেনহেগেনে বলা হয়েছে) এবার কিছু সুস্পষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। দ্রুত ছাড়ের তহবিলে ৩০ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন নিশ্চিত হয়েছে। এ ছাড়া দূরবর্তী সময়ের সবুজ তহবিলের জন্য ২০২০ থেকেই ফি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন দেওয়ার মতৈক্য হয়েছে (এটা কিছুতেই সংযুক্তি-১-এর দেশগুলো দিতে চাইছিল না)। অর্থ দ্রুত ছাড়ের ব্যাপারে স্বল্পোন্নত দেশগুলো এবং দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর একটু তাড়া ছিল, তারই প্রতিফলন ঘটল এই অর্থায়নের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে।
জাপানের তীব্র বিরোধিতার মুখেও কিয়োটো প্রটোকল বোধকরি এ যাত্রা টিকেই গেল। হঠাৎ করেই ভারতের পক্ষে ভবিষ্যতে নির্গমন হ্রাসে বাধ্যবাধকতায় অংশ নেওয়ার ইঙ্গিতের পরই জাপান আশ্বস্ত হয়েছে, ইউরোপীয় গোষ্ঠী আহ্বান করেছে কিয়োটো চুক্তির নতুন রাউন্ডে অংশ নেওয়ার জন্য। এটা তীব্র ক্ষতির মুখোমুখি দেশগুলোর জন্য অন্তত ইতিবাচক হবে বলে ধারণা করা যায়।
অভিযোজনের একটি কমিটি নিয়ে বহু তর্ক-বিতর্ক হয়েছে সম্মেলনজুড়ে। অবশেষে একটি কমিটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে! অভিযোজনের বিষয়ে ক্ষয়ক্ষতি পূরণের কথাই মেনে নিয়েছে বিরোধকারী দেশগুলো (বলিভিয়া ছাড়া), সেখানে তেল উৎপাদানকারী দেশগুলোর (তথাকথিত) ‘ক্ষতিপূরণের’ জোরালো দাবিটা প্রায় অনুল্লেখ্য থেকেছে। ফলে অভিযোজনের বিষয়ে অর্থ ব্যবহারে তেমন কোনো ঝামেলা পোহাতে হবে না বলে মনে হয়। অভিযোজনের সুবিধার্ধে আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মতৈক্য হয়েছে, এটা ছিল বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অন্যতম চাহিদা, যা পূরণ হবে বলে মনে হচ্ছে।
নির্গমন হ্রাসের ব্যাপারে সংযুক্তি-১ভুক্ত দেশগুলোর ওপর আলোচনা করার চাপটা নতুন দলিলে আর নেই, কিয়োটো চুক্তির পরের পর্বে বাধ্যবাধকতার চাপ রাখার সুযোগ আর পাওয়া যাবে না বলেই মনে হচ্ছে। উপরন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর বহুল আলোচিত এমআরভির (পরিমাপযোগ্য, পরিবর্তনযোগ্য এবং সত্যায়নযোগ্য) বোঝা বেশ ভালোভাবেই চাপানো হয়েছে। অর্থায়ন পেলেও বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য এমআরভির বোঝা ভবিষ্যতেও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এটা হলে শর্ত পূরণ করে কাজ করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে বাধ্য।
মোদ্দা কথা, কিছু মুদ্রার আগাম ঝনঝনানি শুনিয়ে সংযুক্তি-১ভুক্ত বেশি নির্গমনকারী দেশগুলো কিছুটা সুবিধা নিয়ে নিল বলে মনে হলো। এটা নিশ্চিত, দ্রুত অর্থায়নের কিছুটা তহবিল দ্রুতই এসে যাবে অভিযোজনের জন্য। তবে তাতে অভিযোজনের প্রয়োজন আরও বেড়ে যাবে বলে মনে হয়। কেননা ‘গভীর নির্গমন হ্রাসের’ বড় নিশ্চয়তা একেবারেই মেলেনি কানকুনে। প্রশ্ন তাই থেকেই গেল; নাকের বদলে নরুন পেলাম না তো?
এবার অর্থায়নের জন্য বিশেষ কমিটিতে কো-চেয়ার ছিলেন আমাদের পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী। কাজও করেছেন দিনরাত, প্রশংসনীয়ভাবে। তবে তিনি দৃষ্টি কেড়েছেন তাঁর বক্তৃতায়, যা বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে। সেখানে বিশ্বব্যাপী নির্গমন হ্রাসের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছেন, দ্রুত নির্গমন হ্রাস না করলে একদিন অভিযোজনের আর দরকার পড়বে না। কেননা তা হবে বহু মানুষের মৃত্যুর কারণ। এর পরও নির্গমনের ক্ষেত্রে আয়োজন কমই হয়েছে বলতে হবে। যেন বা ধনী দেশগুলো বিলিয়ন ডলারের ‘ক্ষতিপূরণের’ আশা দেখিয়ে নির্গমন কমানোর চাপটা কিছুটা হালকা করে নিল।
জলবায়ু পরিবর্তনের থাবায় বাংলাদেশের যে মানুষের জীবন যাচ্ছে, ওই ক্ষতির আবার পূরণ কী? প্রাপ্তির খাতাটা তাই লিখতে বসে মনে হচ্ছে, একটি গ্লাস আমরা বিশ্বনেতাদের কাছ থেকে পেলাম, যেটি অর্ধেক খালি। গ্লাসটা অর্ধেক ভরা হলে বরং বেশি খুশি হতাম।
লেখকদ্বয়: কানকুন সম্মেলনে বেসরকারিভাবে অংশগ্রহণকারী এবং যথাক্রমে সেন্টার ফর গ্লোবাল চেঞ্জ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত পরিবেশবিদ।
ঘুমবিহীন দুই রাতের টানা দর-কষাকষির পর প্রায় মতৈক্যের একটা সনদ গৃহীত হয়েছে। এটি মূলত গেল বছরের কোপেনহেগেন সমঝোতার সুরে পুনরায় বেজেছে, তবে বেশি নির্গমনকারী দেশগুলোর দায় স্বীকারের চেষ্টা হিসেবে অর্থ ছাড়ের কথা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। বহু আকাঙ্ক্ষিত বিষয় ‘নির্গমন হ্রাসের’ ব্যাপারে যা বলা হয়েছে, তা চুলচেরা বিচারে বিশ্বের দুর্গত মানুষের বাঁচার জন্য যথেষ্ট উৎসাহ-উদ্দীপক নয়।
সম্মেলনের শুরুটা খারাপই ছিল। প্রথম সকালেই উদ্বোধনীতে জি ৭৭+নয়া চীনের পক্ষে আশাবাদ ব্যক্ত করা হলো যে, ‘কানকুনে এমন আলোচনা হবে, যাতে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে গিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য ও বাধ্যবাধকতার চুক্তিতে পৌঁছানো যায়।’ অর্থাৎ কানকুনে কেবল পথ রচনা করাই হবে মূল লক্ষ্য। শেষে যে বিষয়টির বাইরে কিছু হয়েছে তা নয়, মোটা দাগে তা-ই থেকেছে, তবে অর্থায়নে সামান্য অগ্রগতি হয়েছে বৈকি। যেহেতু বড় কোনো নির্গমন হ্রাসের চুক্তিপত্র করতে হয়নি, জলবায়ু সনদের আওতায় বেশি নির্গমনকারী দেশগুলো (যা সংযুক্তি-১ভুক্ত) তা-ই কিছুটা খুশিমনে বাড়ি ফিরেছে। বলা হয়েছে, ‘...তাপমাত্রা বৃদ্ধি যেন দুই ডিগ্রির বেশি না হয়’ এবং এর জন্য বেশি নির্গমনকারী দেশগুলো ১৯৯০ সালের তুলনায় তাদের নির্গমনের হার ২০২০ সালের মধ্যে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ কমাবে। নির্গমন বেশি হ্রাসের ঘোষণা থাকলেও এ লক্ষ্যমাত্রা তেমন আহামরি নয়। নির্গমন বেশি হ্রাস করতে হলে ন্যূনতম ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ করতে হবে। কম হ্রাস করার সুযোগ থাকাতে সংযুক্তি-১ভুক্ত দেশগুলো খুশি হবেই, জানা কথা। অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী তাই বলেছেন, ‘...এটি এগিয়ে যাওয়ার ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।’
তবে সবাই খুশি হয়নি। বলিভিয়া একেবারে বিরোধিতাই করেছে। যেখানে তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রির নিচে রাখার দাবি ছিল (বাংলাদেশের মন্ত্রী তাঁর পূর্ণাঙ্গ বক্তব্যে কী সুন্দর করেই না ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের দাবি পেশ করেছিলেন), সেখানে অর্জন ন্যূনতম দুই ডিগ্রি? এটা সার্বিকভাবে হতাশার বৈকি। পেদ্রো সলন সাধেই বলেননি, ‘(এই দলিল) বহু মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার দলিল।’ মানবতাবাদী এনজিওগুলো তেমনটাই মনে করছে।
এর বিপরীতে যা পাওয়া গেছে, তা যেন মন্দের ভালো। জলবায়ু তহবিলে (যে সবুজ অর্থায়নের কথা কোপেনহেগেনে বলা হয়েছে) এবার কিছু সুস্পষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। দ্রুত ছাড়ের তহবিলে ৩০ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন নিশ্চিত হয়েছে। এ ছাড়া দূরবর্তী সময়ের সবুজ তহবিলের জন্য ২০২০ থেকেই ফি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন দেওয়ার মতৈক্য হয়েছে (এটা কিছুতেই সংযুক্তি-১-এর দেশগুলো দিতে চাইছিল না)। অর্থ দ্রুত ছাড়ের ব্যাপারে স্বল্পোন্নত দেশগুলো এবং দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর একটু তাড়া ছিল, তারই প্রতিফলন ঘটল এই অর্থায়নের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে।
জাপানের তীব্র বিরোধিতার মুখেও কিয়োটো প্রটোকল বোধকরি এ যাত্রা টিকেই গেল। হঠাৎ করেই ভারতের পক্ষে ভবিষ্যতে নির্গমন হ্রাসে বাধ্যবাধকতায় অংশ নেওয়ার ইঙ্গিতের পরই জাপান আশ্বস্ত হয়েছে, ইউরোপীয় গোষ্ঠী আহ্বান করেছে কিয়োটো চুক্তির নতুন রাউন্ডে অংশ নেওয়ার জন্য। এটা তীব্র ক্ষতির মুখোমুখি দেশগুলোর জন্য অন্তত ইতিবাচক হবে বলে ধারণা করা যায়।
অভিযোজনের একটি কমিটি নিয়ে বহু তর্ক-বিতর্ক হয়েছে সম্মেলনজুড়ে। অবশেষে একটি কমিটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে! অভিযোজনের বিষয়ে ক্ষয়ক্ষতি পূরণের কথাই মেনে নিয়েছে বিরোধকারী দেশগুলো (বলিভিয়া ছাড়া), সেখানে তেল উৎপাদানকারী দেশগুলোর (তথাকথিত) ‘ক্ষতিপূরণের’ জোরালো দাবিটা প্রায় অনুল্লেখ্য থেকেছে। ফলে অভিযোজনের বিষয়ে অর্থ ব্যবহারে তেমন কোনো ঝামেলা পোহাতে হবে না বলে মনে হয়। অভিযোজনের সুবিধার্ধে আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মতৈক্য হয়েছে, এটা ছিল বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অন্যতম চাহিদা, যা পূরণ হবে বলে মনে হচ্ছে।
নির্গমন হ্রাসের ব্যাপারে সংযুক্তি-১ভুক্ত দেশগুলোর ওপর আলোচনা করার চাপটা নতুন দলিলে আর নেই, কিয়োটো চুক্তির পরের পর্বে বাধ্যবাধকতার চাপ রাখার সুযোগ আর পাওয়া যাবে না বলেই মনে হচ্ছে। উপরন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর বহুল আলোচিত এমআরভির (পরিমাপযোগ্য, পরিবর্তনযোগ্য এবং সত্যায়নযোগ্য) বোঝা বেশ ভালোভাবেই চাপানো হয়েছে। অর্থায়ন পেলেও বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য এমআরভির বোঝা ভবিষ্যতেও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এটা হলে শর্ত পূরণ করে কাজ করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে বাধ্য।
মোদ্দা কথা, কিছু মুদ্রার আগাম ঝনঝনানি শুনিয়ে সংযুক্তি-১ভুক্ত বেশি নির্গমনকারী দেশগুলো কিছুটা সুবিধা নিয়ে নিল বলে মনে হলো। এটা নিশ্চিত, দ্রুত অর্থায়নের কিছুটা তহবিল দ্রুতই এসে যাবে অভিযোজনের জন্য। তবে তাতে অভিযোজনের প্রয়োজন আরও বেড়ে যাবে বলে মনে হয়। কেননা ‘গভীর নির্গমন হ্রাসের’ বড় নিশ্চয়তা একেবারেই মেলেনি কানকুনে। প্রশ্ন তাই থেকেই গেল; নাকের বদলে নরুন পেলাম না তো?
এবার অর্থায়নের জন্য বিশেষ কমিটিতে কো-চেয়ার ছিলেন আমাদের পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী। কাজও করেছেন দিনরাত, প্রশংসনীয়ভাবে। তবে তিনি দৃষ্টি কেড়েছেন তাঁর বক্তৃতায়, যা বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে। সেখানে বিশ্বব্যাপী নির্গমন হ্রাসের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছেন, দ্রুত নির্গমন হ্রাস না করলে একদিন অভিযোজনের আর দরকার পড়বে না। কেননা তা হবে বহু মানুষের মৃত্যুর কারণ। এর পরও নির্গমনের ক্ষেত্রে আয়োজন কমই হয়েছে বলতে হবে। যেন বা ধনী দেশগুলো বিলিয়ন ডলারের ‘ক্ষতিপূরণের’ আশা দেখিয়ে নির্গমন কমানোর চাপটা কিছুটা হালকা করে নিল।
জলবায়ু পরিবর্তনের থাবায় বাংলাদেশের যে মানুষের জীবন যাচ্ছে, ওই ক্ষতির আবার পূরণ কী? প্রাপ্তির খাতাটা তাই লিখতে বসে মনে হচ্ছে, একটি গ্লাস আমরা বিশ্বনেতাদের কাছ থেকে পেলাম, যেটি অর্ধেক খালি। গ্লাসটা অর্ধেক ভরা হলে বরং বেশি খুশি হতাম।
লেখকদ্বয়: কানকুন সম্মেলনে বেসরকারিভাবে অংশগ্রহণকারী এবং যথাক্রমে সেন্টার ফর গ্লোবাল চেঞ্জ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত পরিবেশবিদ।
No comments