একটি টিকিটের জন্য
সিটি ব্যাংকের নিউমার্কেট শাখার ভেতর থেকে প্রায় লাফিয়ে রাস্তায় নেমে এলেন এক তরুণ। তাঁকে ঘিরে পরিচিতজনের উল্লাস, হাতের কাগজটি উঁচিয়ে ধরা তরুণের উল্লাস, ‘বিশ্বকাপের টিকিট পেয়ে গেছি!’ পাশে দাঁড়ানো পুলিশ সদস্য ভালো করে সেই কাগজটি দেখে সে কী হাসি! ‘টিকিট কই, এটা তো স্লিপ...!’
কাল থেকে আসলে স্লিপই বিক্রি শুরু হয়েছে বিশ্বকাপ টিকিটের। এই স্লিপ দেখিয়ে টিকিট নিতে হবে ম্যাচের এক সপ্তাহ আগে। সন্দেহ নেই, স্লিপের মতো টিকিট নিতেও কম গলদঘর্ম হতে হবে না দর্শকদের। তাতে কী! স্লিপ নিয়ে টিকিট পাওয়ার নিশ্চয়তা তো পাওয়া গেল! সোনার হরিণ ধরার উল্লাস করা-ই যায়।
হরিষে বিষাদও কম নেই। ঢাকার টিকিট কাউন্টারগুলোয় কাল ‘বিশ্বকাপ জয়ের’ উল্লাস যেমন দেখা গেছে, ছিল বিশৃঙ্খলা, হুড়োহুড়ি, পুলিশি অ্যাকশন আর ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে নেতিয়ে পড়া মানুষও। নিউমার্কেট শাখায় তো এসব ঝামেলায় সকাল ১০টার জায়গায় এখানে টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে সোয়া ১১টায়।
তাতে মানুষের অপেক্ষা বেড়েছে, বেড়েছে ভোগান্তি। কিন্তু ‘একটি টিকিটের গল্পে’র শেষটা হয়ে গেছে মধুর। শ্লথ টিকিট বিক্রির প্রক্রিয়ায় ত্যক্তবিরক্ত মুখগুলোর মধ্যেই হঠাৎ আলোর ঝলকানি হয়ে বেরিয়ে এসেছে নিউমার্কেট শাখা থেকে প্রায় উড়ে বেরিয়ে আসা ওই তরুণের মতো কোনো আত্মহারা মুখ। তার পরও দুঃখের কথাটাই আগে শুনুন। মিরপুর দারুসসালাম শাখার সামনে আগের রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র রাশেদুল ইসলাম। কিন্তু কাল বুথের খুব কাছাকাছি যাওয়ার পর ধাক্কাধাক্কিতে বেচারাকে ফিরতে হয়েছে টিকিট ছাড়াই।
কিংবা কারওয়ানবাজার শাখার সামনে বিমর্ষ সোহাগের কথা। সকালবেলা লাইনে থেকেও পরে লাইনচ্যুত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্র বন্ধুদের নিয়ে মন খারাপ করে বসেছিলেন সড়ক বিভাজনের ওপর। আশা যদি আবার লাইনে ঢোকা যায়। সোহাগ-রাশেদুলরা মনের দুঃখ হজম করে গেলেও যাঁরা সিটি ব্যাংকের উত্তরা শাখায় টিকিট কিনতে গিয়েছিলেন, তাঁরা সেটাও পারেননি। বিক্রির গতি ধীর হওয়ায় ক্ষুব্ধ দর্শকেরা ভাঙচুর করেছে ব্যাংক কার্যালয়। হুড়োহুড়িতে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে নিজের জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হন জুয়েল নামের এক নাট্যশিল্পী। টিকিট পাওয়ার আশা বাদ দিয়ে বেচারা জুয়েল দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন দীর্ঘ লাইন, হতাশা নিয়ে নিজেকেই নিজে জিজ্ঞেস করছিলেন, ‘এভাবে কি সম্ভব...?’
এই কাউন্টারেই খুঁজে পাওয়া গেল ‘বুদ্ধিমান বালক’ নাঈমকে। ছেলেদের লাইনটা অনেক লম্বা দেখে উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের এই তরুণ বাসায় গিয়ে মাকে নিয়ে এসেছেন কাউন্টারে। নাঈমের টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা তাতেই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, কারণ ছেলেদের লাইনের তুলনায় মেয়েদের লাইনটা বেশ ছোট। তবে ক্যান্টনমেন্ট থেকে আসা মারিয়া রহমান নাঈমের মায়ের তিন-চারজন সামনে দাঁড়িয়েও টেনশনে ছিলেন, ‘দুটি টিকিট কেনার আশা নিয়ে এসেছি। এক ঘণ্টা হলো দাঁড়িয়ে আছি। বুঝতে পারছি না কী হবে...।’
অপেক্ষার ক্লান্তি ছাড়া সিটি ব্যাংকের ধানমন্ডি ও বনানী শাখার দর্শকেরা মোটামুটি নির্ঝঞ্ঝাট ছিলেন। বাংলাদেশ দলের সমর্থকগোষ্ঠী ‘দৌড়া বাঘ আইলো’ ছিল ধানমন্ডির দর্শকসারির নেতৃত্বে। লাইনের প্রথম ৫০ জনই নাকি ছিল এই গোষ্ঠীর সদস্য! তারা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায়। খাওয়া-দাওয়া বলতে চা-বিস্কুট এবং সেটাও কোনো ‘ফুটওয়ার্ক’ ছাড়া, জায়গায় দাঁড়িয়ে। শুধু টয়লেটের জন্য কাউকে ‘প্রক্সি’ দাঁড় করিয়ে যেতে হয়েছে এদিক-সেদিক।
আরিফুল ইসলাম ডকুমেন্টারি ফিল্ম বানান। সিটি ব্যাংকের বনানী শাখায় টিকিট কিনতে গিয়ে তিনি নিজেই হয়ে গেছেন ডকুমেন্টারির বিষয়! ক্লান্ত ডান পা-টাকে একটু ঝাড়া দিয়ে বললেন, ‘কাল (পরশু) রাত ১০টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এই দেশে এর আগে আর কোনো কিছুতেই এত নাজেহাল হইনি, যা হচ্ছি বিশ্বকাপের টিকিট কিনতে এসে।’ তবে এখানে পরিস্থিতি সামলাতে বিশেষ কৌশলী হলেন গুলশান থানার এক এসআই। ভদ্রলোক রসিক, দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রসিকতায় মাতিয়ে রাখছিলেন চারপাশ। সবার মনটাকে যদি ক্ষণিকের জন্য হলেও অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখা যায়!
মৌচাকে আর একটু হলে নিখোঁজ সংবাদের মাইকিং শুনতেন টিকিট কিনতে আসারা। মশিউর রহমান নামে এক তরুণকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল তাঁর ভাই। পরে জানা গেল সিটি ব্যাংকের মৌচাক শাখায় মৌমাছির মতো ভিড় দেখে মশিউর রহমান টিকিট কাটতে চলে গেছেন বনানী শাখায়।
মশিউর শেষ পর্যন্ত সোনার হরিণের দেখা পেয়েছেন কিনা কে জানে, তবে বিশ্বকাপ আপাতত বাংলাদেশে ঘুম কেড়ে নেওয়া বিষয়।
কাল থেকে আসলে স্লিপই বিক্রি শুরু হয়েছে বিশ্বকাপ টিকিটের। এই স্লিপ দেখিয়ে টিকিট নিতে হবে ম্যাচের এক সপ্তাহ আগে। সন্দেহ নেই, স্লিপের মতো টিকিট নিতেও কম গলদঘর্ম হতে হবে না দর্শকদের। তাতে কী! স্লিপ নিয়ে টিকিট পাওয়ার নিশ্চয়তা তো পাওয়া গেল! সোনার হরিণ ধরার উল্লাস করা-ই যায়।
হরিষে বিষাদও কম নেই। ঢাকার টিকিট কাউন্টারগুলোয় কাল ‘বিশ্বকাপ জয়ের’ উল্লাস যেমন দেখা গেছে, ছিল বিশৃঙ্খলা, হুড়োহুড়ি, পুলিশি অ্যাকশন আর ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে নেতিয়ে পড়া মানুষও। নিউমার্কেট শাখায় তো এসব ঝামেলায় সকাল ১০টার জায়গায় এখানে টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে সোয়া ১১টায়।
তাতে মানুষের অপেক্ষা বেড়েছে, বেড়েছে ভোগান্তি। কিন্তু ‘একটি টিকিটের গল্পে’র শেষটা হয়ে গেছে মধুর। শ্লথ টিকিট বিক্রির প্রক্রিয়ায় ত্যক্তবিরক্ত মুখগুলোর মধ্যেই হঠাৎ আলোর ঝলকানি হয়ে বেরিয়ে এসেছে নিউমার্কেট শাখা থেকে প্রায় উড়ে বেরিয়ে আসা ওই তরুণের মতো কোনো আত্মহারা মুখ। তার পরও দুঃখের কথাটাই আগে শুনুন। মিরপুর দারুসসালাম শাখার সামনে আগের রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র রাশেদুল ইসলাম। কিন্তু কাল বুথের খুব কাছাকাছি যাওয়ার পর ধাক্কাধাক্কিতে বেচারাকে ফিরতে হয়েছে টিকিট ছাড়াই।
কিংবা কারওয়ানবাজার শাখার সামনে বিমর্ষ সোহাগের কথা। সকালবেলা লাইনে থেকেও পরে লাইনচ্যুত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্র বন্ধুদের নিয়ে মন খারাপ করে বসেছিলেন সড়ক বিভাজনের ওপর। আশা যদি আবার লাইনে ঢোকা যায়। সোহাগ-রাশেদুলরা মনের দুঃখ হজম করে গেলেও যাঁরা সিটি ব্যাংকের উত্তরা শাখায় টিকিট কিনতে গিয়েছিলেন, তাঁরা সেটাও পারেননি। বিক্রির গতি ধীর হওয়ায় ক্ষুব্ধ দর্শকেরা ভাঙচুর করেছে ব্যাংক কার্যালয়। হুড়োহুড়িতে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে নিজের জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হন জুয়েল নামের এক নাট্যশিল্পী। টিকিট পাওয়ার আশা বাদ দিয়ে বেচারা জুয়েল দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন দীর্ঘ লাইন, হতাশা নিয়ে নিজেকেই নিজে জিজ্ঞেস করছিলেন, ‘এভাবে কি সম্ভব...?’
এই কাউন্টারেই খুঁজে পাওয়া গেল ‘বুদ্ধিমান বালক’ নাঈমকে। ছেলেদের লাইনটা অনেক লম্বা দেখে উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের এই তরুণ বাসায় গিয়ে মাকে নিয়ে এসেছেন কাউন্টারে। নাঈমের টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা তাতেই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, কারণ ছেলেদের লাইনের তুলনায় মেয়েদের লাইনটা বেশ ছোট। তবে ক্যান্টনমেন্ট থেকে আসা মারিয়া রহমান নাঈমের মায়ের তিন-চারজন সামনে দাঁড়িয়েও টেনশনে ছিলেন, ‘দুটি টিকিট কেনার আশা নিয়ে এসেছি। এক ঘণ্টা হলো দাঁড়িয়ে আছি। বুঝতে পারছি না কী হবে...।’
অপেক্ষার ক্লান্তি ছাড়া সিটি ব্যাংকের ধানমন্ডি ও বনানী শাখার দর্শকেরা মোটামুটি নির্ঝঞ্ঝাট ছিলেন। বাংলাদেশ দলের সমর্থকগোষ্ঠী ‘দৌড়া বাঘ আইলো’ ছিল ধানমন্ডির দর্শকসারির নেতৃত্বে। লাইনের প্রথম ৫০ জনই নাকি ছিল এই গোষ্ঠীর সদস্য! তারা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায়। খাওয়া-দাওয়া বলতে চা-বিস্কুট এবং সেটাও কোনো ‘ফুটওয়ার্ক’ ছাড়া, জায়গায় দাঁড়িয়ে। শুধু টয়লেটের জন্য কাউকে ‘প্রক্সি’ দাঁড় করিয়ে যেতে হয়েছে এদিক-সেদিক।
আরিফুল ইসলাম ডকুমেন্টারি ফিল্ম বানান। সিটি ব্যাংকের বনানী শাখায় টিকিট কিনতে গিয়ে তিনি নিজেই হয়ে গেছেন ডকুমেন্টারির বিষয়! ক্লান্ত ডান পা-টাকে একটু ঝাড়া দিয়ে বললেন, ‘কাল (পরশু) রাত ১০টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এই দেশে এর আগে আর কোনো কিছুতেই এত নাজেহাল হইনি, যা হচ্ছি বিশ্বকাপের টিকিট কিনতে এসে।’ তবে এখানে পরিস্থিতি সামলাতে বিশেষ কৌশলী হলেন গুলশান থানার এক এসআই। ভদ্রলোক রসিক, দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রসিকতায় মাতিয়ে রাখছিলেন চারপাশ। সবার মনটাকে যদি ক্ষণিকের জন্য হলেও অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখা যায়!
মৌচাকে আর একটু হলে নিখোঁজ সংবাদের মাইকিং শুনতেন টিকিট কিনতে আসারা। মশিউর রহমান নামে এক তরুণকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল তাঁর ভাই। পরে জানা গেল সিটি ব্যাংকের মৌচাক শাখায় মৌমাছির মতো ভিড় দেখে মশিউর রহমান টিকিট কাটতে চলে গেছেন বনানী শাখায়।
মশিউর শেষ পর্যন্ত সোনার হরিণের দেখা পেয়েছেন কিনা কে জানে, তবে বিশ্বকাপ আপাতত বাংলাদেশে ঘুম কেড়ে নেওয়া বিষয়।
No comments