রাষ্ট্র ও রাজনীতিঃ সবুজ মাঠ পেরিয়ে by শেখ হাসিনা
সামনে সবুজ মাঠ। সংসদ ভবন এলাকার গাছে গাছে সবুজের সমারোহ। এই সবুজেরও কত বাহার। সামনে একটা শ্বেতকরবীর গাছ, যার পাতা গাঢ় সবুজ। বৃষ্টিতে ভিজে যায় গাছের পাতা। কখনো বা হাওয়ায় পাতাদের ঝিরিঝিরি শব্দ শুনি। গণভবনের সেই পাখিদের কথা মনে পড়ে। তারাও এখানে উড়ে উড়ে আসে। অনেক কথা মনে পড়ে, অনেক স্মৃতি ভেসে আসে। নিঃসঙ্গ কারাগারের এই স্মৃতি আমার এখন সঙ্গী।
বারান্দায় দাঁড়ালেই দৃষ্টি চলে যায় সবুজ মাঠ পেরিয়ে রাস্তায়, যে রাস্তা দিয়ে অনবরত ছুটে চলেছে গাড়ি। কত মানুষ হেঁটে যাচ্ছে। খুব সকালে অনেক গাড়ি থাকে, যারা প্রাতর্ভ্রমণ করতে আসে তাদের গাড়ির ভিড়।
রাস্তা পার হলেই গণভবন। চোখের দৃষ্টি প্রসারিত করলেই রাস্তার ওপারে ঘন গাছের সারি। অনেক উঁচু লম্বা গাছ। গাছের ফাঁকে ফাঁকে নারকেলগাছ। আর নারকেলগাছের পাতার ফাঁক দিয়ে গণভবন, যেন উঁকি মারছে। রাতের বেলা গাছের পাতায় আলোর ঝিলিমিলি। ভোরবেলা শালিক আসত। ক্যাঁচক্যাঁচানি পাখিরাও আসত। একটা বানর ছিল হূষ্টপুষ্ট। সে রোজ আসত আমার কাছে। কখনো সকাল ১০টা-১১টা, কখনো বেলা আড়াইটায়। কলা ও অন্যান্য ফল খেতে দিতাম। একবার জ্বর হওয়ায় আমি খেতে দিতে পারিনি। কারারক্ষী মেয়েদের হাতে খেতে চাইল না। তখন একটা পেঁপেগাছে উঠে পেঁপে খেয়ে কারারক্ষী মেয়েদের ভেংচি কেটে চলে গেল। ফজরের নামাজ পড়ে বারান্দায় বসে কোরআন শরিফ পড়তাম। তারপর পায়চারি করতাম। একটা বাতাবি লেবুর গাছ ছিল, সেখানে বসে পাখিরা খুব চেঁচামেচি করত। আমি দেখে বলতাম, ওরাও আন্দোলনে নেমেছে। ওদের দাবি মানতে হবে। ওদের খাবার দিতে হবে। খাবার দিতাম, ওরা খেয়ে চলে যেত।
আমি মাঠের এপারে কারাগারে বন্দী। সংসদের একটা বাড়িকে সাব-জেল করা হয়েছে। আমি এপারে কারাগার ভবনে, আর ওপারেই গণভবন। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাঁচ বছর ছিলাম, ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত। ছিলাম গণভবনে, এখন আছি কারাগার ভবনে। ছিলাম ক্ষমতায় প্রধানমন্ত্রী, আর এখন আসামি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ? অভিযোগ হলো চাঁদাবাজি।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নাকি চাঁদাবাজি করেছিলাম—১০ বছর পর আবিষ্কার করা হলো। মাঝখানে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় ছিল। আমার বিরুদ্ধে তারা অনেক মামলা দিয়েছে, কিন্তু চাঁদাবাজির মামলা দিতে পারেনি। মামলাবাজ জোট সরকার থেকেও বড় আবিষ্কারক তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করার জন্য আমিই আন্দোলন করেছিলাম। ৬৮ জন মানুষ জীবন দিয়েছে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনীর হাতে। আমাদের আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল একটা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, যে নির্বাচনে জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবে। চারদলীয় জোটের ভোট কারচুপির নীলনকশা প্রতিহত করার জন্যই আন্দোলন করেছিলাম। জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষা করে গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে চেয়েছিলাম। নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলাম।
ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু জনগণ হবে। প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। কে ক্ষমতায় থাকবে, কে থাকবে না—তারাই নির্ধারণ করবে। জনগণের এই মৌলিক, সাংবিধানিক ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দেবে। নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হবে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা থাকবে। ভোট চুরি হবে না। রেজাল্ট পাল্টাবে না, কেন্দ্র দখল হবে না, নির্বিঘ্নে ভোটাররা ভোট দিয়ে তাঁদের মত প্রকাশ করবেন। একটা অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্য কতগুলো পদক্ষেপ আমরা দল ও মহাজোটের পক্ষ থেকে গ্রহণ করেছিলাম।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংস্কার ও নির্বাচন কমিশন সংস্কার-প্রস্তাব আমি মহাজোটের পক্ষ থেকে ঘোষণা করি। এই ঘোষণার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অত্যন্ত স্পষ্ট ছিল। তা হলো, সংবিধান সমুন্নত রাখা। গণতন্ত্র সুসংহত করা এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত করা। বারবার যে অধিকার ছিনতাই হয়ে যাচ্ছে, বারবার জনগণ অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে, তাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে, তা যেন চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। জনগণের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে বিলাসব্যসনে গা ভাসিয়ে চলছে ক্ষমতাসীনেরা।
চারদলীয় জোট সরকারের অপশাসন, ক্ষমতার দাপট, দুর্নীতি, লুটপাট, অত্যাচার-নির্যাতনে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। মানুষের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। পাশাপাশি চাল, ডাল, তেল, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এমনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যে মানুষ দিশেহারা হয়ে গেছে। তারা একটা পরিবর্তন চায়। তবে এ পরিবর্তন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটের মাধ্যমে হতে হবে, অন্য কোনো পন্থায় নয়। জনগণের এই আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য অবাধ ও নিরপেক্ষ স্বচ্ছ নির্বাচনের দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছি। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিয়েছে, আন্দোলনে শরিক হয়েছে। আন্দোলন সফল হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ পদত্যাগ করেছেন। সশস্ত্র বাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ফখরুদ্দীন সাহেব শপথ নিয়েছেন। আমরা সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকেছি, সমর্থন দিয়েছি; বিএনপি ও জামায়াত বয়কট করেছে, উপস্থিত থাকেনি। আমরা আশা করেছি, আমাদের গৃহীত সংস্কার-প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হবে। অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সরকার গঠন করা হবে। জনগণের সমস্যা সমাধান হবে। কিন্তু আজ কী দেখি, জনগণ সেই বঞ্চিতই রয়েছে। নির্বাচনের কথা মুখে বলে কীভাবে নির্বাচন পিছিয়ে নেবে, সেই ধান্দায় ব্যস্ত। নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে, দুই বছর পর নির্বাচন হবে। আদৌ নির্বাচন হবে কি না, মানুষ সন্দিহান হয়ে পড়েছে।
ক্ষমতার চেয়ারে গ্লু দিয়ে আটকে গেছে মনে হচ্ছে। নতুন নতুন দল গঠন হচ্ছে। ‘বাপে খেদানো মায়ে তাড়ানো’ কিছু লোক সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও জনগণের অর্থ যা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা, তার অপব্যবহার করে কিছু দল সৃষ্টি করছে। সুদখোর, কালো টাকার মালিকেরা টাকা সাদা করেই মাঠে নেমে পড়েছে। বিশেষ করে, জনগণের ভোটে যাদের জেতার কোনো সম্ভাবনাই নেই। অতীতে যারা জামানত হারিয়েছে, সেই জামানত হারানোর রেকর্ডধারীরাই বেশি তৎপর। যাদের ভেতরে স্বচ্ছতা আছে, সততা আছে, তারা গোয়েন্দাদের জালে ধরা পড়ে না, ধরা দেয় না। যাদের ভেতরে ঘাপলা আছে, তারাই দ্রুত ধরা দেয়। তারা হয়ে যায় সাধু, সৎ। কী বিচিত্র এই দেশ!
আরেক দল আছে, যারা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে—যেমন, ডাস্টবিনের গায়ে লেখা থাকে ‘Use me’ ‘আমাকে ব্যবহার করুন’—এরা সেই শ্রেণীর। অন্যের হাতে ব্যবহূত হতে সদা তৎপর। যখন যার তখন তার। হায় রে হায়, হায় রে হায়! এরা সবাই সৎ ও সাধু হয়ে গেছে!
আন্দোলন করে দাবি পূরণ করলাম, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্গঠন করলাম। যেই দ্রুত নির্বাচনের কথা বললাম, সেই আমি চাঁদাবাজ হয়ে গেলাম, দুর্নীতিবাজ হয়ে গেলাম। আমার স্থান হলো কারাগারে। পাঁচটি বছর চারদলীয় জোট তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে আমার ও আমার পরিবারের দুর্নীতির কোনো কিছু পায় কি না। পায়নি। পেয়েছে ফখরুদ্দীন সরকার।
আবিষ্কার করেছে চাঁদাবাজি করেছি তাঁর কাছ থেকে, যাঁকে আমার দল নমিনেশন দিয়েছে। যে সিটে এই প্রার্থী নমিনেশন পেয়েছিলেন, সেই একই সিটে অন্য এক প্রার্থী নমিনেশন চেয়েছিলেন এবং নির্বাচনী ফান্ডে ৫০ কোটি টাকাও দিতে চেয়েছিলেন। তাঁকে নমিনেশন দিইনি। ৫০ কোটি টাকা ফিরিয়ে দিলাম, আর পাঁচ কোটি চাঁদা নিলাম—এটা কি হতে পারে? ৫০ কোটি টাকার লোভ সংবরণ করতে পারলাম, আর পাঁচ কোটি টাকার লোভ সামলাতে পারলাম না। ৫০ কোটি টাকা বাদ দিয়ে পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা নিয়েছি—এই আবিষ্কার করেছে। বাহ্, চমৎকার আবিষ্কার!
একটা বিষয় লক্ষণীয়, যাঁদের দিয়ে মামলা করিয়েছে তাঁদের আগে ধরে নিয়ে গেছে অজ্ঞাত স্থানে। কোথায় আছেন, কীভাবে আছেন পরিবারও জানতে পারেনি। হন্যে হয়ে খুঁজেও পায়নি। কাউকে পাঁচ দিন, ১০ দিন, ২০ দিন—বাগে আনতে যত দিন লেগেছে বন্দী করে নির্যাতন করেছে।
প্রথম চাঁদাবাজির মামলা দিল তিন কোটি টাকা একটা ছোট ব্রিফকেসে ভরে দিয়ে গেছে গণভবনে। ৫০০ টাকার নোট তিন কোটি টাকার ওজন হয় ৬৯ কেজি। তিনটা ৩০ ইঞ্চি সাইজের স্যামসোনাইট স্যুটকেস লাগে তিন কোটি টাকার ৫০০ টাকার নোট ভরতে কিন্তু এমনই জাদু জানে যে একটা ব্রিফকেসেই ভরে এনে দিল তিন কোটি টাকা। এটা কি যে-সে আবিষ্কার! মনে হয় জাদুটোনাও জানে!
যাঁরা মামলা করেছেন, তাঁরা ভালো করেই জানেন যে এঁদের কাছে আমি কোনো দিন চাঁদা চাইনি। এঁদের চিনিও না। আমি আমার জীবনে কোনো দিন কারও কাছে কোনো টাকা চাইনি। কারও কাছে কিছু চাওয়া আমার স্বভাববিরুদ্ধ। আমি কোনো দিনই কারও কাছে টাকাপয়সা চাই না। ব্যক্তিগত জীবনেও কোনো কিছু চাওয়ার অভ্যাস আমার নেই। আমার যেমন আছে, আমি তেমনই চলতে পছন্দ করি। ধার করে ঘি খাই না, চুরি করে ফুটানি দেখাই না।
সারা দেশে এমন একটা আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে যে যাকে খুশি তাকে দিয়েই যা খুশি তা বলাতে পারে। আর না বললেই নির্যাতন—এটা তো সম্পূর্ণ মানবাধিকার লঙ্ঘন করা। শুধু আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দিয়ে নির্বাচনে যাতে অংশ নিতে না পারি, সেই ব্যবস্থা করার জন্যই এসব করা হচ্ছে। কারণ তারা জানে, নির্বাচন হলে জনগণ আমাকে ভোট দেবে। আমি জয়ী হব, সরকার গঠন করব। জনগণের আকাঙ্ক্ষা, আমি সরকার গঠন করি। কিন্তু জনগণের সে আকাঙ্ক্ষা পদদলিত করতে চায়। এ তো গেল যাঁরা মামলার বাদী হয়েছেন, তাঁদের কথা।
এখন আসি বিচারকদের কথায়। মামলা চলাকালীন বিচারকদের কী অবস্থায় দেখেছি। কোর্টে টাস্কফোর্স ও গোয়েন্দার লোক গিজগিজ করছে। কেউ ক্যাপ পরে চেহারা ঢাকতেও চেষ্টা করে। চেহারা ঠিক না, মাথা ঢাকা দেয়।
সব সময় একটা চাপ যেন আদালতে রয়েছে। আমার শুধু মনে হয়, এই বিচার হচ্ছে? এত প্রহসন, বিচারের নামে প্রহসন চলছে। বিচারকেরা কি তাঁদের বিবেক, চিন্তা, জ্ঞান ও বুদ্ধি বিবেচনা দিয়ে বিচার করতে পারেন? বিচারকেরা তো সংবিধান মোতাবেক শপথ নিয়ে থাকেন, সেই শপথ কি রক্ষা করতে পারেন?
হাইকোর্টের একজন বিচারপতি তো প্রকাশ্যে বলেই দিলেন, শপথ মোতাবেক কাজ করতে পারছেন না। উচ্চ আদালতের যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে নিম্ন আদালতের কী অবস্থা হতে পারে, তা অনুধাবন করা যায়। খুব ঢাকঢোল পিটিয়ে বিচার বিভাগ স্বাধীন করা হলো, কিন্তু তা মুখের কথায় ও কাগজে-কলমেই। বিচারকদের ওপর গোয়েন্দাদের চাপ অব্যাহতভাবে রয়েছে, তা দেখাই যায়। হাইকোর্ট রায় দিলেই তা যদি পক্ষে যায়, সুপ্রিম কোর্ট স্থগিত করে দেন। শেষ পর্যন্ত কোর্টও বদলে যায়। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে সরকারের বিশেষ দূত নিজেই নাকি আমাকে জামিন দিতে নিষেধ করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টকেই যদি নির্দেশ শুনতে হয়, সর্বোচ্চ আদালত যদি স্বাধীন না হন, তাহলে নিম্ন আদালতের অবস্থা কী, তা তো অনুধাবন করা যায়।
মামলার রায় কী হবে, তার ‘ওহি নাজেল’ হয়, যা নির্দেশ দেওয়া হবে, তা-ই রায় দেবে। ১ নভেম্বর ২০০৭ বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করা হয়েছে। আমার প্রশ্ন, ১ নভেম্বরের আগে বিচার বিভাগের অবস্থা ও পরে অর্থাৎ বর্তমানের অবস্থা তুলনা করলেই বের হয়ে যাবে বিচার বিভাগ কতটুকু স্বাধীনতা পেয়েছে। মানুষের সঙ্গে এ প্রহসন কেন?
আমি গণভবনে ছিলাম, এখন কারাভবনে আছি। যাঁরা আজ ক্ষমতায়, তাঁদেরও ভবিষ্যতে কারাগারে থাকতে হবে না—এই গ্যারান্টি কি পেয়েছেন? ক্ষমতার মসনদ ও কারাগার খুব কাছাকাছি।
পাকিস্তানে প্রেসিডেন্ট মোশাররফ এখন সম্মানের সঙ্গে বিদায়ের পথ খুঁজছেন। কাদের কাছে, যাঁদের একদিন অপমান করে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। সবার ওপরে আল্লাহ আছেন, তাঁর লীলা বোঝা ভার। তাঁর হুকুমেই আজ যে রাজা, কাল সে ভিখারি, কেবল মানুষ ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে যায় বলে ভুলে যায়।
এই বাড়িটাকে যদি আবার কোনো দিন সাব-জেল করা হয়, তাহলে কে আসবেন? সেই দিন দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
কারাভবনের এই বাড়িটায় অনেক গাছ ছিল। বরইগাছ, শজনেগাছ। এ ছাড়া দেয়াল ঘেঁষে বড় বড় গাছ সব কেটে ফেলেছে। দেয়ালের বাইরের গাছও কাটা হয়েছে। আর বাইরের দিকটা কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে দিয়েছে। ছাদের ওপর দুটো বাংকার করেছে, সেখানে র্যাব ও পুলিশ পাহারা দেয়, আর নিচে পুলিশ ও কারারক্ষীরা পাহারায় থাকে। দোতলা বাসা, সিঁড়িতে ওঠার মুখেই লোহার কলাপসিবল গেট, গেটে বড় তালা লাগানো থাকে সারা দিন। ওপরে পশ্চিম দিকের কোনার কামরায় আমার থাকার ব্যবস্থা। এই ঘরের জানালা দিয়েও সবুজ মাঠ ও গণভবন দেখা যায়। এই মাঠে ছেলেরা বল খেলতে আসত, কারাগার হওয়ার পর বন্ধ।
সমস্ত বাসাটা অত্যন্ত ময়লা ও নোংরা। পুরোনো গদি ছেঁড়া কাপড়চোপড়, পুরোনো কাগজপত্র সব ছড়ানো। পুব দিকের একটা কামরা এত নোংরা, মনে হলো যেন ময়লা ফেলার জায়গা। ঘরের মেঝে থেকে দেয়াল পর্যন্ত সবই ময়লা-ধুলায় ভরা, এমনকি যে টেবিল-চেয়ার আছে, সেগুলোতেও ধুলা-ময়লা ভরা। জেলখানায় নিয়ম আছে, পারসোনাল অ্যাকাউন্টে টাকা রাখা যায়, যাকে পিসি বলে। আমার সঙ্গে যে টাকা ছিল, সেই টাকা আমি পিসিতে জমা করলাম। অর্থাৎ, জেলারের হাতে দিলাম, এটাই নিয়ম। নিজেই টাকা খরচ করে তোয়ালে, গামছা, ভিম, হারপিক, ব্রাশ, ঝাড়ু ইত্যাদি কিনতে দিলাম। এই পিসির টাকা দিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা যায়, তবে সেখানেও কিছু নিয়ন্ত্রণ আছে। যা-ই হোক, আমাকে আমার ফরমায়েশমতো জিনিসগুলো কিনে দিল। একটা খাট, আমি বসার সঙ্গে সঙ্গেই ভেঙে পড়ে গেল। একখানা সোফার সেট, অত্যন্ত ময়লা ও নোংরা। বিছানার চাদর একদিকে ইঁদুরে কাটা, ছেঁড়া তোশকও অত্যন্ত ময়লা। মনে হয়, সব যেন গোডাউনে পড়ে ছিল। তবে তিনখানা করে নতুন চাদর ও তোয়ালে দেওয়া হয়েছে। তারই একটা চাদর সোফার ওপর বিছিয়ে রাত কাটালাম। পরদিন বললাম, ভাঙা খাট বদলে দিতে হবে। অথবা সরিয়ে ফেলতে হবে, আমি মাটিতেই ঘুমাব। কারণ আগের দিন, খাট ভেঙে গেলে ডিআইজি হায়দার সিদ্দিকী নির্দেশ দিয়েছিলেন, খাটের নিচে ইট দিয়ে ঠিক করে দিতে এবং তা-ই করা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও খাটখানা ব্যবহারের উপযুক্ত হয় না। যা-ই হোক, এক দিন পর খাটখানা বদলে দেয় এবং তা ঘটা করে পত্রিকায়ও প্রচার করে। আমার খাবার আসত কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে। মাঝেমধ্যে খাবার আসতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতো। আর খাবারের মেন্যু—যাক, সে বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। আমাকে তো তিন বেলা খাবার দিচ্ছে, কিন্তু কত মানুষ এক বেলাও খাবার পায় না। আল্লাহ যখন যেভাবে যাকে রাখেন, সেটাই মেনে নিতে হয়। আমার আব্বা যখন জেলে যেতেন, তাঁকেও তো কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। আমি তো তাও একটা বাসায়, একটা ভালো কামরায় আছি, যদিও ড্যাম্প পড়া স্যাঁতসেঁতে। আব্বাকে তো জেলখানায় সেলের ভেতরে রাখা হতো। সারা জীবন কত কষ্ট তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে এবং বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন আর এই কষ্ট সহ্য করেছেন। পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি জেলে গ্রীষ্মকালে যেমন গরম, তেমন শীতের সময় শীত। রুটি-ডাল ছাড়া তো কিছুই পেতেন না খেতে, যে খাবার আব্বা কখনোই পছন্দ করতেন না। তার পরও তাঁর মুখ থেকে কোনো দিন কোনো কষ্টের কথা আমরা শুনিনি। আমাদের কাছে তিনি কখনো বলতেন না। মাঝেমধ্যে কথার পিঠে কথা বের ুুহতো, অথবা মাকে কিছু কিছু বলতেন। নিজের কষ্টের কথা তিনি সব সময় চেপেই রাখতেন।
কারাগার থেকে পুব দিকে জানালায় দাঁড়ালে সংসদ ভবন দেখি। উত্তর দিকে গণভবন। রোজ সকাল-বিকেল যখনই মনে হয়, জানালায় দাঁড়াই। সবুজ মাঠ পেরিয়ে রাস্তায় জনগণের চলাফেরা দেখি। একদিন জানালায় দাঁড়িয়ে আছি, দেখি মোটাসোটা বাঁদরটা মাঠ পার হয়ে উত্তর দিকে চলে যাচ্ছে। এই বাঁদরটা প্রতিদিন দক্ষিণের দেয়ালে এসে দাঁড়াত। আমি কিছু খাবার ওপর থেকে ছুড়ে দিলেই নিয়ে যেত, দিনে দু-তিনবার আসত। কিন্তু আজ ও চলে যাচ্ছে। অত বড় মাঠ ধীরেসুস্থে হেঁটে হেঁটে পার হচ্ছে। আমি লক্ষ করলাম, কিছু দূর হেঁটে যায়, তারপর থামে, একবার পেছনে, একবার ডানে, একবার বাঁয়ে তাকায়। আবার হাঁটে। বারবার থেমে থেমে মাঠ পেরিয়ে লেকের পারে গাছের দিকে চলে গেল; যেদিকে গণভবন, সেই দিকে। বাঁদরটা মুক্ত, তাই হেঁটে হেঁটে মাঠটা পার হয়ে চলে গেল। আমি তো বন্দী, দোতলায় একদম একা, আমি ইচ্ছে করলেও মাঠ পেরিয়ে হেঁটে যেতে পারব না। আমার সে স্বাধীনতা নেই। কিন্তু আমার মনটা তো স্বাধীন, আমার মনটাকে তো বেঁধে রাখতে পারবে না, মনের কল্পনাতেই আমি সবুজ মাঠ পেরিয়ে যাচ্ছি, যাচ্ছি আর যাচ্ছি।
গণভবন ৬ মার্চ, ২০১০
গণভবনে প্রথম সকাল। গতকাল যমুনা থেকে গণভবনে এসে উঠেছি। এখানে এসেই প্রথমে দক্ষিণের জানালা খুলে দাঁড়ালাম। সংসদ ভবনের যে বাড়িটায় আমাকে বন্দী করে রেখেছিল, সেটা দেখা যায় কি না! গাছের ফাঁক দিয়ে বাড়িটা দেখা যাচ্ছিল।
২০০৭ সালের ১৬ জুলাই আমাকে বন্দী করে ওই বাড়িতে রাখা হয়। সাব-জেল হিসেবে ঘোষণা দেয়। সংসদ ভবনের অন্যান্য বাড়িতে স্পেশাল কোর্ট বসায়। একটার পর একটা মামলা দিয়ে হয়রানি করতে থাকে। ওই বাড়ির উত্তর দিকের জানালা দিয়ে গণভবন দেখা যেত।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আবিষ্কার করা হলো, সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ আমি। তাই প্রথমে দেশের বাইরে রাখার চেষ্টা করা হলো। কিন্তু সফল হলো না। পরে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে বিনা ওয়ারেন্টে টেনেহিঁচড়ে কোর্টে নিয়ে গেল। তারপর সাব-জেলে ১১ মাস বন্দী করে রাখল। সম্পূর্ণ একাকী নিঃসঙ্গ বন্দিখানায় ছিলাম। ওই বন্দিখানা থেকেই গণভবন দেখতাম। পূর্ব দিকে সংসদ ভবন আর উত্তর দিকে গণভবন।
আজ গণভবনে প্রথম সকাল হলো। যথারীতি সকাল পাঁচটায় ঘুম ভেঙে যায়। সাড়ে পাঁচটায় উঠে নামাজ পড়ি। জাতীয় পতাকা তোলার বিউগলের সুর শুনি। কোরআন তিলাওয়াতের জন্য লাইব্রেরিতে আসি। আগের বার যখন ছিলাম, এই পূর্ব দিকের ঘরটা লাইব্রেরি করেছিলাম। এখন আর সেসব বই নেই। সব বুকশেলফ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আমার কাছে লাইব্রেরি হিসেবে এটা পরিচিত। একটা শেলফ বসানো হয়েছে। আরও একটা বসিয়ে আবার লাইব্রেরি বানানোর ইচ্ছা আছে। যা-ই হোক, কোরআন তিলাওয়াতের পর ভাবলাম, একটু ঘুরে দেখি। তখনো ভালো করে আলো ফোটেনি। পাখির কলকাকলিতে মুখরিত গণভবন। আপন নিলয়ে পাখিরা ডানা ঝটপট করছে। এখনই উড়ে যাবে খাবারের সন্ধানে। গণভবনে প্রচুর গাছ ও পাখি। দক্ষিণের জানালা খুললাম। গাছে গাছে ভরা দূরে তেমন কিছু দেখা যায় না। তবে কারাগার থেকে যে নারকেলগাছটা সব সময় দেখতাম, সেটা আছে। এই গাছের পাতা বাতাসে নড়ে উঠত, তারই ফাঁকে ফাঁকে রাতের বেলা গণভবনে আলো দেখা যেত। দিনের বেলা কোনো কোনো অংশ দেখা যেত। এখান থেকে কারাগারের দেয়াল দেখা যায়। এখন ওই বাড়িতে হুইপ লিটন চৌধুরী থাকেন। ওই বাড়িতে ওঠার আগে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, উঠবেন কি না? সাব-জেল হিসেবে ব্যবহূত ওই বাড়িতে আমি বন্দী ছিলাম, সে কারণেও একটু দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। পরে আমার অনুমতি পেয়ে উঠেছেন। গাছের ফাঁকে পতাকাটা দেখতে পেলাম। দালানের কিছু অংশ দেখলাম। সোফিয়া ও তার মা খুব সকালে উঠে বসে আছে। তাদের কামরায় গেলাম। জয় ঘুমাচ্ছে। জয়, জয়ের বউ ও মেয়ে ঢাকায় আছে। ওদের নিয়েই গতকাল উঠেছি। মাগরিবের পর একটা মিলাদ পড়ালাম।
আল্লাহ সবই পারেন। গণভবনের মাঠ, তারপর রাস্তা, পাশে লেক, তার পরই বিশাল খেলার মাঠ। ওই মাঠের পাশেই বাড়িটায় বন্দী ছিলাম। আর এখন সেই সবুজ মাঠ পেরিয়ে যে গণভবন, সেখানে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উঠেছি। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গণভবনে ছিলাম। লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। সাহাবুদ্দীন সাহেব রাষ্ট্রপতি। ক্ষমতা হস্তান্তরের পরের দিন ১৬ জুলাই ২০০১ সালে গণভবনের সব টেলিফোন লাইন কেটে দেয়। বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে দেয়, যা কোনো দিন করতে পারে না। বাসা বদলাতেও সময় লাগে। এসএসএফ এই বাসায় থাকলে সিকিউরিটি ভালোভাবে নিশ্চিত করতে পারবে বলে জানায়। সরকারি আইন করা হয়, জাতির পিতার কন্যা হিসেবে সরকারি বাড়ি এবং পূর্ণ নিরাপত্তা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। গণভবনে আমার থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সুধা সদনের ভাড়াটে চলে যাওয়ার পর কিছু মেরামতের কাজ চলছিল। আমি মাস খানেক গণভবনে থেকে ওখানে চলে যাব, সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু এ ধরনের অপমান কীভাবে করে! অনেকে তো রাষ্ট্রপতি যে বাড়িতে থাকতেন, সে বাড়ি এক টাকার বিনিময়ে লিখে নিয়েছেন। আমার বাবাও তো রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় শাহাদাতবরণ করেন। তার পরও তো আমি এক টাকার বিনিময়ে কোনো সরকারি বাড়ি লিখে নিইনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে পাঁচ বছর পর ধানমন্ডির সুধা সদনে যাই। ২০০১ সালের ১৬ আগস্ট গণভবন ছেড়ে যাই। ২০১০ সালের ৫ মার্চ গণভবনে ফিরে এলাম। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেন, আবার কেড়ে নেন, আবার দেন। পবিত্র কোরআন শরিফের সূরা আল ইমরানের ২৬ আয়াতে পড়লাম: ‘কুলিল্লা-হুম্মা মা লিকাল্ মুলকি তু’তিল মুলকা মান তাশা-উ ওয়া তানযি’উল মুল্কা মিম্মান্ তাশা-উ ওয়া তু’ইযযু মান তাশা-উ অতু যিল্লু মান্ তাশা-উ; বিইয়াদিকাল খাইর।’ বলুন, হে আল্লাহ, রাজ্যের মালিক তো আপনিই! যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দেন, আর যার কাছ থেকে ইচ্ছা কেড়ে নেন। ইচ্ছামতো সম্মান দেন, আর ইচ্ছামতো লাঞ্ছিত করেন। আপনার হাতেই সব কল্যাণ নিহিত।
আল্লাহর ওপর সব সময় ভরসা রেখেছি। আজ তাই গণভবনে আবার ফিরে এসেছি। অনেক স্মৃতি আমাদের এই গণভবনকে ঘিরে। আব্বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এখানে ছিলেন। যদিও থাকতেন ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িতে। কিন্তু গণভবনে অফিস করতে আসতেন। দুপুরের খাবার এখানেই খেতেন, বিশ্রাম নিতেন। বিকেলে হাঁটতেন। মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। আমার ভাই ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ও লে. শেখ জামাল—দুই ভাইয়ের বিয়ে হয় এখানে। সামনে লেক, এই লেকে রাসেল মাছ ধরত। মাছ ধরে আবার ছেড়ে দিত। জয় ছোটবেলায় রাসেলের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিন বেড়াতে আসত। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ছিল এই গণভবন। প্রখ্যাত আর্কিটেক্ট লুই কানের ডিজাইন অনুসারে গণভবন তৈরি করা হয়েছে।
আর এখন আমি গণভবনে। সাব-জেল দেখছি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এই বাড়িতে গতকাল এসেছি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। যে নির্বাচনে ধর্ম-বর্ণ-দলমত-নির্বিশেষে সব শ্রেণী ও পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন। এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার ছিল আগের ভোটার লিস্টে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এই তালিকা তৈরি করে দেয় দ্রুততম সময়ে। অসাধ্য সাধন তারা করেছে। ন্যাশনাল আইডি কার্ড ও ছবিসহ ভোটার তালিকা করা বেশ দুরূহ কাজ ছিল। তবে এটা করার মধ্য দিয়ে জনগণের ভোট নিয়ে খেলা করার যে প্রক্রিয়া সামরিক শাসকেরা চালু করেছিল, তারই অবসান হলো।
এবারের নির্বাচনের সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় ছিল মানুষের ভোট দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা। এ দেশের উচ্চবিত্ত, যাঁদের আমরা এলিট শ্রেণী বলি, তাঁরা খুব কমই ভোটকেন্দ্রে যান ও ভোট দেন। এবারে তাঁরা তাঁদের বাড়ির কাজের বুয়া থেকে শুরু করে সবাইকে নিয়েই ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রে গিয়েছিলেন এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেছেন, ভোট দিয়েছেন। ওই লাইনে আশপাশের বস্তির লোকেরাও এসেছেন। পাশাপাশি লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতেও দেখা গেছে। হিন্দু-খ্রিষ্টান-বৌদ্ধ সব ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে, নিরাপদে ভোট দিতে পেরেছেন, যা ২০০১ সালের নির্বাচনে দেখা যায়নি। বাড়ির গেটে তালাও দেওয়া হয়েছে, যাতে বাড়ি থেকে বের হতে না পারেন, ভোটকেন্দ্রে যেতে না পারেন। এ ছাড়া মারধর, অত্যাচার তো ছিলই। কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এভাবে যদি প্রতিটি নির্বাচন প্রতিবার অনুষ্ঠিত হয় এবং মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচন করতে পারে, তাহলে এ দেশ থেকে অন্যায়-অত্যাচার, দুর্নীতি, সন্ত্রাস দূর হবে। সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। সব থেকে বড় কথা হলো, দ্রুত দেশের উন্নতি হবে। সাংসদ ও মন্ত্রীরা তৎপর থাকবেন। কারণ, ভোটের জন্য জনগণের কাছে গিয়ে হাত পাততে হবে না। তাঁদের এ কথাটা মনে রেখেই কাজ করতে হবে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে।
ধীরে ধীরে আলো ফুটেছে। এখন রোদ ঝলমল করা সকাল, দখিনা বাতাসে শীতল কোমল আবেশ। পাখির কলকাকলিতে মুখরিত পরিবেশ। বাংলাদেশের জনগণের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করে উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাদের ভালোবাসার প্রতিদান আমাকে দিতেই হবে। জনগণের জন্য একটা সুন্দর, উন্নত জীবন উপহার দেব—এই আমার প্রতিজ্ঞা।
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
=============================
স্মরণ- 'রবীন্দ্রনাথ—সার্ধশত জন্মবার্ষিকীতে' স্মরণ- 'জননেতা দেওয়ান ফরিদ গাজী' আলোচনা- 'প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন পর্যায়' আলোচনা- 'কর্মপরিবেশঃ স্বর্গে তৈরি' গল্পালোচনা- ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া...’ আন্তর্জাতিক- উইকিলিকসঃ হাটে হাঁড়ি ভাঙা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ গল্পসল্প- ওরা ধান কুড়ানির দল শিক্ষা- আদিবাসী পাহাড়ে বিশ্ববিদ্যালয় চাই জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের অর্থের মূল উৎস সৌদি আরব রাজনৈতিক আলোচনা- এমন বন্ধু থাকলে... শিল্প-অর্থনীতি শেয়ারবাজারের সুন্দরী প্রতিযোগিতা-তত্ত্ব সাক্ষাৎকার- খাদ্যনিরাপত্তার জন্য বিকল্প উপায় খুঁজতা হবে খবর, প্রথম আলোর- দলীয় স্বার্থ বড় করে দেখবেন না মার্কিন কূটনীতিকদের গোপন তারবার্তাঃ পাকিস্তানে জঙ্গি নির্মূলে ১০-১৫ বছর লাগবে অধ্যাপক ইউনূসের অর্থ স্থানান্তর : গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাখ্যা শিল্প-অর্থনীতি 'সময় এসেছে মাথা তুলে দাঁড়াবার' প্রকৃতি- 'কিয়োটো প্রটোকল ভেস্তে যাচ্ছে, কানকুনে কী হবে? আলোচনা- 'মেয়েদের লাঞ্ছনা বন্ধ করতে কঠোর হতে হবে' যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'আগ্নেয়গিরির ওপরে পিকনিক' আলোচনা- 'হিমালয়ের কোলে এক টুকরো দক্ষিণ এশিয়া' স্মরণ- 'মানুষের জন্য যিনি জেগে থাকতেন' রাজনৈতিক আলোচনা- 'আবার আসিব ফিরে!' আলোচনা- 'রাজকীয় সম্মেলন' যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'অসারের তর্জন-গর্জন' আলোচনা- 'একজন নোবেল বিজয়ী, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও ক্ষুদ্রঋণের ফাঁদ' স্মৃতি ও গল্প- সেই আমি এই আমি গল্প- 'ঘুঁটি' আন্তর্জাতিক- অং সান সু চির মুক্তি : মিয়ানমারে কি কি গণতন্ত্র আসছে? শিল্পি- শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদের সৃষ্টিসমগ্র সাহিত্যালোচনা- তান তুয়ান এঙের উপন্যাস দ্য গিফট গিফট অব রেইন খবর- বন্ধ তাবানীতে লোক নিয়োগ ইতিহাস- আমাদের ভাববিশ্ব ও বৌদ্ধবিহার স্মৃতি ও ইতিহাস- ঢাকায় আমার প্রথম তিন দিনের স্মৃতিরোমন্থন আলোচনা- একমাত্র প্রবাল দ্বীপটি কি হারিয়ে যাবে
দৈনিক প্রথম আলোর সৌজন্যর
লেখকঃ শেখ হাসিনা
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
স্মরণ- 'রবীন্দ্রনাথ—সার্ধশত জন্মবার্ষিকীতে' স্মরণ- 'জননেতা দেওয়ান ফরিদ গাজী' আলোচনা- 'প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন পর্যায়' আলোচনা- 'কর্মপরিবেশঃ স্বর্গে তৈরি' গল্পালোচনা- ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া...’ আন্তর্জাতিক- উইকিলিকসঃ হাটে হাঁড়ি ভাঙা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ গল্পসল্প- ওরা ধান কুড়ানির দল শিক্ষা- আদিবাসী পাহাড়ে বিশ্ববিদ্যালয় চাই জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের অর্থের মূল উৎস সৌদি আরব রাজনৈতিক আলোচনা- এমন বন্ধু থাকলে... শিল্প-অর্থনীতি শেয়ারবাজারের সুন্দরী প্রতিযোগিতা-তত্ত্ব সাক্ষাৎকার- খাদ্যনিরাপত্তার জন্য বিকল্প উপায় খুঁজতা হবে খবর, প্রথম আলোর- দলীয় স্বার্থ বড় করে দেখবেন না মার্কিন কূটনীতিকদের গোপন তারবার্তাঃ পাকিস্তানে জঙ্গি নির্মূলে ১০-১৫ বছর লাগবে অধ্যাপক ইউনূসের অর্থ স্থানান্তর : গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাখ্যা শিল্প-অর্থনীতি 'সময় এসেছে মাথা তুলে দাঁড়াবার' প্রকৃতি- 'কিয়োটো প্রটোকল ভেস্তে যাচ্ছে, কানকুনে কী হবে? আলোচনা- 'মেয়েদের লাঞ্ছনা বন্ধ করতে কঠোর হতে হবে' যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'আগ্নেয়গিরির ওপরে পিকনিক' আলোচনা- 'হিমালয়ের কোলে এক টুকরো দক্ষিণ এশিয়া' স্মরণ- 'মানুষের জন্য যিনি জেগে থাকতেন' রাজনৈতিক আলোচনা- 'আবার আসিব ফিরে!' আলোচনা- 'রাজকীয় সম্মেলন' যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'অসারের তর্জন-গর্জন' আলোচনা- 'একজন নোবেল বিজয়ী, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও ক্ষুদ্রঋণের ফাঁদ' স্মৃতি ও গল্প- সেই আমি এই আমি গল্প- 'ঘুঁটি' আন্তর্জাতিক- অং সান সু চির মুক্তি : মিয়ানমারে কি কি গণতন্ত্র আসছে? শিল্পি- শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদের সৃষ্টিসমগ্র সাহিত্যালোচনা- তান তুয়ান এঙের উপন্যাস দ্য গিফট গিফট অব রেইন খবর- বন্ধ তাবানীতে লোক নিয়োগ ইতিহাস- আমাদের ভাববিশ্ব ও বৌদ্ধবিহার স্মৃতি ও ইতিহাস- ঢাকায় আমার প্রথম তিন দিনের স্মৃতিরোমন্থন আলোচনা- একমাত্র প্রবাল দ্বীপটি কি হারিয়ে যাবে
দৈনিক প্রথম আলোর সৌজন্যর
লেখকঃ শেখ হাসিনা
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
No comments