আলোচনা- 'একটি 'উজ্জ্বল ভাবমূর্তির' এভারেস্ট থেকে পতন' by আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী

০০৬ সালে শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর বিখ্যাত ক্ষুদ্রঋণ ব্যবসায়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস গর্বিত বাংলাদেশের এক বিরাট সভায় দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, 'আমরা এখন আনন্দের এভারেস্ট চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছি।' নোবেল বিজয়ীর নিজের মুখে এই কথাটি উচ্চারিত হওয়ার পর চার বছরও অতিক্রান্ত হয়নি; অভিযোগ উঠেছে নরওয়ে, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস ও জার্মানির গ্রামীণ ব্যাংককে দেওয়া অর্থ থেকে ১০ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ ড. ইউনূস গ্রামীণ কল্যাণ নামের নিজের অন্য এক প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে নিয়েছেন।
তাঁর বিরুদ্ধে কর ফাঁকি দেওয়ার লাভজনক প্রতিষ্ঠানকে অলাভজনক বলে দেখানোর এবং ক্ষুদ্রঋণের দ্বারা দারিদ্র্য মোচনের বদলে গরিব ঋণদাতাদের সুদের জাঁতাকলে ফেলে আরো নিঃস্ব করার অভিযোগ উঠেছে। ফলে তাঁর ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পকে নাম দেওয়া হয়েছে 'দরিদ্রদের জন্য ইউনূস ফাঁদ'। সারা বিশ্বে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে এই অভিযোগগুলো ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন, আমরা কি এখনো আনন্দের এভারেস্টের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছি? না, নষ্ট ভাবমূর্তি নিয়ে এভারেস্টের নিচে অতল খাদে পতিত হয়েছি?
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগগুলো দেশে তাঁর কোনো ব্যবসায়ী প্রতিপক্ষ তোলেননি। অভিযোগগুলো নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এনআরকের প্রতিবেদক হ্যারল্ড এরাকার (Harald Eraker) তুলেছেন এবং ১ ডিসেম্বর ইন্টারনেটে তা প্রকাশ হয়। ড. ইউনূস তাঁর নোবেল পুরস্কার পাওয়ার বক্তৃতায় যে বলেছিলেন 'তিন লাখ নারী গ্রামীণফোনের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন করেছেন'_এই উক্তির সত্যতাকে খণ্ডন করে নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনটির প্রতিবেদক তাঁর প্রতিবেদনে বলেছেন, 'গ্রামীণফোনের উপকারভোগী নারীরা আর নেই। কথিত ৫০ হাজার গ্রামে একটিও পল্লীফোনের দেখা পাওয়া যায়নি।' অন্যদিকে নরওয়েরই প্রতিষ্ঠান 'টেলিনর' বাংলাদেশ থেকে ড. ইউনূস কর্তৃক 'অলাভজনক প্রতিষ্ঠান' বলে ঘোষিত গ্রামীণফোন থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ যে আয় করেছে তার বিবরণ প্রতিবেদনটিতে রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গ্রামীণ টেলিকমের কার্যক্রমকে ড. ইউনূস তাঁর নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির বক্তৃতায় অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বলে ঘোষণা করেন। কিন্তু বাস্তবে গত আট বছরে গ্রামীণফোন ও টেলিনর যৌথভাবে ৮৫ কোটি ৫০ লাখ নরওয়েজিয়ান ক্রোনার (প্রায় এক হাজার ১৮ কোটি টাকা) লাভ করেছে।
ড. ইউনূস দাবি করেছিলেন, 'তিন লাখ নারী গ্রামীণফোনের মাধ্যমে দারিদ্র্যমুক্তি ঘটিয়েছে।' এ দাবির সত্যতা খণ্ডন করে লন্ডনের ওভারসিস ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের গবেষক মিলফোর্ড বেইটম্যান এনআরকে টেলিভিশনকে বলছেন, 'এই টেলিফোন ব্যবসা করতে গিয়ে গরিব নারীরা আরো গরিব হয়েছে।' টেলিফোন ব্যবসার মাধ্যমে দারিদ্র্যমোচনের প্রলোভন দেখিয়ে কিভাবে বাংলাদেশে গরিব নারীদের বাণিজ্যিক ফাঁদে ফেলা হয়েছে তারও বিবরণ রয়েছে টেলিভিশনটির প্রতিবেদনে। গ্রামীণ নারীদের গ্রামীণফোন কেনার জন্য একবার ঋণ দেয় গ্রামীণ ব্যাংক। ওই টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়। ঋণ নিয়ে এই ফোন কেনার সময় তাদের সব তথ্য জানানো হয় না। বাংলাদেশের অনেক গ্রামেই ফোনসেট চার্জ করার মতো বিদ্যুৎ নেই। তখন এই নারীদের দ্বারস্থ হতে হয় গ্রামীণ ব্যাংকেরই আরেকটি সংস্থা গ্রামীণ শক্তির। আবার তাদের কাছ থেকে ঋণ নিতে হয় সোলার প্যানেল কেনার জন্য।
টেলিভিশনের প্রতিবেদক এই ফোন ব্যবসার নামে বাংলাদেশ সরকারকে কোটি কোটি টাকার কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। তাঁর দাবি অনুযায়ী, ভিওআইপির মাধ্যমে হাজার হাজার কল টার্মিনেট করে কোটি কোটি টাকার ট্যাঙ্ ফাঁকি দেওয়ার কৌশল ধরা পড়ে ২০০৭ সালে। সে সময় গ্রামীণফোনকে ২৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার (১৭১ কোটি ৫০ লাখ টাকা) জরিমানা দিতে হয়। ২০০৮ সালে আবার একই কারণে ৩৭ মিলিয়ন ডলার (২৫৯ কোটি টাকা) দিতে হয় জরিমানা বাবদ।
এ ছাড়া নিজের প্রতিষ্ঠানগুলো লাভজনক হওয়া সত্ত্বেও বছরের পর বছর তিনি করমুক্ত থাকার চেষ্টা করেছেন এবং তাতে সফল হয়েছেন। তাঁর নোবেল পুরস্কারের অর্থের করও তিনি মওকুফ করার চেষ্টায় নোবেল পুরস্কারদাতা কমিটির কাছ থেকেও সুপারিশপত্র আদায় করে তা ব্যবহার করেন। নোবেল লরিয়েট ড. ইউনূসের এসব কীর্তিকে ভিত্তি করেই নরওয়ের টেলিভিশন যে ডকুমেন্টারি ফিল্ম গত ৩০ নভেম্বর সম্প্রচার করে তার শিরোনাম 'ক্ষুদ্রঋণের ফাঁদে'। এ তথ্যচিত্রটি দীর্ঘ গবেষণার পর নির্মাণ করেন ডেনমার্কের সাংবাদিক টম হাইনেমান। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য তিনি ২০০৭ সালে ডেনিশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কর্তৃক বিশেষ পুরস্কার লাভ করেন।
তিনি বলেছেন, 'ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কথা বলার জন্য ছয় মাস চেষ্টা করেছি। তিনি দেখা করতেই রাজি হননি।' তাঁর আরো অভিযোগ, কোটি কোটি টাকা নিয়ে এই নোবেলজয়ী যে অনিয়ম করেছেন, তা যাতে প্রকাশ না পায় সে জন্য ১৯৯৮ সালের ১ এপ্রিল তিনি নরওয়ের দাতা সংস্থা নোরাডের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি চিঠি লেখেন। তাতে তিনি বলেন, 'আপনার সাহায্য আমার দরকার। সরকার এবং সরকারের বাইরের মানুষ বিষয়টি জানতে পারলে আমাদের সত্যিই সমস্যা হবে।' তাঁর এই অনুরোধে নোরাড, ঢাকার নরওয়ে দূতাবাস এবং বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ সম্পর্কে কথাবার্তা বলতে বিরত থাকেন।
৩০ নভেম্বর নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ড. ইউনূস সম্পর্কিত তথ্যচিত্রের এবং ১ ডিসেম্বর ইন্টারনেটে প্রচারিত হ্যারল্ড এরাকারের প্রতিবেদনটির বিবরণ মিলিয়ে দেখলে এগুলোকে আর্থিক অনিয়ম না বলে সরাসরি দুর্নীতি আখ্যা দেওয়া যায় কি না, তা এই ব্যাপারে একটি সুষ্ঠু তদন্ত হলেই জানা যাবে। জানা গেছে, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে তহবিল স্থানান্তরের বিষয়টি তদন্ত করছে নরওয়ে। নরওয়ের এক মন্ত্রী মি. এরিক বিবিসিকে বলেছেন, 'যত ভালো উদ্দেশ্যেই ওই অর্থ (সরিয়ে ফেলা ১০ কোটি ডলার) ব্যয় করা হোক না কেন, যে খাতের জন্য অর্থ দেওয়া হয়েছে তা অন্য খাতে ব্যবহার নরওয়ে সরকারের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।'
এই গুরুতর অভিযোগগুলো উত্থাপিত এবং বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হওয়ায় শুধু ব্যক্তি হিসেবে ড. ইউনূসের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি নয়, তাঁর বহু প্রশংসিত ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পেরও সুনাম ও খ্যাতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে। নরওয়ে টেলিভিশনের প্রামাণ্যচিত্রে ডেভিড রডম্যান, জোনাথান মারডোক, টমাস ডিক্টার ও মিলফোর্ড বেটম্যানের মতো সমাজবিজ্ঞানীদের অভিমত প্রচার করা হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, 'ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প চালু হওয়ার পরের ৩৫ বছরেও এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, যাতে বলা যেতে পারে ক্ষুদ্রঋণ বা মাইক্রো ক্রেডিট গরিব মানুষের দারিদ্র্য ঘোচাতে পারে।' একই কথা বলেছেন, ১ ডিসেম্বর ইন্টারনেটে প্রচারিত প্রতিবেদনের সাংবাদিক হ্যারল্ড এরাকার। তিনি ড. ইউনূসের নোবেল বক্তৃতার একটি দাবিকে অসত্য আখ্যা দিয়ে বলেছেন, 'বাংলাদেশে দুই বছর ঘুরেও সরাসরি গ্রামীণফোনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত একজন নারীরও দেখা পাইনি। অথচ ড. ইউনূস তাঁর নোবেল বক্তৃতায় বলেছেন, তিন লাখ নারী গ্রামীণফোনের মাধ্যমে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে।' নরওয়ে টেলিভিশনের তথ্যচিত্রের নির্মাতা টম হাইনেমান ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প সম্পর্কে বলেছেন, 'ক্ষুদ্রঋণ আসলেই দরিদ্রদের সাহায্য করছে কি না তা জানার জন্য আমি বাংলাদেশ, ভারত ও মেঙ্েিকা ঘুরেছি। দেখেছি, দরিদ্র মানুষ আরো বেশি ঋণের জালে বন্দি হয়েছে ক্ষুদ্রঋণের কারণে। জানা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব ভারতের অন্ধ্র রাজ্যে অনেক গরিব কৃষক ক্ষুদ্রঋণের সুদের বোঝা বইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন।'
এ রকম ঘটনা বাংলাদেশেও ঘটেছে। গ্রামীণ ব্যাংকের মতো এত উচ্চহারে সুদ সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকও ধার্য করে না। ঋণ গ্রহণকারীরা সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, 'কেউ বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছে ঋণ শোধের জন্য। আবার ঋণের সাপ্তাহিক কিস্তি শোধ করতে না পারায় কারো ঘরের টিন তুলে নিয়ে গেছে ঋণদাতা সংস্থা। এ ব্যাপারে একটি মজার তথ্য সাংবাদিকদের দিয়েছেন একজন ঋণ গ্রহীতা হালিমা বেগমের ছেলে বাবুল। ঋণের টাকায় তাঁরা মাটির ঘরও ভালোভাবে তুলতে পারেননি। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকের স্থানীয় কর্মকর্তারা সেই মাটির ঘরের পাশের পাকা দালানের ছবি তুলে তাঁদের প্রচারকাজে লাগিয়েছে। আসলে দালানটি আবুধাবি প্রবাসী এক ব্যক্তির।'
এই যদি হয় 'বহু ঢক্কা নিনাদিত' ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের আসল চেহারা, তাহলে বিদেশের দাতা সংস্থা থেকে মিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার বা পাউন্ডের সাহায্য এনে গরিব দেশগুলোতে উপকৃত হচ্ছে কারা? এ সম্পর্কে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রথম ঋণগ্রাহক চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার জোবরা গ্রামের (ইউনূস সাহেবের নিজের গ্রাম) সুফিয়া খাতুনের ছোট মেয়ে নুরুন্নাহার বেগম সাংবাদিকদের কাছে যে বক্তব্য রেখেছেন, তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। নুরুন্নাহার বলেছেন, 'আমার আম্মা (প্রয়াত সুফিয়া খাতুন) ক্ষুদ্রঋণের প্রথম গ্রাহক। তাঁকে দেখিয়ে ইউনূস সাহেব দেশে-বিদেশে অনেক নাম করেছেন; কিন্তু আমাদের কিছুই হয়নি।' এরপর মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
দেশ-বিদেশের সংবাদপত্রে, এমনকি লন্ডনের টাইমস পত্রিকায়ও ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগপূর্ণ খবর এমন ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছে যে, এই অভিযোগগুলো আরো বিস্তারিতভাবে আমার লেখায় পুনরুল্লেখ দরকার নেই। আমার ধারণা ছিল, ড. ইউনূস দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুন, এই গুরুতর অভিযোগের সঙ্গে সঙ্গে জোর প্রতিবাদ জানাবেন। চাই কি, যারা এই অভিযোগ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার উদ্যোগ নেবেন। কারণ, এ অভিযোগগুলো শুধু তাঁর নিজের বা তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নয়, বাংলাদেশের জন্যও সুনামহানিকর। কিন্তু এ অভিযোগ সম্পর্কে তাঁর দীর্ঘ কয়েক দিনের নীরবতা বিস্ময়কর। কেবল ঢাকার একটি সংবাদপত্রের বারংবার জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রামীণ ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের এক প্রতিনিধি জানান, 'ড. ইউনূস এখন বিদেশে আছেন। ১০ ডিসেম্বর তিনি দেশে ফিরবেন। তিনি না আসা পর্যন্ত কোনো বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি।'
পরে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম শাহজাহান জানান, 'এই অভিযোগ অসত্য এবং এসব নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। শিগগিরই গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানানো হবে।' এর পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ ডিসেম্বর রবিবার ঢাকায় এক সাংবাদিক-বৈঠকে প্রকাশ করেন ড. ইউনূস সম্পর্কে আরো একটি গুরুতর অভিযোগ। তিনি বলেন, শুরুতে গ্রামীণ ব্যাংকের সরকারি শেয়ার ৬০ শতাংশ থাকলেও এখন তা ২৫ শতাংশে নেমে এসেছে। উঁনি (ড. ইউনূস) পারলে সরকারের শেয়ার শূন্য করে দিতেন। তবে সরকার সেটা হতে দেয়নি। প্রতিষ্ঠানটিকে এমনভাবে কবজা করা হয়েছে, যেন এটা একটা ব্যক্তিগত সম্পত্তি।' এ অভিযোগটি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'ড. ইউনূস সম্পর্কে অভিযোগগুলোর ভালোভাবে তদন্ত হওয়া উচিত।'
সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিদেশে থাকা অবস্থায়ও ড. ইউনূসের টনক নড়িয়েছে। তিনি আর নীরব থাকতে পারেননি। ৬ ডিসেম্বরের প্রথম আলোতে (ড. ইউনূস সম্পর্কিত অভিযোগ এই তথাকথিত নিরপেক্ষ পত্রিকাটি প্রথম দিন ছাপায়নি। চাপা দিয়েছিল) খবর ছাপা হয়েছে, ড. ইউনূস পর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকে বার্তা পাঠিয়েছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর তদন্ত করার কথাকে অভিনন্দন জানান। এটাও এক রহস্যজনক ব্যাপার। গ্রামীণ ব্যাংকের তহবিল সরানো এবং অন্যান্য অনিয়ম সম্পর্কে অভিযোগ তুলেছে বিদেশি সংবাদমাধ্যম, নরওয়ে তার তদন্ত করারও পদক্ষেপ নিয়েছে।
এই অবস্থায় এ গুরুতর অভিযোগগুলোর তো সরাসরি জবাব দেওয়ার দায়িত্ব ড. ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংকের। তিনি সেই প্রাথমিক দায়িত্ব পালন করা এড়িয়ে গিয়ে কেবল বাংলাদেশের সরকারি তদন্তের জন্য অপেক্ষা করবেন কেন? তাঁর এই অভিনন্দন জানানোর ভাষা ও ভাব দেখে মনে হয়, তাঁকে অভিযোগমুক্ত করার দায়িত্ব যেন বাংলাদেশ সরকারের এবং এই ব্যাপারে সরকারের সম্ভাব্য তদন্তের জন্যই তিনি অপেক্ষা করতে চান। তিনি বিদেশের অভিযোগ ও তদন্তকে আগে গুরুত্ব দিতে চান না। এটা কৌশল হিসেবে ভালো হতে পারে, কিন্তু নোবেল লরিয়েটের ক্ষতিগ্রস্ত ভাবমূর্তি উদ্ধার করার কাজে সহায়ক হবে না। বরং তাঁর ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিগগিরই 'গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে পুরো বিষয় জানানো হবে' বলে যে কথা বলেছেন, সেটি দেরি না করে দ্রুত জানানো হলেই মাত্র ড. ইউনূস সঠিক পদক্ষেপ নেবেন।
গ্রামীণ ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প নিয়ে আমার কখনো উৎসাহ ছিল না। উন্নয়নশীল দেশের গরিবদের জন্য গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের এই ফাঁদ এবং তাতে ড. ইউনূসের ভূমিকা সম্পর্কে বহু লেখায় কঠোর সমালোচনা করেছি। এমনকি ২০০৬ সালে শান্তির জন্য তাঁর নোবেল পুরস্কার পাওয়াটাও যুদ্ধবাদী পশ্চিমা দেশগুলোর, বিশেষ করে আমেরিকার তাঁকে একধরনের উৎকোচ দান (পশ্চিমা স্বার্থের ধ্বজাধারী হওয়ায়) বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। সে প্রসঙ্গ এখন থাক। আপাতত দেখা যাক স্বখাত সলিল থেকে তিনি নিজের এবং দেশের সুনাম উদ্ধার করতে পারেন কি না। তিনি তা পারুন এই কামনা-ই করি।
লন্ডন ৬ ডিসেম্বর, সোমবার ২০১০
=============================
গল্পালোচনা- 'আসি আসি করে আশিতে আসবে!'  রাষ্ট্র ও রাজনীতিঃ সবুজ মাঠ পেরিয়ে  স্মরণ- 'রবীন্দ্রনাথ—সার্ধশত জন্মবার্ষিকীতে'  স্মরণ- 'জননেতা দেওয়ান ফরিদ গাজী'  আলোচনা- 'প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন পর্যায়'  আলোচনা- 'কর্মপরিবেশঃ স্বর্গে তৈরি'  গল্পালোচনা- ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া...’  আন্তর্জাতিক- উইকিলিকসঃ হাটে হাঁড়ি ভাঙা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ  গল্পসল্প- ওরা ধান কুড়ানির দল  শিক্ষা- আদিবাসী পাহাড়ে বিশ্ববিদ্যালয় চাই  জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের অর্থের মূল উৎস সৌদি আরব  রাজনৈতিক আলোচনা- এমন বন্ধু থাকলে...  শিল্প-অর্থনীতি শেয়ারবাজারের সুন্দরী প্রতিযোগিতা-তত্ত্ব  সাক্ষাৎকার- খাদ্যনিরাপত্তার জন্য বিকল্প উপায় খুঁজতা হবে  খবর, প্রথম আলোর-  দলীয় স্বার্থ বড় করে দেখবেন না  মার্কিন কূটনীতিকদের গোপন তারবার্তাঃ পাকিস্তানে জঙ্গি নির্মূলে ১০-১৫ বছর লাগবে  অধ্যাপক ইউনূসের অর্থ স্থানান্তর : গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাখ্যা  শিল্প-অর্থনীতি 'সময় এসেছে মাথা তুলে দাঁড়াবার'  প্রকৃতি- 'কিয়োটো প্রটোকল ভেস্তে যাচ্ছে, কানকুনে কী হবে?  আলোচনা- 'মেয়েদের লাঞ্ছনা বন্ধ করতে কঠোর হতে হবে'  যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'আগ্নেয়গিরির ওপরে পিকনিক'  আলোচনা- 'হিমালয়ের কোলে এক টুকরো দক্ষিণ এশিয়া'  স্মরণ- 'মানুষের জন্য যিনি জেগে থাকতেন'  রাজনৈতিক আলোচনা- 'আবার আসিব ফিরে!'  আলোচনা- 'রাজকীয় সম্মেলন'  যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'অসারের তর্জন-গর্জন'  আলোচনা- 'একজন নোবেল বিজয়ী, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও ক্ষুদ্রঋণের ফাঁদ'  স্মৃতি ও গল্প- সেই আমি এই আমি  গল্প- 'ঘুঁটি'  আন্তর্জাতিক- অং সান সু চির মুক্তি : মিয়ানমারে কি কি গণতন্ত্র আসছে?  শিল্পি- শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদের সৃষ্টিসমগ্র  সাহিত্যালোচনা- তান তুয়ান এঙের উপন্যাস দ্য গিফট গিফট অব রেইন  খবর- বন্ধ তাবানীতে লোক নিয়োগ  ইতিহাস- আমাদের ভাববিশ্ব ও বৌদ্ধবিহার


দৈনিক কালের কণ্ঠ সৌজন্যর
লেখকঃ আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.