ক্ষমতা বড়, না জনতা বড় by আই এ রেহমান
বেশ কিছুদিন হলো পাকিস্তানের রাজনীতিবিদেরা এমন কিছু কাজ করে চলেছেন, যার মূল্য দিতে হবে দেশকে। এতে কেবল রাষ্ট্রের শক্তি ও সময়ই নষ্ট হচ্ছে না, জনস্বার্থের বিষয়ে উদাসীনতার মাধ্যমে গণতন্ত্রের প্রতি জনগণের বিশ্বাসেরই ক্ষতি করছে।
চলতি হাঙ্গামার শুরু হলো তখনই, যখন ফেডারেল ক্যাবিনেটে জামাতে উলামায়ে ইসলামের (জেইউই) একজন সদস্য প্রকাশ্যে পিপিপির (ক্ষমতাসীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি) এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে হজযাত্রার আয়োজন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুললেন এবং মন্ত্রীও একই সুরে পাল্টা জবাব দিলেন। সম্ভবত তাঁরা দুজনই তাঁদের মতপ্রকাশের অধিকারের সীমাটা ভুলে গিয়েছিলেন। অথবা হজের মতো পবিত্র বিষয়ের চেয়ে এ নিয়ে ব্যবসাটাই তাঁদের কাছে বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী প্রথমে বিষয়টাকে তেমন পাত্তা দেননি। তিনি দুজনকেই থামতে বলেন, কিন্তু তাঁরা কথা না শুনলে দুজনকেই বরখাস্ত করেন। এই বরখাস্ত যতটা না ছিল তাঁদের দুর্নীতির জন্য, তার চেয়ে বেশি হলো তাঁর কথা অমান্য করার জন্য। এ ঘটনায় এটাও বোঝা গেল, পিপিপি জোটের শরিকদের তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। এটা সম্ভব যে তাঁরা ভেবেছেন, জোটের নেতারা ক্ষমতার মোহে আটকে থাকলে পিপিপির পক্ষে এককভাবে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব। বিচার বিভাগীয় নিয়োগের বেলায় সংসদীয় কমিটির সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও সেটা দেখা গেছে। কিন্তু এবার সেটা কাজে লাগেনি। পিপিপির নেতৃত্ব বুঝতে পারেনি মাওলানা ফজলুর রহমান নিজের মূল্য কতটা বাড়িয়ে তুলতে পারবেন। পিপিপির নেতারা যখন জেইউইর প্রধানের রাগ কমাতে ব্যস্ত, তখন আরেকটা ঘটনা ঘটল। মন্ত্রীদের কেবল একটি বা দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বই পালন করতে হয় না, রাজনৈতিক কোন্দলেও ভূমিকা রাখতে হয়। এটা করতে গিয়েই সিন্ধুর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমকিউএমকে খেপিয়ে তুলল। সরকারি জোটের মধ্যেও পড়ল এ ঘটনার চাপ।
গুজব রয়েছে, সরকার নিজেই নিজের ক্ষতি করে বসেছে। এদিকে মুসলিম লীগের নেতা মিয়া নওয়াজ শরিফ সরদার মুমতাজ ভুট্টোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে হাওয়া কোন দিকে বয়, তার দিকে নজর রাখছেন। ওদিকে জারদারিও অবশেষে নওয়াজ শরিফের চিঠির উত্তর দিয়েছেন। এবং এই চিঠি-বোমা নওয়াজের কাছে পৌঁছানোর আগেই মিডিয়ায় প্রকাশ করে বিরাট আরেকটা ভুল করে বসলেন। এতে মিয়া সাহেবের দক্ষ আক্রমণকারীরা সুযোগ পেয়ে গেল জারদারির দিকে পাল্টা আক্রমণ চালানোর। সবই ঘটে গেল, চিঠিতে আসলেই কী লেখা আছে, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার আগেই।
এখন এই রাজনৈতিক মূকাভিনয়ের সব পাত্রপাত্রীকে দেখা যাচ্ছে হঠাৎ করে জনগণের মঙ্গল করা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠতে। পরের নির্বাচনের আগে এখন কারোরই আর ক্ষমতা নিয়ে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ নেই। তাঁরা সরকারের ক্ষতিও করতে চান না। সরকারের সমালোচকেরাও এতই দরদি হয়ে উঠেছেন, কোনো বাস্তব প্রস্তাব তুলতেও তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন। বিরোধী দলও দুঃখে আছে, কারণ সরকারি দল নিজের ধ্বংসের গতি কোনোভাবেই থামাতে পারছে না।
কিন্তু পুরোনো দিনের কতিপয় গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক নেতাদের ইচ্ছামতো চলাকে পছন্দ করছেন না। তাঁরা পিপিপি ও পিএমএলের (এন) মধ্যে স্বাক্ষরিত গণতন্ত্র সনদের ২৫ নম্বর দফাটি মনে করিয়ে দিচ্ছেন। তাতে বলা হয়েছিল, ‘দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশের লক্ষ্যে জাতীয় গণতন্ত্র কমিশন গঠন করা হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য তাদের সহযোগিতাও দেওয়া হবে। এটা করা হবে সংসদে তাদের আসনের সংখ্যানুপাতে এবং স্বচ্ছতার ভিত্তিতে।’
পরামর্শ রয়েছে যে এই কমিশনের প্রথম কাজ হবে মন্ত্রীদের নীরবতার মহত্ত্ব শেখানো এবং অ্যারোপ্লেনে সময় কাটানোর চেয়ে দায়িত্ব পালন কত গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝানো। আরেকটি কাজ হবে, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যাতে তাঁদের নিজেদের ঘোষিত নীতিগুলোকে ক্ষমতায় এসেই ধ্বংস করতে না নামেন। একই সঙ্গে তাঁদের এটাও জানা দরকার যে যখন ক্ষমতা ছাড়ার প্রয়োজন হয়, তখন তা আঁকড়ে থাকা আত্মঘাতী।
পিপিপি যদি মনে করে, আগামী নির্বাচনে তারা নির্বাচিত হওয়ার জন্য দাঁড়াবে, তাহলে শরিক দলগুলোর অসম্ভব দাবিগুলো সামলানোর বিষয়ে তাদের আরও মনোযোগী হতে হবে।
সরকারের স্বাভাবিক মেয়াদের অর্ধেকটা পার হয়েছে। যত বেদনাদায়কই তা হোক, এখনই তাদের আত্মমূল্যায়ন করা উচিত। তা করায় যতই দেরি হবে, ততই তারা নিজেরাই তাদের সমস্যা বাড়াবে। তা করতে গিয়ে কেবল সরকারের টিকে থাকা বা পরেরবার ক্ষমতায় আসার প্রশ্ন বিবেচনা করলেই হবে না, জনগণের কতটা ভালো করা যায়, সে বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
জনগণের অবস্থান থেকে দেখলে দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং মজুরি ও জীবনযাপনের খরচের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ফারাক, বিচারব্যবস্থা ক্রমেই ভেঙে যাওয়া, পানি ও বিদ্যুতের ঘাটতি, দুর্নীতি এবং আইনশৃঙ্খলার ক্রমাবনতিই সবচেয়ে বড় সমস্যা।
কোনো দক্ষ প্রশাসনেরই এসব ইস্যুকে হেলাফেলা করা উচিত নয়। জনগণ যেসব সমস্যায় দিনাতিপাত করছে, তা নিয়ে সরকার যদি কোনো দিনবদল ঘটাতে চায়, তাহলে তাদের উচিত যারা এসব বোঝে এবং যাদের সমাধানের আন্তরিকতা আছে, তাদের কাছেই দায়িত্ব অর্পণ করা।
আই এ রেহমান: পাকিস্তানের সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী।
চলতি হাঙ্গামার শুরু হলো তখনই, যখন ফেডারেল ক্যাবিনেটে জামাতে উলামায়ে ইসলামের (জেইউই) একজন সদস্য প্রকাশ্যে পিপিপির (ক্ষমতাসীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি) এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে হজযাত্রার আয়োজন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুললেন এবং মন্ত্রীও একই সুরে পাল্টা জবাব দিলেন। সম্ভবত তাঁরা দুজনই তাঁদের মতপ্রকাশের অধিকারের সীমাটা ভুলে গিয়েছিলেন। অথবা হজের মতো পবিত্র বিষয়ের চেয়ে এ নিয়ে ব্যবসাটাই তাঁদের কাছে বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী প্রথমে বিষয়টাকে তেমন পাত্তা দেননি। তিনি দুজনকেই থামতে বলেন, কিন্তু তাঁরা কথা না শুনলে দুজনকেই বরখাস্ত করেন। এই বরখাস্ত যতটা না ছিল তাঁদের দুর্নীতির জন্য, তার চেয়ে বেশি হলো তাঁর কথা অমান্য করার জন্য। এ ঘটনায় এটাও বোঝা গেল, পিপিপি জোটের শরিকদের তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। এটা সম্ভব যে তাঁরা ভেবেছেন, জোটের নেতারা ক্ষমতার মোহে আটকে থাকলে পিপিপির পক্ষে এককভাবে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব। বিচার বিভাগীয় নিয়োগের বেলায় সংসদীয় কমিটির সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও সেটা দেখা গেছে। কিন্তু এবার সেটা কাজে লাগেনি। পিপিপির নেতৃত্ব বুঝতে পারেনি মাওলানা ফজলুর রহমান নিজের মূল্য কতটা বাড়িয়ে তুলতে পারবেন। পিপিপির নেতারা যখন জেইউইর প্রধানের রাগ কমাতে ব্যস্ত, তখন আরেকটা ঘটনা ঘটল। মন্ত্রীদের কেবল একটি বা দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বই পালন করতে হয় না, রাজনৈতিক কোন্দলেও ভূমিকা রাখতে হয়। এটা করতে গিয়েই সিন্ধুর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমকিউএমকে খেপিয়ে তুলল। সরকারি জোটের মধ্যেও পড়ল এ ঘটনার চাপ।
গুজব রয়েছে, সরকার নিজেই নিজের ক্ষতি করে বসেছে। এদিকে মুসলিম লীগের নেতা মিয়া নওয়াজ শরিফ সরদার মুমতাজ ভুট্টোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে হাওয়া কোন দিকে বয়, তার দিকে নজর রাখছেন। ওদিকে জারদারিও অবশেষে নওয়াজ শরিফের চিঠির উত্তর দিয়েছেন। এবং এই চিঠি-বোমা নওয়াজের কাছে পৌঁছানোর আগেই মিডিয়ায় প্রকাশ করে বিরাট আরেকটা ভুল করে বসলেন। এতে মিয়া সাহেবের দক্ষ আক্রমণকারীরা সুযোগ পেয়ে গেল জারদারির দিকে পাল্টা আক্রমণ চালানোর। সবই ঘটে গেল, চিঠিতে আসলেই কী লেখা আছে, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার আগেই।
এখন এই রাজনৈতিক মূকাভিনয়ের সব পাত্রপাত্রীকে দেখা যাচ্ছে হঠাৎ করে জনগণের মঙ্গল করা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠতে। পরের নির্বাচনের আগে এখন কারোরই আর ক্ষমতা নিয়ে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ নেই। তাঁরা সরকারের ক্ষতিও করতে চান না। সরকারের সমালোচকেরাও এতই দরদি হয়ে উঠেছেন, কোনো বাস্তব প্রস্তাব তুলতেও তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন। বিরোধী দলও দুঃখে আছে, কারণ সরকারি দল নিজের ধ্বংসের গতি কোনোভাবেই থামাতে পারছে না।
কিন্তু পুরোনো দিনের কতিপয় গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক নেতাদের ইচ্ছামতো চলাকে পছন্দ করছেন না। তাঁরা পিপিপি ও পিএমএলের (এন) মধ্যে স্বাক্ষরিত গণতন্ত্র সনদের ২৫ নম্বর দফাটি মনে করিয়ে দিচ্ছেন। তাতে বলা হয়েছিল, ‘দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশের লক্ষ্যে জাতীয় গণতন্ত্র কমিশন গঠন করা হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য তাদের সহযোগিতাও দেওয়া হবে। এটা করা হবে সংসদে তাদের আসনের সংখ্যানুপাতে এবং স্বচ্ছতার ভিত্তিতে।’
পরামর্শ রয়েছে যে এই কমিশনের প্রথম কাজ হবে মন্ত্রীদের নীরবতার মহত্ত্ব শেখানো এবং অ্যারোপ্লেনে সময় কাটানোর চেয়ে দায়িত্ব পালন কত গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝানো। আরেকটি কাজ হবে, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যাতে তাঁদের নিজেদের ঘোষিত নীতিগুলোকে ক্ষমতায় এসেই ধ্বংস করতে না নামেন। একই সঙ্গে তাঁদের এটাও জানা দরকার যে যখন ক্ষমতা ছাড়ার প্রয়োজন হয়, তখন তা আঁকড়ে থাকা আত্মঘাতী।
পিপিপি যদি মনে করে, আগামী নির্বাচনে তারা নির্বাচিত হওয়ার জন্য দাঁড়াবে, তাহলে শরিক দলগুলোর অসম্ভব দাবিগুলো সামলানোর বিষয়ে তাদের আরও মনোযোগী হতে হবে।
সরকারের স্বাভাবিক মেয়াদের অর্ধেকটা পার হয়েছে। যত বেদনাদায়কই তা হোক, এখনই তাদের আত্মমূল্যায়ন করা উচিত। তা করায় যতই দেরি হবে, ততই তারা নিজেরাই তাদের সমস্যা বাড়াবে। তা করতে গিয়ে কেবল সরকারের টিকে থাকা বা পরেরবার ক্ষমতায় আসার প্রশ্ন বিবেচনা করলেই হবে না, জনগণের কতটা ভালো করা যায়, সে বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
জনগণের অবস্থান থেকে দেখলে দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং মজুরি ও জীবনযাপনের খরচের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ফারাক, বিচারব্যবস্থা ক্রমেই ভেঙে যাওয়া, পানি ও বিদ্যুতের ঘাটতি, দুর্নীতি এবং আইনশৃঙ্খলার ক্রমাবনতিই সবচেয়ে বড় সমস্যা।
কোনো দক্ষ প্রশাসনেরই এসব ইস্যুকে হেলাফেলা করা উচিত নয়। জনগণ যেসব সমস্যায় দিনাতিপাত করছে, তা নিয়ে সরকার যদি কোনো দিনবদল ঘটাতে চায়, তাহলে তাদের উচিত যারা এসব বোঝে এবং যাদের সমাধানের আন্তরিকতা আছে, তাদের কাছেই দায়িত্ব অর্পণ করা।
আই এ রেহমান: পাকিস্তানের সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী।
No comments