প্রকৃতি- 'বাঘ রক্ষার বিশ্বসভা রাশিয়ায়' by ইফতেখার মাহমুদ
‘ও আমি বাঘ শিকার যামু, বন্দুক লইয়া রেডি হইলাম আমি আর মামু’। নির্মমতা থাকলেও গানটি বাঙালির বেশ পছন্দের। বাঘ শিকারকে বীরত্বের প্রতীক হিসেবে দেখা
হচ্ছে সুদূর অতীতকাল থেকে। এই মানসিকতা দুনিয়াজুড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় বাঘ শিকার এখন বড় ধরনের ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। প্রকৃতি ও প্রাণী সংরক্ষণবিদেরা বলছেন, নির্মমতা আর লোভ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই প্রাণীকে কোণঠাসা করে ফেলেছে। বাঘ এখন বিলুপ্তির পথে।
বিলুপ্তির হাত থেকে বাঘ রক্ষায় আগামীকাল ২১ নভেম্বর রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে শুরু হচ্ছে বিশ্ব বাঘসভা বা গ্লোবাল টাইগার সামিট। এখনো যে ১৩টি দেশে বাঘ টিকে আছে, সেসব দেশের প্রতিনিধিরা এই সভায় আলোচনায় বসবেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্বের পাঁচটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা সভায় উপস্থিত থাকবেন।
চার দিনের এই সভার প্রধান লক্ষ্য, ২০২২ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার কৌশলপত্র চূড়ান্ত ও বাঘ রক্ষায় অঙ্গীকার করা। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৩ নভেম্বর সভায় বক্তৃতা করবেন। বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল বাঘসভায় যোগ দিতে ইতিমধ্যে রাশিয়ায় পৌঁছেছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বাঘসভার উদ্বোধন করবেন। শিকারিদের চোখ এড়িয়ে আর বদলে যাওয়া বনের প্রকৃতির মধ্যে টিকে থাকা তিন হাজার ২০০ বাঘ রক্ষার উদ্যোগ নেওয়াই হবে এই সভার প্রাথমিক লক্ষ্য। একটি প্রাণী নিয়ে বিশ্বনেতাদের এক টেবিলে বসার এমন নজির আর নেই।
রয়েল বেঙ্গল টাইগারের গুরুত্ব: সুন্দরবনের বাঘ নিয়ে একাধিক প্রবন্ধ এই বিশ্বসভায় উপস্থাপন করা হবে। একমাত্র সুন্দরবনের বাঘই লবণাক্ত এলাকায় অভিযোজন করে টিকে আছে। একটি বনে এত বেশি বাঘ আর কোথাও নেই। তবে সচেতনতা কম থাকায় প্রতিবছর বাঘের আক্রমণে ২৫ থেকে ৪০ জন মানুষ মারা যায়। অন্যদিকে লোকালয়ে এসে মানুষের হাতে মারা পড়ে দুই থেকে তিনটি বাঘ। এসব তথ্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিশ্বসভায় উপস্থাপন করা হবে।
গত এক দশকে ১৩টি দেশের মধ্যে শুধু রাশিয়াতে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। গত শতাব্দীর ষাটের দশকে রাশিয়ায় বাঘ ছিল ৮০ থেকে ১০০। বর্তমানে এই সংখ্যা প্রায় ৫০০। সভায় বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, রাশিয়া, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস ও ভুটানের প্রতিনিধিরা যোগ দেবেন।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বন্য প্রাণী ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, শিকার ও পাচার সুন্দরবনের বাঘের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত এক দশকে ভারতে ২৭৫টি বাঘের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচার হওয়ার সময় ধরা পড়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কী ঘটছে, তা কারও জানা নেই। তথ্য না থাকা বিপজ্জনক।
বাঘের সংখ্যা: গত এক শ বছরে বালিনিজ, জাভানিজ ও কাস্পিয়ান বাঘ পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে টিকে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল, সাইবেরিয়ান, সুমাত্রান, সাউথ-চায়না ও ইন্দো-চায়না প্রজাতির বাঘ। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের তিনটি উপপ্রজাতি ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে। বিশ্ব বন্য প্রাণী তহবিলের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় আশঙ্কা করা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরের পানির উচ্চতা বাড়লে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারও বিলুপ্ত হতে পারে।
২০০৪ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও বন বিভাগ যৌথভাবে সুন্দরবনের বাঘের ওপর একটি সমীক্ষা চালায়। তাতে দেখা যায়, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ৪৪০টি বাঘ রয়েছে। যার মধ্যে ১২১টি পুরুষ, ২৯৮টি স্ত্রী ও ২১টি বাচ্চা বাঘ।
উদ্বেগ: জাতিসংঘের উদ্যোগে ১৯৮৭ সালে অতি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী হিসেবে বাঘ কিংবা বাঘের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যবসা নিষিদ্ধ করা হয়। বাঘের বিচরণ রয়েছে এমন ১৩টি দেশের ১১টিতে সমীক্ষা চালায় বিশ্ব বন্য প্রাণী তহবিল। তাতে দেখা গেছে, বাঘের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের চাহিদা মেটাতে এক দশকে কমপক্ষে এক হাজার ৬৯টি বাঘ হত্যা করা হয়েছে। বাঘের চামড়া দিয়ে গৃহসজ্জা ও শৌখিন পণ্য তৈরি হয়। হাড় ও বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ দিয়ে তৈরি হয় ওষুধ।
বাঘের আবাসস্থল হিসেবে চিহ্নিত বনাঞ্চল রক্ষা, বাঘসমৃদ্ধ এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন না করা, খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও পরিবেশ দূষণ করতে না দেওয়া, বাঘ ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে সচেতনতা বৃদ্ধি, বাঘের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচার রোধে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ, একাধিক দেশে বাঘের নির্বিঘ্ন যাতায়াত—এসব বিষয়ে সেন্ট পিটার্সবার্গ সভায় সিদ্ধান্ত ও চুক্তি হতে পারে বলে সরকারি সূত্র জানিয়েছে।
===========================
শিল্প-অর্থনীতি 'অবকাঠামোর উন্নয়নে পেছনের সারিতে বাংলাদেশ' by হানিফ মাহমুদ প্রবন্ধ- 'সাবধান থেকো তাদের থেকে...' by বদিউল আলম মজুমদার আলোচনা- 'ক্ষুধা-দারিদ্র্য-অশিক্ষা-অপুষ্টি ও নির্যাতনের শৃঙ্খলে বন্দি শিশুরা' by শুভ রহমান গল্পালোচনা- 'এমন ঘটনাও ঘটে'! by ফখরুজ্জামান চৌধুরী আলোচনা- 'হাইকোর্টের রায় এবং আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রসঙ্গে' by শক্তিপদ ত্রিপুরা আলোচনা- 'আইন'-এর শাসন বনাম 'অহং'-এর শাসন' by মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী খবর- কজাহাজভাঙা শিল্পে সংকটমোচন আলোচনা- 'বাংলাদেশের সংবিধানের দর্শনের গল্পসল্প' by মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী রাজনৈতিক আলোচনা- 'মধ্যবিত্তের মূল্যবোধ ও পঙ্কিল রাজনীতি রাজনৈতিক আলোচনা- 'মুক্ত বাতাসে সু চি' by রফিকুল রঞ্জু বিশ্ব অর্থনীতি 'জি-২০ সম্মেলনে ধাক্কা খেল আমেরিকা' ভ্রমণ- 'রেলগাড়িতে চড়ে' by মঈনুস সুলতান 'উৎসবের আমেজ সময়ের সংস্কৃতির' by শামসুজ্জামান খান
প্রথম আলো এর সৌজন্য
লেখকঃ ইফতেখার মাহমুদ
এই লেখা'টি পড়া হয়েছে...
শিল্প-অর্থনীতি 'অবকাঠামোর উন্নয়নে পেছনের সারিতে বাংলাদেশ' by হানিফ মাহমুদ প্রবন্ধ- 'সাবধান থেকো তাদের থেকে...' by বদিউল আলম মজুমদার আলোচনা- 'ক্ষুধা-দারিদ্র্য-অশিক্ষা-অপুষ্টি ও নির্যাতনের শৃঙ্খলে বন্দি শিশুরা' by শুভ রহমান গল্পালোচনা- 'এমন ঘটনাও ঘটে'! by ফখরুজ্জামান চৌধুরী আলোচনা- 'হাইকোর্টের রায় এবং আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রসঙ্গে' by শক্তিপদ ত্রিপুরা আলোচনা- 'আইন'-এর শাসন বনাম 'অহং'-এর শাসন' by মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী খবর- কজাহাজভাঙা শিল্পে সংকটমোচন আলোচনা- 'বাংলাদেশের সংবিধানের দর্শনের গল্পসল্প' by মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী রাজনৈতিক আলোচনা- 'মধ্যবিত্তের মূল্যবোধ ও পঙ্কিল রাজনীতি রাজনৈতিক আলোচনা- 'মুক্ত বাতাসে সু চি' by রফিকুল রঞ্জু বিশ্ব অর্থনীতি 'জি-২০ সম্মেলনে ধাক্কা খেল আমেরিকা' ভ্রমণ- 'রেলগাড়িতে চড়ে' by মঈনুস সুলতান 'উৎসবের আমেজ সময়ের সংস্কৃতির' by শামসুজ্জামান খান
প্রথম আলো এর সৌজন্য
লেখকঃ ইফতেখার মাহমুদ
এই লেখা'টি পড়া হয়েছে...
No comments