রেফারিরা সন্দেহমুক্ত নহে
২০০৬ সালে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত অষ্টাদশ বিশ্বকাপ ফুটবলে হলুদ কার্ড ও লাল কার্ডের ব্যবহার আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল। সেবার বিশ্বকাপ ফুটবল পরিচালনায় নিয়োজিত রেফারিরা বিভিন্ন দেশের হয়ে বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া খেলোয়াড়দের ৩৪৫ বার হলুদ কার্ড এবং ২৮ বার লাল কার্ড দেখিয়েছিলেন। একজন ব্রিটিশ রেফারি তো হলুদ কার্ড দেখানোর নেশায় এমনই উন্মত্ত হয়ে পড়েছিলেন যে, তিনি ক্রোয়েশিয়ার একজন খেলোয়াড়কে ভুল করে তিনবার হলুদ কার্ড দেখান। সংগত কারণেই তখন রেফারিং নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে তখন ফিফাপ্রধান সেপ ব্ল্যাটার বলেছিলেন, তিনি পরবর্তী টুর্নামেন্টগুলোতে খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে রেফারি-প্রদত্ত দণ্ডবিধিতে কিছু পরিবর্তন আনবেন। আগের ম্যাচে লাল কার্ড পাওয়া কোনো খেলোয়াড় যাতে পরবর্তী ম্যাচ খেলতে পারে, সেই ব্যবস্থা করবেন। তিনি তাঁর কথা রেখেছেন কি না, জানি না। আমার সংগ্রহে বিশ্বকাপ সম্পর্কে ফিফার সর্বশেষ সিদ্ধান্তগুলো নেই। চলতি বিশ্বকাপের রেফারিদের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি; বরং কখনো কখনো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পূর্বপরিকল্পিত বলেও মনে হয়েছে।
এক. সার্বিয়ার বিরুদ্ধে খেলা চলাকালে ডবল হলুদ কার্ডের যোগফল হিসেবে লাল কার্ড পাওয়া (পাওয়া মানে, পেতে বাধ্য করা) জার্মানির কুশলী স্ট্রাইকার ক্লোসা কি পরবর্তী ম্যাচে খেলতে পারবেন? একটি টিভি টক শোতে সেদিন তো সাবেক ফুটবলার ও ক্রীড়া ভাষ্যকার গোলাম সারওয়ার টিপুর মুখে শুনলাম, ক্লোসা আগামী দুটো ম্যাচ খেলতে পারবেন না। কী সর্বনেশে কথা! বিশ্বকাপে ব্রাজিলের রোনালদোর করা সর্বোচ্চ ১৫ গোলের রেকর্ডটি গত বিশ্বকাপের সোনার বুট অর্জনকারী ক্লোসা এবার ভাঙবেন বলেই মনে করা হচ্ছিল। বিশ্বকাপ মিশনের প্রথম খেলায় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একটি দৃষ্টিকাড়া গোল করে তিনি সেই লক্ষ্যে এক ধাপ এগিয়েও গিয়েছিলেন। তাঁর বিশ্বকাপ-গোলের সংখ্যা পৌঁছেছিল ১১-তে। কিন্তু ক্লোসার বিধি বাম। কোথায় রাম রাজা হয়, আর কোথায় রাম বনে যায়!
সার্বিয়া ও জার্মানির মধ্যকার খেলাটির শুরু থেকেই সেদিনকার রেফারি (ভদ্রলোকের নামটি আমি খেয়াল করিনি, কেউ জানলে জানাবেন) যেভাবে উন্মাদের মতো এলোপাতাড়ি হলুদ কার্ড দেখাচ্ছিলেন, তাতে বিরক্ত হয়ে একজন ভাষ্যকার আলতো করে তাঁর সম্পর্কে একপর্যায়ে ‘সিনিক’ শব্দটিই উচ্চারণ করেন। আমি তাঁর সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। আমার ক্ষমতা থাকলে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখিয়ে ক্লোসাকে মাঠ ছাড়তে বাধ্য করার আগে আমিই ওই ভদ্রলোককে মাঠ থেকে বের করে দিতাম।
এ বিষয়ে ক্লোসার বক্তব্য, ‘আমি বলটাই খেলতে চেয়েছিলাম। এটা কোনো ফাউল ছিল না। অথচ রেফারি আমাকে দেখালেন হলুদ কার্ড।’
দুই. উরুগুয়ে বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা খেলার একপর্যায়ে দক্ষিণ আফ্রিকার গোলরক্ষাকারীকে লাল কার্ড দেখিয়ে যেভাবে মাঠ থেকে বের করে দেওয়া হলো, আমার কাছে তা ন্যায্য বলে মনে হয়নি। আগুয়ান প্রতিপক্ষকে অবৈধভাবে বাধা দেওয়ার অপরাধে পেনাল্টি বরাদ্দ করেই তিনি ক্ষান্ত দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতার অপপ্রয়োগের প্রলোভন এড়াতে পারেননি। পকেট থেকে জল্লাদের মতো লাল কার্ড বের করার নেশা যাঁরা এড়াতে পারেন না, বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ খেলা পরিচালনায় তাঁদের অনুপস্থিতিই বিশ্বফুটবলের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
তিন. অস্ট্রেলিয়া ও ঘানার মধ্যকার খেলায় অস্ট্রেলিয়ার এক ডিফেন্ডার গোলবারের নিচে বুক চিতিয়ে বল থামাতে গেলে অ্যাডিডাস কোম্পানির নতুন আবিষ্কার জাবুলানি বলটির কিছুটা অংশ তাঁর বুকে এবং কিছুটা অংশ তাঁর বুকসংলগ্ন ডান হাতের উপরিভাগ স্পর্শ করে। পুরো ব্যাপারটিই অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘটে। এ ক্ষেত্রে রেফারি হ্যান্ডবল দিয়েই ক্ষান্ত হতে পারতেন, কিন্তু হলেন না। তিনি পেনাল্টিও দিলেন এবং সেই সঙ্গে ওই ডিফেন্ডারকে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠের বাইরেও পাঠিয়ে দিলেন, যদিও বেনিফিট অব ডাউট ওই ডিফেন্ডারেরই প্রাপ্য ছিল।
প্রশ্ন জাগছে, তবে কি রেফারিদের বোকা বানিয়ে ‘ঈশ্বরের হাত’ দিয়ে গোল করার জন্য ম্যারাডোনাকে যে দণ্ড দেওয়া সম্ভব হয়নি, সেই অপ্রযুক্ত দণ্ডই এখন নিরপরাধের মাথায় গুরুদণ্ডের খড়্গ হয়ে নামছে? অতিসতর্কতার আড়ালে এ ক্ষেত্রে ‘প্রফেশনাল লিগেসি’ কাজ করছে না তো?
শক্ত হাতে, সুন্দরভাবে খেলা পরিচালনার নাম করে এক-একজন রেফারি খেলার মাঠে যে রকম লঘু পাপে গুরু দণ্ড প্রদান করে চলেছেন, অনতিবিলম্বে তাঁদের লাগাম টেনে ধরা দরকার। ফিফার বর্তমান প্রেসিডেন্ট মিস্টার ব্ল্যাটারকে দিয়ে তা হবে বলে মনে হয় না। বিশ্বফুটবলের নতুন কর্তা চাই। এই বুড়োটা আর কত দিন?
আমার মনে হচ্ছে, ক্রিকেটে যেমন থার্ড আম্পায়ার আছে, ফুটবলেও সে রকম থার্ড আম্পায়ার থাকা দরকার। লাল কার্ড দেখানোর অনিবার্যতা থার্ড আম্পায়ারের মাধ্যমে যাচাই করার সুযোগ থাকা দরকার। নইলে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর খুব সহজেই বিশ্বের মাফিয়া চক্রের দখলে চলে যেতে পারে। সিনিক চক্রের দখলে চলে যেতে পারে। অলরেডি চলে গিয়েছে কি না, সেটাই এখন ভাবার এবং খতিয়ে দেখার বিষয়। আমি কিন্তু সত্যিই খুব উদ্বিগ্ন বোধ করছি।
আমি প্রস্তাব করছি, কোন দিনের কোন খেলাটি কোন রেফারি পরিচালনা করবেন, তা খেলার কিছুক্ষণ আগে লটারির মাধ্যমে চূড়ান্ত করার বিধান চালু হোক। বিশ্বকাপ ফুটবল ম্যাচের রেফারিপঞ্জিটি সবারই অজানা থাকা চাই। এমনকি ফিফার প্রেসিডেন্ট মিস্টার ব্ল্যাটারেরও।
বিশ্বকাপের প্রথম গোল: পরের ধনে ফিফার পোদ্দারি
আমি প্রতিবাদ জানাচ্ছি: পত্রিকায় পড়লাম, দক্ষিণ আফ্রিকার শাবালালা বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে করা তাঁর প্রথম গোলটি আফ্রিকার মানুষের উদ্দেশে উত্সর্গ করেছেন। এটি তো ঠিক হলো না। এবারের বিশ্বকাপের প্রথম গোলটি যে ডাকার ঘোষণার সমর্থনে ‘সবার জন্য শিক্ষা’ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে আগে থেকেই উত্সর্গ করা হয়ে আছে—জনাব শাবালালা কি তা জানতেন না? সারা বিশ্বের মানুষ যা জানে, বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১০-এর আয়োজক দেশের ফুটবল দলের স্ট্রাইকার শাবালালার তো তা না জানার কথা নয়। শুনুন মিস্টার শাবালালা, আপনি আপনার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করুন। অন্যথায় আমার গ্রামে প্রতিষ্ঠিত কাশবন বিদ্যানিকেতনের দেয়ালে আপনার নাম লিখে রাখার যে ঘোষণাটি আমি প্রথম আলোর মাধ্যমে করেছিলাম, আমি সেই সিদ্ধান্ত থেকে অবশ্যই সরে যাব।
আফ্রিকার মানুষের উদ্দেশে তাঁর গোলটি উত্সর্গ করার পক্ষে শাবালালার একটা যুক্তি হয়তো আছে। তিনি বলতে পারেন, আমার করা গোলটি আমি কাকে উত্সর্গ করব, সে আমার ব্যাপার। গোলটি তো আর ফিফার কর্মকর্তাদের কেউ করেনি, আমি করেছি। কথা সত্য। গোলটি তিনিই করেছেন এবং বিশ্বের প্রচলিত কপিরাইট আইন অনুযায়ী ওই গোলের কপিরাইট শাবালালারই বটে। সে ক্ষেত্রে ফিফার কর্তব্য হবে শাবালালার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এবারের বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম গোলটি তাঁর কাছ থেকে অর্থমূল্য শোধ করে কিনে নেওয়া। অন্য অনেক কিছুর অভাব থাকলেও, ফিফার তো আর টাকার অভাব নেই। সে-ই বা পরের ধনে পোদ্দারি করবে কেন? বাংলাদেশে ফিফার কর্মকর্তা যাঁরা আছেন, মনে হয় আমাদের প্রিয় ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিন আছেন, বিষয়টি ফিফার গোচরে আনার জন্য তাঁকে অনুরোধ করছি।
কামরাঙ্গীর চর
২০ জুন ২০১০
প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে তখন ফিফাপ্রধান সেপ ব্ল্যাটার বলেছিলেন, তিনি পরবর্তী টুর্নামেন্টগুলোতে খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে রেফারি-প্রদত্ত দণ্ডবিধিতে কিছু পরিবর্তন আনবেন। আগের ম্যাচে লাল কার্ড পাওয়া কোনো খেলোয়াড় যাতে পরবর্তী ম্যাচ খেলতে পারে, সেই ব্যবস্থা করবেন। তিনি তাঁর কথা রেখেছেন কি না, জানি না। আমার সংগ্রহে বিশ্বকাপ সম্পর্কে ফিফার সর্বশেষ সিদ্ধান্তগুলো নেই। চলতি বিশ্বকাপের রেফারিদের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি; বরং কখনো কখনো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পূর্বপরিকল্পিত বলেও মনে হয়েছে।
এক. সার্বিয়ার বিরুদ্ধে খেলা চলাকালে ডবল হলুদ কার্ডের যোগফল হিসেবে লাল কার্ড পাওয়া (পাওয়া মানে, পেতে বাধ্য করা) জার্মানির কুশলী স্ট্রাইকার ক্লোসা কি পরবর্তী ম্যাচে খেলতে পারবেন? একটি টিভি টক শোতে সেদিন তো সাবেক ফুটবলার ও ক্রীড়া ভাষ্যকার গোলাম সারওয়ার টিপুর মুখে শুনলাম, ক্লোসা আগামী দুটো ম্যাচ খেলতে পারবেন না। কী সর্বনেশে কথা! বিশ্বকাপে ব্রাজিলের রোনালদোর করা সর্বোচ্চ ১৫ গোলের রেকর্ডটি গত বিশ্বকাপের সোনার বুট অর্জনকারী ক্লোসা এবার ভাঙবেন বলেই মনে করা হচ্ছিল। বিশ্বকাপ মিশনের প্রথম খেলায় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একটি দৃষ্টিকাড়া গোল করে তিনি সেই লক্ষ্যে এক ধাপ এগিয়েও গিয়েছিলেন। তাঁর বিশ্বকাপ-গোলের সংখ্যা পৌঁছেছিল ১১-তে। কিন্তু ক্লোসার বিধি বাম। কোথায় রাম রাজা হয়, আর কোথায় রাম বনে যায়!
সার্বিয়া ও জার্মানির মধ্যকার খেলাটির শুরু থেকেই সেদিনকার রেফারি (ভদ্রলোকের নামটি আমি খেয়াল করিনি, কেউ জানলে জানাবেন) যেভাবে উন্মাদের মতো এলোপাতাড়ি হলুদ কার্ড দেখাচ্ছিলেন, তাতে বিরক্ত হয়ে একজন ভাষ্যকার আলতো করে তাঁর সম্পর্কে একপর্যায়ে ‘সিনিক’ শব্দটিই উচ্চারণ করেন। আমি তাঁর সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। আমার ক্ষমতা থাকলে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখিয়ে ক্লোসাকে মাঠ ছাড়তে বাধ্য করার আগে আমিই ওই ভদ্রলোককে মাঠ থেকে বের করে দিতাম।
এ বিষয়ে ক্লোসার বক্তব্য, ‘আমি বলটাই খেলতে চেয়েছিলাম। এটা কোনো ফাউল ছিল না। অথচ রেফারি আমাকে দেখালেন হলুদ কার্ড।’
দুই. উরুগুয়ে বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা খেলার একপর্যায়ে দক্ষিণ আফ্রিকার গোলরক্ষাকারীকে লাল কার্ড দেখিয়ে যেভাবে মাঠ থেকে বের করে দেওয়া হলো, আমার কাছে তা ন্যায্য বলে মনে হয়নি। আগুয়ান প্রতিপক্ষকে অবৈধভাবে বাধা দেওয়ার অপরাধে পেনাল্টি বরাদ্দ করেই তিনি ক্ষান্ত দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতার অপপ্রয়োগের প্রলোভন এড়াতে পারেননি। পকেট থেকে জল্লাদের মতো লাল কার্ড বের করার নেশা যাঁরা এড়াতে পারেন না, বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ খেলা পরিচালনায় তাঁদের অনুপস্থিতিই বিশ্বফুটবলের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
তিন. অস্ট্রেলিয়া ও ঘানার মধ্যকার খেলায় অস্ট্রেলিয়ার এক ডিফেন্ডার গোলবারের নিচে বুক চিতিয়ে বল থামাতে গেলে অ্যাডিডাস কোম্পানির নতুন আবিষ্কার জাবুলানি বলটির কিছুটা অংশ তাঁর বুকে এবং কিছুটা অংশ তাঁর বুকসংলগ্ন ডান হাতের উপরিভাগ স্পর্শ করে। পুরো ব্যাপারটিই অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘটে। এ ক্ষেত্রে রেফারি হ্যান্ডবল দিয়েই ক্ষান্ত হতে পারতেন, কিন্তু হলেন না। তিনি পেনাল্টিও দিলেন এবং সেই সঙ্গে ওই ডিফেন্ডারকে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠের বাইরেও পাঠিয়ে দিলেন, যদিও বেনিফিট অব ডাউট ওই ডিফেন্ডারেরই প্রাপ্য ছিল।
প্রশ্ন জাগছে, তবে কি রেফারিদের বোকা বানিয়ে ‘ঈশ্বরের হাত’ দিয়ে গোল করার জন্য ম্যারাডোনাকে যে দণ্ড দেওয়া সম্ভব হয়নি, সেই অপ্রযুক্ত দণ্ডই এখন নিরপরাধের মাথায় গুরুদণ্ডের খড়্গ হয়ে নামছে? অতিসতর্কতার আড়ালে এ ক্ষেত্রে ‘প্রফেশনাল লিগেসি’ কাজ করছে না তো?
শক্ত হাতে, সুন্দরভাবে খেলা পরিচালনার নাম করে এক-একজন রেফারি খেলার মাঠে যে রকম লঘু পাপে গুরু দণ্ড প্রদান করে চলেছেন, অনতিবিলম্বে তাঁদের লাগাম টেনে ধরা দরকার। ফিফার বর্তমান প্রেসিডেন্ট মিস্টার ব্ল্যাটারকে দিয়ে তা হবে বলে মনে হয় না। বিশ্বফুটবলের নতুন কর্তা চাই। এই বুড়োটা আর কত দিন?
আমার মনে হচ্ছে, ক্রিকেটে যেমন থার্ড আম্পায়ার আছে, ফুটবলেও সে রকম থার্ড আম্পায়ার থাকা দরকার। লাল কার্ড দেখানোর অনিবার্যতা থার্ড আম্পায়ারের মাধ্যমে যাচাই করার সুযোগ থাকা দরকার। নইলে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর খুব সহজেই বিশ্বের মাফিয়া চক্রের দখলে চলে যেতে পারে। সিনিক চক্রের দখলে চলে যেতে পারে। অলরেডি চলে গিয়েছে কি না, সেটাই এখন ভাবার এবং খতিয়ে দেখার বিষয়। আমি কিন্তু সত্যিই খুব উদ্বিগ্ন বোধ করছি।
আমি প্রস্তাব করছি, কোন দিনের কোন খেলাটি কোন রেফারি পরিচালনা করবেন, তা খেলার কিছুক্ষণ আগে লটারির মাধ্যমে চূড়ান্ত করার বিধান চালু হোক। বিশ্বকাপ ফুটবল ম্যাচের রেফারিপঞ্জিটি সবারই অজানা থাকা চাই। এমনকি ফিফার প্রেসিডেন্ট মিস্টার ব্ল্যাটারেরও।
বিশ্বকাপের প্রথম গোল: পরের ধনে ফিফার পোদ্দারি
আমি প্রতিবাদ জানাচ্ছি: পত্রিকায় পড়লাম, দক্ষিণ আফ্রিকার শাবালালা বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে করা তাঁর প্রথম গোলটি আফ্রিকার মানুষের উদ্দেশে উত্সর্গ করেছেন। এটি তো ঠিক হলো না। এবারের বিশ্বকাপের প্রথম গোলটি যে ডাকার ঘোষণার সমর্থনে ‘সবার জন্য শিক্ষা’ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে আগে থেকেই উত্সর্গ করা হয়ে আছে—জনাব শাবালালা কি তা জানতেন না? সারা বিশ্বের মানুষ যা জানে, বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১০-এর আয়োজক দেশের ফুটবল দলের স্ট্রাইকার শাবালালার তো তা না জানার কথা নয়। শুনুন মিস্টার শাবালালা, আপনি আপনার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করুন। অন্যথায় আমার গ্রামে প্রতিষ্ঠিত কাশবন বিদ্যানিকেতনের দেয়ালে আপনার নাম লিখে রাখার যে ঘোষণাটি আমি প্রথম আলোর মাধ্যমে করেছিলাম, আমি সেই সিদ্ধান্ত থেকে অবশ্যই সরে যাব।
আফ্রিকার মানুষের উদ্দেশে তাঁর গোলটি উত্সর্গ করার পক্ষে শাবালালার একটা যুক্তি হয়তো আছে। তিনি বলতে পারেন, আমার করা গোলটি আমি কাকে উত্সর্গ করব, সে আমার ব্যাপার। গোলটি তো আর ফিফার কর্মকর্তাদের কেউ করেনি, আমি করেছি। কথা সত্য। গোলটি তিনিই করেছেন এবং বিশ্বের প্রচলিত কপিরাইট আইন অনুযায়ী ওই গোলের কপিরাইট শাবালালারই বটে। সে ক্ষেত্রে ফিফার কর্তব্য হবে শাবালালার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এবারের বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম গোলটি তাঁর কাছ থেকে অর্থমূল্য শোধ করে কিনে নেওয়া। অন্য অনেক কিছুর অভাব থাকলেও, ফিফার তো আর টাকার অভাব নেই। সে-ই বা পরের ধনে পোদ্দারি করবে কেন? বাংলাদেশে ফিফার কর্মকর্তা যাঁরা আছেন, মনে হয় আমাদের প্রিয় ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিন আছেন, বিষয়টি ফিফার গোচরে আনার জন্য তাঁকে অনুরোধ করছি।
কামরাঙ্গীর চর
২০ জুন ২০১০
No comments