বাংলাদেশের ভোজ্যতেলের বাজার দখলের লড়াইয়ে উত্পাদকেরা by কে এ ইসলাম
ভোজ্যতেলের বাজার এবার শিরোনাম হলো বহির্বিশ্বেও। গত ১২ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার জাতীয় সংবাদ সংস্থা বারনামার শীর্ষ শিরোনাম ছিল, ‘বাংলাদেশে ক্রমহ্রাসমান পাম তেল রপ্তানি রুখতে চায় মালয়েশিয়া।’
বাংলাদেশের আমদানিনির্ভর ভোজ্যতেলের বাজারটি যখন প্রসারিত হচ্ছে, তখন মালয়েশিয়া থেকে পাম তেল আমদানি কমছে। ফলে উদ্বিগ্ন মালয়েশিয়া। বাজার বাড়াতে উদ্যোগও নিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এ নিয়ে ঢাকায় দুই দিন কাটিয়ে গেছেন মালয়েশিয়ার মন্ত্রী বার্নার্ড ডম্পক। এ লেখকের সঙ্গে কথা হয় মালয়েশিয়ার প্লান্টেশন ইন্ডাস্ট্রিজ ও কমোডিটিবিষয়ক মন্ত্রী তানশ্রী বার্নার্ড ডম্পকের।
বিশাল জনসংখ্যা, বিশাল বাজার: তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃৃদ্ধি আর সাধারণ মানুষের ক্রমবর্ধমান ক্রয়ক্ষমতার কারণে ভোজ্যতেলের ভোগ বাড়ছে। ফলে উত্পাদকদের বাজারও সম্প্রসারিত হচ্ছে। তাঁর হিসাবে, গত বছর বাংলাদেশে মাথাপিছু ভোজ্যতেল ভোগ হয়েছে আট কেজি ৬০০ গ্রাম। মাত্র দেড় দশকেই দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে মাথাপিছু ভোগ। ডম্পকের মতে, বাংলাদেশের মাথাপিছু ভোজ্যতেলের ভোগ বিশ্বের গড় ভোগের (২২ কেজি) চেয়ে কম, তবে এ দেশের জনসংখ্যার আকার আর ক্রমবর্ধমান ভোগই আকর্ষণীয় বিষয়। তিনি জানান, ‘পরিমাণগত ভোজ্যতেল ভোগের হিসাব করলে বাংলাদেশের বাজারটি কয়েকটি ধনী ইউরোপীয় দেশের সম্মিলিত বাজারের চেয়েও বড়।’
বার্নার্ড ডম্পকের হিসাবে, গড় খুচরামূল্যের ভিত্তিতে ২০০৮ সালে বাংলাদেশের ভোজ্যতেলের বাজারের আকার প্রায় ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার, টাকার অঙ্কে ১০ হাজার কোটিরও বেশি। এর ৮৫ শতাংশই আবার আমদানিনির্ভর। আমাদের উত্পাদিত সরিষা কিংবা অধুনা উপকূল অঞ্চলে চাষ করা কিছু সয়াবিন বীজ দিয়ে দেশের চাহিদার ১৫ শতাংশও মেটে না। অপরিশোধিত পাম, সয়াবিন আর তৈলবীজ খাতে বাংলাদেশের আমদানিব্যয় প্রায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার।
বাজারে সিংহভাগই পাম তেল: আশির দশকে মালয়েশিয়া থেকে আমদানির মাধ্যমে বাংলাদেশের বাজারে পাম তেল পরিচিত হয়। এখন পুরো বাজারই অনেকটা পাম তেলনির্ভর হয়ে গেছে। পরিমাণগত দিক দিয়ে আমাদের বাজারের তেল বিক্রির শতকরা ৮০ ভাগই খোলা তেল। কম আয়ের ভোক্তা খোলা সয়াবিন জেনে যা কেনেন তা আসলে পাম তেল। সুপার পাম নামে পরিচিত এটি পাইকারি বাজারে। বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের আমদানির দুই-তৃতীয়াংশই পাম তেল। ২০০৮ সালে প্রায় নয় লাখ টন পাম তেল আমদানি করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর শীর্ষ সাত পাম তেল আমদানিকারকের একটি। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় উত্পাাদিত হয় পৃথিবীর মোট পাম তেলের ৮৫ শতাংশ।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে তেল সংগ্রহ করে রপ্তানি করেন বাংলাদেশে। ইদানীং ইন্দোনেশিয়া থেকেও সরাসরি আমদানি বাড়ছে। বার্নার্ড ডম্পক বলেন, মালয়েশিয়া উদ্বিগ্ন, কারণ বাংলাদেশে তাঁদের পাম তেল রপ্তানি কমছে। ২০০৮ সালে রপ্তানি ছিল দুই লাখ ১৮ হাজার টন, ২০০৯ সালের ১০ মাসে ৬০ হাজার টনের নিচে নেমেছে।
বার্নার্ড ডম্পক বলেন, তাঁরা দেখেছেন, ইন্দোনেশিয়ার পাম উত্পাদন অঞ্চল ও বন্দরগুলো বাংলাদেশ পাম আমদানির জন্য সুবিধাজনক। ফলে মালয়েশিয়া সরকার কাজ করছে কীভাবে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের আরও বেশি সুবিধা নিশ্চিত করা যায়। তিনি জানান, তাঁদের সরকার বাংলাদেশকে পাম তেল আমদানি অর্থায়ন করতে প্রস্তুত আছে। বেসরকারি আমদানিকারকদের এ সুবিধা নিতে হলে সরকার থেকে গ্যারান্টি দিতে হবে। পাকিস্তান ও তুরস্কসহ আরও কিছু দেশ মালয়েশিয়া থেকে এ সুবিধা নিচ্ছে।
কিন্তু সরকার বোধ হয় এ সুযোগটির কথা বেসরকারি আমদানিকারকদের জানাতে চায় না। বার্নার্ড ডম্পক বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর সরকারি বিবৃতিকে শুধু বলা হয়, টিসিবি মালয়েশিয়া থেকে পাম আমদানির চুক্তি করতে যাচ্ছে। বেসরকারি খাতের জন্যও যে সহজ অর্থায়নের সুযোগ থাকছে, সেটি কেন ঘোষণা হলো না তা বোধগম্য নয়।
বাংলাদেশের আমদানিনির্ভর ভোজ্যতেলের বাজারটি যখন প্রসারিত হচ্ছে, তখন মালয়েশিয়া থেকে পাম তেল আমদানি কমছে। ফলে উদ্বিগ্ন মালয়েশিয়া। বাজার বাড়াতে উদ্যোগও নিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এ নিয়ে ঢাকায় দুই দিন কাটিয়ে গেছেন মালয়েশিয়ার মন্ত্রী বার্নার্ড ডম্পক। এ লেখকের সঙ্গে কথা হয় মালয়েশিয়ার প্লান্টেশন ইন্ডাস্ট্রিজ ও কমোডিটিবিষয়ক মন্ত্রী তানশ্রী বার্নার্ড ডম্পকের।
বিশাল জনসংখ্যা, বিশাল বাজার: তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃৃদ্ধি আর সাধারণ মানুষের ক্রমবর্ধমান ক্রয়ক্ষমতার কারণে ভোজ্যতেলের ভোগ বাড়ছে। ফলে উত্পাদকদের বাজারও সম্প্রসারিত হচ্ছে। তাঁর হিসাবে, গত বছর বাংলাদেশে মাথাপিছু ভোজ্যতেল ভোগ হয়েছে আট কেজি ৬০০ গ্রাম। মাত্র দেড় দশকেই দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে মাথাপিছু ভোগ। ডম্পকের মতে, বাংলাদেশের মাথাপিছু ভোজ্যতেলের ভোগ বিশ্বের গড় ভোগের (২২ কেজি) চেয়ে কম, তবে এ দেশের জনসংখ্যার আকার আর ক্রমবর্ধমান ভোগই আকর্ষণীয় বিষয়। তিনি জানান, ‘পরিমাণগত ভোজ্যতেল ভোগের হিসাব করলে বাংলাদেশের বাজারটি কয়েকটি ধনী ইউরোপীয় দেশের সম্মিলিত বাজারের চেয়েও বড়।’
বার্নার্ড ডম্পকের হিসাবে, গড় খুচরামূল্যের ভিত্তিতে ২০০৮ সালে বাংলাদেশের ভোজ্যতেলের বাজারের আকার প্রায় ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার, টাকার অঙ্কে ১০ হাজার কোটিরও বেশি। এর ৮৫ শতাংশই আবার আমদানিনির্ভর। আমাদের উত্পাদিত সরিষা কিংবা অধুনা উপকূল অঞ্চলে চাষ করা কিছু সয়াবিন বীজ দিয়ে দেশের চাহিদার ১৫ শতাংশও মেটে না। অপরিশোধিত পাম, সয়াবিন আর তৈলবীজ খাতে বাংলাদেশের আমদানিব্যয় প্রায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার।
বাজারে সিংহভাগই পাম তেল: আশির দশকে মালয়েশিয়া থেকে আমদানির মাধ্যমে বাংলাদেশের বাজারে পাম তেল পরিচিত হয়। এখন পুরো বাজারই অনেকটা পাম তেলনির্ভর হয়ে গেছে। পরিমাণগত দিক দিয়ে আমাদের বাজারের তেল বিক্রির শতকরা ৮০ ভাগই খোলা তেল। কম আয়ের ভোক্তা খোলা সয়াবিন জেনে যা কেনেন তা আসলে পাম তেল। সুপার পাম নামে পরিচিত এটি পাইকারি বাজারে। বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের আমদানির দুই-তৃতীয়াংশই পাম তেল। ২০০৮ সালে প্রায় নয় লাখ টন পাম তেল আমদানি করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর শীর্ষ সাত পাম তেল আমদানিকারকের একটি। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় উত্পাাদিত হয় পৃথিবীর মোট পাম তেলের ৮৫ শতাংশ।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে তেল সংগ্রহ করে রপ্তানি করেন বাংলাদেশে। ইদানীং ইন্দোনেশিয়া থেকেও সরাসরি আমদানি বাড়ছে। বার্নার্ড ডম্পক বলেন, মালয়েশিয়া উদ্বিগ্ন, কারণ বাংলাদেশে তাঁদের পাম তেল রপ্তানি কমছে। ২০০৮ সালে রপ্তানি ছিল দুই লাখ ১৮ হাজার টন, ২০০৯ সালের ১০ মাসে ৬০ হাজার টনের নিচে নেমেছে।
বার্নার্ড ডম্পক বলেন, তাঁরা দেখেছেন, ইন্দোনেশিয়ার পাম উত্পাদন অঞ্চল ও বন্দরগুলো বাংলাদেশ পাম আমদানির জন্য সুবিধাজনক। ফলে মালয়েশিয়া সরকার কাজ করছে কীভাবে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের আরও বেশি সুবিধা নিশ্চিত করা যায়। তিনি জানান, তাঁদের সরকার বাংলাদেশকে পাম তেল আমদানি অর্থায়ন করতে প্রস্তুত আছে। বেসরকারি আমদানিকারকদের এ সুবিধা নিতে হলে সরকার থেকে গ্যারান্টি দিতে হবে। পাকিস্তান ও তুরস্কসহ আরও কিছু দেশ মালয়েশিয়া থেকে এ সুবিধা নিচ্ছে।
কিন্তু সরকার বোধ হয় এ সুযোগটির কথা বেসরকারি আমদানিকারকদের জানাতে চায় না। বার্নার্ড ডম্পক বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর সরকারি বিবৃতিকে শুধু বলা হয়, টিসিবি মালয়েশিয়া থেকে পাম আমদানির চুক্তি করতে যাচ্ছে। বেসরকারি খাতের জন্যও যে সহজ অর্থায়নের সুযোগ থাকছে, সেটি কেন ঘোষণা হলো না তা বোধগম্য নয়।
No comments