চাঁদাবাজি থেকে চ্যানেলবাজি -দুর্নীতি by শাহ্দীন মালিক
স্কুল-কলেজের অর্থাত্ বহুদিনের বন্ধুবান্ধবের অনেকে বিলেত-আমেরিকায়, যাকে বলে ‘সেটেল্ড’। অর্থাত্ ২০-৩০ বছর আগে ইউরোপ-আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছিল। পড়াশোনা করে চাকরিবাকরি করছে বহুদিন ধরে। এত দিনে গাড়ি-বাড়ি সবই হয়েছে। তাদের ছেলেমেয়েরাও বড় হয়ে অনেকেই চাকরিতে লেগে গেছে। বন্ধুরা মাঝেমধ্যে, অর্থাত্ দুই-তিন বছরে একবার দেশে আসে। দু-এক বেলা আড্ডা হয়।
তবে ওদের অনেকেই আজকাল ইংল্যান্ড-আমেরিকা থেকে প্রায়ই ফোন করে। ওদের ‘জাতীয়’ জীবন বলতে কিছুই নেই। হুলুস্থুল হওয়ার মতো ওদের বিলেত-আমেরিকার ‘জাতীয়’ জীবনে বিরাট কিছু ঘটে না বললেই চলে। আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে নিঃসন্দেহে বেশ কয়েক মাস ধরে হুলুস্থুল বেধেই থাকে।
আর গত নির্বাচনে ‘বারেক ভাই’-এর প্রার্থিতার কারণে ‘জাতীয়’ হইচই নিঃসন্দেহে ছিল প্রকাণ্ড রকমের। নির্বাচন হলো, ‘বারেক ভাই’ জিতল। তারপর সব শেষ! নির্বাচনে কারচুপি, ভোট জালিয়াতি, বিদেশি রাষ্ট্রের নির্দেশে দেশসুদ্ধ লোক একটা দলকে ভোট দিয়েছে, মহাজাতিক ষড়যন্ত্র কোনো কিছুই ওদের নির্বাচনোত্তর বাজার গরম রাখে না, কংগ্রেসম্যান সিনেটররা অত্যন্ত অরাজনৈতিকভাবে সুড়সুড় করে সংসদে হাজির হয়। রাজপথে ‘শো-ডাউন’ করার মতো প্রতি ভোটারের বাড়িতে একাধিক গাড়ি থাকলেও সেদিকে তাদের নজর নেই। কী বোকা!
মাঝেমধ্যে কিছু বড়সড় অপরাধ হলে ওদের ‘জাতীয়’ জীবন একটু সরগরম হয়। তাও কদাচিত্। ধারণা করি, ইদানীং ‘বারেক ভাই’ স্বাস্থ্যসেবা আইন নিয়ে কিছুটা উত্তাপ ছড়িয়েছে। ওদের অর্থাত্ আমার বন্ধুবান্ধবের দুর্ভাগ্য, সেই উত্তাপটা কংগ্রেস আর সিনেটেই সীমাবদ্ধ ছিল। স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্য বীমার মতো রসকষহীন আইন নিয়ে আড্ডার টেবিলে বসে কত কাপ চা-ই বা সাবাড় করা যায়।
এই দুই দিন আগে ইতালি-প্রবাসী এক বন্ধু এসেছিল একঝলক আড্ডার জন্য। ইতালির প্রধানমন্ত্রী তাঁর নারীসংশ্লিষ্ট ব্যাপারে দেশটাকে প্রায়ই বেশ মাতিয়ে রাখে। তাই বোধ হয় আমার ইতালি-প্রবাসী বন্ধুরা বেশি ফোনটোন করে না। ‘জাতীয়’ জীবনে তারা অন্য অনেকের তুলনায় বেশ ব্যস্ত থাকে। লাইফটা, যাকে বলে, অত বোরিং না।
জার্মানিতে বলতে গেলে কিছুই হয় না, জাতীয় পর্যায়ে। প্রায় বছরদশেক আগে বা তারও কিছু বেশি, জার্মানির একটা ছোট শহরে দিনসাতেক ছিলাম। প্রতিদিন সকাল নয়টা ১৭ মিনিটের বাস ধরে কর্মস্থলে গিয়েছিলাম। ব্যাটা বাস, একটা দিন যদি অন্তত মিনিটখানেকও দেরি করত, তাহলে যানজট নিয়ে চুটিয়ে আড্ডা মারার কী মোক্ষম সুযোগটা পেতাম।
বলতে গেলে কোনো কিছুরই হেরফের হয় না। তাই বন্ধুবান্ধবও বিদেশ-বিভুঁই থেকে ফোন করলে ওদের তরফ থেকে কথাবার্তা পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব, ছেলেমেয়ে, মা-বাবার অসুখবিসুখ ইত্যাদিতে সীমাবদ্ধ থাকে। ওদের তুলনায় আমাদের জীবন যে কত উত্তেজনায় ভরপুর তা এতকাল পর তারা বোধ হয় কল্পনাও করতে পারে না।
আমাদের আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি থাকে বইপত্রে। কাজ হয় হুজুরের হুকুম আর ইচ্ছামাফিক। হুজুরবৃন্দের আজ কী খেয়াল হবে, আগামীকাল কী খায়েশ হবে, পরশু কী মতিভ্রম হবে তা নিয়ে। আর কোনো কিছু না হোক, চুটিয়ে তো আড্ডা মারতে পারি, দেশ-জাতি উদ্ধারে থাকতে পারি সর্বদা নিবেদিতপ্রাণ।
২.
চাঁদাবাজি থেকে শুরু হওয়া ‘বাজি’টা তো দেখছি এখন টিভি চ্যানেল পর্যন্ত গড়িয়েছে। আমাদের মতো পুলকমোহ-শিহরণময় জাতীয় জীবন ‘আর কোথাও পাবে নাকো তুমি’। চ্যানেলবাজি হয় এমন দেশ কি ভূবিশ্বে আর একটিও, প্রিয় পাঠক, আপনি খুঁজে পাবেন! খুঁজে পেলে, আমাকে জানালে যারপরনাই বাধিত হব।
নতুন ক্ষমতাধরেরা চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি দিয়ে স্বাভাবিকভাবেই যাত্রা শুরু করছে। আরও স্বাভাবিকভাবে ফুল-মিনিস্টার, হাফ-মিনিস্টার, কোয়ার্টার-মিনিস্টার নিয়মিতভাবে জপে যাচ্ছেন এবং যত দিন ক্ষমতায় থাকবেন তত দিন জপে যাবেন—চাঁদাবাজ-টেন্ডারবাজ যে দলেরই হোক না কেন, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। আইন তার আপন গতিতে চলবে।
চলতে চলতে প্রথম আলোয় ২৯ অক্টোবর প্রথম পাতার সংবাদ থেকে জানলাম, নতুন সব কয়টি টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স-পারমিট-অনুমোদনপত্র অথবা ডকুমেন্ট—সবই শুধু বা একমাত্র বর্তমান ক্ষমতাধরদের পকেটে ঢুকে পড়েছে। ধারণা করছি, গন্তব্য-পকেট দুই কিসিমের—পাঞ্জাবির পকেট আর স্যুটের পকেট (প্যান্ট বা কোর্ট যেকোনোটার পকেটই হতে পারে)। রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতার একেবারে কাছের হলে পাঞ্জাবির পকেট, আর টাকা-পয়সার জোরে ক্ষমতার কাছের হলে স্যুটের পকেট।
পত্রিকা কেন যেন চ্যানেল বরাদ্দের ব্যাপারে ‘নীতিমালা’ শব্দটা প্রয়োগ করছে। আর আমার মতো হাবাগোবারা বলবে আইন-কানুনের কথা।
এখন ‘বাজি’টাই হলো নীতি। সেটাই আইন—অবশ্য ধর্ম বললে বোধ হয় একটু বেশি বলা হয়ে যাবে। তবে জ্ঞানীজন অনেক আগেই বলে গেছেন, চোরে না শোনে ধর্মের কথা। নোবেল পুরস্কার দেনেওয়ালারা নিশ্চয় নিতান্তই রসকষহীন নীতিবাজ ব্যক্তিবর্গ—না হলে চ্যানেলবাজির মতো এত বড় একটা আবিষ্কারের জন্য তাদের কাছে চ্যানেলবাজদের নোবেল পুরস্কার দেওয়ার জন্য মনোনয়ন পাঠাতাম।
৩.
সোমালিয়া-সুদান-দক্ষিণ ইয়েমেন-মিয়ানমার-আফগানিস্তান-পাকিস্তান আর ইরাক গোছের দেশের মতো আমাদের দেশ থেকে আগামী দুই-তিন বছরে বা তার কিছু আগে বা পরে, আইন-কানুন যদি একেবারেই নিরর্থক বা মূল্যহীন হয়ে পড়ে, তাহলে এসব চ্যানেলবাজির বদৌলতে আহরিত চ্যানেলগুলো নিঃসন্দেহে বহাল তবিয়তে চালু থাকবে।
যারা ক্ষমতায় থাকেন তাঁরা যদি বদ্ধপরিকর হন যে নিয়মনীতি-আইনকানুনের কোনো তোয়াক্কাই করবেন না, তাহলে অনেক সময় মনে হয় জনগণের করার কিছুই নেই। এ ধারণা ক্ষমতাসীনদের মনে প্রোথিত হয় অনেক গভীরভাবে। আশা করছি, কিছু দিনের মধ্যে আবার হাম্ভি-হ্যামার গাড়ি ঢাকার রাস্তায় অহরহ দেখা যাবে। নিজের চ্যানেলগুলোর ‘অফিসে’ তো আর যেনতেন গাড়ি চড়ে যাওয়া যাবে না।
বন্ধুরা বিদেশ থেকে ফোন করলে আমাদের জাতীয় জীবনের চ্যালেনবাজি নামক ভীষণভাবে উত্তেজনাকর নতুন ‘জিনিস’টার ফিরিস্তি গাইব বুক ফুলিয়ে।
টিভি চ্যানেল চালাতে যেসব যন্ত্রপাতি লাগে, বাংলাদেশ নিশ্চয় সেসব যন্ত্রপাতির একটা বিরাট বাজার হয়ে গেছে। হোক।
যন্ত্রপাতি কেনা হোক, চ্যানেলবাজরা বিনিয়োগ করুক। তারপর আমি যেটা একটু-আধটু পারি, সেটাই করব। কোর্টে যাব।
শাহ্দীন মালিক: অ্যাডভোকেট, সুপ্রিম কোর্ট।
তবে ওদের অনেকেই আজকাল ইংল্যান্ড-আমেরিকা থেকে প্রায়ই ফোন করে। ওদের ‘জাতীয়’ জীবন বলতে কিছুই নেই। হুলুস্থুল হওয়ার মতো ওদের বিলেত-আমেরিকার ‘জাতীয়’ জীবনে বিরাট কিছু ঘটে না বললেই চলে। আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে নিঃসন্দেহে বেশ কয়েক মাস ধরে হুলুস্থুল বেধেই থাকে।
আর গত নির্বাচনে ‘বারেক ভাই’-এর প্রার্থিতার কারণে ‘জাতীয়’ হইচই নিঃসন্দেহে ছিল প্রকাণ্ড রকমের। নির্বাচন হলো, ‘বারেক ভাই’ জিতল। তারপর সব শেষ! নির্বাচনে কারচুপি, ভোট জালিয়াতি, বিদেশি রাষ্ট্রের নির্দেশে দেশসুদ্ধ লোক একটা দলকে ভোট দিয়েছে, মহাজাতিক ষড়যন্ত্র কোনো কিছুই ওদের নির্বাচনোত্তর বাজার গরম রাখে না, কংগ্রেসম্যান সিনেটররা অত্যন্ত অরাজনৈতিকভাবে সুড়সুড় করে সংসদে হাজির হয়। রাজপথে ‘শো-ডাউন’ করার মতো প্রতি ভোটারের বাড়িতে একাধিক গাড়ি থাকলেও সেদিকে তাদের নজর নেই। কী বোকা!
মাঝেমধ্যে কিছু বড়সড় অপরাধ হলে ওদের ‘জাতীয়’ জীবন একটু সরগরম হয়। তাও কদাচিত্। ধারণা করি, ইদানীং ‘বারেক ভাই’ স্বাস্থ্যসেবা আইন নিয়ে কিছুটা উত্তাপ ছড়িয়েছে। ওদের অর্থাত্ আমার বন্ধুবান্ধবের দুর্ভাগ্য, সেই উত্তাপটা কংগ্রেস আর সিনেটেই সীমাবদ্ধ ছিল। স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্য বীমার মতো রসকষহীন আইন নিয়ে আড্ডার টেবিলে বসে কত কাপ চা-ই বা সাবাড় করা যায়।
এই দুই দিন আগে ইতালি-প্রবাসী এক বন্ধু এসেছিল একঝলক আড্ডার জন্য। ইতালির প্রধানমন্ত্রী তাঁর নারীসংশ্লিষ্ট ব্যাপারে দেশটাকে প্রায়ই বেশ মাতিয়ে রাখে। তাই বোধ হয় আমার ইতালি-প্রবাসী বন্ধুরা বেশি ফোনটোন করে না। ‘জাতীয়’ জীবনে তারা অন্য অনেকের তুলনায় বেশ ব্যস্ত থাকে। লাইফটা, যাকে বলে, অত বোরিং না।
জার্মানিতে বলতে গেলে কিছুই হয় না, জাতীয় পর্যায়ে। প্রায় বছরদশেক আগে বা তারও কিছু বেশি, জার্মানির একটা ছোট শহরে দিনসাতেক ছিলাম। প্রতিদিন সকাল নয়টা ১৭ মিনিটের বাস ধরে কর্মস্থলে গিয়েছিলাম। ব্যাটা বাস, একটা দিন যদি অন্তত মিনিটখানেকও দেরি করত, তাহলে যানজট নিয়ে চুটিয়ে আড্ডা মারার কী মোক্ষম সুযোগটা পেতাম।
বলতে গেলে কোনো কিছুরই হেরফের হয় না। তাই বন্ধুবান্ধবও বিদেশ-বিভুঁই থেকে ফোন করলে ওদের তরফ থেকে কথাবার্তা পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব, ছেলেমেয়ে, মা-বাবার অসুখবিসুখ ইত্যাদিতে সীমাবদ্ধ থাকে। ওদের তুলনায় আমাদের জীবন যে কত উত্তেজনায় ভরপুর তা এতকাল পর তারা বোধ হয় কল্পনাও করতে পারে না।
আমাদের আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি থাকে বইপত্রে। কাজ হয় হুজুরের হুকুম আর ইচ্ছামাফিক। হুজুরবৃন্দের আজ কী খেয়াল হবে, আগামীকাল কী খায়েশ হবে, পরশু কী মতিভ্রম হবে তা নিয়ে। আর কোনো কিছু না হোক, চুটিয়ে তো আড্ডা মারতে পারি, দেশ-জাতি উদ্ধারে থাকতে পারি সর্বদা নিবেদিতপ্রাণ।
২.
চাঁদাবাজি থেকে শুরু হওয়া ‘বাজি’টা তো দেখছি এখন টিভি চ্যানেল পর্যন্ত গড়িয়েছে। আমাদের মতো পুলকমোহ-শিহরণময় জাতীয় জীবন ‘আর কোথাও পাবে নাকো তুমি’। চ্যানেলবাজি হয় এমন দেশ কি ভূবিশ্বে আর একটিও, প্রিয় পাঠক, আপনি খুঁজে পাবেন! খুঁজে পেলে, আমাকে জানালে যারপরনাই বাধিত হব।
নতুন ক্ষমতাধরেরা চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি দিয়ে স্বাভাবিকভাবেই যাত্রা শুরু করছে। আরও স্বাভাবিকভাবে ফুল-মিনিস্টার, হাফ-মিনিস্টার, কোয়ার্টার-মিনিস্টার নিয়মিতভাবে জপে যাচ্ছেন এবং যত দিন ক্ষমতায় থাকবেন তত দিন জপে যাবেন—চাঁদাবাজ-টেন্ডারবাজ যে দলেরই হোক না কেন, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। আইন তার আপন গতিতে চলবে।
চলতে চলতে প্রথম আলোয় ২৯ অক্টোবর প্রথম পাতার সংবাদ থেকে জানলাম, নতুন সব কয়টি টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স-পারমিট-অনুমোদনপত্র অথবা ডকুমেন্ট—সবই শুধু বা একমাত্র বর্তমান ক্ষমতাধরদের পকেটে ঢুকে পড়েছে। ধারণা করছি, গন্তব্য-পকেট দুই কিসিমের—পাঞ্জাবির পকেট আর স্যুটের পকেট (প্যান্ট বা কোর্ট যেকোনোটার পকেটই হতে পারে)। রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতার একেবারে কাছের হলে পাঞ্জাবির পকেট, আর টাকা-পয়সার জোরে ক্ষমতার কাছের হলে স্যুটের পকেট।
পত্রিকা কেন যেন চ্যানেল বরাদ্দের ব্যাপারে ‘নীতিমালা’ শব্দটা প্রয়োগ করছে। আর আমার মতো হাবাগোবারা বলবে আইন-কানুনের কথা।
এখন ‘বাজি’টাই হলো নীতি। সেটাই আইন—অবশ্য ধর্ম বললে বোধ হয় একটু বেশি বলা হয়ে যাবে। তবে জ্ঞানীজন অনেক আগেই বলে গেছেন, চোরে না শোনে ধর্মের কথা। নোবেল পুরস্কার দেনেওয়ালারা নিশ্চয় নিতান্তই রসকষহীন নীতিবাজ ব্যক্তিবর্গ—না হলে চ্যানেলবাজির মতো এত বড় একটা আবিষ্কারের জন্য তাদের কাছে চ্যানেলবাজদের নোবেল পুরস্কার দেওয়ার জন্য মনোনয়ন পাঠাতাম।
৩.
সোমালিয়া-সুদান-দক্ষিণ ইয়েমেন-মিয়ানমার-আফগানিস্তান-পাকিস্তান আর ইরাক গোছের দেশের মতো আমাদের দেশ থেকে আগামী দুই-তিন বছরে বা তার কিছু আগে বা পরে, আইন-কানুন যদি একেবারেই নিরর্থক বা মূল্যহীন হয়ে পড়ে, তাহলে এসব চ্যানেলবাজির বদৌলতে আহরিত চ্যানেলগুলো নিঃসন্দেহে বহাল তবিয়তে চালু থাকবে।
যারা ক্ষমতায় থাকেন তাঁরা যদি বদ্ধপরিকর হন যে নিয়মনীতি-আইনকানুনের কোনো তোয়াক্কাই করবেন না, তাহলে অনেক সময় মনে হয় জনগণের করার কিছুই নেই। এ ধারণা ক্ষমতাসীনদের মনে প্রোথিত হয় অনেক গভীরভাবে। আশা করছি, কিছু দিনের মধ্যে আবার হাম্ভি-হ্যামার গাড়ি ঢাকার রাস্তায় অহরহ দেখা যাবে। নিজের চ্যানেলগুলোর ‘অফিসে’ তো আর যেনতেন গাড়ি চড়ে যাওয়া যাবে না।
বন্ধুরা বিদেশ থেকে ফোন করলে আমাদের জাতীয় জীবনের চ্যালেনবাজি নামক ভীষণভাবে উত্তেজনাকর নতুন ‘জিনিস’টার ফিরিস্তি গাইব বুক ফুলিয়ে।
টিভি চ্যানেল চালাতে যেসব যন্ত্রপাতি লাগে, বাংলাদেশ নিশ্চয় সেসব যন্ত্রপাতির একটা বিরাট বাজার হয়ে গেছে। হোক।
যন্ত্রপাতি কেনা হোক, চ্যানেলবাজরা বিনিয়োগ করুক। তারপর আমি যেটা একটু-আধটু পারি, সেটাই করব। কোর্টে যাব।
শাহ্দীন মালিক: অ্যাডভোকেট, সুপ্রিম কোর্ট।
No comments