ফাতেমা রানীর তীর্থোৎসব -উৎসব by আবদুল মান্নান সোহেল
নালিতাবাড়ীর কথা বলি।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কোল ঘেঁষে অপূর্ব নৈসর্গিক শোভামণ্ডিত গারো পাহাড়। এ পাহাড়ের শান্ত-স্নিগ্ধ জনপদ শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় এই নালিতাবাড়ী। সেখানেই বারোমারী। এখানকার পাহাড়ি উপত্যকায় খ্রিষ্টান সাধু লিওর ধর্মপল্লী, যা বারোমারী ধর্মপল্লী নামে পরিচিত। সেখানেই ২৯ ও ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘ফাতেমা রানীর তীর্থোৎসব’। ক্যাথলিক খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের এ তীর্থোৎসবকে ঘিরে অন্য রকম সাজে সেজেছিল বারোমারী ধর্মপল্লী। উত্সবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ছাড়াও দেশের বাইরে থেকে ‘মা মারিয়ার’ ভক্তরা এসে সমবেত হয়েছিলেন শুদ্ধ আত্মার অন্বেষণে। প্রতিবছরের মতো এবারও ফাতেমা রানীর তীর্থোৎসবে একটি মূল সুর ঠিক করা হয়েছিল—‘মা মারিয়া আমাদের সহায়’!
কত মানুষ এসেছিল উৎসবে। সবাই চেয়েছে এই উৎসবে যোগ দিয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে। বর্তমান সময়ের নানা ধরনের অন্যায়, অবিচার থেকে বেরিয়ে পবিত্র জীবনের দীক্ষা নিতে এসেছিল এই মানুষেরা।
এবারের তীর্থোৎসব পরিচালনা করেছেন ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপ মি. পনেন পল কুবি সিএসসি। অন্যান্য ধর্মপ্রদেশের পাল পুরোহিতেরা এবং বারোমারী ধর্মপল্লীর ফাদার উইলসন জাম্বিল উৎসবের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন। ২৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটায় আগমনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল দুই দিনব্যাপী তীর্থোৎসবের। রাতে আলোর মিছিল সহকারে গারো পাহাড়ের উঁচু-নিচু টিলার পথে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ তীর্থস্থান পরিভ্রমণ করেছেন মা মারিয়ার ভক্তরা। রাত একটার দিকে তীর্থস্থান এলাকায় গীতি আলেখ্যর পাশাপাশি চলেছিল ভক্তি, আরাধনা ও প্রার্থনা। ৩০ অক্টোবর সকালে জীবন্ত ক্রুশের পথ, মহাখ্রিষ্টের জাগরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দুই দিনের তীর্থোৎসব। এবারের উত্সবে প্রায় ২০ হাজার ক্যাথলিক খ্রিষ্টান অংশ নিয়েছেন বলে ধর্মপল্লী সূত্রগুলো জানিয়েছে। তীর্থযাত্রা উপলক্ষে ধর্মানুসারীরা অনেকেই তীর্থরোজা পালন করেন। যিশুখ্রিষ্টের জন্মস্থান বেথলেহেম এবং তাঁর কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন স্থান তথা গোটা ফিলিস্তিনই পুণ্যস্থান বা তীর্থস্থান হিসেবে পরিগণিত। ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশ তথা সারা দেশের ভক্তদের কুমারী মারিয়ার প্রতি গভীর বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপনের অদম্য আগ্রহ ও উত্সাহ লক্ষ করে ১৯৯৭ সালে পর্তুগালের ‘ফাতেমা নগরের’ আদলে ও অনুকরণে বারোমারী ধর্মপল্লীতে গড়ে তোলা হয় এ তীর্থস্থান। তত্কালীন ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ ফ্রান্সিস এ গোমেজ বারোমারীকে ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান হিসেবে ঘোষণা দেন। খ্রিষ্টানদের প্রাণের দাবি ছিল মা মারিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধা জানানোর উপযুক্ত স্থান লাভের। যে কারণে ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত সাধু লিওর ধর্মপল্লী বা বারোমারী ধর্মপল্লীকে ১৯৯৭ সালে গড়ে তোলা হয় জাতীয় মহাতীর্থস্থান হিসেবে। খ্রিষ্টধর্মের পবিত্র ধর্মস্থান হিসেবে এ তীর্থস্থানে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে দুই দিনব্যাপী মহাতীর্থোত্সব পালিত হয়। ফাতেমানগরের আদলে এ উত্সব হয় বলে এটি পরিচিতি পায় ‘ফাতেমা রানীর তীর্থোত্সব’ হিসেবে। ধর্মীয় চেতনায় হাজার হাজার নারী-পুরুষ একত্র হয়ে নির্মল হূদয়ের অধিকারিণী ঈশ্বরজননী, সব স্বর্গদূত ও খ্রিষ্টভক্তদের রানি, স্নেহময়ী মাতা ফাতেমা রানীর করকমলে অবনত মস্তকে হূদয়-মন উজাড় করে ভক্তি শ্রদ্ধা ও তাঁর অকৃপণ সাহায্য প্রার্থনা করেন। তীর্থোত্সব দেখার জন্য খ্রিষ্টভক্তরা ছাড়াও অন্য ধর্মাবলম্বীরা এ দুই দিন বারোমারীতে ভিড় করেছিলেন। এ উত্সব ঘিরে ধর্মপল্লীর পার্শ্ববর্তী চত্বরে বসে ছিল বারোমারী মেলা। তীর্থোৎসবটি এ অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্র্রীতির এক অপূর্ব মেলবন্ধন গড়ে তুলেছে।
মানুষে মানুষে হূদয়ের মিলন ঘটে এ ধরনের উৎসবে। সব ধরনের প্রতিকূলতা কাটিয়ে জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়ার একটা প্রচেষ্টায় মানুষ নিজেকেই যেন খুঁজে ফেরে। এ কারণেই উৎসব হয়ে ওঠে সর্বজনীন।
আগামী বছর আবার আসবে অক্টোবর; আবার এখানে বসবে উত্সব; আবার প্রাণে প্রাণে মিলন হবে মানুষের। তার আগে এই উত্সবের স্মৃতি নিয়েই মানুষ কাটিয়ে দেবে একটি বছর।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কোল ঘেঁষে অপূর্ব নৈসর্গিক শোভামণ্ডিত গারো পাহাড়। এ পাহাড়ের শান্ত-স্নিগ্ধ জনপদ শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় এই নালিতাবাড়ী। সেখানেই বারোমারী। এখানকার পাহাড়ি উপত্যকায় খ্রিষ্টান সাধু লিওর ধর্মপল্লী, যা বারোমারী ধর্মপল্লী নামে পরিচিত। সেখানেই ২৯ ও ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘ফাতেমা রানীর তীর্থোৎসব’। ক্যাথলিক খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের এ তীর্থোৎসবকে ঘিরে অন্য রকম সাজে সেজেছিল বারোমারী ধর্মপল্লী। উত্সবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ছাড়াও দেশের বাইরে থেকে ‘মা মারিয়ার’ ভক্তরা এসে সমবেত হয়েছিলেন শুদ্ধ আত্মার অন্বেষণে। প্রতিবছরের মতো এবারও ফাতেমা রানীর তীর্থোৎসবে একটি মূল সুর ঠিক করা হয়েছিল—‘মা মারিয়া আমাদের সহায়’!
কত মানুষ এসেছিল উৎসবে। সবাই চেয়েছে এই উৎসবে যোগ দিয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে। বর্তমান সময়ের নানা ধরনের অন্যায়, অবিচার থেকে বেরিয়ে পবিত্র জীবনের দীক্ষা নিতে এসেছিল এই মানুষেরা।
এবারের তীর্থোৎসব পরিচালনা করেছেন ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপ মি. পনেন পল কুবি সিএসসি। অন্যান্য ধর্মপ্রদেশের পাল পুরোহিতেরা এবং বারোমারী ধর্মপল্লীর ফাদার উইলসন জাম্বিল উৎসবের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন। ২৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটায় আগমনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল দুই দিনব্যাপী তীর্থোৎসবের। রাতে আলোর মিছিল সহকারে গারো পাহাড়ের উঁচু-নিচু টিলার পথে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ তীর্থস্থান পরিভ্রমণ করেছেন মা মারিয়ার ভক্তরা। রাত একটার দিকে তীর্থস্থান এলাকায় গীতি আলেখ্যর পাশাপাশি চলেছিল ভক্তি, আরাধনা ও প্রার্থনা। ৩০ অক্টোবর সকালে জীবন্ত ক্রুশের পথ, মহাখ্রিষ্টের জাগরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দুই দিনের তীর্থোৎসব। এবারের উত্সবে প্রায় ২০ হাজার ক্যাথলিক খ্রিষ্টান অংশ নিয়েছেন বলে ধর্মপল্লী সূত্রগুলো জানিয়েছে। তীর্থযাত্রা উপলক্ষে ধর্মানুসারীরা অনেকেই তীর্থরোজা পালন করেন। যিশুখ্রিষ্টের জন্মস্থান বেথলেহেম এবং তাঁর কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন স্থান তথা গোটা ফিলিস্তিনই পুণ্যস্থান বা তীর্থস্থান হিসেবে পরিগণিত। ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশ তথা সারা দেশের ভক্তদের কুমারী মারিয়ার প্রতি গভীর বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপনের অদম্য আগ্রহ ও উত্সাহ লক্ষ করে ১৯৯৭ সালে পর্তুগালের ‘ফাতেমা নগরের’ আদলে ও অনুকরণে বারোমারী ধর্মপল্লীতে গড়ে তোলা হয় এ তীর্থস্থান। তত্কালীন ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ ফ্রান্সিস এ গোমেজ বারোমারীকে ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান হিসেবে ঘোষণা দেন। খ্রিষ্টানদের প্রাণের দাবি ছিল মা মারিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধা জানানোর উপযুক্ত স্থান লাভের। যে কারণে ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত সাধু লিওর ধর্মপল্লী বা বারোমারী ধর্মপল্লীকে ১৯৯৭ সালে গড়ে তোলা হয় জাতীয় মহাতীর্থস্থান হিসেবে। খ্রিষ্টধর্মের পবিত্র ধর্মস্থান হিসেবে এ তীর্থস্থানে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে দুই দিনব্যাপী মহাতীর্থোত্সব পালিত হয়। ফাতেমানগরের আদলে এ উত্সব হয় বলে এটি পরিচিতি পায় ‘ফাতেমা রানীর তীর্থোত্সব’ হিসেবে। ধর্মীয় চেতনায় হাজার হাজার নারী-পুরুষ একত্র হয়ে নির্মল হূদয়ের অধিকারিণী ঈশ্বরজননী, সব স্বর্গদূত ও খ্রিষ্টভক্তদের রানি, স্নেহময়ী মাতা ফাতেমা রানীর করকমলে অবনত মস্তকে হূদয়-মন উজাড় করে ভক্তি শ্রদ্ধা ও তাঁর অকৃপণ সাহায্য প্রার্থনা করেন। তীর্থোত্সব দেখার জন্য খ্রিষ্টভক্তরা ছাড়াও অন্য ধর্মাবলম্বীরা এ দুই দিন বারোমারীতে ভিড় করেছিলেন। এ উত্সব ঘিরে ধর্মপল্লীর পার্শ্ববর্তী চত্বরে বসে ছিল বারোমারী মেলা। তীর্থোৎসবটি এ অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্র্রীতির এক অপূর্ব মেলবন্ধন গড়ে তুলেছে।
মানুষে মানুষে হূদয়ের মিলন ঘটে এ ধরনের উৎসবে। সব ধরনের প্রতিকূলতা কাটিয়ে জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়ার একটা প্রচেষ্টায় মানুষ নিজেকেই যেন খুঁজে ফেরে। এ কারণেই উৎসব হয়ে ওঠে সর্বজনীন।
আগামী বছর আবার আসবে অক্টোবর; আবার এখানে বসবে উত্সব; আবার প্রাণে প্রাণে মিলন হবে মানুষের। তার আগে এই উত্সবের স্মৃতি নিয়েই মানুষ কাটিয়ে দেবে একটি বছর।
No comments