একটি প্রশ্নবিদ্ধ নিরাপত্তা বিল
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই জীবিত কন্যা এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা বিধানে ‘জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা বিল-২০০৯’ সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। বিলটিতে জাতির পিতার পরিবারের সদস্য বলতে তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং তাঁদের সন্তানদের বোঝানো হয়েছে। প্রস্তাবিত বিলের বিধান অনুযায়ী, সরকার নির্ধারিত শর্তে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের নিরাপত্তা ও সুরক্ষিত আবাসনের ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। প্রস্তাবিত বিলে আরও বলা হয়েছে, বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (এসএসএফ) অধ্যাদেশ-১৯৮৬-এর অধীনে ভিআইপির জন্য যে নিরাপত্তাব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের আজীবন সে রকম নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
অনেকটা একই ধরনের একটা আইন, যদিও কিছুটা সীমিত পরিধিতে, বিগত আওয়ামী লীগের শাসনের শেষ সময়ে সংসদে পাস হয়েছিল, যেটা বিগত জোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সংসদের প্রথম অধিবেশনেই বাতিল করে দিয়েছিল। সে কারণে স্বাভাবিকভাবেই ধারণা করা হয়েছিল, ওই ধরনের আইন পুনঃপ্রবর্তনের আগে লাভ-ক্ষতির দিকটা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভেবে দেখা হবে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকবে না তখন এই আইনের ভাগ্যে কী ঘটবে সেটা ভেবে।
এটা সুবিদিত সত্য যে প্রতিটি সমাজে যাঁরা ইতিহাস সৃষ্টি করেন বা তার গতিধারা নিয়ন্ত্রণ করেন, তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই হিংসার শিকার হন। ইতিহাসের গতিধারায় বাধা সৃষ্টির প্রয়াসে যেকোনো হিংসাত্মক কাজ করার জন্য একজন ব্যক্তিই যথেষ্ট। আততায়ীর বুলেটে মহাত্মা গান্ধী ও মারটিন লুথার কিংয়ের নৃশংস আত্মদান প্রমাণ করে, যাঁরা সারা জীবন অহিংস নীতির প্রচারক, তাঁরা নিজেরাই কীভাবে হিংসার শিকার হন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রতিদিন গড়ে ৩০টি হত্যার হুমকি পাচ্ছেন বলে নিজেই প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু কোনো দিন চিন্তাও করেননি যে তিনি তাঁর নিজস্ব লোকদের হাতে জীবন দিতে পারেন। তাঁর মনে যদি তাঁর নিজস্ব জনগণ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকত, তাহলে তিনি তাঁর সাধারণ বাসভবন ছেড়ে বঙ্গভবনের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে বসবাস করতেন। বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারবর্গের ভাগ্যে যা ঘটেছে, সেটা বিবেচনায় নিলে তাঁর দুই কন্যার জীবনের ওপর হুমকি ও ঝুঁকিকে কোনোভাবেই হালকা করে দেখার অবকাশ নেই।
আগের বারের আওয়ামী লীগ সরকারের নিরাপত্তা আইনের তুলনায় বর্তমান প্রস্তাবিত বিলের পরিধি অনেক বিস্তৃত। বর্তমান বিলে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার সন্তানদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই বিলে দুই ধরনের ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে: নিরাপত্তা ও সুবিধাদি। নিরাপত্তায় এসএসএফ নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বৃহত্তর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে একমাত্র শেখ হাসিনাই বাংলাদেশে বাস করেন এবং প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ভোগ করেছেন। তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না এবং তখনো তিনি যদি রাজনীতিতে থাকেন, তাহলে তখন তিনি কতটা নিরাপত্তা ভোগ করবেন, সেটা নির্ধারণ করবে তখনকার সরকার, বর্তমানে সংসদে উত্থাপিত বিলে যা-ই বলা হোক না কেন। প্রকৃতপক্ষে অতীত ইতিহাসই বলছে ওই আইন কী ভাগ্য বরণ করবে। বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্য সদস্যরা সবাই দেশের বাইরে বসবাস করছেন এবং সে কারণে তাঁদের বিদেশে এসএসএফ নিরাপত্তা দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তাঁরা যখন বাংলাদেশে বেড়াতে যাচ্ছেন তখন প্রধানমন্ত্রীর সুরক্ষিত বাসভবনে অবস্থান করছেন। কিন্তু তাঁরা যখন বাসভবনের বাইরে বের হবেন তখন কীভাবে এসএসএফ নিরাপত্তা তাঁদের জন্য প্রযোজ্য হবে, সেটা সাধারণের কাছে বোধগম্য নয়। পৃথিবীর কোনো দেশে বেসরকারি নাগরিকদের কাউকে এ ধরনের নিরাপত্তা, যেটা প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট, দেওয়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আর আওয়ামী লীগ যখন সরকারের থাকবে না তখন এ ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থার পরিণতি, বিশেষ করে আমাদের রাজনৈতিক দ্বিধাবিভক্ত সমাজে কী দাঁড়াবে, সেটা জানার জন্য কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক হওয়ার প্রয়োজন নেই।
বিলের দ্বিতীয় ভাগে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সবার জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক সুরক্ষিত আবাসনের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। এ ব্যবস্থা এক দিকে যেমন নিষ্প্রয়োজনীয়, অন্যদিকে তেমনই রাষ্ট্র কর্তৃক সব নাগরিকের সমান সুযোগ প্রদানের নীতির বিপরীত। শেখ হাসিনা ছাড়া বঙ্গবন্ধু পরিবারের সবাই হয় অন্য দেশের নাগরিক বা অধিবাসী। শেখ রেহানা তাঁর সন্তানদের নিয়ে বহু বছর ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন এবং তাঁর সন্তানেরা হয় সুপ্রতিষ্ঠিত বা সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে। বঙ্গবন্ধুর তিনজন বিবাহিত দৌহিত্রের দুজনই বিদেশি নাগরিককে বিয়ে করেছেন এবং তাঁরা দুজনই অর্থনৈতিকভাবে কোনো খারাপ অবস্থায় আছেন সেটা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। শেখ হাসিনার একমাত্র কন্যা স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে টরন্টোর উপশহরে এক অভিজাত এলাকায় নিজ বাড়িতে বসবাস করছেন। ইদানীং প্রায়ই তাঁদের বাংলাদেশ সফর যদি তাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থার মাপকাঠি হিসেবে ধরে নেওয়া যায়, তাহলে বাংলাদেশে তাঁদের কোনো বাড়ির মালিক হওয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় বদান্যতার প্রয়োজন নেই। স্বামীর মৃত্যুর পর শেখ হাসিনা নিজেও ‘সুধাসদনের’ মালিক হয়েছেন। উপরিউক্ত সত্যের পরিপ্রেক্ষিতে কী করে একটা গরিব দেশের মানুষকে বোঝানো যাবে বঙ্গবন্ধু পরিবারের অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সদস্যদের রাষ্ট্রীয় বদান্যতায় ‘সুরক্ষিত আবাসন’ প্রদানের যুক্তি? বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে কি চাইতেন যে তাঁর পরিবারের সদস্যরা রাষ্ট্রীয় বদান্যতায় ‘সুরক্ষিত আবাসনের’ মালিক হোন?
কয়েক মাস আগে সরকার বর্তমান বিরোধী দলীয় নেত্রীকে তাঁর সেনানিবাসের বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য আইনি নোটিশ দিয়েছেন, যদিও দুটো নয়, তখনকার পরিস্থিতিতে মানবিক কারণ রাষ্ট্র কর্তৃক তাঁকে একটি বাড়ি দেওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত অবশ্যই গ্রহণযোগ্য ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকারের প্রস্তাবিত নিরাপত্তা বিল আইনে পরিণত হলে এবং সরকার যদি এটাকে আক্ষরিকভাবে কার্যকর করে, তাহলে জনগণ এবং আদালতের দরবারে বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রীকে তাঁর বাড়ি থেকে উঠিয়ে দেওয়ার সরকারি প্রচেষ্টার নৈতিক যৌক্তিকতা খুবই দুর্বল হয়ে পড়বে। বৃহত্তর পরিসরে রাষ্ট্র কর্তৃক ‘সুরক্ষিত আবাসনের’ ব্যবস্থাকে জনগণ ক্ষমতার এক চরম অপব্যবহার হিসেবেই গণ্য করবে।
পরিশেষে এটা নিশ্চিত করা বলা যায় যে এ নিরাপত্তা আইন শুধু স্বল্প স্থায়ীই হবে না, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের প্রতি লাখো-কোটি মানুষের বিদ্যমান ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার এক অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হবে। বর্তমান ক্ষমতার মসনদের কাছে কি এমন কেউ আছেন, যিনি এ সরল কথা ও যুক্তিগুলো অকপটে প্রধানমন্ত্রীকে বলার সত্সাহস রাখেন?
ড. মোজাম্মেল খান
কানাডা প্রবাসী অধ্যাপক।
অনেকটা একই ধরনের একটা আইন, যদিও কিছুটা সীমিত পরিধিতে, বিগত আওয়ামী লীগের শাসনের শেষ সময়ে সংসদে পাস হয়েছিল, যেটা বিগত জোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সংসদের প্রথম অধিবেশনেই বাতিল করে দিয়েছিল। সে কারণে স্বাভাবিকভাবেই ধারণা করা হয়েছিল, ওই ধরনের আইন পুনঃপ্রবর্তনের আগে লাভ-ক্ষতির দিকটা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভেবে দেখা হবে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকবে না তখন এই আইনের ভাগ্যে কী ঘটবে সেটা ভেবে।
এটা সুবিদিত সত্য যে প্রতিটি সমাজে যাঁরা ইতিহাস সৃষ্টি করেন বা তার গতিধারা নিয়ন্ত্রণ করেন, তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই হিংসার শিকার হন। ইতিহাসের গতিধারায় বাধা সৃষ্টির প্রয়াসে যেকোনো হিংসাত্মক কাজ করার জন্য একজন ব্যক্তিই যথেষ্ট। আততায়ীর বুলেটে মহাত্মা গান্ধী ও মারটিন লুথার কিংয়ের নৃশংস আত্মদান প্রমাণ করে, যাঁরা সারা জীবন অহিংস নীতির প্রচারক, তাঁরা নিজেরাই কীভাবে হিংসার শিকার হন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রতিদিন গড়ে ৩০টি হত্যার হুমকি পাচ্ছেন বলে নিজেই প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু কোনো দিন চিন্তাও করেননি যে তিনি তাঁর নিজস্ব লোকদের হাতে জীবন দিতে পারেন। তাঁর মনে যদি তাঁর নিজস্ব জনগণ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকত, তাহলে তিনি তাঁর সাধারণ বাসভবন ছেড়ে বঙ্গভবনের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে বসবাস করতেন। বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারবর্গের ভাগ্যে যা ঘটেছে, সেটা বিবেচনায় নিলে তাঁর দুই কন্যার জীবনের ওপর হুমকি ও ঝুঁকিকে কোনোভাবেই হালকা করে দেখার অবকাশ নেই।
আগের বারের আওয়ামী লীগ সরকারের নিরাপত্তা আইনের তুলনায় বর্তমান প্রস্তাবিত বিলের পরিধি অনেক বিস্তৃত। বর্তমান বিলে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার সন্তানদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই বিলে দুই ধরনের ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে: নিরাপত্তা ও সুবিধাদি। নিরাপত্তায় এসএসএফ নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বৃহত্তর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে একমাত্র শেখ হাসিনাই বাংলাদেশে বাস করেন এবং প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ভোগ করেছেন। তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না এবং তখনো তিনি যদি রাজনীতিতে থাকেন, তাহলে তখন তিনি কতটা নিরাপত্তা ভোগ করবেন, সেটা নির্ধারণ করবে তখনকার সরকার, বর্তমানে সংসদে উত্থাপিত বিলে যা-ই বলা হোক না কেন। প্রকৃতপক্ষে অতীত ইতিহাসই বলছে ওই আইন কী ভাগ্য বরণ করবে। বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্য সদস্যরা সবাই দেশের বাইরে বসবাস করছেন এবং সে কারণে তাঁদের বিদেশে এসএসএফ নিরাপত্তা দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তাঁরা যখন বাংলাদেশে বেড়াতে যাচ্ছেন তখন প্রধানমন্ত্রীর সুরক্ষিত বাসভবনে অবস্থান করছেন। কিন্তু তাঁরা যখন বাসভবনের বাইরে বের হবেন তখন কীভাবে এসএসএফ নিরাপত্তা তাঁদের জন্য প্রযোজ্য হবে, সেটা সাধারণের কাছে বোধগম্য নয়। পৃথিবীর কোনো দেশে বেসরকারি নাগরিকদের কাউকে এ ধরনের নিরাপত্তা, যেটা প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট, দেওয়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আর আওয়ামী লীগ যখন সরকারের থাকবে না তখন এ ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থার পরিণতি, বিশেষ করে আমাদের রাজনৈতিক দ্বিধাবিভক্ত সমাজে কী দাঁড়াবে, সেটা জানার জন্য কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক হওয়ার প্রয়োজন নেই।
বিলের দ্বিতীয় ভাগে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সবার জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক সুরক্ষিত আবাসনের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। এ ব্যবস্থা এক দিকে যেমন নিষ্প্রয়োজনীয়, অন্যদিকে তেমনই রাষ্ট্র কর্তৃক সব নাগরিকের সমান সুযোগ প্রদানের নীতির বিপরীত। শেখ হাসিনা ছাড়া বঙ্গবন্ধু পরিবারের সবাই হয় অন্য দেশের নাগরিক বা অধিবাসী। শেখ রেহানা তাঁর সন্তানদের নিয়ে বহু বছর ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন এবং তাঁর সন্তানেরা হয় সুপ্রতিষ্ঠিত বা সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে। বঙ্গবন্ধুর তিনজন বিবাহিত দৌহিত্রের দুজনই বিদেশি নাগরিককে বিয়ে করেছেন এবং তাঁরা দুজনই অর্থনৈতিকভাবে কোনো খারাপ অবস্থায় আছেন সেটা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। শেখ হাসিনার একমাত্র কন্যা স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে টরন্টোর উপশহরে এক অভিজাত এলাকায় নিজ বাড়িতে বসবাস করছেন। ইদানীং প্রায়ই তাঁদের বাংলাদেশ সফর যদি তাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থার মাপকাঠি হিসেবে ধরে নেওয়া যায়, তাহলে বাংলাদেশে তাঁদের কোনো বাড়ির মালিক হওয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় বদান্যতার প্রয়োজন নেই। স্বামীর মৃত্যুর পর শেখ হাসিনা নিজেও ‘সুধাসদনের’ মালিক হয়েছেন। উপরিউক্ত সত্যের পরিপ্রেক্ষিতে কী করে একটা গরিব দেশের মানুষকে বোঝানো যাবে বঙ্গবন্ধু পরিবারের অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সদস্যদের রাষ্ট্রীয় বদান্যতায় ‘সুরক্ষিত আবাসন’ প্রদানের যুক্তি? বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে কি চাইতেন যে তাঁর পরিবারের সদস্যরা রাষ্ট্রীয় বদান্যতায় ‘সুরক্ষিত আবাসনের’ মালিক হোন?
কয়েক মাস আগে সরকার বর্তমান বিরোধী দলীয় নেত্রীকে তাঁর সেনানিবাসের বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য আইনি নোটিশ দিয়েছেন, যদিও দুটো নয়, তখনকার পরিস্থিতিতে মানবিক কারণ রাষ্ট্র কর্তৃক তাঁকে একটি বাড়ি দেওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত অবশ্যই গ্রহণযোগ্য ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকারের প্রস্তাবিত নিরাপত্তা বিল আইনে পরিণত হলে এবং সরকার যদি এটাকে আক্ষরিকভাবে কার্যকর করে, তাহলে জনগণ এবং আদালতের দরবারে বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রীকে তাঁর বাড়ি থেকে উঠিয়ে দেওয়ার সরকারি প্রচেষ্টার নৈতিক যৌক্তিকতা খুবই দুর্বল হয়ে পড়বে। বৃহত্তর পরিসরে রাষ্ট্র কর্তৃক ‘সুরক্ষিত আবাসনের’ ব্যবস্থাকে জনগণ ক্ষমতার এক চরম অপব্যবহার হিসেবেই গণ্য করবে।
পরিশেষে এটা নিশ্চিত করা বলা যায় যে এ নিরাপত্তা আইন শুধু স্বল্প স্থায়ীই হবে না, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের প্রতি লাখো-কোটি মানুষের বিদ্যমান ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার এক অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হবে। বর্তমান ক্ষমতার মসনদের কাছে কি এমন কেউ আছেন, যিনি এ সরল কথা ও যুক্তিগুলো অকপটে প্রধানমন্ত্রীকে বলার সত্সাহস রাখেন?
ড. মোজাম্মেল খান
কানাডা প্রবাসী অধ্যাপক।
No comments