একটি অটিজম শিশু একটি পরিবারের কান্না by ডা. এমএ হক, পিএইচ.ডি
ঘটনা (২) রহমান সাহেব (ছদ্মনাম) একজন চাকরিজীবী। তার মেয়ে সুইটি (ছদ্মনাম) বয়স ১২ বছর, একজন অটিস্টিক শিশু। প্রায় ৮ বছর ধরে তারা তাদের গ্রামের বাড়িতে, কোনো আত্মীয়-স্বজনের বাসায় অথবা কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে বেড়াতে যান না। সুইটি কোনো সামাজিকতা বোঝে না। সে প্রায়ই হাইপার হয়ে যায়। ফলে, অনুষ্ঠানের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হয়।
দিন দিন তারাও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাদের একটাই চাওয়া এরা যেন নিজের ভালো-মন্দ ঠিকমতো বুঝতে পারে এবং নিজের কাজকর্ম ঠিকমতো করতে পারে। তা না হলে আমাদের মৃত্যুর পরে এদের কী হবে?
এ ধরনের সমস্যা আজ সালাম সাহেব বা রহমান সাহেবের একার নয়? এ সমস্যা শুধু ঢাকা শহরেই কয়েক লাখ অভিভাবকের; সমগ্র দেশে এর সংখ্যা আরও অনেক। এ সকল পরিবারের পিতা-মাতা দিন দিন নিজেদের কাজকর্মে অনীহা দেখাচ্ছেন। তাদের কারও কারও কথা-বার্তার মধ্যেও মানসিক রোগের লক্ষণ পাওয়া যাচ্ছে। দিন দিন তারা যেন সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এদের উন্নয়নে কাজ করছে বলে জোর প্রচারণা চলছে। এ সকল প্রচেষ্টা অটিস্টিক শিশু ও তাদের অভিভাবকদের কতটুকু উপকার করতে পারছে?
বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে এ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদি এই ৪ প্রকার চিকিৎসা পদ্ধতির স্বীস্কৃতি দেওয়া আছে। শুধুমাত্র এ্যালোপ্যাথি চিকিৎসকগণ এর কার্যকরি কোনো ওষুধ নেই বলে মত প্রকাশ করেছেন। আমরা কি অন্য ৩ প্রকার চিকিৎসা পদ্ধতির শরণাপন্ন হয়েছি? বিশেষ করে হোমিওপ্যাথি? হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে অটিজমসহ নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডারের সকল শাখার চিকিৎসা সম্ভব। শুধু প্রয়োজন আন্তরিক গবেষণা। নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডারের চিকিৎসায় বিশেষ করে অটিজমের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি ওষুধ গবেষণার অন্তর্ভুক্ত করলে চিকিৎসার সফলতা নিশ্চিত আসবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এখন সময় শুধু দৃষ্টিভঙ্গি বদলিয়ে এ বিষয়ে আন্তরিক হওয়ার। তাহলেই কেবলমাত্র এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। অটিজম শিশুদের চিকিৎসার মাধ্যমে স্বভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা ব্যতিত শুধুমাত্র প্রচারের মাধ্যমে এ সকল পরিবারের কান্না কখনও থামবে না থামানো সম্ভবও না। পরিশেষে, সরকারি-বেসরকারি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আহ্বান, আর সময় নষ্ট না করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিন এবং লক্ষ্য রাখুন যেন প্রতিটি অটিজম শিশু সঠিক চিকিৎসাসেবার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে এবং এ সকল পরিবারের অভিভাবকদের কান্নার অবসান ঘটে।
লেখক: ডা. এমএ হক, পিএইচ. ডি (স্বাস্থ্য), এম. ফিল (স্বাস্থ্য), ডিএইচএমএস। চিকিৎসক ও গবেষক (ক্রণিক ডিজিজ অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার)।
চেম্বার: ড. হক হোমিও ট্রিটমেন্ট এন্ড রিসার্স সেন্টার, বিটিআই সেন্ট্রা গ্রান্ড, গ্রাউন্ড ফ্লোর (জি-৪), ১৪৪ গ্রীন রোড, পান্থপথ, ঢাকা। মোবাইল: ০১৭১২-৪৫০ ৩১০
No comments