হজ-পরবর্তী জীবন হোক পাপমুক্ত by সাঈদ কাদির
হাজীকে
যে মানুষ নিষ্পাপ ভাবে, এ ভাবনাটা এমনি এমনি আসেনি মানুষের ভেতর, বরং এটি
হাদিস থেকে আহরিত ধারণা। এরশাদ হয়েছে ‘যে ব্যক্তি হজ করল আর যৌনতা বা
নিষিদ্ধ (হজ মৌসুমে) কোনো গোনাহের কাজে জড়িত হলো না, সে হজ থেকে নবজাতক
শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফেরে।’ (বোখারি)
হজ ইসলামি শরিয়তের অন্যতম ভিত্তিমূল। তবে ব্যতিক্রমী ব্যাপার হলো, হজ সবার ওপর ফরজ নয়; শুধু শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত সামর্থ্যবানদের ওপরই এটি ফরজ। যারা হজব্রত পালনের তৌফিক পান, এটি তাদের জন্য এক অনন্য সৌভাগ্য; মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অপার দান। কারণ এ তৌফিক সবার হয় না। এই হজ এমন একটি কল্যাণকর ইবাদত, যা হাজীকে ধারাবাহিক পুণ্যবান হতে সাহায্য করে। প্রকৃতপক্ষে পুরো বছরের মধ্যে রমজানুল মোবারকে মাসব্যাপী সিয়াম সাধনাকে ফরজ করে আল্লাহ তায়ালা যেভাবে মানবজাতিকে ধৈর্য, সংযম ও খোদাভীতির এক অনন্য ছবক দিয়েছেন, তেমনি সামর্থ্যবানদের ওপর জীবনে একবার হজ ফরজ করে দয়ময় তাঁর বান্দাদের প্রভুপ্রেমের এক মহান প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন।
মুসলিমদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ, সম্মিলন, সেতুবন্ধন ও পারস্পরিক সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠায় হজ এক অনন্য মাধ্যম; বেনজির ইবাদত। হজের মাধ্যমে হাজীদের একদিকে সুযোগ হয় রবের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার, অন্যদিকে হজ মৌসুমের পুরো সময়কালে ভ্রাতৃত্ব ও আত্মত্যাগের এক সুমহান সবক পায় প্রত্যেক হাজী। এছাড়া মসজিদুল হারামে হাজরে আসওয়াদ, মুলতাজাম, জমজম ও মাতাফসহ কাবার প্রতিটি স্থানই হাজীকে আল্লাহর নৈকট্যলাভের দিকে টানতে থাকে। আরাফা, মুজদালিফা, মিনা, জাবালে রহমত ও হেরা গুহাসহ আল্লাহকে চিনিয়ে দেওয়ার এসব পবিত্র স্থান হাজীর কলবে এনে দেয় এক আধ্যাত্মিক চেতনা। আল্লাহকে চেনার এসব নিদর্শনকে যে-কেউ পরিপূর্ণ শ্রদ্ধাভরে অবলোকন ও প্রদক্ষিণ করবে, আল্লাহ তার হৃদয়কে খোদাভীতি দিয়ে প্রাচুর্যপূর্ণ করে দেবেন। (দ্রষ্টব্য, সূরা হজ : ৩২)।
আমাদের সমাজে একটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে যে, হাজী সাহেব মানেই সাচ্ছা-পাক্কা ঈমানদার; নিষ্কলুষ খাঁটি মানুষ। হাজী মানেই গোনাহমুক্ত, নির্ভেজাল ও নিরেট একজন কামেল ইনসান। এ সুধারণা আর প্রত্যাশার কারণেই হাজী সাহেব কোনো অসংগত বা গর্হিত কাজকর্মে জড়িয়ে পড়লে মানুষ তাকে একহাত নেয়, নেহাত বাজে কর্মের ভর্ৎসনা দেয়, এমনকি ইসলামের অন্যতম ভিত্তিমূল হজকেই দোষারোপ করতে শুরু করে কেউ কেউ।
এ প্রসঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, হাজীকে যে মানুষ নিষ্পাপ ভাবে, এ ভাবনাটা এমনি এমনি আসেনি মানুষের ভেতর, বরং এটি হাদিস থেকে আহরিত ধারণা। এরশাদ হয়েছে- ‘যে ব্যক্তি হজ করল আর যৌনতা বা নিষিদ্ধ (হজ মৌসুমে) কোনো গোনাহের কাজে জড়িত হলো না, সে হজ থেকে নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফেরে।’ (বোখারি : ১৫২১, মুসলিম : ১৩৫০)।
এছাড়া সূরা বাকারার ১৯৭নং আয়াতেও একই কথা বলা হয়েছে, রাব্বুল আলামিন ঘোষণা করেছেন- ‘যে ব্যক্তি হজের মৌসুমে হজ করার নিয়ত করে (ইহরাম বেঁধে ফেলে), তার জন্য যৌনাচার, অশোভন কাজ ও ঝগড়াবিবাদ জায়েজ নেই।’ এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, হাজীর হজ পরিপূর্ণ ত্রুটিমুক্ত হলেই তিনি পাপমুক্ত হবেন বলে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং যেমনিভাবে সব হাজী সাহেবের হজ ত্রুটিমুক্ত নয়, তেমনি সব হাজী সাহেবের হজ-পরবর্তী জীবনও ত্রুটিমুক্ত হয় না।
দ্বিতীয়ত, প্রত্যক মানুষ তার আমলের ইহকালীন ও পরকালীন ফায়দা তখনই পাবে, যখন সংশ্লিষ্ট আমলের জন্য তার নিয়ত বিশুদ্ধ হবে। সুতরাং শুধু আল্লাহর হুকুম পালন ও তাকে সন্তুষ্ট করার নিয়ত ছাড়া যে হজ হবে, সে হজ নিয়তে গলদ থাকার কারণে হাজীকে ধারাবাহিক পুণ্যবান হতে সাহায্য করবে না। এরশাদ হয়েছে- ‘প্রত্যেক আমলই নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (বোখারি : ১/১)। শুধু হজই নয়, সব আমলকে আল্লাহ তায়ালা বিশুদ্ধ নিয়তে সম্পাদন করার নির্দেশ দিয়েছেন। এরশাদ হয়েছে- ‘মানুষকে শুধু খালেস আল্লাহর জন্যই বিশুদ্ধ নিয়তে ইবাদত করার হুকুম দেওয়া হয়েছে।’ (সূরা বাইয়িনাহ : ৫)।
তৃতীয়ত, অনেকেই হাজীদের দোষারোপ করতে গিয়ে পুরো হজের বিধানটাকেই খাটো করা শুরু করে দেয়। এটা নিছক অজ্ঞতা থেকেই মানুষ করে। কারণ কোনো একজন মানুষের ব্যক্তিগত কাজকর্ম বা নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের কর্মকান্ডের কারণে একটা খোদায়ি বিধানকে খাটো করা অযৌক্তিক। বিষয়টা বোঝানোর জন্য সহজ একটা উদাহরণ দেওয়া যাক- ধরুন আপনি আপনার শারীরিক কোনো সমস্যার কারণে ‘হেলথকেয়ার’ কোম্পানির ওষুধ সেবন করলেন, সেটা আপনার রোগ কমাতে ব্যর্থ হলো। অথচ একই ওষুধ একই রোগের জন্য হাজারো রোগীকে সুস্থ করে তুলতে সহায়ক হচ্ছে। সুতরাং আপনি একটি ট্যাবলেট কাজ না করার কারণে পুরো কোম্পানিকেই দোষ দিতে পারেন না। কারণ হতে পারে আপনার রোগের ধরন আলাদা, আপনাকে ওই ওষুধের সঙ্গে আরও কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তদ্রুপ সব হাজীর রিপুর গতি ও অবস্থা একই রকম থাকে না। হজ ছাড়াও আরও কিছু বিশেষ আমলের প্র্যাকটিস নিয়মিত করলে, কিছু নিষিদ্ধ কাজ বর্জন করলে হাজী সাহেব পাপমুক্ত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে পারবেন বলে আশা রাখি।
চতুর্থত, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত- সব ইবাদতই ফরজ। আর সব ফরজ ইবাদত পালন করারই দাবি হলো গোনাহমুক্ত হয়ে যাওয়া। শুধু হজের পরে গোনাহমুক্ত হতে হবে, বিষয়টা এমন নয়। নামাজের ব্যাপারে তো সরাসরি কোরআনেই ঘোষণা আছে- ‘নামাজ যাবতীয় মন্দ ও গর্হিত কাজ থেকে নামাজি ব্যক্তিকে বাঁচিয়ে রাখে।’ (সূরা আনকাবুত : ৪৪)। তারপরও তো আমরা অনেক পাক্কা নামাজিকে পাপকর্মে লিপ্ত দেখি। এখানেও ওই একই কারণ, নামাজিকে তার নামাজ তখনই যাবতীয় নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখবে, যখন তার নামাজ ইসলামি শরিয়ত কর্তৃক আরোপিত সব শর্তাবলি ঠিক রেখে, খালেস নিয়তে পড়া হবে। কেউ অসম্পূর্ণ নামাজ পড়ে যদি অবৈধ কাজকর্ম থেকে বিরত থাকতে না পারে, আর নামাজকে দোষ দেয়, তাহলে সে অযৌক্তিক ও অবাস্তব বিষয়ের চর্চা করে। তেমনিভাবে কেউ হারাম মাল দ্বারা বা পাপযুক্ত অথবা লোক-দেখানোর নিয়তে হজ করলে সে ধারাবাহিক পুণ্যবান হবে না- এটাই স্বাভাবিক।
সবশেষ কথা হলো, আল্লাহর হুকুম মানার সম্পর্ক হলো ঈমানের সঙ্গে। যেমন আমি হজ করেছি, এজন্যই আমাকে ভালো থাকতে হবে, আর অন্যরা যা খুশি তাই করে বেড়াবে, বিষয়টা কখনও এমন নয়। আমি মুসলমান, আমি ঈমানদারÑ এ মুসলিম হওয়া আর ঈমানদার হওয়ার দাবিই হলো পাপমুক্ত জীবনযাপন করা। হজ করার তৌফিক হলেও আমাকে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হবে, আর হজ করার তৌফিক না হলেও আমাকে আল্লাহর হুকুম মেনে চলতে হবে। আল্লাহ এরশাদ করেছেন- ‘হে ঈমানদাররা তোমরা আল্লাহকে যথার্থরূপে ভয় করো এবং পরিপূর্ণ মুসলিম না হয়ে কবরে এসো না।’ (সূরা আলে ইমরান : ১০২)।
হজ ইসলামি শরিয়তের অন্যতম ভিত্তিমূল। তবে ব্যতিক্রমী ব্যাপার হলো, হজ সবার ওপর ফরজ নয়; শুধু শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত সামর্থ্যবানদের ওপরই এটি ফরজ। যারা হজব্রত পালনের তৌফিক পান, এটি তাদের জন্য এক অনন্য সৌভাগ্য; মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অপার দান। কারণ এ তৌফিক সবার হয় না। এই হজ এমন একটি কল্যাণকর ইবাদত, যা হাজীকে ধারাবাহিক পুণ্যবান হতে সাহায্য করে। প্রকৃতপক্ষে পুরো বছরের মধ্যে রমজানুল মোবারকে মাসব্যাপী সিয়াম সাধনাকে ফরজ করে আল্লাহ তায়ালা যেভাবে মানবজাতিকে ধৈর্য, সংযম ও খোদাভীতির এক অনন্য ছবক দিয়েছেন, তেমনি সামর্থ্যবানদের ওপর জীবনে একবার হজ ফরজ করে দয়ময় তাঁর বান্দাদের প্রভুপ্রেমের এক মহান প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন।
মুসলিমদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ, সম্মিলন, সেতুবন্ধন ও পারস্পরিক সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠায় হজ এক অনন্য মাধ্যম; বেনজির ইবাদত। হজের মাধ্যমে হাজীদের একদিকে সুযোগ হয় রবের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার, অন্যদিকে হজ মৌসুমের পুরো সময়কালে ভ্রাতৃত্ব ও আত্মত্যাগের এক সুমহান সবক পায় প্রত্যেক হাজী। এছাড়া মসজিদুল হারামে হাজরে আসওয়াদ, মুলতাজাম, জমজম ও মাতাফসহ কাবার প্রতিটি স্থানই হাজীকে আল্লাহর নৈকট্যলাভের দিকে টানতে থাকে। আরাফা, মুজদালিফা, মিনা, জাবালে রহমত ও হেরা গুহাসহ আল্লাহকে চিনিয়ে দেওয়ার এসব পবিত্র স্থান হাজীর কলবে এনে দেয় এক আধ্যাত্মিক চেতনা। আল্লাহকে চেনার এসব নিদর্শনকে যে-কেউ পরিপূর্ণ শ্রদ্ধাভরে অবলোকন ও প্রদক্ষিণ করবে, আল্লাহ তার হৃদয়কে খোদাভীতি দিয়ে প্রাচুর্যপূর্ণ করে দেবেন। (দ্রষ্টব্য, সূরা হজ : ৩২)।
আমাদের সমাজে একটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে যে, হাজী সাহেব মানেই সাচ্ছা-পাক্কা ঈমানদার; নিষ্কলুষ খাঁটি মানুষ। হাজী মানেই গোনাহমুক্ত, নির্ভেজাল ও নিরেট একজন কামেল ইনসান। এ সুধারণা আর প্রত্যাশার কারণেই হাজী সাহেব কোনো অসংগত বা গর্হিত কাজকর্মে জড়িয়ে পড়লে মানুষ তাকে একহাত নেয়, নেহাত বাজে কর্মের ভর্ৎসনা দেয়, এমনকি ইসলামের অন্যতম ভিত্তিমূল হজকেই দোষারোপ করতে শুরু করে কেউ কেউ।
এ প্রসঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, হাজীকে যে মানুষ নিষ্পাপ ভাবে, এ ভাবনাটা এমনি এমনি আসেনি মানুষের ভেতর, বরং এটি হাদিস থেকে আহরিত ধারণা। এরশাদ হয়েছে- ‘যে ব্যক্তি হজ করল আর যৌনতা বা নিষিদ্ধ (হজ মৌসুমে) কোনো গোনাহের কাজে জড়িত হলো না, সে হজ থেকে নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফেরে।’ (বোখারি : ১৫২১, মুসলিম : ১৩৫০)।
এছাড়া সূরা বাকারার ১৯৭নং আয়াতেও একই কথা বলা হয়েছে, রাব্বুল আলামিন ঘোষণা করেছেন- ‘যে ব্যক্তি হজের মৌসুমে হজ করার নিয়ত করে (ইহরাম বেঁধে ফেলে), তার জন্য যৌনাচার, অশোভন কাজ ও ঝগড়াবিবাদ জায়েজ নেই।’ এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, হাজীর হজ পরিপূর্ণ ত্রুটিমুক্ত হলেই তিনি পাপমুক্ত হবেন বলে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং যেমনিভাবে সব হাজী সাহেবের হজ ত্রুটিমুক্ত নয়, তেমনি সব হাজী সাহেবের হজ-পরবর্তী জীবনও ত্রুটিমুক্ত হয় না।
দ্বিতীয়ত, প্রত্যক মানুষ তার আমলের ইহকালীন ও পরকালীন ফায়দা তখনই পাবে, যখন সংশ্লিষ্ট আমলের জন্য তার নিয়ত বিশুদ্ধ হবে। সুতরাং শুধু আল্লাহর হুকুম পালন ও তাকে সন্তুষ্ট করার নিয়ত ছাড়া যে হজ হবে, সে হজ নিয়তে গলদ থাকার কারণে হাজীকে ধারাবাহিক পুণ্যবান হতে সাহায্য করবে না। এরশাদ হয়েছে- ‘প্রত্যেক আমলই নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (বোখারি : ১/১)। শুধু হজই নয়, সব আমলকে আল্লাহ তায়ালা বিশুদ্ধ নিয়তে সম্পাদন করার নির্দেশ দিয়েছেন। এরশাদ হয়েছে- ‘মানুষকে শুধু খালেস আল্লাহর জন্যই বিশুদ্ধ নিয়তে ইবাদত করার হুকুম দেওয়া হয়েছে।’ (সূরা বাইয়িনাহ : ৫)।
তৃতীয়ত, অনেকেই হাজীদের দোষারোপ করতে গিয়ে পুরো হজের বিধানটাকেই খাটো করা শুরু করে দেয়। এটা নিছক অজ্ঞতা থেকেই মানুষ করে। কারণ কোনো একজন মানুষের ব্যক্তিগত কাজকর্ম বা নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের কর্মকান্ডের কারণে একটা খোদায়ি বিধানকে খাটো করা অযৌক্তিক। বিষয়টা বোঝানোর জন্য সহজ একটা উদাহরণ দেওয়া যাক- ধরুন আপনি আপনার শারীরিক কোনো সমস্যার কারণে ‘হেলথকেয়ার’ কোম্পানির ওষুধ সেবন করলেন, সেটা আপনার রোগ কমাতে ব্যর্থ হলো। অথচ একই ওষুধ একই রোগের জন্য হাজারো রোগীকে সুস্থ করে তুলতে সহায়ক হচ্ছে। সুতরাং আপনি একটি ট্যাবলেট কাজ না করার কারণে পুরো কোম্পানিকেই দোষ দিতে পারেন না। কারণ হতে পারে আপনার রোগের ধরন আলাদা, আপনাকে ওই ওষুধের সঙ্গে আরও কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তদ্রুপ সব হাজীর রিপুর গতি ও অবস্থা একই রকম থাকে না। হজ ছাড়াও আরও কিছু বিশেষ আমলের প্র্যাকটিস নিয়মিত করলে, কিছু নিষিদ্ধ কাজ বর্জন করলে হাজী সাহেব পাপমুক্ত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে পারবেন বলে আশা রাখি।
চতুর্থত, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত- সব ইবাদতই ফরজ। আর সব ফরজ ইবাদত পালন করারই দাবি হলো গোনাহমুক্ত হয়ে যাওয়া। শুধু হজের পরে গোনাহমুক্ত হতে হবে, বিষয়টা এমন নয়। নামাজের ব্যাপারে তো সরাসরি কোরআনেই ঘোষণা আছে- ‘নামাজ যাবতীয় মন্দ ও গর্হিত কাজ থেকে নামাজি ব্যক্তিকে বাঁচিয়ে রাখে।’ (সূরা আনকাবুত : ৪৪)। তারপরও তো আমরা অনেক পাক্কা নামাজিকে পাপকর্মে লিপ্ত দেখি। এখানেও ওই একই কারণ, নামাজিকে তার নামাজ তখনই যাবতীয় নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখবে, যখন তার নামাজ ইসলামি শরিয়ত কর্তৃক আরোপিত সব শর্তাবলি ঠিক রেখে, খালেস নিয়তে পড়া হবে। কেউ অসম্পূর্ণ নামাজ পড়ে যদি অবৈধ কাজকর্ম থেকে বিরত থাকতে না পারে, আর নামাজকে দোষ দেয়, তাহলে সে অযৌক্তিক ও অবাস্তব বিষয়ের চর্চা করে। তেমনিভাবে কেউ হারাম মাল দ্বারা বা পাপযুক্ত অথবা লোক-দেখানোর নিয়তে হজ করলে সে ধারাবাহিক পুণ্যবান হবে না- এটাই স্বাভাবিক।
সবশেষ কথা হলো, আল্লাহর হুকুম মানার সম্পর্ক হলো ঈমানের সঙ্গে। যেমন আমি হজ করেছি, এজন্যই আমাকে ভালো থাকতে হবে, আর অন্যরা যা খুশি তাই করে বেড়াবে, বিষয়টা কখনও এমন নয়। আমি মুসলমান, আমি ঈমানদারÑ এ মুসলিম হওয়া আর ঈমানদার হওয়ার দাবিই হলো পাপমুক্ত জীবনযাপন করা। হজ করার তৌফিক হলেও আমাকে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হবে, আর হজ করার তৌফিক না হলেও আমাকে আল্লাহর হুকুম মেনে চলতে হবে। আল্লাহ এরশাদ করেছেন- ‘হে ঈমানদাররা তোমরা আল্লাহকে যথার্থরূপে ভয় করো এবং পরিপূর্ণ মুসলিম না হয়ে কবরে এসো না।’ (সূরা আলে ইমরান : ১০২)।
No comments