গিবত একটি ধর্মীয় ও সামাজিক পাপ by জুবায়ের রশীদ
ব্যক্তি,
পরিবার, সমাজ সর্বত্র আজ গিবতের ছড়াছড়ি। কোরআন ও হাদিসের ভাষ্যানুযায়ী,
জঘন্যতম এ পাপ মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে রন্ধ্রে রন্ধ্রে। জেনে-বুঝে কখনও
নিজের অজান্তে গিবতে জড়িয়ে পড়ছে মানুষ। বাজার, হাট, দোকান, মার্কেট থেকে
শুরু করে পবিত্র মসজিদ, সাধারণত চাষাভুষা, অজ্ঞ-মূর্খ থেকে আলেম বিদ্বান
কেউ মুক্ত নয়। এটি নিত্যনৈমিত্তিক একটি ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। তা যে মহা
অন্যায়, কবিরা গোনাহ সে বোধটুকুও হারিয়ে গেছে। যেসব কারণে সমাজের মধ্যে
ভ্রাতৃত্ববোধ বিনষ্ট হয়, সমাজ বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হয়, সামাজিক মূল্যবোধ
বিনষ্ট হয়, পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হয়, তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো গিবত, যা
মানুষকে নিকৃষ্টতম প্রাণীতে পরিণত করে। মহান আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)
মানুষকে এ নিকৃষ্ট স্বভাব থেকে বিরত থাকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন,
‘আর তোমরা কেউ কারও গিবত করো না, তোমরা কি কেউ আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া
পছন্দ করবে? একে তোমরা অবশ্যই ঘৃণা করবে।’ (সূরা হুজুরাত : ১২)।
গিবতের পরিচয় : গিবত শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দোষ বর্ণনা করা, পরচর্চা করা, পরনিন্দা করা, কুৎসা রটনা করা, পিছে সমালোচনা করা ইত্যাদি। পরিভাষায় গিবত বলা হয় ‘কারও অনুপস্থিতিতে তার এমন দোষ বর্ণনা উল্লেখ করা, যা সে গোপন রেখেছে অথবা যা জনসম্মুখে বলাকে সে অপছন্দ করে। গিবতের বাস্তবসম্মত পরিচয় দিয়েছেন স্বয়ং রাসুল (সা.), যা নিম্নের এ হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুসুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে একদা জিজ্ঞেস করেছেন, গিবত কাকে বলে, তোমরা জান কি? জবাবে সাহাবায়ে কেরাম বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন। অতঃপর নবীজি বলেন, তোমার কোনো ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তা-ই গিবত। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি যে দোষের কথা বলি, তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলেও কি গিবত হবে? উত্তরে তিনি বললেন, তুমি যে দোষের কথা বল, তা যদি তোমার ভাইয়ের থাকে; তবে তুমি অবশ্যই তার গিবত করলে আর তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে না থাকে; তবে তুমি তার ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছ।’ (মুসলিম : ৬২৬৫)।
গিবতের ভয়াবহ পরিণাম : গিবত ইসলামি শরিয়তে হারাম ও কবিরা গোনাহ। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘ধ্বংস তাদের জন্য, যারা অগ্র-পশ্চাতে দোষ বলে বেড়ায়।’ (সূরা হুমাজাহ : ১)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মিরাজের সময় আমাকে এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো, যাদের নখ ছিল তামার। তারা তাদের মুখম-ল ও দেহ আঁচড়াচ্ছিল। আমি জিবরাইল (আ.) কে জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা নিজ ভাইদের গিবত করত ও ইজ্জতহানি করত।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৩/২২৪)। হজরত কায়স বলেন, ‘আমর ইবনুল আস (রা.) তার কতিপয় সঙ্গী-সাথিসহ ভ্রমণ করছিলেন। তিনি একটি মৃত খচ্চরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, যা ফুলে উঠেছিল। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! কোনো ব্যক্তি যদি পেট পুরেও এটা খায়; তবু তা কোনো মুসলমানের গোশত খাওয়ার চেয়ে উত্তম।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ : ৭৩৬)। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি একবার রাসুল (সা.) কে সাফিয়্যাহ (রা.) এর উচ্চতা সম্পর্কে কিছু বলেছিলেন। রাসুল (সা.) প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘তুমি এমন এক কথা বলেছ, তা যদি সাগরের পানির সঙ্গে মেশানো হতো; তবে সাগরের পানি কালিমাযুক্ত হয়ে যেত।’ (আবু দাউদ : ৪৮৭৫)। গিবতের ক্ষতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, যে ব্যক্তির গিবত করা হয় তার আমলনামায় গিবতকারীর গিবত পরিমাণ নেকি চলে যায় এবং গিবতকারীর আমলনামায় যার গিবত করা হয় তার সে পরিমাণ গোনাহ চলে আসে। এজন্যই হজরত হাসান বসরি (রহ.) যখন শুনতে পেতেন তার সম্পর্কে কেউ গিবত করেছে, তখন তিনি সেই ব্যক্তির জন্য অনেক ফল ও বিভিন্ন মিষ্টান্ন দ্রব্য হাদিয়া হিসেবে পাঠিয়ে দিতেন এবং বলতেন, মাশাআল্লাহ তিনি আমার অনেক উপকার করেছেন। গিবত হচ্ছে গোনাহে কবিরা বা বড় গোনাহ।
ইসলামের দৃষ্টিতে গিবত করা যেমন নিষেধ, তেমনি গিবত শোনাও নিষেধ। যে গিবত শোনে, সে-ও পাপের অংশীদার হয়ে যায়। হাদিসে আছে, যখন কেউ তোমার সঙ্গে বসে অন্যের গিবত করে তখন তাকে থামতে বলো। আল্লাহর হুকুমের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সাবধান করো। আর যদি তাতেও কাজ না হয় সেখান থেকে উঠে চলে আসো। কোনোভাবেই গিবত শোনা যাবে না।
শয়তানের ধোঁকায় পড়ে যদি কারও গিবত করে ফেলা হয়, তাহলে আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার তথা ক্ষমা চাইবে। কাফফারা তথা ক্ষতিপূরণস্বরূপ যার গিবত করা হয়েছে তার জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি করে দোয়া করবে। হাদিসে এসেছে, তুমি যার গিবত করেছ তার জন্য আল্লাহর কাছে মাগফেরাতের দোয়া করবে। এভাবে বলবে, হে আল্লাহ! আপনি আমার ও তার গোনাহগুলো মাফ করে দিন।
যাদের গিবত করা জায়েজ : সাধারণত গিবত হারাম ও কবিরা গোনাহ। তবে কয়েকটি ক্ষেত্র এমন রয়েছে, যেখানে প্রয়োজনবোধে গিবত করা জায়েজ। তার মধ্যে মজলুম ব্যক্তি জালেমের বিরুদ্ধে শাসক, বিচারক অথবা এমন কারও কাছে অভিযোগ করতে পারে, যে তাকে জালেম ব্যক্তির বিরুদ্ধে ন্যায় পাইয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। কোনো খারাপ কাজ বন্ধের উদ্দেশ্যে এবং ত্রুটি সংশোধনের জন্য কোনো ব্যক্তির দোষ এমন ব্যক্তির কাছে বলা, যে তা সংশোধন করার ক্ষমতা রাখে। মুফতির কাছে মাসআলা জানতে গিয়ে প্রয়োজনে কোনো ব্যক্তির দোষত্রুটি বলা যাবে।
যেমন- ‘আমার ভাই’, ‘আমার স্বামী’ অথবা ‘অমুক’ আমার সঙ্গে ‘এই’ অন্যায় করেছে; তার কি এমন করার অধিকার আছে? বিয়ে, ব্যবসায় ইত্যাদি বিষয়ে কারও কাছে পরামর্শ চাইলে তার দোষ-গুণ স্পষ্টভাবে বলে দেবে, যা সে জানে। সমাজে প্রকাশ্যে পাপ কাজ, বেদাত বা গোমরাহির প্রসার ঘটাচ্ছে যারা, তাদের দোষত্রুটির সমালোচনা করা জায়েজ। কেউ যদি নির্দিষ্ট উপনামে অথবা ছদ্মনামে সমাজে পরিচিত হয়; তবে তাকে চেনার উদ্দেশ্যে ছদ্মনাম বা খারাপ উপনামে ডাকতে পারবে।
গিবতের পরিচয় : গিবত শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দোষ বর্ণনা করা, পরচর্চা করা, পরনিন্দা করা, কুৎসা রটনা করা, পিছে সমালোচনা করা ইত্যাদি। পরিভাষায় গিবত বলা হয় ‘কারও অনুপস্থিতিতে তার এমন দোষ বর্ণনা উল্লেখ করা, যা সে গোপন রেখেছে অথবা যা জনসম্মুখে বলাকে সে অপছন্দ করে। গিবতের বাস্তবসম্মত পরিচয় দিয়েছেন স্বয়ং রাসুল (সা.), যা নিম্নের এ হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুসুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে একদা জিজ্ঞেস করেছেন, গিবত কাকে বলে, তোমরা জান কি? জবাবে সাহাবায়ে কেরাম বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন। অতঃপর নবীজি বলেন, তোমার কোনো ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তা-ই গিবত। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি যে দোষের কথা বলি, তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলেও কি গিবত হবে? উত্তরে তিনি বললেন, তুমি যে দোষের কথা বল, তা যদি তোমার ভাইয়ের থাকে; তবে তুমি অবশ্যই তার গিবত করলে আর তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে না থাকে; তবে তুমি তার ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছ।’ (মুসলিম : ৬২৬৫)।
গিবতের ভয়াবহ পরিণাম : গিবত ইসলামি শরিয়তে হারাম ও কবিরা গোনাহ। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘ধ্বংস তাদের জন্য, যারা অগ্র-পশ্চাতে দোষ বলে বেড়ায়।’ (সূরা হুমাজাহ : ১)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মিরাজের সময় আমাকে এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো, যাদের নখ ছিল তামার। তারা তাদের মুখম-ল ও দেহ আঁচড়াচ্ছিল। আমি জিবরাইল (আ.) কে জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা নিজ ভাইদের গিবত করত ও ইজ্জতহানি করত।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৩/২২৪)। হজরত কায়স বলেন, ‘আমর ইবনুল আস (রা.) তার কতিপয় সঙ্গী-সাথিসহ ভ্রমণ করছিলেন। তিনি একটি মৃত খচ্চরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, যা ফুলে উঠেছিল। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! কোনো ব্যক্তি যদি পেট পুরেও এটা খায়; তবু তা কোনো মুসলমানের গোশত খাওয়ার চেয়ে উত্তম।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ : ৭৩৬)। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি একবার রাসুল (সা.) কে সাফিয়্যাহ (রা.) এর উচ্চতা সম্পর্কে কিছু বলেছিলেন। রাসুল (সা.) প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘তুমি এমন এক কথা বলেছ, তা যদি সাগরের পানির সঙ্গে মেশানো হতো; তবে সাগরের পানি কালিমাযুক্ত হয়ে যেত।’ (আবু দাউদ : ৪৮৭৫)। গিবতের ক্ষতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, যে ব্যক্তির গিবত করা হয় তার আমলনামায় গিবতকারীর গিবত পরিমাণ নেকি চলে যায় এবং গিবতকারীর আমলনামায় যার গিবত করা হয় তার সে পরিমাণ গোনাহ চলে আসে। এজন্যই হজরত হাসান বসরি (রহ.) যখন শুনতে পেতেন তার সম্পর্কে কেউ গিবত করেছে, তখন তিনি সেই ব্যক্তির জন্য অনেক ফল ও বিভিন্ন মিষ্টান্ন দ্রব্য হাদিয়া হিসেবে পাঠিয়ে দিতেন এবং বলতেন, মাশাআল্লাহ তিনি আমার অনেক উপকার করেছেন। গিবত হচ্ছে গোনাহে কবিরা বা বড় গোনাহ।
ইসলামের দৃষ্টিতে গিবত করা যেমন নিষেধ, তেমনি গিবত শোনাও নিষেধ। যে গিবত শোনে, সে-ও পাপের অংশীদার হয়ে যায়। হাদিসে আছে, যখন কেউ তোমার সঙ্গে বসে অন্যের গিবত করে তখন তাকে থামতে বলো। আল্লাহর হুকুমের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সাবধান করো। আর যদি তাতেও কাজ না হয় সেখান থেকে উঠে চলে আসো। কোনোভাবেই গিবত শোনা যাবে না।
শয়তানের ধোঁকায় পড়ে যদি কারও গিবত করে ফেলা হয়, তাহলে আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার তথা ক্ষমা চাইবে। কাফফারা তথা ক্ষতিপূরণস্বরূপ যার গিবত করা হয়েছে তার জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি করে দোয়া করবে। হাদিসে এসেছে, তুমি যার গিবত করেছ তার জন্য আল্লাহর কাছে মাগফেরাতের দোয়া করবে। এভাবে বলবে, হে আল্লাহ! আপনি আমার ও তার গোনাহগুলো মাফ করে দিন।
যাদের গিবত করা জায়েজ : সাধারণত গিবত হারাম ও কবিরা গোনাহ। তবে কয়েকটি ক্ষেত্র এমন রয়েছে, যেখানে প্রয়োজনবোধে গিবত করা জায়েজ। তার মধ্যে মজলুম ব্যক্তি জালেমের বিরুদ্ধে শাসক, বিচারক অথবা এমন কারও কাছে অভিযোগ করতে পারে, যে তাকে জালেম ব্যক্তির বিরুদ্ধে ন্যায় পাইয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। কোনো খারাপ কাজ বন্ধের উদ্দেশ্যে এবং ত্রুটি সংশোধনের জন্য কোনো ব্যক্তির দোষ এমন ব্যক্তির কাছে বলা, যে তা সংশোধন করার ক্ষমতা রাখে। মুফতির কাছে মাসআলা জানতে গিয়ে প্রয়োজনে কোনো ব্যক্তির দোষত্রুটি বলা যাবে।
যেমন- ‘আমার ভাই’, ‘আমার স্বামী’ অথবা ‘অমুক’ আমার সঙ্গে ‘এই’ অন্যায় করেছে; তার কি এমন করার অধিকার আছে? বিয়ে, ব্যবসায় ইত্যাদি বিষয়ে কারও কাছে পরামর্শ চাইলে তার দোষ-গুণ স্পষ্টভাবে বলে দেবে, যা সে জানে। সমাজে প্রকাশ্যে পাপ কাজ, বেদাত বা গোমরাহির প্রসার ঘটাচ্ছে যারা, তাদের দোষত্রুটির সমালোচনা করা জায়েজ। কেউ যদি নির্দিষ্ট উপনামে অথবা ছদ্মনামে সমাজে পরিচিত হয়; তবে তাকে চেনার উদ্দেশ্যে ছদ্মনাম বা খারাপ উপনামে ডাকতে পারবে।
No comments