উপসাগরীয় অঞ্চলে ভারত কিছুই শেখেনি, কিছুই ভোলেনি by এম কে ভদ্রকুমার
সম্প্রতি
মিডিয়ায় রিপোর্ট দেখা গেছে যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আবারও পারস্য
উপসাগরীয় অঞ্চল সফরের পরিকল্পনা করছেন – সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন সফর
করবেন তিনি। যদিও সফরটা এমন একটা সময়ে হচ্ছে যখন হরমুজ প্রণালীর পানি
উত্তাল হয়ে আছে এবং বিশ্বের নেতারা এ অঞ্চল থেকে দূরে আছেন, তবে আশা করা
যায় যে মোদির সফর যথেষ্ট শানদারই হবে।
বিগত পাঁচ বছরে এটা হবে আরব আমিরাতে মোদির তৃতীয় সফর। তবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবারের মতো বাহরাইন যাচ্ছেন তিনি।
সরকার প্রধান হিসেবে মোদি ঘন ঘন বিদেশ সফর করে থাকেন। এমনকি পশ্চিমা দেশগুলোর সরকার প্রধানরাও হয়তো তার রেকর্ড ছুঁতে পারেননি যারা ঐতিহাসিকভাবে এই অঞ্চলের উপর কর্তৃত্ব করে এসেছেন, যেমন ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স বা জার্মানি। ২০১৫ সাল থেকে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে ছয়টি ‘দ্বিপাক্ষিক’ সফর করেছেন মোদি।
এ অঞ্চলে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে। কিন্তু সেটার জন্য এতটা মনোযোগ দেয়ার দরকার পড়ে না। একটা কারণ হতে পারে যে মোদি এখনও তার প্রচারণার মানসিকতায় রয়েছেন এবং এই অঞ্চলকে তিনি হাতে রাখতে চাচ্ছেন। বাহরাইনে ভারতীয় জনতা পার্টির একজন স্থানীয় প্রতিনিধির কাছ থেকে প্রথম আমরা তার সফরের ব্যাপারে জানতে পারি।
এই সূত্র মতে, মোদি ‘সিনিয়র প্রতিনিধি’ দল নিয়ে সফরে যাবেন এবং মানামার কৃষ্ণ মন্দিরের ২০০ বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে অংশ নিবেন।
মন্দির সফর এবং আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স কর্তৃক মোদিকে সম্মানজনক অর্ডার অব জায়েদ দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ায় এটা নিঃসন্দেহে সফরের একটা চমকপ্রদ উপলক্ষ্য। এগুলো টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে এবং দেশের দর্শকরাও সেটা দেখতে পাবে।
কিন্তু আবুধাবিতে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী সবসময় এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন যে ভারত-আমিরাত সম্পর্ককে ‘নতুন উচ্চতায়’ নিয়ে যাওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর ২০১৭ সালের সফরের সময়ও এই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল যে পেট্রোডলার দেশটি ভারতে বিপুল বিনিয়োগ করবে, যদিও সেটা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি।
ভারতের সরকারি হিসেব মতে, ভারতে আরব আমিরাতের বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১০-১১ বিলিয়ন ডলার, যার অর্ধেকের মতো সরাসরি বিনিয়োগ, বাকিটা পোর্টফোলিও বিনিয়োগ। ২০১৫ সালের আগস্টে মোদির আরব আমিরাত সফরের সময় আরব আমিরাত-ভারত অবকাঠামো বিনিয়োগ তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এর লক্ষ্য ছিল বিশেষ করে রেলওয়ে, বন্দর, সড়ক, বিমানবন্দর এবং বাণিজ্যিক করিডোর ও পার্কে পরবর্তী প্রজন্মের অবকাঠামো তৈরির কাজ দ্রুত সম্প্রসারণে ভারতের যে পরিকল্পনা রয়েছে, সেখানে বিনিয়োগ করা। দুই দেশের নেতারা উচ্চ পর্যায়ে এই ‘অগ্রগতি পর্যালোচনা’ করেছেন মাত্র। সেটাই সবশেষ শোনা গেছে।
সন্দেহ নেই যে, শেখরা আতিথেয়তায় অতুলনীয় এবং বাইরের মানুষদের কাছে পুরো আরব বিশ্বটাই দৃষ্টির একটা ভোজসভার মতো। সন্দেহ নেই যে, মোদির সফরে ছবি তোলার মতো প্রচুর সুযোগ থাকবে। কিন্তু দিন শেষে, বড় প্রশ্ন হলো এই সব আয়োজন থেকে প্রাপ্তিটা কি হবে।
হতাশার ব্যাপার হলো পারস্য উপসাগরের পেট্রোডলার দেশগুলোর সাথে আমরা ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারিনি। প্রধান কারণ হলো এই দেশগুলো অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও উচ্চ বৈশ্বিক মান প্রত্যাশা করে – দক্ষতা ও বাস্তবায়ন উভয় ক্ষেত্রেই। অথচ ভারতীয়রা মোটের উপর অন্তসারশূণ্য এবং তার প্রত্যাশা পূরণ করে না। আরব আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্সের সাম্প্রতিক চীন সফরের বিষয়টির সাথে তুলনা করে দেখুন।
সন্দেহ নেই যে, চীনের সামনে ‘বড় চিত্রটা’ রয়েছে এবং রোডম্যাপও রয়েছে এবং তারা হিসেব কষে সামনে এগুতে চায় এবং আরব আমিরাতও চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড এবং ৫জি প্রযুক্তির জন্য নিজেকে আঞ্চলিক হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চায়, যদিও আবুধাবির নেতৃবৃন্দের ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে দারুণ চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে।
মোদির আমিরাত ও বাহরাইন সফরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্যেও এই প্রতারণামূলক কথাবার্তা রয়েছে: “আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠাতা জনক শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের নামে প্রতিষ্ঠিত পুরস্কারটি বিশেষ মর্যাদা পাচ্ছে কারণ শেখ জায়েদের জন্মশতবার্ষিকীতে এই পুরস্কারটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দেয়া হচ্ছে… বাহরাইনে যে তিন সহস্রাধিক ভারতীয়দের মালিকানাধীন/যৌথ প্রকল্প রয়েছে, সেটা থেকে বোঝা যায় যে দুই দেশের অর্থনৈতিক বিনিময়টা কত গভীর পর্যায়ের”।
এই “৩০০০ ভারতীয়দের মালিকানাধীন/যৌথ প্রকল্পের” তথ্যটা কি আপনার জানা ছিল? বুরবন সাম্রাজ্যের ব্যাপারে ট্যালির্যান্ডের বিখ্যাত মন্তব্যটা মনে পড়ে গেলো – “তারা কিছুই শেখেনি এবং কিছুই ভোলেনি”।
বিগত পাঁচ বছরে এটা হবে আরব আমিরাতে মোদির তৃতীয় সফর। তবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবারের মতো বাহরাইন যাচ্ছেন তিনি।
সরকার প্রধান হিসেবে মোদি ঘন ঘন বিদেশ সফর করে থাকেন। এমনকি পশ্চিমা দেশগুলোর সরকার প্রধানরাও হয়তো তার রেকর্ড ছুঁতে পারেননি যারা ঐতিহাসিকভাবে এই অঞ্চলের উপর কর্তৃত্ব করে এসেছেন, যেমন ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স বা জার্মানি। ২০১৫ সাল থেকে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে ছয়টি ‘দ্বিপাক্ষিক’ সফর করেছেন মোদি।
এ অঞ্চলে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে। কিন্তু সেটার জন্য এতটা মনোযোগ দেয়ার দরকার পড়ে না। একটা কারণ হতে পারে যে মোদি এখনও তার প্রচারণার মানসিকতায় রয়েছেন এবং এই অঞ্চলকে তিনি হাতে রাখতে চাচ্ছেন। বাহরাইনে ভারতীয় জনতা পার্টির একজন স্থানীয় প্রতিনিধির কাছ থেকে প্রথম আমরা তার সফরের ব্যাপারে জানতে পারি।
এই সূত্র মতে, মোদি ‘সিনিয়র প্রতিনিধি’ দল নিয়ে সফরে যাবেন এবং মানামার কৃষ্ণ মন্দিরের ২০০ বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে অংশ নিবেন।
মন্দির সফর এবং আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স কর্তৃক মোদিকে সম্মানজনক অর্ডার অব জায়েদ দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ায় এটা নিঃসন্দেহে সফরের একটা চমকপ্রদ উপলক্ষ্য। এগুলো টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে এবং দেশের দর্শকরাও সেটা দেখতে পাবে।
কিন্তু আবুধাবিতে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী সবসময় এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন যে ভারত-আমিরাত সম্পর্ককে ‘নতুন উচ্চতায়’ নিয়ে যাওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর ২০১৭ সালের সফরের সময়ও এই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল যে পেট্রোডলার দেশটি ভারতে বিপুল বিনিয়োগ করবে, যদিও সেটা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি।
ভারতের সরকারি হিসেব মতে, ভারতে আরব আমিরাতের বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১০-১১ বিলিয়ন ডলার, যার অর্ধেকের মতো সরাসরি বিনিয়োগ, বাকিটা পোর্টফোলিও বিনিয়োগ। ২০১৫ সালের আগস্টে মোদির আরব আমিরাত সফরের সময় আরব আমিরাত-ভারত অবকাঠামো বিনিয়োগ তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এর লক্ষ্য ছিল বিশেষ করে রেলওয়ে, বন্দর, সড়ক, বিমানবন্দর এবং বাণিজ্যিক করিডোর ও পার্কে পরবর্তী প্রজন্মের অবকাঠামো তৈরির কাজ দ্রুত সম্প্রসারণে ভারতের যে পরিকল্পনা রয়েছে, সেখানে বিনিয়োগ করা। দুই দেশের নেতারা উচ্চ পর্যায়ে এই ‘অগ্রগতি পর্যালোচনা’ করেছেন মাত্র। সেটাই সবশেষ শোনা গেছে।
সন্দেহ নেই যে, শেখরা আতিথেয়তায় অতুলনীয় এবং বাইরের মানুষদের কাছে পুরো আরব বিশ্বটাই দৃষ্টির একটা ভোজসভার মতো। সন্দেহ নেই যে, মোদির সফরে ছবি তোলার মতো প্রচুর সুযোগ থাকবে। কিন্তু দিন শেষে, বড় প্রশ্ন হলো এই সব আয়োজন থেকে প্রাপ্তিটা কি হবে।
হতাশার ব্যাপার হলো পারস্য উপসাগরের পেট্রোডলার দেশগুলোর সাথে আমরা ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারিনি। প্রধান কারণ হলো এই দেশগুলো অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও উচ্চ বৈশ্বিক মান প্রত্যাশা করে – দক্ষতা ও বাস্তবায়ন উভয় ক্ষেত্রেই। অথচ ভারতীয়রা মোটের উপর অন্তসারশূণ্য এবং তার প্রত্যাশা পূরণ করে না। আরব আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্সের সাম্প্রতিক চীন সফরের বিষয়টির সাথে তুলনা করে দেখুন।
সন্দেহ নেই যে, চীনের সামনে ‘বড় চিত্রটা’ রয়েছে এবং রোডম্যাপও রয়েছে এবং তারা হিসেব কষে সামনে এগুতে চায় এবং আরব আমিরাতও চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড এবং ৫জি প্রযুক্তির জন্য নিজেকে আঞ্চলিক হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চায়, যদিও আবুধাবির নেতৃবৃন্দের ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে দারুণ চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে।
মোদির আমিরাত ও বাহরাইন সফরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্যেও এই প্রতারণামূলক কথাবার্তা রয়েছে: “আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠাতা জনক শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের নামে প্রতিষ্ঠিত পুরস্কারটি বিশেষ মর্যাদা পাচ্ছে কারণ শেখ জায়েদের জন্মশতবার্ষিকীতে এই পুরস্কারটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দেয়া হচ্ছে… বাহরাইনে যে তিন সহস্রাধিক ভারতীয়দের মালিকানাধীন/যৌথ প্রকল্প রয়েছে, সেটা থেকে বোঝা যায় যে দুই দেশের অর্থনৈতিক বিনিময়টা কত গভীর পর্যায়ের”।
এই “৩০০০ ভারতীয়দের মালিকানাধীন/যৌথ প্রকল্পের” তথ্যটা কি আপনার জানা ছিল? বুরবন সাম্রাজ্যের ব্যাপারে ট্যালির্যান্ডের বিখ্যাত মন্তব্যটা মনে পড়ে গেলো – “তারা কিছুই শেখেনি এবং কিছুই ভোলেনি”।
No comments