হাইকোর্টে মিন্নির জামিন
রিফাত
শরীফ হত্যা মামলায় নিহতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন দিয়েছে
হাইকোর্ট। জামিনকালীন সময়ে তাকে তার বাবা মোজাম্মেল হকের জিম্মায় থাকার
নির্দেশ দিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে গণমাধ্যমে কোনো ধরনের কথা না বলতেও নির্দেশ
দেয়া হয়েছে মিন্নিকে। গতকাল বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বিচারপতি মো.
মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলটি যথাযথ ঘোষণা করে এই
আদেশ দেন। আদালতে মিন্নির পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না
এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সরোয়ার হোসাইন।
এছাড়া, কোনো মামলার তদন্ত চলাকালে তার অগ্রগতি বা গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের
বিষয়ে গণমাধ্যমে কতটুকু বলা যাবে এবং কতটুকু প্রচার বা প্রকাশ করা যাবে সে
বিষয়ে একটি নীতিমালা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের প্রধানকে
নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মিন্নির জামিনের পর সংশ্লিষ্ট কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সরোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, মিন্নির জামিনে আমরা মর্মাহত। এই জামিনের রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করার সিন্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বলেন, যেহেতু মিন্নি মহিলা এবং তার বাবার জিম্মায় থাকবেন। জামিনের শর্ত অপব্যবহার করলে বিচারিক আদালত তার জামিন বাতিল করতে পারবেন। মিন্নির বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগ ছিলো। সেগুলো আদালতে উপস্থাপন করেছি। নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নি ঘটনার আগে ৭ বার ও পরে ৫ বার ফোনালাপও হয়েছে। তবে জামিন আবেদনে খুশি মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না। তিনি বলেন, আদালত আমাদের যুক্তি যথাযথ মনে করে মিন্নিকে জামিন দিয়েছে। জামিনে থাকাবস্থায় তিনি মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না।
এদিকে, মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর রায়ে সন্তোষ হলেও হতাশা ব্যক্ত করেছেন নিহত রিফাত শরীফের পিতা দুলাল শরীফ। রায়ের পর মিন্নির বাবা বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আমি খুব খুশি। ন্যায়বিচার যে দেশে আছে, এটার প্রমাণ আজকে পাওয়া গেল। তিনি মিডিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, দুস্কৃতকারীরা যেগুলো করছে এগুলো সব জনসমক্ষে প্রচার পেয়েছে। এজন্য আমি গর্বিত। আমি সুন্দর একটা রায় পেয়েছি। এটি আমার বিজয়। অপরদিকে, রিফাত শরিফের পিতা দুলাল শরিফ সাংবাদিকদের বলেন, মিন্নি এই মামলার মাস্টার মাইন্ড। আদালত যে কাউকেই জামিন দিতে পারেন। তবে তার জামিনে আমি হতাশ। কারণ, মিন্নি আমার ছেলে হত্যার সঙ্গে জড়িত। তার কারণে আমার ছেলে খুন হয়েছে। আমার ছেলের সঙ্গে বিয়ের আগে ওই মেয়ের সঙ্গে নয়ন বন্ডের বিয়ে হয়েছিল। মিন্নি যদি রিফাত হত্যার মাস্টার মাইন্ড হয়ে থাকে, তাহলে ঘটনার পর পরই কেন তার বিরুদ্ধে মামলা করলেন না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পুরো নিশ্চিত না হয়েতো হুট করে কারো বিরুদ্ধে মামলা করা যায় না। ভিডিও দেখে, কাজীর সঙ্গে কথা বলে এবং নয়ন বন্ডের মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, আমার ছেলের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার আগে নয়নের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল। ওই বিয়ে গোপন করে মিন্নি আমার ছেলেকে বিয়ে করেছে।
এর আগে হাইকোর্ট দুপুরে কোনো পক্ষের কোনো বক্তব্য না থাকায় বিচারক জামিনের রায়ের অংশ পাঠ করেন। রায়ে আদালত বলেন, এজাহারে আসামির নাম উল্লেখ না থাকা, গ্রেপ্তার পূর্বে দীর্ঘ সময়ে স্থানীয় পুলিশ লাইনসে আটক ও গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া, আদালতে হাজির করে রিমান্ড শুনানির সময়ে আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ না পাওয়া, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আসামির দোষ স্বাীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক লিপিবদ্ধ করার পূর্বেই আসামির দোষ স্বীকার সম্পর্কিত জেলা পুলিশ সুপারের বক্তব্য, তদন্তকারী কর্মকর্তার মতে মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। সুতরাং আসামি কর্তৃক তদন্ত প্রভাবিত করার কোনো সুযোগ না থাকায় সর্বোপরি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮, ৯৭ ধারার ব্যতিক্রম অর্থাৎ আসামি একজন মহিলা। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে আমরা তাকে জামিন দেয়া ন্যায়সঙ্গত মনে করছি এবং জারি করা রুলটি আমরা যথাযথ ঘোষণা করলাম। সে তার বাবার জিম্মায় থাকবে এবং মিডিয়ার সামনে কোনো কথা বলতে পারবে না।
আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, বর্তমান আসামি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি রিমান্ডে থাকা অবস্থায় বরগুনা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন গণমাধ্যমের সম্মুখিন হন। মিন্নি দোষ স্বীকার করেছেন মর্মে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা শুধু অযাচিত, অনাকাঙ্খিত নয় বরং ন্যায়-নীতি, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের পরিপন্থী। পরিস্থিতি ও বাস্তবতা যাই হোক না কেন, পুলিশ সুপারের মত দায়িত্বশীল পদে থেকে এ ধরনের বক্তব্য জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। একদিকে যেমন জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে তেমনি তিনি তার দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন, যা দুঃখজনক ও হতাশাজনক। উচ্চ পর্যায়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তার নিকট হতে এ ধরনের কার্য প্রত্যাশিত ও কাম্য নয়। ভবিষ্যতে দায়িত্ব পালনে আরও সতর্কতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দেবেন আদালতের এটাই কাম্য। মামলাটি তদন্ত কার্য যেহেতু এখনও চলমান সে কারণে এই মুহূর্তে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে আদালত বিরত থাকছে। তবে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক সময়মত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করা সঙ্গত হবে যে, ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সংগঠিত আলোচিত ঘটনার তদন্তকালীন সময়ে পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্তদের বিষয়ে এবং তদন্ত সম্পর্কে প্রেস ব্রিফিং করা হয়ে থাকে। গ্রেপ্তারকৃত সন্দেহভাজন বা অভিযুক্তদের কোনো নিয়মনীতি ছাড়াই গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয়, যা অনেক প্রশ্নের উদ্রেক করে। যদিওবা এ বিষয়ে অত্র আদালতের একটি রায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। তারপরও অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্ত বিষয়ে অতি উৎসাহ নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য দিতে দেখা যায়। একথা আমাদের সকলকেই মনে রাখতে হবে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে অভিযোগ প্রমাণিত না হচ্ছে, ততক্ষণ বলা যাবে না সে অপরাধী বা অপরাধ করেছে। তদন্ত বা বিচার পর্যায়ে এমনভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করা উচিৎ নয় যে মনে হয় অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধী। সে কারণে মামলার তদন্ত পর্যায়ে তদন্তের অগ্রগতি বা গ্রেপ্তারকৃতদের বিষয়ে গণমাধ্যমে কতটুকু বলা যাবে এমন নীতিমালা করা বাঞ্চনীয়। একইসঙ্গে মিডিয়া কতটুকু প্রচার বা প্রকাশ করবে সে বিষয়েও একটি নীতিমালা করা বাঞ্ছনীয়। এই নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রচারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ প্রদান করা হলো।
গত ২০শে আগস্ট, বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় কারাগারে থাকা নিহতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে কেন জামিন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। সরকারের সংশ্লিষ্টদেরকে সাতদিনের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়। একইসঙ্গে ২৮শে আগস্ট আদালত রুলের ওপর শুনানির দিন ধার্য করেন। এছাড়া, আদালত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত্র) মো. হুমায়ুন কবিরকে যাবতীয় নথিপত্রসহ আদালতে হাজির থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়। এবং বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেনকে সংবাদ সম্মেলনে রিফাতের স্ত্রীর দোষ স্বীকারের বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলা হয়। হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী ২৮শে আগস্ট মিন্নির মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবির যাবতীয় নথিপত্রসহ আদালতে হাজির হন। একইসঙ্গে বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে রিফাতের স্ত্রীর দোষ স্বীকারের বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দেন। ওই দিন আদালতে মিন্নির আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন শুনানিতে আদালতকে বলেন, যেভাবে মিন্নির স্বীকাররোক্তিমূলক জবানবন্দি ১৬৪ করা হয়েছে। এটা কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষেও এতটা সাজিয়ে গুছিয়ে বলা সম্ভব না। কেননা তিনি যখন জবানবন্দি দেন, তখন সে অসুস্থ ছিল। একজন স্ত্রী স্বামী খুন হওয়ার পর, এমন জবানবন্দি হতে পারে কিভাবে? তবে আমরা আজ ট্রায়ালের বিষয়ে কথা বলার জন্য আসিনি। আমরা এসেছি শুধুমাত্র মেয়েটার জামিনের জন্য। সে পালাতে পারবে না। মামলায় প্রভাব ফেলতে পারবে না। সে তার বাবার হওলায় থাকবে। এছাড়া আদালতের যেকোনো শর্তে আমরা মিন্নির জামিন চাই। এর বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সারোয়ার হোসাইন বাপ্পী শুনানিতে বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ১৫ জনের মধ্যে চারজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। চারজনের জবানবন্দিতেই এ হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে এসেছে। সে এই হত্যাকাণ্ডের মূল নকশাকারী এবং ষড়যন্ত্রকারী। এটা খুবই আলোচিত মামলা। পুলিশের উচ্চ পর্যায় থেকে মামলার তদারক করা হচ্ছে। এ মামলায় তাকে জামিন দেয়া যায় না।
উল্লেখ্য, গত ২৬শে জুন রিফাতকে বরগুনার রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরদিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকে। পরে মিন্নির শ্বশুর তার ছেলেকে হত্যায় পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলে ঘটনা নতুন দিকে মোড় নেয়। ১৬ জুলাই বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে মিন্নিকে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর থেকে মিন্নি কারাগারে ছিলেন।
মিন্নির জামিনের পর সংশ্লিষ্ট কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সরোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, মিন্নির জামিনে আমরা মর্মাহত। এই জামিনের রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করার সিন্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বলেন, যেহেতু মিন্নি মহিলা এবং তার বাবার জিম্মায় থাকবেন। জামিনের শর্ত অপব্যবহার করলে বিচারিক আদালত তার জামিন বাতিল করতে পারবেন। মিন্নির বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগ ছিলো। সেগুলো আদালতে উপস্থাপন করেছি। নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নি ঘটনার আগে ৭ বার ও পরে ৫ বার ফোনালাপও হয়েছে। তবে জামিন আবেদনে খুশি মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না। তিনি বলেন, আদালত আমাদের যুক্তি যথাযথ মনে করে মিন্নিকে জামিন দিয়েছে। জামিনে থাকাবস্থায় তিনি মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না।
এদিকে, মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর রায়ে সন্তোষ হলেও হতাশা ব্যক্ত করেছেন নিহত রিফাত শরীফের পিতা দুলাল শরীফ। রায়ের পর মিন্নির বাবা বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আমি খুব খুশি। ন্যায়বিচার যে দেশে আছে, এটার প্রমাণ আজকে পাওয়া গেল। তিনি মিডিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, দুস্কৃতকারীরা যেগুলো করছে এগুলো সব জনসমক্ষে প্রচার পেয়েছে। এজন্য আমি গর্বিত। আমি সুন্দর একটা রায় পেয়েছি। এটি আমার বিজয়। অপরদিকে, রিফাত শরিফের পিতা দুলাল শরিফ সাংবাদিকদের বলেন, মিন্নি এই মামলার মাস্টার মাইন্ড। আদালত যে কাউকেই জামিন দিতে পারেন। তবে তার জামিনে আমি হতাশ। কারণ, মিন্নি আমার ছেলে হত্যার সঙ্গে জড়িত। তার কারণে আমার ছেলে খুন হয়েছে। আমার ছেলের সঙ্গে বিয়ের আগে ওই মেয়ের সঙ্গে নয়ন বন্ডের বিয়ে হয়েছিল। মিন্নি যদি রিফাত হত্যার মাস্টার মাইন্ড হয়ে থাকে, তাহলে ঘটনার পর পরই কেন তার বিরুদ্ধে মামলা করলেন না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পুরো নিশ্চিত না হয়েতো হুট করে কারো বিরুদ্ধে মামলা করা যায় না। ভিডিও দেখে, কাজীর সঙ্গে কথা বলে এবং নয়ন বন্ডের মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, আমার ছেলের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার আগে নয়নের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল। ওই বিয়ে গোপন করে মিন্নি আমার ছেলেকে বিয়ে করেছে।
এর আগে হাইকোর্ট দুপুরে কোনো পক্ষের কোনো বক্তব্য না থাকায় বিচারক জামিনের রায়ের অংশ পাঠ করেন। রায়ে আদালত বলেন, এজাহারে আসামির নাম উল্লেখ না থাকা, গ্রেপ্তার পূর্বে দীর্ঘ সময়ে স্থানীয় পুলিশ লাইনসে আটক ও গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া, আদালতে হাজির করে রিমান্ড শুনানির সময়ে আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ না পাওয়া, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আসামির দোষ স্বাীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক লিপিবদ্ধ করার পূর্বেই আসামির দোষ স্বীকার সম্পর্কিত জেলা পুলিশ সুপারের বক্তব্য, তদন্তকারী কর্মকর্তার মতে মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। সুতরাং আসামি কর্তৃক তদন্ত প্রভাবিত করার কোনো সুযোগ না থাকায় সর্বোপরি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮, ৯৭ ধারার ব্যতিক্রম অর্থাৎ আসামি একজন মহিলা। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে আমরা তাকে জামিন দেয়া ন্যায়সঙ্গত মনে করছি এবং জারি করা রুলটি আমরা যথাযথ ঘোষণা করলাম। সে তার বাবার জিম্মায় থাকবে এবং মিডিয়ার সামনে কোনো কথা বলতে পারবে না।
আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, বর্তমান আসামি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি রিমান্ডে থাকা অবস্থায় বরগুনা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন গণমাধ্যমের সম্মুখিন হন। মিন্নি দোষ স্বীকার করেছেন মর্মে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা শুধু অযাচিত, অনাকাঙ্খিত নয় বরং ন্যায়-নীতি, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের পরিপন্থী। পরিস্থিতি ও বাস্তবতা যাই হোক না কেন, পুলিশ সুপারের মত দায়িত্বশীল পদে থেকে এ ধরনের বক্তব্য জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। একদিকে যেমন জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে তেমনি তিনি তার দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন, যা দুঃখজনক ও হতাশাজনক। উচ্চ পর্যায়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তার নিকট হতে এ ধরনের কার্য প্রত্যাশিত ও কাম্য নয়। ভবিষ্যতে দায়িত্ব পালনে আরও সতর্কতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দেবেন আদালতের এটাই কাম্য। মামলাটি তদন্ত কার্য যেহেতু এখনও চলমান সে কারণে এই মুহূর্তে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে আদালত বিরত থাকছে। তবে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক সময়মত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করা সঙ্গত হবে যে, ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সংগঠিত আলোচিত ঘটনার তদন্তকালীন সময়ে পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্তদের বিষয়ে এবং তদন্ত সম্পর্কে প্রেস ব্রিফিং করা হয়ে থাকে। গ্রেপ্তারকৃত সন্দেহভাজন বা অভিযুক্তদের কোনো নিয়মনীতি ছাড়াই গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয়, যা অনেক প্রশ্নের উদ্রেক করে। যদিওবা এ বিষয়ে অত্র আদালতের একটি রায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। তারপরও অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্ত বিষয়ে অতি উৎসাহ নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য দিতে দেখা যায়। একথা আমাদের সকলকেই মনে রাখতে হবে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে অভিযোগ প্রমাণিত না হচ্ছে, ততক্ষণ বলা যাবে না সে অপরাধী বা অপরাধ করেছে। তদন্ত বা বিচার পর্যায়ে এমনভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করা উচিৎ নয় যে মনে হয় অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধী। সে কারণে মামলার তদন্ত পর্যায়ে তদন্তের অগ্রগতি বা গ্রেপ্তারকৃতদের বিষয়ে গণমাধ্যমে কতটুকু বলা যাবে এমন নীতিমালা করা বাঞ্চনীয়। একইসঙ্গে মিডিয়া কতটুকু প্রচার বা প্রকাশ করবে সে বিষয়েও একটি নীতিমালা করা বাঞ্ছনীয়। এই নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রচারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ প্রদান করা হলো।
গত ২০শে আগস্ট, বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় কারাগারে থাকা নিহতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে কেন জামিন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। সরকারের সংশ্লিষ্টদেরকে সাতদিনের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়। একইসঙ্গে ২৮শে আগস্ট আদালত রুলের ওপর শুনানির দিন ধার্য করেন। এছাড়া, আদালত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত্র) মো. হুমায়ুন কবিরকে যাবতীয় নথিপত্রসহ আদালতে হাজির থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়। এবং বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেনকে সংবাদ সম্মেলনে রিফাতের স্ত্রীর দোষ স্বীকারের বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলা হয়। হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী ২৮শে আগস্ট মিন্নির মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবির যাবতীয় নথিপত্রসহ আদালতে হাজির হন। একইসঙ্গে বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে রিফাতের স্ত্রীর দোষ স্বীকারের বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দেন। ওই দিন আদালতে মিন্নির আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন শুনানিতে আদালতকে বলেন, যেভাবে মিন্নির স্বীকাররোক্তিমূলক জবানবন্দি ১৬৪ করা হয়েছে। এটা কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষেও এতটা সাজিয়ে গুছিয়ে বলা সম্ভব না। কেননা তিনি যখন জবানবন্দি দেন, তখন সে অসুস্থ ছিল। একজন স্ত্রী স্বামী খুন হওয়ার পর, এমন জবানবন্দি হতে পারে কিভাবে? তবে আমরা আজ ট্রায়ালের বিষয়ে কথা বলার জন্য আসিনি। আমরা এসেছি শুধুমাত্র মেয়েটার জামিনের জন্য। সে পালাতে পারবে না। মামলায় প্রভাব ফেলতে পারবে না। সে তার বাবার হওলায় থাকবে। এছাড়া আদালতের যেকোনো শর্তে আমরা মিন্নির জামিন চাই। এর বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সারোয়ার হোসাইন বাপ্পী শুনানিতে বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ১৫ জনের মধ্যে চারজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। চারজনের জবানবন্দিতেই এ হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে এসেছে। সে এই হত্যাকাণ্ডের মূল নকশাকারী এবং ষড়যন্ত্রকারী। এটা খুবই আলোচিত মামলা। পুলিশের উচ্চ পর্যায় থেকে মামলার তদারক করা হচ্ছে। এ মামলায় তাকে জামিন দেয়া যায় না।
উল্লেখ্য, গত ২৬শে জুন রিফাতকে বরগুনার রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরদিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকে। পরে মিন্নির শ্বশুর তার ছেলেকে হত্যায় পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলে ঘটনা নতুন দিকে মোড় নেয়। ১৬ জুলাই বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে মিন্নিকে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর থেকে মিন্নি কারাগারে ছিলেন।
No comments