আতঙ্ক নয় প্রয়োজন সচেতনতা by ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ
প্রতিবছরের
মতো এবারও বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
সবচেয়ে লক্ষণীয় এবং আতঙ্কের কারণ হলো- এ বছর ডেঙ্গু জ্বরের ধরন ও লক্ষণে
বেশকিছু পরিবর্তন এসেছে। ফলে যে সমস্ত রোগী নিজেরাই ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত
করতে পারতেন, এসব লক্ষণ পরিবর্তনে রোগীরা সহজে বুঝতে পারেন না। আর এ কারণে
জ্বর হলে রোগীরা চিকিৎসকের কাছে যেতে দেরি করছেন। এমনকি ২ থেকে ৩ দিনের
জ্বরে অনেক চিকিৎসকও সামান্য জ্বর মনে করে ডেঙ্গু জ্বর শনাক্তকরণে দেরি
করছেন। কারণ ধরন পাল্টে যাওয়ার ফলে ডেঙ্গু জ্বরের স্বাভাবিক যেসব লক্ষণ
থাকে, সেগুলো এ বছর অনেক রোগীর মাঝেই পাওয়া যাচ্ছে না। সাধারণত ডেঙ্গু জ্বর
হলে রোগীর প্রচণ্ড জ্বর (১০৩ থেকে ১০৬ ডিগ্রি), শরীর এবং গিরায় গিরায়
ব্যথা, যাকে বলে হাড়ভাঙা জ্বর বা ব্রেকবোন ফিভার, ৪ থেকে ৫ দিন পরে জ্বর
কমে যায় এবং গায়ে র্যাশ উঠে। এই সময় জ্বর কমে যাওয়ার পরপরই রক্তের
প্লাটিলেট কমে যায় ও রক্তক্ষরণের ঝুঁকি থাকে।
আর বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরের ধরন পাল্টে যাওয়ার কারণে দেখা যায়, জ্বর অল্প অল্প থাকে, শরীরে তেমন ব্যথাও হয় না, এমনকি অধিকাংশ রোগীর গায়ে র্যাশও হচ্ছে না। আবার এমনও দেখা যায়, জ্বর হওয়ার ২ থেকে ৩ দিন পরই প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে, আর এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে। এ বছর যারা মারা গেছেন তারা কিন্তু সামান্য জ্বর মনে করে অবহেলা করেছেন এবং চিকিৎসকের পরামর্শও হয়তোবা নেননি। এ কারণে রোগীরা বুঝে ওঠার আগেই প্লাটিলেট কমে রক্তক্ষরণ এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গুতে রক্তক্ষরণ শুরু হলে মৃত্যু ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
অতীতে ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগীরা লক্ষণগুলো বুঝতে পারতেন এবং নিজেরাই ডেঙ্গু জ্বর ধারণা করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতেন। কিন্তু এখন তেমন কোনো লক্ষণ না থাকায় রোগীরাও তা বুঝে উঠতে পারেন না। ফলে আক্রান্ত রোগীরা মনে করেন, সামান্য জ্বর বা ভাইরাস জ্বর হয়েছে, তাই চিকিৎসকের কাছে যাননি বা দেরি করে গিয়েছেন। আবার অনেক চিকিৎসকও সামান্য জ্বর মনে করে বিষয়টিকে গুরুত্ব নাও দিয়ে থাকতে পারেন। জ্বর হওয়ার পর যদি ডেঙ্গু পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যেত, তা হলে ঝুঁকি কম হতো। ডেঙ্গু জ্বরের প্রভাব দীর্ঘ দিন থাকতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর প্রথমবার হলে বেশি জটিল হয় না। যারা দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেক বেশি। যাদের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হচ্ছে, তারা আগে সম্ভবত আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। এ জন্য রোগীদের প্রতি পরামর্শ, যেহেতু বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি, তাই যেকোনো ধরনের জ্বর হলে অবহেলা করা যাবে না। সামান্য জ্বর হলেও তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এবং ডেঙ্গু হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে। বিশেষ করে যারা প্রথমবার আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলেই ঝুঁকিটা অনেক বেশি। তাই এ ধরনের রোগীদের খুবই সতর্ক থাকতে হবে।
রোগীদের প্রতি আরো পরামর্শ, জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল এবং তরল জাতীয় খাদ্য যেমন পানি, শরবত ইত্যাদি বেশি খেতে হবে। প্রচণ্ড ব্যথা হলেও অন্য কোনো ব্যথার ওষুধ দোকান থেকে কিনে খাওয়া যাবে না, এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়বে। মনে রাখতে হবে, শরীরের যেকোনো অংশ থেকে রক্তক্ষরণ হলে, খেতে না পারলে বা প্রচণ্ড বমি হলে, গর্ভবতী কোনো মহিলা আক্রান্ত হলে এবং যারা অন্যান্য রোগে ভোগেন যেমন হৃদরোগ, লিভার বা কিডনির রোগ, তাদের অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
এ বছর বৃষ্টি বেশি হওয়ায় ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে, তবে মহামারি নয়, প্রকোপ বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কোনো রোগে আক্রান্তের মৃত্যু হার যদি এক শতাংশের বেশি হয়, তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে গণ্য করা হয়। আমাদের দেশে যে পরিমাণ মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন, সেই হিসেবে মৃত্যুর হার কম। ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, তবে এ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। জ্বর হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং ডেঙ্গুর পরীক্ষা করিয়ে তা নিশ্চিত হতে হবে। অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বাড়িতেই চিকিৎসা সম্ভব, তবে প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
>>>লেখক: সাবেক ডিন ও চেয়ারম্যান, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
আর বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরের ধরন পাল্টে যাওয়ার কারণে দেখা যায়, জ্বর অল্প অল্প থাকে, শরীরে তেমন ব্যথাও হয় না, এমনকি অধিকাংশ রোগীর গায়ে র্যাশও হচ্ছে না। আবার এমনও দেখা যায়, জ্বর হওয়ার ২ থেকে ৩ দিন পরই প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে, আর এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে। এ বছর যারা মারা গেছেন তারা কিন্তু সামান্য জ্বর মনে করে অবহেলা করেছেন এবং চিকিৎসকের পরামর্শও হয়তোবা নেননি। এ কারণে রোগীরা বুঝে ওঠার আগেই প্লাটিলেট কমে রক্তক্ষরণ এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গুতে রক্তক্ষরণ শুরু হলে মৃত্যু ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
অতীতে ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগীরা লক্ষণগুলো বুঝতে পারতেন এবং নিজেরাই ডেঙ্গু জ্বর ধারণা করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতেন। কিন্তু এখন তেমন কোনো লক্ষণ না থাকায় রোগীরাও তা বুঝে উঠতে পারেন না। ফলে আক্রান্ত রোগীরা মনে করেন, সামান্য জ্বর বা ভাইরাস জ্বর হয়েছে, তাই চিকিৎসকের কাছে যাননি বা দেরি করে গিয়েছেন। আবার অনেক চিকিৎসকও সামান্য জ্বর মনে করে বিষয়টিকে গুরুত্ব নাও দিয়ে থাকতে পারেন। জ্বর হওয়ার পর যদি ডেঙ্গু পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যেত, তা হলে ঝুঁকি কম হতো। ডেঙ্গু জ্বরের প্রভাব দীর্ঘ দিন থাকতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর প্রথমবার হলে বেশি জটিল হয় না। যারা দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেক বেশি। যাদের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হচ্ছে, তারা আগে সম্ভবত আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। এ জন্য রোগীদের প্রতি পরামর্শ, যেহেতু বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি, তাই যেকোনো ধরনের জ্বর হলে অবহেলা করা যাবে না। সামান্য জ্বর হলেও তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এবং ডেঙ্গু হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে। বিশেষ করে যারা প্রথমবার আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলেই ঝুঁকিটা অনেক বেশি। তাই এ ধরনের রোগীদের খুবই সতর্ক থাকতে হবে।
রোগীদের প্রতি আরো পরামর্শ, জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল এবং তরল জাতীয় খাদ্য যেমন পানি, শরবত ইত্যাদি বেশি খেতে হবে। প্রচণ্ড ব্যথা হলেও অন্য কোনো ব্যথার ওষুধ দোকান থেকে কিনে খাওয়া যাবে না, এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়বে। মনে রাখতে হবে, শরীরের যেকোনো অংশ থেকে রক্তক্ষরণ হলে, খেতে না পারলে বা প্রচণ্ড বমি হলে, গর্ভবতী কোনো মহিলা আক্রান্ত হলে এবং যারা অন্যান্য রোগে ভোগেন যেমন হৃদরোগ, লিভার বা কিডনির রোগ, তাদের অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
এ বছর বৃষ্টি বেশি হওয়ায় ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে, তবে মহামারি নয়, প্রকোপ বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কোনো রোগে আক্রান্তের মৃত্যু হার যদি এক শতাংশের বেশি হয়, তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে গণ্য করা হয়। আমাদের দেশে যে পরিমাণ মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন, সেই হিসেবে মৃত্যুর হার কম। ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, তবে এ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। জ্বর হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং ডেঙ্গুর পরীক্ষা করিয়ে তা নিশ্চিত হতে হবে। অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বাড়িতেই চিকিৎসা সম্ভব, তবে প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
>>>লেখক: সাবেক ডিন ও চেয়ারম্যান, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
No comments