কৃষকের ঘরে জন্ম, আদালতে শেষ
মাত্র
এক বছর ক্ষমতায় ছিলেন মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি। তিনি
মিসরের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম ও একমাত্র প্রেসিডেন্ট। সামরিক
বাহিনী তাঁকে উৎখাত করে।
সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ‘আরব বসন্তে’র মুখে ২০১২ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল তাঁর মাধ্যমে মিসরের প্রেসিডেন্ট হন মুরসি। ২০১৩ সালের ৩ জুলাই মিসরের সেনাবাহিনী তাঁকে উৎখাত করে।
আরব বসন্তের মুখেই পদত্যাগ করেছিলেন হোসনি মোবারক। ২০১৩ সালে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে সামরিক বাহিনী প্রেসিডেন্ট মুরসিকে সংকট সমাধানে আলটিমেটাম দিলে, মুরসি তা মানতে অস্বীকার করেন। এরপর সামরিক বাহিনী এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাঁকে উৎখাত করে।
ক্ষমতাচ্যুতির চার মাস পর, মুসলিম ব্রাদারহুড আন্দোলনের আরো ১৪ জন ঊর্ধ্বতন নেতার সঙ্গে মোহাম্মদ মুরসির বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। অভিযোগ আনা হয় এক সাংবাদিক ও দুজন সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারী হত্যার।
বিচারের প্রথম দিনে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মুরসি বলেন, ‘আমি সেনা অভ্যুত্থানের শিকার এবং আমার বিচার করার বৈধতা এ আদালতের নেই।’
পরে হত্যার অভিযোগ থেকে মুরসিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়, কিন্তু বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার ও দমনের অভিযোগে তাঁকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে মুরসির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আনা হয় এবং তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। যদিও পরে সে রায় বাতিল করা হয়।
গত মঙ্গলবার আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ওই সময় গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তাঁর বিচার চলছিল।
নেতা মুরসির উত্থানপর্ব
১৯৫১ সালে আল-আদওয়াহ গ্রামে কৃষক বাবার ঘরে জন্ম নেন মুরসি। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে জ্যেষ্ঠ মুরসি গত শতকের ৭০-এর দশকে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক করেন। পরে পিএইচডি করতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান।
মিসরে ফিরে এসে তিনি জাগাজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান হন।
এক সময় মুসলিম ব্রাদারহুড আন্দোলনে যোগ দেন তিনি এবং ক্রমে নেতৃত্বে আসেন।
২০০০ সাল থেকে ২০০৫ পর্যন্ত এ সংগঠনের পক্ষ থেকে দেশটির পার্লামেন্টে স্বতন্ত্র সদস্য ছিলেন।
নির্বাচনী প্রচারণায় মুরসি নিজেকে হোসনি মোবারকের সমর্থকদের পুনরুত্থানের বিরুদ্ধে একমাত্র কার্যকর বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হন। নির্বাচনে অল্প ব্যবধানে জিতে ২০১২ সালের জুনে মিসরের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন তিনি। দেশটির অর্থনীতি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় ঘাটতি, বেকারত্ব, অধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবিতে শুরু হয় গণবিক্ষোভ।
এর পরই তার সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়, যাতে ৫০ জনের বেশি মানুষ মারা যায়। ২০১৩ সালের ৩ জুলাই মুরসির ক্ষমতা গ্রহণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশটিতে যেদিন আনন্দ মিছিলের কর্মসূচি দেয়, সেই দিন লাখ লাখ মানুষ গণবিক্ষোভে যোগ দেয়।
ফের ক্ষমতার মসনদে সেনাবাহিনী
মুরসিকে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে ৩ জুলাই সন্ধ্যায় সেনাবাহিনী সংবিধান স্থগিত করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা দেয়। পরবর্তী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ওই সরকার দায়িত্ব পালন করবে বলে বলা হয়। সেনাবাহিনীর এ পদক্ষেপকে 'অভ্যুত্থান' বলে নিন্দা জানান মুরসি।
সামরিক বাহিনীর প্রধান এবং নতুন প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসি মুরসিকে গ্রেপ্তারের আদেশ দেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
এরপর মুরসির মুক্তি এবং তাঁকে অবিলম্বে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে কায়রোর রাস্তায় নেমে আসেন তার দলের সমর্থকরা। জবাবে দুটি বিক্ষোভ পণ্ড করে দিয়ে মুসলিম ব্রাদারহুডের কয়েকজন শীর্ষ নেতৃত্বকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী।
মুরসির উৎখাতের পর দেশটিতে ইসলামপন্থীদের হামলার ঘটনা বৃদ্ধি পায় এবং মুসলিম ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে তাদের ওপর চালানো হয় ব্যাপক নিপীড়ন, এবং ফল হিসেবে হাজার হাজার ব্রাদারহুড কর্মী গ্রেপ্তার বা নিহত হন। অনেকে কাতার এবং তুরস্কে পালিয়ে যান।
এরপর মুরসি লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান, মাঝেমধ্যে মামলার হাজিরা দিতে তাঁকে আদালতে আনা হলেও কেবল তাঁর দেখা মিলত। এমনই এক শুনানি চলাকালে গতকাল সোমবার কায়রোর আদালতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে অজ্ঞান হয়ে মারা যান মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা মোহাম্মদ মুরসি।
সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ‘আরব বসন্তে’র মুখে ২০১২ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল তাঁর মাধ্যমে মিসরের প্রেসিডেন্ট হন মুরসি। ২০১৩ সালের ৩ জুলাই মিসরের সেনাবাহিনী তাঁকে উৎখাত করে।
আরব বসন্তের মুখেই পদত্যাগ করেছিলেন হোসনি মোবারক। ২০১৩ সালে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে সামরিক বাহিনী প্রেসিডেন্ট মুরসিকে সংকট সমাধানে আলটিমেটাম দিলে, মুরসি তা মানতে অস্বীকার করেন। এরপর সামরিক বাহিনী এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাঁকে উৎখাত করে।
ক্ষমতাচ্যুতির চার মাস পর, মুসলিম ব্রাদারহুড আন্দোলনের আরো ১৪ জন ঊর্ধ্বতন নেতার সঙ্গে মোহাম্মদ মুরসির বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। অভিযোগ আনা হয় এক সাংবাদিক ও দুজন সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারী হত্যার।
বিচারের প্রথম দিনে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মুরসি বলেন, ‘আমি সেনা অভ্যুত্থানের শিকার এবং আমার বিচার করার বৈধতা এ আদালতের নেই।’
পরে হত্যার অভিযোগ থেকে মুরসিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়, কিন্তু বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার ও দমনের অভিযোগে তাঁকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে মুরসির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আনা হয় এবং তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। যদিও পরে সে রায় বাতিল করা হয়।
গত মঙ্গলবার আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ওই সময় গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তাঁর বিচার চলছিল।
নেতা মুরসির উত্থানপর্ব
১৯৫১ সালে আল-আদওয়াহ গ্রামে কৃষক বাবার ঘরে জন্ম নেন মুরসি। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে জ্যেষ্ঠ মুরসি গত শতকের ৭০-এর দশকে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক করেন। পরে পিএইচডি করতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান।
মিসরে ফিরে এসে তিনি জাগাজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান হন।
এক সময় মুসলিম ব্রাদারহুড আন্দোলনে যোগ দেন তিনি এবং ক্রমে নেতৃত্বে আসেন।
২০০০ সাল থেকে ২০০৫ পর্যন্ত এ সংগঠনের পক্ষ থেকে দেশটির পার্লামেন্টে স্বতন্ত্র সদস্য ছিলেন।
নির্বাচনী প্রচারণায় মুরসি নিজেকে হোসনি মোবারকের সমর্থকদের পুনরুত্থানের বিরুদ্ধে একমাত্র কার্যকর বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হন। নির্বাচনে অল্প ব্যবধানে জিতে ২০১২ সালের জুনে মিসরের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন তিনি। দেশটির অর্থনীতি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় ঘাটতি, বেকারত্ব, অধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবিতে শুরু হয় গণবিক্ষোভ।
এর পরই তার সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়, যাতে ৫০ জনের বেশি মানুষ মারা যায়। ২০১৩ সালের ৩ জুলাই মুরসির ক্ষমতা গ্রহণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশটিতে যেদিন আনন্দ মিছিলের কর্মসূচি দেয়, সেই দিন লাখ লাখ মানুষ গণবিক্ষোভে যোগ দেয়।
ফের ক্ষমতার মসনদে সেনাবাহিনী
মুরসিকে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে ৩ জুলাই সন্ধ্যায় সেনাবাহিনী সংবিধান স্থগিত করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা দেয়। পরবর্তী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ওই সরকার দায়িত্ব পালন করবে বলে বলা হয়। সেনাবাহিনীর এ পদক্ষেপকে 'অভ্যুত্থান' বলে নিন্দা জানান মুরসি।
সামরিক বাহিনীর প্রধান এবং নতুন প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসি মুরসিকে গ্রেপ্তারের আদেশ দেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
এরপর মুরসির মুক্তি এবং তাঁকে অবিলম্বে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে কায়রোর রাস্তায় নেমে আসেন তার দলের সমর্থকরা। জবাবে দুটি বিক্ষোভ পণ্ড করে দিয়ে মুসলিম ব্রাদারহুডের কয়েকজন শীর্ষ নেতৃত্বকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী।
মুরসির উৎখাতের পর দেশটিতে ইসলামপন্থীদের হামলার ঘটনা বৃদ্ধি পায় এবং মুসলিম ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে তাদের ওপর চালানো হয় ব্যাপক নিপীড়ন, এবং ফল হিসেবে হাজার হাজার ব্রাদারহুড কর্মী গ্রেপ্তার বা নিহত হন। অনেকে কাতার এবং তুরস্কে পালিয়ে যান।
এরপর মুরসি লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান, মাঝেমধ্যে মামলার হাজিরা দিতে তাঁকে আদালতে আনা হলেও কেবল তাঁর দেখা মিলত। এমনই এক শুনানি চলাকালে গতকাল সোমবার কায়রোর আদালতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে অজ্ঞান হয়ে মারা যান মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা মোহাম্মদ মুরসি।
No comments