হ্যারি-মেগানের সন্তান ব্রিটিশ সিংহাসন পাবে?
প্রিন্স
হ্যারি ও ডাচেস অব সাসেক্স মেগান মার্কেলের সংসারের নতুন সদস্য আসছে। এ
সদস্য আসার আগেই শুরু হয়ে গেছে তার নাম কী, সে ছেলে না মেয়ে, তার
নাগরিকত্বসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা। ব্রিটিশ রাজসিংহাসনের সপ্তম দাবিদার
হতে যাচ্ছে হ্যারি-মেগানের সন্তান। আবার অনেকের মনে প্রশ্ন, হ্যারি-মেগানের
সন্তান কি রাজপরিবারের উত্তরাধিকার হতে পারবে। বিবিসি অনলাইন এ নিয়ে একটি
বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
১১ মাস আগে বিয়ে হয় এ দম্পতির। এরপরই বিদেশ সফরে গিয়ে সন্তান ধারণের খবর দেন বিশ্বকে। এই নতুন সদস্য সম্পর্কে জানার আগ্রহ অনেক। নেটিজেনদের মধ্য আগ্রহ হ্যারি ও মেগানের সন্তানের ব্যাপারে। তবে অনেকেই জানেন না যে এই দম্পতির সন্তান ব্রিটিশ সিংহাসনে বসতে পারবে কি না। এপ্রিলের শেষে বা মে মাসের শুরুতে মেগানের মা হওয়ার কথা। মেগানের সন্তানের চাচাতো ভাই-বোন প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট মিডলটনে দুই সন্তান প্রিন্স লুইস (২৩ এপ্রিল) ও প্রিন্সেস শার্টলের (২ মে) জন্মও বসন্তে।
ছেলে না মেয়ে?
আসলে এখন পর্যন্ত কেউ এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। কারণ, হ্যারি-মেগান বা রাজপরিবারের পক্ষ থেকে অনাগত সন্তান সম্পর্কে এ পর্যন্ত বিস্তারিত কিছুই জানানো হয়নি।
এর আগে এ বছরের জানুয়ারিতে এক অনুষ্ঠানে মেগান বলেছেন, সন্তান ছেলে না মেয়ে, তাঁরা আসলে জানেন না। তবে ভক্তদের ধারণা, রাজপরিবারের নতুন অতিথি প্রিন্সেস।
একজন মুখপাত্র উইলিয়াম হিল বলেন, প্রিন্স হ্যারি ও মেগানের সন্তান কন্যা হবে কি না, এ নিয়ে একধরনের জুয়া চলছে।
মেগানের সন্তানের জন্ম হবে কোথায়?
এর আগে সেন্ট্রাল লন্ডনের সেন্ট মেরি হাসপাতালে প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট মিডলটনের সন্তানদের জন্ম হয়েছিল। তবে এবার বোধ হয় তা হচ্ছে না। হ্যারি-মেগান চাইছেন না এখানে সন্তানের জন্ম হোক। আর কারণটা হলো গোপনীয়তার অভাব।
রাজপ্রাসাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাঁরা (হ্যারি-মেগান) তাঁদের সন্তান জন্মের সব পরিকল্পনা ব্যক্তিগত রাখতে চান। আর তাই ধারণা করা হচ্ছে, মেগান তাঁর সন্তানের জন্ম বাড়িতে দিতে চান।
রাজপরিবারের সন্তানের জন্ম বাড়িতে?
মেগানের সন্তানের জন্ম যদি বাড়িতে হয়, তবে তা প্রথম রাজকীয় ঘটনা হবে না। রানির চার সন্তানের জন্ম বাড়িতে হয়েছিল। রানি এলিজাবেথের মতোই রাজপ্রাসাদেই সন্তানের জন্ম দেবেন ডাচেস অব সাসেক্স মেগান মার্কেল। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার জন্য হাসপাতালের বদলে উইন্ডসরের কটেজকেই বেছে নিয়েছেন প্রিন্স হ্যারি ও মেগান দম্পতি।
গার্ডিয়ান ও ডেইলি মেইলের খবরে বলা হয়েছে, এর আগে প্রসবকালে রানির চিকিৎসক দল সঙ্গে রাখতে প্রত্যাখ্যান করেন মেগান। মেগানের প্রসবকালে তাঁর পাশে রানির চিকিৎসক, শল্যবিদসহ অন্য চিকিৎসকদের থাকার কথা ছিল। তবে প্রথা ভেঙে মেগান বলেছেন, তিনি পুরুষ চিকিৎসক দিয়ে সন্তান ভূমিষ্ঠ করাবেন না। এ সময় তিনি নারী চিকিৎসক চান। এ ছাড়া সন্তানের জন্মের আগে হাসপাতালের চারপাশে গণমাধ্যমকর্মী ও জনসাধারণের ভিড়ও অপছন্দ মেগানের। বিশেষ করে তাঁর সন্তান যখন ব্রিটিশ রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারের তালিকার ক্ষেত্রে অনেক দূরে। যদিও কেট মিডলটন তিন সন্তান জর্জ, শার্লট ও লুইসের জন্মের জন্য লিন্ডো উইংয়ের সেন্ট মেরি হাসপাতালকেই বেছে নিয়েছিলেন। প্রিন্সেস ডায়নাও দুই সন্তান উইলিয়াম-হ্যারির জন্ম এই হাসপাতালেই। তবে রানি এলিজাবেথ তাঁর চার সন্তানের জন্ম দিয়েছেন বাকিংহাম প্যালেসে।
মেগানের এক বন্ধু গণমাধ্যমে বলেন, মেগান নিয়মিত ইয়োগা করেন এবং শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন। তাই গোপনীয়তার জন্য প্রথম পছন্দ হিসেবে কটেজকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। তা ছাড়া মেগানের খেয়াল রাখার জন্য হ্যারি সব সময় তাঁর সঙ্গেই আছেন। বিয়ের পর কেনসিংটন প্যালেসে ডিউক অব কেমব্রিজ প্রিন্স উইলিয়াম ও ডাচেস অব কেমব্রিজ কেট মিডলটনের সঙ্গে থাকলেও এখন বার্কশায়ার এস্টেটের ফ্রোগমোর কটেজে থাকছেন হ্যারি-মেগান। তিনি বলেছেন, সন্তানের জন্য নিজস্ব পরিবেশ তৈরি করতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। আর এ জন্য ফ্রোগমোর কটেজে সংস্কারও করা হয়েছে।
নাম কী?
রাজপরিবারের সদস্যদের নাম রাখার ক্ষেত্রে তেমন কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু সন্তানের নাম রাখার জন্য সিদ্ধান্ত প্রায়ই ঐতিহ্য দ্বারা পরিচালিত হয়।
তবে প্রিন্স হ্যারির প্রথম সন্তান কন্যা হবে ভেবে ডায়ানা নামটি রাখার জন্য বাজি ধরা হয়েছে বেশি। ডায়ানার পাশাপাশি প্রিন্স হ্যারির সন্তানের নাম ভিক্টোরিয়া ও এলিসও অনেকেই ভেবে বসে আছেন।
আর যদি সন্তান ছেলে হয়, তবে আর্থার এবং জেমস নামটি পছন্দের শীর্ষে। এ দুটি নাম গত বছরের মিডলটনের তৃতীয় সন্তানের ক্ষেত্রেও এগিয়ে ছিল।
বংশীয় নাম যাবে কি না?
সন্তানের নামের জন্য হয়তো উপাধি বা বংশীয় নাম দরকার নেই। যদি নতুন শিশুকে প্রিন্স (রাজকুমার) বা প্রিন্সেস (রাজকুমারী) শিরোনাম দেওয়া হয়, তাহলে তারপরে একটি উপাধি বা বংশীয় নাম প্রয়োজন হয় না। প্রিন্স হ্যারি ও মেগানের সন্তানের জন্য রাজকীয় বা রয়েল পারিবারিক নাম হবে মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসর।
হ্যারি-মেগানের বিয়ের দিন (১৯ মে ২০১৮) রানি ও রাজা ফিলিপ উভয়ই আগত রাজপরিবারের নতুন সদস্যর এই পারিবারিক উপাধি ঠিক করে দেন।
কিন্তু এই দম্পতি (হ্যারি-মেগান) রানির রাখা উপাধির পাশাপাশি ডিউক ও ডাসেস অব কেমব্রিজ রাখার সম্ভাবনা বেশি। প্রিন্স উইলিয়াম ও কেটের তিন সন্তান তাদের জন্মের সার্টিফিকেটে কেমব্রিজ নাম রেখেছেন।
প্রিন্স না প্রিন্সেস?
আগত শিশুটি সম্পর্কে জানাতে চাওয়া হলে রানিও হয়তো ছোট্ট করে উত্তর দেবেন, জানি না। রানি ২০১২ সালে প্রিন্স উইলিয়ামের সন্তানের সময় নতুন নিয়ম চালু করেছিলেন। আর তা হলো আগত সন্তানেরা প্রিন্স বা প্রিন্সেস হতে পারে।
সন্তানের পদবি কী হবে?
রানি যদি নিয়ম পরিবর্তন না করেন, তবে একটু ব্যাপারটি জটিল হয়ে যাবে। অনেকেরই মনে থাকার কথা, প্রিন্স হ্যারির বিয়ের দিন সকালের কথা। ওই দিন রানি মেগানের জন্য ডিউক অব সাসেক্স, আর্ল অব ডামবার্টন ও ব্যারন কিলকেল পদবির কথা বলেছিলেন।
আর ব্রিটিশ রীতি ও শিষ্টাচার অনুযায়ী, ডিউকের বড় ছেলে তাঁর বাবার ‘উপাধি’গুলোর একটি ব্যবহার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে শিশুসন্তান যদি ছেলে হয়, তবে তার উপাধি আর্ল অব ডুম্বার্টন হতে পারে। আর কন্যাসন্তান হলে তার প্রথম নাম হতে পারে মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসর।
হ্যারি ও মেগান কি এই উপাধি প্রত্যাখ্যান করতে পারেন?
আসলে এমন ঘটনা আগে ঘটেছে। রানির মেয়ে প্রিন্সেস অ্যানিকে যখন তাঁর সন্তানদের জন্য রাজকীয় উপাধি পিটার ও জারা দেওয়া হয়, তখন তিনি তা ফিরিয়ে দেন। কারণ, তাঁর চাওয়া হলো সন্তানদের যেন যতটা সম্ভব স্বাভাবিক জীবন পেতে পারে। পিটার ও জারা ফিলিপ রাজকীয় পদবি ছাড়াই বেড়ে ওঠেন। এর আগে জারা টাইমসকে বলেছিলেন, ‘আমার বাবা-মা আমাদের পদবি দেননি। তাই আমরা একটু বেশি স্বাভাবিক জীবন যাপন করেছি। আপনি রাজপরিবারের পদবি বা উপাধি ধারণ করলে অনেক নিয়ম মেনে বড় হতে হয়।’
তাই প্রিন্স হ্যারি ও মেগানও রাজকীয় প্রোটোকল ভাঙতে ভয় পান না। তাঁরাও প্রিন্সের অ্যানির পথে হাঁটতে পারেন।
হ্যারি-মেগানের সন্তান কি রাজা বা রানি হতে পারবেন?
নতুন শিশুটি হবে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের নাতির সন্তান। সে ব্রিটিশ সিংহাসনের সপ্তম উত্তরাধিকারী হবে। এখন প্রশ্ন হলো হ্যারি-মেগানের সন্তান কি রাজা বা রানি হতে পারবেন? হ্যাঁ, তাত্ত্বিকভাবে তো অবশ্যই। আগত সন্তানের সামনে আরও ছয়জন আছেন। হ্যারি ও মেগানের সন্তান সিংহাসনের উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে সপ্তম। উত্তরাধিকারসূত্রেই বাবার পরেই থাকবে সে। তার সামনে চাচাতো ভাই-বোন জর্জ, শার্লট ও লুই আছে।
শিশু কি মার্কিন নাগরিক হতে হবে?
হ্যাঁ। তা হতে পারে। কারণ, মেগান এখনো মার্কিন নাগরিক। রাজপরিবারের শিশুর ক্ষেত্রে তা হতে পারে।
হ্যারি-মেগানের সন্তানকে কর দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রে?
বিশ্বের মাত্র কয়েকটি দেশ নাগরিকত্বের ওপর কর আরোপ করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রও এর মধ্যে। প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের সন্তান ব্রিটিশ বাবা এবং মার্কিন মায়ের সন্তান হওয়ায় দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকার পাবে। নিয়ম অনুযায়ী, মা-বাবার মধ্যে কোনো একজন যদি মার্কিন নাগরিক হন এবং সেই দেশে কমপক্ষে পাঁচ বছর (যার মধ্যে ১৪ বছর বয়সের পর ২ বছর) বসবাস করেন, তাহলে তাঁর সন্তান আপনা থেকেই মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করে। তাই অনাগত সন্তানকে নিয়ে হ্যারি-মেগান স্থায়ীভাবে যুক্তরাজ্যের উইন্ডসরের ফ্রগমোর কটেজে বাস করলেও যুক্তরাষ্ট্রের কর কর্তৃপক্ষ ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিসের (আইআরএস) কাছে করসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জমা দিতে বাধ্য থাকবেন তাঁরা। সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য ব্যাংকে কত অর্থ গচ্ছিত রেখেছেন, কে কত টাকার উপহার দেবেন শিশুটিকে, এসবই আইআরএসকে জানাতে হবে। ভবিষ্যতের কোনো বিনিয়োগ বা সম্পত্তি থেকে আয় শিশুটির নামে রাখা হলে তাও করের আওতায় পড়বে।
মেগান যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন। তবে সব প্রক্রিয়া শেষ হয়ে এটি পেতে বেশ সময় লাগবে। ২০১৮ সালে এই রাজদম্পতির বিয়ের দিনই জানানো হয় নাগরিকত্ব পেতে মেগানকে অন্তত পাঁচ বছর যুক্তরাজ্যে বসবাস করতে হবে। নাগরিকত্ব পাওয়ার পর মার্কিন নাগরিকত্ব ও তাঁর করের দায় অস্বীকার করতে পারবেন মেগান।
১১ মাস আগে বিয়ে হয় এ দম্পতির। এরপরই বিদেশ সফরে গিয়ে সন্তান ধারণের খবর দেন বিশ্বকে। এই নতুন সদস্য সম্পর্কে জানার আগ্রহ অনেক। নেটিজেনদের মধ্য আগ্রহ হ্যারি ও মেগানের সন্তানের ব্যাপারে। তবে অনেকেই জানেন না যে এই দম্পতির সন্তান ব্রিটিশ সিংহাসনে বসতে পারবে কি না। এপ্রিলের শেষে বা মে মাসের শুরুতে মেগানের মা হওয়ার কথা। মেগানের সন্তানের চাচাতো ভাই-বোন প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট মিডলটনে দুই সন্তান প্রিন্স লুইস (২৩ এপ্রিল) ও প্রিন্সেস শার্টলের (২ মে) জন্মও বসন্তে।
ছেলে না মেয়ে?
আসলে এখন পর্যন্ত কেউ এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। কারণ, হ্যারি-মেগান বা রাজপরিবারের পক্ষ থেকে অনাগত সন্তান সম্পর্কে এ পর্যন্ত বিস্তারিত কিছুই জানানো হয়নি।
এর আগে এ বছরের জানুয়ারিতে এক অনুষ্ঠানে মেগান বলেছেন, সন্তান ছেলে না মেয়ে, তাঁরা আসলে জানেন না। তবে ভক্তদের ধারণা, রাজপরিবারের নতুন অতিথি প্রিন্সেস।
একজন মুখপাত্র উইলিয়াম হিল বলেন, প্রিন্স হ্যারি ও মেগানের সন্তান কন্যা হবে কি না, এ নিয়ে একধরনের জুয়া চলছে।
মেগানের সন্তানের জন্ম হবে কোথায়?
এর আগে সেন্ট্রাল লন্ডনের সেন্ট মেরি হাসপাতালে প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট মিডলটনের সন্তানদের জন্ম হয়েছিল। তবে এবার বোধ হয় তা হচ্ছে না। হ্যারি-মেগান চাইছেন না এখানে সন্তানের জন্ম হোক। আর কারণটা হলো গোপনীয়তার অভাব।
রাজপ্রাসাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাঁরা (হ্যারি-মেগান) তাঁদের সন্তান জন্মের সব পরিকল্পনা ব্যক্তিগত রাখতে চান। আর তাই ধারণা করা হচ্ছে, মেগান তাঁর সন্তানের জন্ম বাড়িতে দিতে চান।
রাজপরিবারের সন্তানের জন্ম বাড়িতে?
মেগানের সন্তানের জন্ম যদি বাড়িতে হয়, তবে তা প্রথম রাজকীয় ঘটনা হবে না। রানির চার সন্তানের জন্ম বাড়িতে হয়েছিল। রানি এলিজাবেথের মতোই রাজপ্রাসাদেই সন্তানের জন্ম দেবেন ডাচেস অব সাসেক্স মেগান মার্কেল। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার জন্য হাসপাতালের বদলে উইন্ডসরের কটেজকেই বেছে নিয়েছেন প্রিন্স হ্যারি ও মেগান দম্পতি।
গার্ডিয়ান ও ডেইলি মেইলের খবরে বলা হয়েছে, এর আগে প্রসবকালে রানির চিকিৎসক দল সঙ্গে রাখতে প্রত্যাখ্যান করেন মেগান। মেগানের প্রসবকালে তাঁর পাশে রানির চিকিৎসক, শল্যবিদসহ অন্য চিকিৎসকদের থাকার কথা ছিল। তবে প্রথা ভেঙে মেগান বলেছেন, তিনি পুরুষ চিকিৎসক দিয়ে সন্তান ভূমিষ্ঠ করাবেন না। এ সময় তিনি নারী চিকিৎসক চান। এ ছাড়া সন্তানের জন্মের আগে হাসপাতালের চারপাশে গণমাধ্যমকর্মী ও জনসাধারণের ভিড়ও অপছন্দ মেগানের। বিশেষ করে তাঁর সন্তান যখন ব্রিটিশ রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারের তালিকার ক্ষেত্রে অনেক দূরে। যদিও কেট মিডলটন তিন সন্তান জর্জ, শার্লট ও লুইসের জন্মের জন্য লিন্ডো উইংয়ের সেন্ট মেরি হাসপাতালকেই বেছে নিয়েছিলেন। প্রিন্সেস ডায়নাও দুই সন্তান উইলিয়াম-হ্যারির জন্ম এই হাসপাতালেই। তবে রানি এলিজাবেথ তাঁর চার সন্তানের জন্ম দিয়েছেন বাকিংহাম প্যালেসে।
মেগানের এক বন্ধু গণমাধ্যমে বলেন, মেগান নিয়মিত ইয়োগা করেন এবং শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন। তাই গোপনীয়তার জন্য প্রথম পছন্দ হিসেবে কটেজকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। তা ছাড়া মেগানের খেয়াল রাখার জন্য হ্যারি সব সময় তাঁর সঙ্গেই আছেন। বিয়ের পর কেনসিংটন প্যালেসে ডিউক অব কেমব্রিজ প্রিন্স উইলিয়াম ও ডাচেস অব কেমব্রিজ কেট মিডলটনের সঙ্গে থাকলেও এখন বার্কশায়ার এস্টেটের ফ্রোগমোর কটেজে থাকছেন হ্যারি-মেগান। তিনি বলেছেন, সন্তানের জন্য নিজস্ব পরিবেশ তৈরি করতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। আর এ জন্য ফ্রোগমোর কটেজে সংস্কারও করা হয়েছে।
নাম কী?
রাজপরিবারের সদস্যদের নাম রাখার ক্ষেত্রে তেমন কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু সন্তানের নাম রাখার জন্য সিদ্ধান্ত প্রায়ই ঐতিহ্য দ্বারা পরিচালিত হয়।
তবে প্রিন্স হ্যারির প্রথম সন্তান কন্যা হবে ভেবে ডায়ানা নামটি রাখার জন্য বাজি ধরা হয়েছে বেশি। ডায়ানার পাশাপাশি প্রিন্স হ্যারির সন্তানের নাম ভিক্টোরিয়া ও এলিসও অনেকেই ভেবে বসে আছেন।
আর যদি সন্তান ছেলে হয়, তবে আর্থার এবং জেমস নামটি পছন্দের শীর্ষে। এ দুটি নাম গত বছরের মিডলটনের তৃতীয় সন্তানের ক্ষেত্রেও এগিয়ে ছিল।
বংশীয় নাম যাবে কি না?
সন্তানের নামের জন্য হয়তো উপাধি বা বংশীয় নাম দরকার নেই। যদি নতুন শিশুকে প্রিন্স (রাজকুমার) বা প্রিন্সেস (রাজকুমারী) শিরোনাম দেওয়া হয়, তাহলে তারপরে একটি উপাধি বা বংশীয় নাম প্রয়োজন হয় না। প্রিন্স হ্যারি ও মেগানের সন্তানের জন্য রাজকীয় বা রয়েল পারিবারিক নাম হবে মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসর।
হ্যারি-মেগানের বিয়ের দিন (১৯ মে ২০১৮) রানি ও রাজা ফিলিপ উভয়ই আগত রাজপরিবারের নতুন সদস্যর এই পারিবারিক উপাধি ঠিক করে দেন।
কিন্তু এই দম্পতি (হ্যারি-মেগান) রানির রাখা উপাধির পাশাপাশি ডিউক ও ডাসেস অব কেমব্রিজ রাখার সম্ভাবনা বেশি। প্রিন্স উইলিয়াম ও কেটের তিন সন্তান তাদের জন্মের সার্টিফিকেটে কেমব্রিজ নাম রেখেছেন।
প্রিন্স না প্রিন্সেস?
আগত শিশুটি সম্পর্কে জানাতে চাওয়া হলে রানিও হয়তো ছোট্ট করে উত্তর দেবেন, জানি না। রানি ২০১২ সালে প্রিন্স উইলিয়ামের সন্তানের সময় নতুন নিয়ম চালু করেছিলেন। আর তা হলো আগত সন্তানেরা প্রিন্স বা প্রিন্সেস হতে পারে।
সন্তানের পদবি কী হবে?
রানি যদি নিয়ম পরিবর্তন না করেন, তবে একটু ব্যাপারটি জটিল হয়ে যাবে। অনেকেরই মনে থাকার কথা, প্রিন্স হ্যারির বিয়ের দিন সকালের কথা। ওই দিন রানি মেগানের জন্য ডিউক অব সাসেক্স, আর্ল অব ডামবার্টন ও ব্যারন কিলকেল পদবির কথা বলেছিলেন।
আর ব্রিটিশ রীতি ও শিষ্টাচার অনুযায়ী, ডিউকের বড় ছেলে তাঁর বাবার ‘উপাধি’গুলোর একটি ব্যবহার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে শিশুসন্তান যদি ছেলে হয়, তবে তার উপাধি আর্ল অব ডুম্বার্টন হতে পারে। আর কন্যাসন্তান হলে তার প্রথম নাম হতে পারে মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসর।
হ্যারি ও মেগান কি এই উপাধি প্রত্যাখ্যান করতে পারেন?
আসলে এমন ঘটনা আগে ঘটেছে। রানির মেয়ে প্রিন্সেস অ্যানিকে যখন তাঁর সন্তানদের জন্য রাজকীয় উপাধি পিটার ও জারা দেওয়া হয়, তখন তিনি তা ফিরিয়ে দেন। কারণ, তাঁর চাওয়া হলো সন্তানদের যেন যতটা সম্ভব স্বাভাবিক জীবন পেতে পারে। পিটার ও জারা ফিলিপ রাজকীয় পদবি ছাড়াই বেড়ে ওঠেন। এর আগে জারা টাইমসকে বলেছিলেন, ‘আমার বাবা-মা আমাদের পদবি দেননি। তাই আমরা একটু বেশি স্বাভাবিক জীবন যাপন করেছি। আপনি রাজপরিবারের পদবি বা উপাধি ধারণ করলে অনেক নিয়ম মেনে বড় হতে হয়।’
তাই প্রিন্স হ্যারি ও মেগানও রাজকীয় প্রোটোকল ভাঙতে ভয় পান না। তাঁরাও প্রিন্সের অ্যানির পথে হাঁটতে পারেন।
হ্যারি-মেগানের সন্তান কি রাজা বা রানি হতে পারবেন?
নতুন শিশুটি হবে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের নাতির সন্তান। সে ব্রিটিশ সিংহাসনের সপ্তম উত্তরাধিকারী হবে। এখন প্রশ্ন হলো হ্যারি-মেগানের সন্তান কি রাজা বা রানি হতে পারবেন? হ্যাঁ, তাত্ত্বিকভাবে তো অবশ্যই। আগত সন্তানের সামনে আরও ছয়জন আছেন। হ্যারি ও মেগানের সন্তান সিংহাসনের উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে সপ্তম। উত্তরাধিকারসূত্রেই বাবার পরেই থাকবে সে। তার সামনে চাচাতো ভাই-বোন জর্জ, শার্লট ও লুই আছে।
শিশু কি মার্কিন নাগরিক হতে হবে?
হ্যাঁ। তা হতে পারে। কারণ, মেগান এখনো মার্কিন নাগরিক। রাজপরিবারের শিশুর ক্ষেত্রে তা হতে পারে।
হ্যারি-মেগানের সন্তানকে কর দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রে?
বিশ্বের মাত্র কয়েকটি দেশ নাগরিকত্বের ওপর কর আরোপ করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রও এর মধ্যে। প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের সন্তান ব্রিটিশ বাবা এবং মার্কিন মায়ের সন্তান হওয়ায় দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকার পাবে। নিয়ম অনুযায়ী, মা-বাবার মধ্যে কোনো একজন যদি মার্কিন নাগরিক হন এবং সেই দেশে কমপক্ষে পাঁচ বছর (যার মধ্যে ১৪ বছর বয়সের পর ২ বছর) বসবাস করেন, তাহলে তাঁর সন্তান আপনা থেকেই মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করে। তাই অনাগত সন্তানকে নিয়ে হ্যারি-মেগান স্থায়ীভাবে যুক্তরাজ্যের উইন্ডসরের ফ্রগমোর কটেজে বাস করলেও যুক্তরাষ্ট্রের কর কর্তৃপক্ষ ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিসের (আইআরএস) কাছে করসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জমা দিতে বাধ্য থাকবেন তাঁরা। সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য ব্যাংকে কত অর্থ গচ্ছিত রেখেছেন, কে কত টাকার উপহার দেবেন শিশুটিকে, এসবই আইআরএসকে জানাতে হবে। ভবিষ্যতের কোনো বিনিয়োগ বা সম্পত্তি থেকে আয় শিশুটির নামে রাখা হলে তাও করের আওতায় পড়বে।
মেগান যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন। তবে সব প্রক্রিয়া শেষ হয়ে এটি পেতে বেশ সময় লাগবে। ২০১৮ সালে এই রাজদম্পতির বিয়ের দিনই জানানো হয় নাগরিকত্ব পেতে মেগানকে অন্তত পাঁচ বছর যুক্তরাজ্যে বসবাস করতে হবে। নাগরিকত্ব পাওয়ার পর মার্কিন নাগরিকত্ব ও তাঁর করের দায় অস্বীকার করতে পারবেন মেগান।
No comments