‘ডিজিটাল আইনের পর বাকস্বাধীনতা থাকে না’
ডিজিটাল
নিরাপত্তা আইন নিয়ে রাজধানীতে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, এই আইন
বাস্তবায়ন হলে বাকস্বাধীনতা বলে কিছু থাকবে না। এ আইন বঙ্গবন্ধুর
নীতি-বিরোধী। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি আয়োজিত
‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮: আশঙ্কায় মৌলিক অধিকার’- শীর্ষক আলোচনা সভায়
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, আমার কাছে সব থেকে কষ্ট লেগেছে,
মিডিয়া শুধু ৩২ ধারায় সাংবাদিকতায় গুপ্তচর বৃত্তির বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে
গিয়ে আইনের ভয়াবহ দিকগুলো থেকে আমাদের দৃষ্টি সরিয়ে দিয়েছে। এই আইনের পরে
হয়তো বাকস্বাধীনতা বলে আর কিছু থাকবে না। তিনি বলেন, মাইকের সামনে কথা বললে
হয়তো বাকস্বাধীনতা থাকবে। তবে সমস্যা হবে মিডিয়া যদি কম্পিউটার,
ইন্টারনেটের মাধ্যমে কথা প্রকাশ করে তখন আবার কী পরিস্থিতি হবে? হয়তো মাইকে
বললে আইনি কিছুটা তর্ক করতে পারবো যে কম্পিউটারে আমি কিছু প্রকাশ করি নাই,
অতদূর বোধহয় থাকবে। দেশের গণতান্ত্রিক অবস্থার সমালোচনা করে তিনি বলেন,
আমেরিকায় সোয়া দুইশ’ বছর আগেও গণতন্ত্র ছিল।
আমাদের আরও কয়শ’ বছর লাগবে সেটা আমি চিন্তা করছি। কারণ ১৭৯১ সালে আমেরিকার সংবিধানে বলা হলো- বাকস্বাধীনতা খর্ব হতে পারে এমন কোনো আইন কংগ্রেস করতে পারবে না।
হ্যাকিংয়ের বিষয়ে একটা আইন করার দরকার ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, কম্পিউটার হ্যাকিং-সংক্রান্ত একটা আইনের দরকার ছিল এবং এ আইনে ওই সংক্রান্ত কিছু ধারা আছে, যেটার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু এর সঙ্গে সব ধরনের কথা বলাটা কেমন করে চলে আসল? কম্পিউটারের বিষয়ে শাস্তির পাশাপাশি আমার মনে হয় এর পেছনে বড় উদ্দেশ্য ছিল কথা বলা বন্ধ করা। ড. শাহদীন মালিক বলেন, অনেক কিছু আইনে হয়ে যায়, আমরা খেয়াল করি না। বিশাল ভূমিকম্প হয়ে যায়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও কিন্তু ভূমিকম্প হয়ে গেছে। আমরা যে কম্পিউটার ব্যবহার করি তার অধিকাংশ পাইরেটেড কপি। আপনি যাই লিখেন, চাইলে পাইরেটেড সফটওয়্যার দিয়ে আপনি লিখেছেন বলে এই আইনে একটি অপরাধ করে দিতে পারে। সুতরাং এটা সাংঘাতিক ভয়াবহ অবস্থা হয়ে গেছে।
অধ্যাপক সি আর আবরারের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও সাঈদ আহমেদ। জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, আমরা যখনই আইন নিয়ে আলোচনা করি, তখন আইনটা হচ্ছে রাষ্ট্র যে আকারে যে আঙ্গিকে আমাদের আলোচনায় আনতে চায় সেটা হচ্ছে শুধু মাত্র বিরোধ নিষ্পত্তির আইন। রাষ্ট্রের সঙ্গে কিংবা ব্যক্তির সঙ্গে কারো কোন সংঘর্ষ হলো, বিরোধ হলো সে বিরোধটা নিষ্পত্তি করার জন্য আইন।
আলোকচিত্রী শহিদুল আলম গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে জ্যোর্তিময় বড়ুয়া বলেন, একজন ভিডিও লাইভে কী বললো সে কারণে ৬০ দিন ধরে জেলে আটকে থাকবে। তাহলে তো যারা কোটি কোটি টাকা লোপাট করে নিচ্ছে, পাচার করে দিচ্ছে তাদের চৌদ্দগোষ্ঠীকে পুরোটা সময় জেলে কাটানো উচিত। শাস্তি আসলে নির্ধারণ করছে কে? এই আইনজীবী বলেন, আমরা বারবার যে বিষয়টি গুলিয়ে ফেলছি বা সরকার আমাদের গুলিয়ে ফেলার জন্য বিভিন্ন রকমের ডোজ দিয়ে এই পরিবেশ তৈরি করছে, সেটা হলো- রাষ্ট্র ধারণাটা সরকার-রাষ্ট্রের মধ্যে একাকার করে দেয়া এবং এর মধ্যে নাগরিকদের উপেক্ষা করা। আমি জানি না নাগরিকদের উপেক্ষা করে রাষ্ট্র কী করে? যে আইন করা হচ্ছে তার চরিত্র রাষ্ট্রের থেকে বড় এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের বিষয়টি এখনো পর্যন্ত যতটুকু আছে আমাদের মুখের মধ্যে। গণতন্ত্রের ছিটেফোঁটাও এ দেশে আর নেই। কিন্তু যে কাঠামোটা বলবৎ করতে চাই, যেটাকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বলি সেই জিনিসগুলো এই আইনি কাঠামোর কারণে আর কোনোভাবেই থাকছে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন নেতিবাচক দিক তুলে ধরে অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলন, বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত ও পাকিস্তানের আইন পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে বাংলাদেশে সাইবার ক্রাইম সব থেকে বেশি। সেইসঙ্গে বাংলাদেশে শাস্তি অন্যদের তুলনায় ভয়াবহ। যেখানে ভারত বা পাকিস্তানে শাস্তি দুই বছর, একই অপরাধে বাংলাদেশের আইনে শাস্তি যাবজ্জীবন।
সাঈদ আহমেদ বলেন, এই আইনটি বিএনপি’র আমলের। তখন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে ছিল। তারা বিরোধিতা করে বলেছিল, এই আইনটা বিরোধী দলকে নিপীড়ন করার জন্য। কিন্তু তারা ক্ষমতায় এসে কেন সেই আইনটা বলবৎ রাখলেন? আর কেন সেই আইনের ধারাগুলোকে তারা নতুন আইনে হুবহু নিয়ে নিলেন? আমরা সবাই বলি, এটা বঙ্গবন্ধুর দেশ। কিন্তু এই আইন বঙ্গবন্ধুর নীতি-বিরোধী, স্বাধীনতার বিরোধী।
আমাদের আরও কয়শ’ বছর লাগবে সেটা আমি চিন্তা করছি। কারণ ১৭৯১ সালে আমেরিকার সংবিধানে বলা হলো- বাকস্বাধীনতা খর্ব হতে পারে এমন কোনো আইন কংগ্রেস করতে পারবে না।
হ্যাকিংয়ের বিষয়ে একটা আইন করার দরকার ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, কম্পিউটার হ্যাকিং-সংক্রান্ত একটা আইনের দরকার ছিল এবং এ আইনে ওই সংক্রান্ত কিছু ধারা আছে, যেটার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু এর সঙ্গে সব ধরনের কথা বলাটা কেমন করে চলে আসল? কম্পিউটারের বিষয়ে শাস্তির পাশাপাশি আমার মনে হয় এর পেছনে বড় উদ্দেশ্য ছিল কথা বলা বন্ধ করা। ড. শাহদীন মালিক বলেন, অনেক কিছু আইনে হয়ে যায়, আমরা খেয়াল করি না। বিশাল ভূমিকম্প হয়ে যায়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও কিন্তু ভূমিকম্প হয়ে গেছে। আমরা যে কম্পিউটার ব্যবহার করি তার অধিকাংশ পাইরেটেড কপি। আপনি যাই লিখেন, চাইলে পাইরেটেড সফটওয়্যার দিয়ে আপনি লিখেছেন বলে এই আইনে একটি অপরাধ করে দিতে পারে। সুতরাং এটা সাংঘাতিক ভয়াবহ অবস্থা হয়ে গেছে।
অধ্যাপক সি আর আবরারের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও সাঈদ আহমেদ। জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, আমরা যখনই আইন নিয়ে আলোচনা করি, তখন আইনটা হচ্ছে রাষ্ট্র যে আকারে যে আঙ্গিকে আমাদের আলোচনায় আনতে চায় সেটা হচ্ছে শুধু মাত্র বিরোধ নিষ্পত্তির আইন। রাষ্ট্রের সঙ্গে কিংবা ব্যক্তির সঙ্গে কারো কোন সংঘর্ষ হলো, বিরোধ হলো সে বিরোধটা নিষ্পত্তি করার জন্য আইন।
আলোকচিত্রী শহিদুল আলম গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে জ্যোর্তিময় বড়ুয়া বলেন, একজন ভিডিও লাইভে কী বললো সে কারণে ৬০ দিন ধরে জেলে আটকে থাকবে। তাহলে তো যারা কোটি কোটি টাকা লোপাট করে নিচ্ছে, পাচার করে দিচ্ছে তাদের চৌদ্দগোষ্ঠীকে পুরোটা সময় জেলে কাটানো উচিত। শাস্তি আসলে নির্ধারণ করছে কে? এই আইনজীবী বলেন, আমরা বারবার যে বিষয়টি গুলিয়ে ফেলছি বা সরকার আমাদের গুলিয়ে ফেলার জন্য বিভিন্ন রকমের ডোজ দিয়ে এই পরিবেশ তৈরি করছে, সেটা হলো- রাষ্ট্র ধারণাটা সরকার-রাষ্ট্রের মধ্যে একাকার করে দেয়া এবং এর মধ্যে নাগরিকদের উপেক্ষা করা। আমি জানি না নাগরিকদের উপেক্ষা করে রাষ্ট্র কী করে? যে আইন করা হচ্ছে তার চরিত্র রাষ্ট্রের থেকে বড় এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের বিষয়টি এখনো পর্যন্ত যতটুকু আছে আমাদের মুখের মধ্যে। গণতন্ত্রের ছিটেফোঁটাও এ দেশে আর নেই। কিন্তু যে কাঠামোটা বলবৎ করতে চাই, যেটাকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বলি সেই জিনিসগুলো এই আইনি কাঠামোর কারণে আর কোনোভাবেই থাকছে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন নেতিবাচক দিক তুলে ধরে অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলন, বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত ও পাকিস্তানের আইন পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে বাংলাদেশে সাইবার ক্রাইম সব থেকে বেশি। সেইসঙ্গে বাংলাদেশে শাস্তি অন্যদের তুলনায় ভয়াবহ। যেখানে ভারত বা পাকিস্তানে শাস্তি দুই বছর, একই অপরাধে বাংলাদেশের আইনে শাস্তি যাবজ্জীবন।
সাঈদ আহমেদ বলেন, এই আইনটি বিএনপি’র আমলের। তখন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে ছিল। তারা বিরোধিতা করে বলেছিল, এই আইনটা বিরোধী দলকে নিপীড়ন করার জন্য। কিন্তু তারা ক্ষমতায় এসে কেন সেই আইনটা বলবৎ রাখলেন? আর কেন সেই আইনের ধারাগুলোকে তারা নতুন আইনে হুবহু নিয়ে নিলেন? আমরা সবাই বলি, এটা বঙ্গবন্ধুর দেশ। কিন্তু এই আইন বঙ্গবন্ধুর নীতি-বিরোধী, স্বাধীনতার বিরোধী।
No comments